Logo
×

Follow Us

শিক্ষা

শিক্ষার্থীমুখর বিশ্ববিদ্যালয়

গণরুম নিয়ে দুশ্চিন্তা

Icon

এম ডি হোসাইন

প্রকাশ: ২৬ অক্টোবর ২০২১, ১৪:২৩

গণরুম নিয়ে দুশ্চিন্তা

ছবি: সংগৃহীত

দেড় বছরেরও বেশি সময় বন্ধ থাকার পর করোনাভাইরাস সংক্রমণ কমে আসায় দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো একের পর এক খুলতে শুরু করেছে। করোনাভাইরাসের এক ডোজ টিকা নেওয়ার শর্তে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে শিক্ষার্থীরা বসবাস শুরু করেছেন।

ঢাকা, জগন্নাথ ও জামালপুরের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সশরীরে ক্লাস ও পরীক্ষা নেওয়া শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে আরও কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে সরাসরি ক্লাস-পরীক্ষা শুরু হবে।

এ দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সব বর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য গত ১০ অক্টোবর থেকে আবাসিক হল খুলে দেওয়া হলেও, গণরুমে থাকা প্রথম বর্ষের অনেক শিক্ষার্থীকে ঢুকতে না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়াও মেয়েদের হলে অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের উঠতে না দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এ জন্য অনেক শিক্ষার্থী ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। একইভাবে দেশের অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের গণরুমের শিক্ষার্থীরাও ভোগান্তিতে দিন কাটাচ্ছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, হল খুললেও কিছু শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। শর্তগুলোর মধ্যে- শিক্ষার্থীদের করোনার ভ্যাকসিন গ্রহণ, শুধু বৈধ শিক্ষার্থীদের হলে অবস্থান। এ ছাড়া হলে কোনো গণরুম থাকবে না বলেও জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে গণরুম থাকা দীর্ঘদিনের একটি রেওয়াজ। এসব গণরুমে বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থীদের মারধরের খবর সামনে এসেছে। গণরুম নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আপত্তি থাকলেও, কোনো এক অদৃশ্য শক্তির কারণে বন্ধ করতে পারেনি হল প্রশাসন। তবে এবার করোনার কারণে যেন গণরুম বন্ধ করার শক্তি ফিরে পেয়েছে হল প্রশাসন কর্তৃপক্ষ।

জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আবাসিক হলগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা ‘গণরুম সংস্কৃতি’ বিলুপ্ত করতে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ; কিন্তু গণরুমগুলো মূলত নিয়ন্ত্রণ করে ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন। ছাত্র সংগঠনের নেতারা গণরুমের শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করেন বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচি বাস্তবায়নে। হলের রাজনীতিতে নিজের অবস্থান শক্ত করতে তারাই সিট পাইয়ে দেন অনুগামীদের। তাই রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনগুলোর ছত্রচ্ছায়ায় এই সংস্কৃতি বন্ধ হবে কি-না, তা নিয়েও আশঙ্কা আছে- যা ক্রমেই বাড়ছে। তবে এখন পর্যন্ত গণরুম বন্ধের সিদ্ধান্ত থাকলেও, গণরুমের প্রত্যেক শিক্ষার্থীর আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হলের এক শিক্ষার্থী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গণরুম না রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল; কিন্তু আমরা ইতিমধ্যে বিভিন্ন হলের গণরুমে প্রথম বর্ষের বন্ধুদের উঠে যেতে শুনেছি। বিজয় একাত্তর হল ছাড়া বাকি হলগুলোতে প্রশাসনের তৎপরতা তেমন একটা চোখে পড়েনি। প্রশাসন এখন থেকে কঠিন অবস্থানে না থাকলে আদৌ গণরুম সংস্কৃতিচর্চার বিলোপ ঘটানো সম্ভব না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো আখতারুজ্জামান বলেন, গণরুমের বিষয়ে হল প্রশাসন একটি বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। কোনোভাবেই যাতে আগের মতো ঠাসাঠাসি করে শিক্ষার্থীরা হলে প্রবেশ না করে। এটি স্বাস্থ্যবিধি পরিপন্থী। অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের জীবনমানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। 

তিনি আরও বলেন, ছাত্র সংগঠনের নেতাদের সঙ্গেও গণরুম নিয়ে আমাদের পজেটিভ কথাবার্তা হয়েছে। তারা এ প্রস্তাবকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। 

এ দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে গণরুম না রাখার বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে নিয়েছে ছাত্রনেতারা। তারা বলছেন, গণরুম না রাখার দাবি আমাদের দীর্ঘদিনের। অবশেষে আমাদের সেই দাবি পূরণ হতে চলছে। 

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ঢাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, ডাকসুর ইশতেহারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার কথা বলা হয়েছে। ছাত্র রাজনীতি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতির জন্য গণরুম নেতিবাচক একটি দিক। একুশ শতকে এসেও গণরুমে থাকতে হচ্ছে, এটা আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যের ব্যাপার। 

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আমাদের দাবি, শিক্ষার্থীরা যেন মর্যাদার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ে দিন অতিবাহিত করতে পারে, গণরুমের মতো নেতিবাচক জায়গায় যেন শিক্ষার্থীদের পড়তে না হয়, সে ব্যবস্থা করতে হবে।

ছাত্র অধিকার পরিষদ ঢাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক আকরাম হোসাইন বলেন, ক্ষমতাসীনদের ছত্রছায়ায় গণরুম ব্যবস্থার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের নির্যাতন করা হলে, তা বিন্দুমাত্র সহ্য করা হবে না। এ ধরনের ঘটনা ঘটলে আমরা সাধারণ ছাত্রদের নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলব।

জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ঢাবি শাখার আহ্বায়ক রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, কর্তৃপক্ষের এ সিদ্ধান্তকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল সাধুবাদ জানাচ্ছে। একই সঙ্গে আমরা দাবি জানাচ্ছি, ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের ছত্রছায়ায় যেন কোনো অবৈধ শিক্ষার্থী হলে অবস্থান করতে না পারে- সেই বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে নিশ্চিত করতে হবে।

এ বিষয়ে বিজয় একাত্তর হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. আবদুল বাছির বলেন, উপাচার্য স্যারের নেতৃত্বে প্রভোস্ট কমিটি একটি নীতিমালা করেছে। আর কোনো শিক্ষার্থী ফ্লোরে ঘুমাবেন না, তাদের জন্য অবশ্যই একটি খাটও থাকবে। গণরুমে কোনো শিক্ষার্থী থাকবে না। মানসম্পন্ন রুমগুলোতে আমরা তাদের জন্য সিট বরাদ্দ দিয়ে রেখেছি। খুব শিগগিরি এ প্রক্রিয়া শুরু হবে। 

করোনাভাইরাস মহামারির করণে দীর্ঘ ১৯ মাস বন্ধ থাকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হয়েছে সশরীরে পাঠদান ও পরীক্ষা কার্যক্রম। শিক্ষার্থীদের পদচারণা আর উচ্ছ্বাসে মুখর হয়ে ওঠেছে বিশ্ববিদালয়ের সবুজ প্রাঙ্গণ। পুরনো পথে সেই লাল বাসে আবারও স্বপ্নিল ক্যাম্পাসে, ঠিক ৮টায় ক্লাস ধরতে হল থেকে তাড়াহুড়োর দৌড়; ক্লাসের ফাঁকে বটতলা, শ্যাডো কিংবা টিএসসিতে একটু চায়ের আড্ডা, গান-গল্প আর গ্রুপ স্টাডির দিনগুলোতে আবার ফিরেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। 

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হল খুলেছে ১৮ অক্টোবর। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল ১১ অক্টোবর খুলে দেওয়া হয়েছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭ অক্টোবর থেকে সশরীরে পরীক্ষা নেওয়ার মাধ্যমে খুলেছে। পরীক্ষা শেষে ক্লাস চালু হবে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল খুলে দেওয়া হয়েছে। হল খোলার পর চলতি সপ্তাহ থেকে সশরীরে ক্লাস নেওয়া হবে। রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়-রুয়েটের আবাসিক হল আগামী ২৮ অক্টোবর খুলে দেওয়া হবে। ঢাকার শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য হল খুলে দেওয়া হয়েছে ১ অক্টোবর। ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক চতুর্থ বর্ষ ও মাস্টার্স পরীক্ষার্থীদের জন্য আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর হল খুলে দেওয়া হয়েছে। গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে সশরীরে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়েছে ১২ অক্টোবর। জামালপুরের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ২০ সেপ্টেম্বর থেকে সরাসরি পরীক্ষা শুরু হয়েছে। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের হল খুলেছে ৪ অক্টোবর।

দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে গত বছরের মার্চে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়। দেড় বছর পর গত ১২ সেপ্টেম্বর প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়। 

গত ১৪ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ও উপাচার্যদের সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রীর এক বৈঠকে আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ও আবাসিক হল খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। চলতি মাসের মধ্যে দেশের সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়া সম্ভবপর হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫