জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোট ছাড়ল চলচ্চিত্র আন্দোলন

জাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৫ এপ্রিল ২০২২, ২০:৩৪

প্রতীকী ছবি
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৩টি সাংস্কৃতিক সংগঠনের জোট ‘জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোট’ থেকে বের হয়ে গেলো জোটটির অন্যতম সদস্য সংগঠন চলচ্চিত্র আন্দোলন।
আজ মঙ্গলবার (৫ এপ্রিল) সংগঠনটির দপ্তর সম্পাদক আবিদা ফেরদৌস স্বাক্ষরিত এক গণ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ১লা এপ্রিল অনুষ্ঠিত জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোট এর কাউন্সিল অধিবেশনে চলচ্চিত্র আন্দোলন অংশ নেয়। সভার একপর্যায়ে চলচ্চিত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিবৃন্দ এবং সহকারি নির্বাচন কমিশনার উক্ত নির্বাচন থেকে ওয়াক-আউট করেন।
এতে আরো বলা হয়, নির্বাচন শুরুর আগে চলচ্চিত্র আন্দোলনের প্রার্থী, সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং ক্যাম্পাসের অপরাপর অ্যাক্টিভিস্টদের নামে নানা ধরণের অপ্রাসঙ্গিক অভিযোগ এনে নির্বাচনকে ‘ম্যানিপুলেট’ করার চেষ্টা করেন জোটের সাবেক ও বর্তমান কিছু নেতৃবৃন্দ।
এমনকি, নির্বাচনের আগে জোটের সম্পাদক চলচ্চিত্র আন্দোলনের কর্মীদের নামে এই মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়ানোর নোংরা প্রচেষ্টায় অংশ নেন। কাউন্সিল সন্ধ্যায় শুরু হবার কথা থাকলেও নানান অজুহাতে বার বার পেছানো হয় ও প্রায় ৮ ঘণ্টা সময়ক্ষেপণের পর রাত ১:৩০ টার দিকে কাউন্সিল অধিবেশন শুরু হয়। একপর্যায়ে সংগঠনের প্রতিনিধিরা নির্বাচন কমিশন এবং উপস্থিত কাউন্সিলরদের কাছে গ্রুপিং ও চৌর্যবৃত্তির বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করে তাৎক্ষণিকভাবে কাউন্সিল কক্ষ থেকে ওয়াক-আউট করেন।
প্রাথমিকভাবে সাংস্কৃতিক জোটের অন্তর্ভুক্ত কতিপয় সংগঠনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে গঠিত এক বিশেষ সিন্ডিকেটের উপস্থিতিকে বের হয়ে আসার অন্যতম কারণ বলে উল্লেখ করেছেন সংগঠনটির নেতৃবৃন্দ।
চলচ্চিত্র আন্দোলনের সভাপতি শামসুজ্জোহা স্থির বলেন, একই সংগঠন থেকে লাগাতার তিনবার সাধারণ সম্পাদক এবং অপর আরেকটি সংগঠন থেকে পর পর দুইবার সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার দৃষ্টান্তকে অন্য সংগঠনগুলোর প্রতি ‘বিমাতৃসুলভ আচরণ’ হিসেবে চিহ্নিত করছেন যা অন্যান্য সংগঠনের স্বতঃস্ফূর্ত বিকাশের পথকে রুদ্ধ করে।
এই মনোপলির নির্বাচন অপরাপর সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের কাছে জোটের মধ্যকার অদৃশ্য সিন্ডিকেটের উপস্থিতিকে আবারো প্রমাণ করলো।
তিনি আরো বলেন, জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোট আজ গ্রুপিং রাজনীতিতে আক্রান্ত। এই পরিস্থিতিতে জোটে থাকা মানে শুধুমাত্র কিছু ব্যক্তির প্রতিক্রিয়াশীল চিন্তার মধ্যে আবদ্ধ থাকা। যা সাংস্কৃতিক জোটের প্রতিষ্ঠাকালীন শপথের পরিপন্থী। এমতাবস্থায়, চলচ্চিত্র আন্দোলন জোটের সাথে যূথবদ্ধ আন্দোলনের সমাপ্তি ঘোষণা করছে।
এবিষয়ে জোটের নবনির্বাচিত সভাপতি সৌমিক বাগচী বলেন, জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোট জাবিতে ক্রিয়াশীল কিছু সাংস্কৃতিক সংগঠনের জোট মাত্র। এখানে ক্ষমতা চর্চার বা বিশেষ কোন সুবিধা পাওয়ার কোন বিষয় থাকে না। সংগঠনগুলো পারস্পারিক আলোচনার মাধ্যমেই নির্বাচনের আয়োজন করে থাকে। চলচ্চিত্র আন্দোলন এবারের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে তাদের একজন প্রার্থী হেরে যায়। হেরে যাওয়ার পরই তারা জোট সম্পর্কে এমন শিশুসুলভ মন্তব্য করছে।
জোট ছাড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, চলচ্চিত্র আন্দোলন দীর্ঘদিন যাবত জোটে আছেন। এর নেতারা জোটের নীতি সম্পর্কে অবগত। জোটের নির্বাচনী অধিবেশন থেকে ওয়াকআউট করলেই সেই সংগঠনের সদস্যপদ স্থগিত হয়ে যায়। ঘটনার প্রায় ৪দিন পর তাদের এমন গণ বিজ্ঞপ্তির কোন মানে হয় না। তারা এমনিতেই এখন আর জোটের অংশ না।
উল্লেখ্য, গত ১ এপ্রিল জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে চলচ্চিত্র আন্দোলন থেকে শামসুজ্জোহা স্থির সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সামী আল জাহিদ প্রীতমের কাছে হেরে যান।
জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোট প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। ধর্ষণ বিরোধী আন্দোলন, ২০১৯ সালে জাবি ভিসির বিরুদ্ধে দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনসহ বিভিন্ন আন্দোলনে জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।