উত্তর-পূর্ব ইউরোপের দেশ এস্তোনিয়া। দেশটি বাল্টিক সাগরের পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত। বাল্টিক দেশগুলোর মধ্যে ক্ষুদ্রতম দেশ হলো এস্তোনিয়া। দেশটির বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ১৩ লাখ। এস্তোনিয়া বিশ্বের সর্ব প্রথম রাষ্ট্র যারা জাতীয় নির্বাচনে অনলাইনে ভোট দেওয়ার নিয়ম চালু করেছিল।
অনলাইন সেবা কার্যক্রমে অগ্রসর হওয়ায় দেশটি ‘ই-কান্ট্রি’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে বিশ্বে। সবকিছু মিলিয়ে এস্তোনিয়া হতে পারে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার জন্য একটি আদর্শ দেশ। এস্তোনিয়ার সরকার তাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মান উন্নত থেকে উন্নততর করে তোলার নিরলস চেষ্টা করে যাচ্ছে এবং তারা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের আগমনকে উৎসাহিত করছে।
বিদেশি শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে ব্যাচেলর, মাস্টার্স, পিএইচডি/ডক্টরাল ও শর্টকোর্স করার সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে স্কলারশিপের সুবিধা। অনার্স কোর্সের মেয়াদ তিন থেকে চার বছর, মাস্টার্স কোর্স এক থেকে দুই বছর এবং পিএইচডি তিন থেকে চার বছর মেয়াদি হয়ে থাকে। এস্তোনিয়ায় মোট ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ রয়েছে। এর মধ্যে ছয়টি পাবলিক ও একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, আটটি স্টেইট প্রফেশনাল হাইয়ার এডুকেশনাল ইনস্টিটিউশন এবং বাকি পাঁচটি প্রাইভেট প্রফেশনাল হায়ার এডুকেশনাল ইনস্টিটিউশন। এস্তোনিয়ার কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে ‘ইউনিভার্সিটি অব তারতু, এস্তোনিয়ান বিজনেস স্কুল, এস্তোনিয়ান একাডেমি অব আর্ট।’
এস্তোনিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চলমান কোর্সগুলোর মধ্যে রয়েছে ভেটেরিনারি মেডিসিন, মিউজিক, বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, ক্রিয়েটিভ অ্যান্ড বিজনেস ইনোভেশন, ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, ইঞ্জিনিয়ারিং, সাইবার সিকিউরিটি ইঞ্জিনিয়ারিং, গেইম ডিজাইন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, অডিও ভিজ্যুয়াল মিডিয়া, ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন, ‘ল’ সোশ্যাল সায়েন্স, পলিটিক্স, মেডিসিন ইত্যাদি। মাস্টার্স কোর্সগুলোর মধ্যে রয়েছে ডিজাইন, ক্রাফট, বিজনেস ম্যানেজমেন্ট, অ্যানিমেশন, ইকোনমিক্স, কালচারাল ম্যানেজমেন্ট, ইঞ্জিনিয়ারিং, ফিলোসফি ইত্যাদি। এস্তোনিয়ায় শিক্ষার মান ও ডিগ্রি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। দেশটির বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘অটাম’ ও ‘স্প্রিং’ সেমিস্টারে সাধারণত বছরে দুইবার ভর্তির সুযোগ থাকে।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এস্তোনিয়ান ও ইংরেজি উভয় মাধ্যমে পড়ানো হয়। ইংল্যান্ড, আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তুলনায় এস্তোনিয়ার টিউশন ফি কম। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর উভয় পর্যায়ে বার্ষিক টিউশন ফি এক হাজার ৬৬০ ইউরো হতে পারে। কোর্স ও বিশ্ববিদ্যালয় ভেদে টিউশন ফির তারতম্য হতে পারে। তবে মেডিক্যাল কোর্সের শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি অন্যান্য কোর্সের তুলনায় বেশি। এস্তোনিয়ায় স্বল্প খরচে ভালোভাবে থাকা ও খাওয়ার সুযোগও রয়েছে। জীবনযাত্রার খরচ নির্ভর করে একজন শিক্ষার্থীর জীবনযাপন কী রূপ হবে, তার ওপর। একজন শিক্ষার্থী মাসে ৩০০ থেকে ৫০০ ইউরোর মধ্যে ভালোভাবে জীবন যাপন করতে পারে। খাওয়াদাওয়ার জন্য মাসে ২০০ থেকে ২৫০ ইউরো খরচ হতে পারে।
তবে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই শিক্ষার্থীদের জন্য হোস্টেলের ব্যবস্থা রয়েছে। এসব হোস্টেলে ভাড়া মাসিক ১০০ ইউরো থেকে শুরু হয়। এস্তোনিয়ায় বিদেশি শিক্ষার্থীরা খণ্ডকালীন চাকরি করতে পারে। তবে অবশ্যই খণ্ডকালীন চাকরির জন্য এস্তোনিয়ান ভাষা জানতে হবে। এস্তোনিয়ায় পড়াশোনা শেষে ছয় মাসের চাকরির সার্চ ভিসা পাওয়া যায়। পড়াশোনা শেষে এস্তোনিয়ায় পাঁচ বছর থাকার পর স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য আবেদন করা যায়। একটানা বৈধভাবে আট বছর থাকলে নাগরিকও হওয়া যায় দেশটিতে।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2025 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh