
উৎপল কুমার সরকারকে হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন
সাভারের আশুলিয়ার হাজী ইউনুস আলী স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের ৪১তম ব্যাচের সাবেক শিক্ষার্থী উৎপল কুমার সরকারকে হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪১তম ব্যাচের সাবেক শিক্ষার্থীরা ও বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকরা।
আজ মঙ্গলবার (২৮ জুন) ১২ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এই মানববন্ধন করা হয়। এতে যোগ দেন বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা- কর্মচারী।
এর আগে গত শনিবার (২৫ জুন) দুপুর ২টার দিকে আশরাফুল ইসলাম জিতু (১৬) নামের এক শিক্ষার্থীর আঘাতে আহত হন তিনি। পরে গত সোমবার (২৭ জুন) ভোর সোয়া ৫টার দিকে এনাম মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
মানববন্ধনে দর্শন বিভাগের ৪১তম ব্যাচের সাবেক শিক্ষার্থী সাইমন আহমেদ বলেন, এ ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনা যাতে না ঘটে সেজন্য সতর্ক থাকতে হব। ওই ছাত্রটি কোথাও না কোথাও ছত্রছায়ায় আছে। তাকে খুঁজে আনতে হবে। এর যারা কুশীলব এদেরকে খুঁজে বের করতে হবে। আর কোনো উৎপল কুমার যেন এই পর্যায়ে না আসে বা মারা না যায়। সেজন্য আমাদের সোচ্চার হতে হবে।
উৎপল কুমারের বন্ধু ও ৪১তম ব্যাচের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, উৎপলের সাথে এই ক্যাম্পাসে আমার অনেক স্মৃতি। আমরা একসাথে অনেক সময় কাটিয়েছি। ও খুব মিশুক মনের মানুষ ছিল। তবে অন্যায়ের কাছে কখনো আপোষ করত না। উৎপল একজন স্পষ্টবাদী মানুষ ছিল। ওর এই হত্যাকাণ্ড আমার আমাদের সবার জন্য বেদনাদায়ক। কারণ একজন শিক্ষকের মৃত্যু মানে একজন কারিগরের মৃত্যু। একজন উৎপলের অভাব কখনো পূরণ হবার নয়।
নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. রহমান নাসির উদ্দিন বলেন, এটা সাধারণ কোনো অপরাধ নয়। আমরা যে পিছিয়ে পড়া সমাজকে ধারণ এটাই তার উদাহরণ। আজকে একজন শিক্ষককে হত্যার কারণে কেন আরেকজন শিক্ষককে দাঁড়াতে হয়। ৪১ ব্যাচের শিক্ষার্থীকে দাঁড়াতে হয়। এটা তো সবার নৈতিক দায়িত্ব থেকে দাঁড়ানো উচিত। এই প্রতিবাদ দেশের প্রতিটি মানুষের, প্রতিটি সংবেদনশীল মানুষের। আসলে সমাজে একটা সংস্কার জরুরি হয়ে পড়েছে। যে শিক্ষার্থীকে আমি পড়াই, আমি আলোড়িত করি, আন্দোলিত সেই ছাত্রের আঘাতে আমার মৃত্যুবরণ করতে হবে তার চাইতে দুঃখের আর কিছু হতে পারে না। আমাদের সমাজের অগ্রযাত্রাকে ধারণ করতে হবে। শিক্ষককে পিতৃতুল্য ভাবতে হবে। সমাজে একটা সংস্কার দরকার।
রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক ড. এনায়েতউল্লাহ পাটোয়ারী বলেন, যে বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড হয়েছে আমরা তার তীব্র নিন্দা জানাই। আমরা সরকারের কাছে জোর দাবি জানাই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জন্য। আমাদের শিক্ষক সমাজ বারবার নিগৃহীত হচ্ছে। বিভিন্নভাবে লাঞ্ছিত করা হচ্ছে। শিক্ষক সমাজ লাঞ্ছিত হওয়া মানে আমাদের দেশ সমাজ লাঞ্ছিত হওয়া। কারণ এই সমাজ, রাষ্ট্রের কারিগর হচ্ছেন শিক্ষক সমাজ। আজ আমাদের কতটা অধঃপতন হয়েছে যার দরুন আমারা শিক্ষক সমাজকে বারংবার লাঞ্ছিত করছি।আমরা সবাই সমবেত কণ্ঠে এর প্রতিবাদ জানাই।
জানা যায়, শিক্ষক উৎপল সরকার সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া থানার এঙ্গেলদানি গ্রামের মৃত অজিত সরকারের ছেলে। তিনি প্রায় ১০ বছর ধরে আশুলিয়ার চিত্রশাইল এলাকার হাজী ইউনুস আলী স্কুল এন্ড কলেজের কলেজ শাখার রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক এবং শৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। শৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি থাকার কারণে সকল ছাত্রদের সকল আচরণগত সমস্যা নিয়ে কাউন্সেলিং করতে হতো তাকে। শিক্ষার্থী জিতু (১৬) আশুলিয়ার চিত্রশাইল এলাকার উজ্জ্বল হাজীর ছেলে। তিনি হাজী ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র।
শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কয়েকদিন আগে এক ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করে হাজী ইউনুছ আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির এক বখাটে ছাত্র। এরপর ওই ছাত্রকে শাসন করেন উৎপল। এর জের ধরে গত শনিবার দুপুর আড়াইটার দিকে তিনি শিক্ষকের ওপর হামলা চালায়।
মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনি জিতুকে গ্রেপ্তার, জিতুর সাথে জড়িত অন্যদের পরিচয় প্রকাশ ও বিচারের আওতায় আনা, জিতুকে পালানোয় সাহায্যকারী তার পরিবারকে বিচারের দাবি জানান শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও নিহত শিক্ষক উৎপল কুমারের পরিবারকে সর্বোচ্চ আর্থিক ক্ষতিপূরণের দাবিও জানানো হয় মানববন্ধনে
দর্শন বিভাগের ৪১তম ব্যাচের সাইমন বলেন, এ ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনা যাতে না ঘটে সেজন্য সতর্ক থাকতে হব। খুনি কোথাও না কোথাও ছত্রছায়ায় আছে। তাকে খুঁজে আনতে হবে। এর যারা কুশিলব এদেরকে খুঁজে বের করতে হবে। আর কোনো উৎপল কুমার যেন এই পর্যায়ে না আসে আমাদের সোচ্চার হতে হবে।