
রম্য। প্রতীকী ছবি
অ্যাপ্লাইড ফিজিক্সে এমএসসি পাস করে আজ দু বছর ধরে বেকার শাকিল। তার অবশ্য খুব চিন্তাভাবনা নেই। গায়ে ফুঁ দিয়ে দিব্যি আছে। কিন্তু রিটায়ার্ড বাবার যেন মাথা নষ্ট। একদিন নাশতার টেবিলে রিটায়ার্ড বাবা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলেন, মাঝারি ক্যাটাগরির একটা হুঙ্কার দিলেন।
- বাবার হোটেলে আর কতদিন? অ্যাঁ?
- তবে কি মামার হোটেলে যাব সে তো বহুদূর ...পঞ্চগড়, দেশের আরেক মাথায়। বাস ভাড়া দাও যাই।
বলাই বাহুল্য শাকিলের নানার বাড়ি পঞ্চগড়। বাবা দ্বিতীয় দফায় হুঙ্কার দিলেন-
- ফাজলামো হচ্ছে? চাকরিবাকরি খোঁজ, না হলে রিকশা চালাও।
- সত্যি রিকশা চালাব? শাকিল চায়ে চুমুক দিয়ে বলে।
- কেন নয়... একটা কিছু করে দেখাও।
- বেশ করে দেখাব। রিকশাই চালাব... ইয়ে তবে অটোরিকশা চালাব না নরমাল রিকশা? অটো রিকশা চালালে আবার রাস্তা-ঘাটে ট্রাফিক পুলিশ ধরে।
বাবা হতভম্ব হয়ে ছেলের দিকে তাকালেন, ছেলে কী ইয়ার্কি শুরু করেছে! তারপর তৃতীয় দফায় হুঙ্কার দিলেন, তবে এবার স্ত্রীর উদ্দেশে, ‘তোমার ফাজিল ছেলে কী বলছে শুনছ?’ মার মুখে অবশ্য মৃদু হাসি। তার বাবার বাড়ির যাওয়ার কথা তো কেউ মুখেও আনে না। ছেলে যা হোক তবু নানার বাড়ি যাওয়ার কথা বলেছে। সত্যি সত্যি গেলে ভাড়া তিনিই দেবেন।
ওদিকে ভিতরের ঘর থেকে ভার্সিটিতে পড়–য়া ছোট বোন চেঁচায়, ‘ভাই অটোরিকশা চালা, যা স্পিড। দারুণ লাগে, মনে হয় যেন এক্সেল থ্রি ফিফটি মোটরসাইকেলে চড়ছি।’
হতভম্ব বাবা এবার চমকালেন মেয়ের কথায়। মেয়ে মোটরসাইকেলের এত কনফিগারেশন জানল কীভাবে! তবে কি মেয়ের মোটরসাইকেলওলা কোনো বন্ধু জুটেছে!
ছেলে ততক্ষণে ছাদে সিগারেট টানতে গেছে। হোক না বেকার, নাশতার পর সিগারেট না খেলে চলে? এখনো নগদে দুটো শলা আছে পকেটে।
দুদিন বাদে সত্যি সত্যিই শাকিল আধা পরিচিত এক রিকশাওয়ালাকে পাকড়াও করল,
- মামা আমি রিকশা চালাব একটা ব্যবস্থা করে দাও।
- সত্যি চালাইবা?
- সত্যি মানে তিন সত্যি...
- এমনি রিকশা চালাইবা না অটোরিকশা?
- অটো রিকশা... আমার ছোট বোন বলে দিয়েছে।
- এমনি রিকশা হইলে কোনো কথা নাই, অটো হইলে দুইখান কথা আছে।
- কী কথা?
- রিকশা কি আমগো গ্যারেজে রাখবা না তোমার নিজের গ্যারেজে রাখবা?
- আমার রিকশা আমাদের গ্যারেজেই রাখব।
- আমগো গ্যারেজে রাখলে কোনো কথা নাই তোমগো গ্যারেজে রাখলে দুই খান কথা আছে।
- বললাম তো আমাদের গ্যারেজেই রাখব।
- জানো তো রাইতভর অটোরিকশা চার্জ করতে লাগে।
- তা জানি, তোমরাই তো এভাবে কারেন্ট চুরি করে করে দেশের বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় ধস নামিয়ে দিচ্ছ হে! আচ্ছা বলো কী বলছিলে?
- তোমার রিকশা কি এসি কারেন্টে চার্জ করবা, না ডিসি কারেন্টে?
- আরে জ্বালা এসি কারেন্টে।
- ডিসি কারেন্টে হইলে কোনো কথা আছিল না, এসি কারেন্টে হইলে দুইখান কথা আছে।
- কী মুশকিল, কী কথা?
- তুমি কি টেসলার পক্ষের লোক না এডিসনের পক্ষের লোক? এই পর্যায়ে এসে শাকিল চমকালো।
- মামা থাম থাম ঘটনা কী? তুমি তো মনে হচ্ছে আস্তে আস্তে সায়েন্সের দিকে যাচ্ছ? তুমি আসলে কে মামা ঠিক করে বলো তো? এসি ডিসি কারেন্ট বোঝো, টেসলা এডিসনকে চেন!
রিকশাওয়ালা হাসে। বলে
- মামা আমি আসলে কেউ না, এই দেশের সতেরো কোটি মানুষের বেশিরভাগই কেউ না। আমি সেই কেউ না!!
রিকশাওয়ালা প্যডেল মেরে এগিয়ে যায়। শাকিলের মনে পড়ে কোয়ান্টাম ফিজিক্সের চ্যাপ্টারে পড়েছিল অবজারভার থাকলে কিছু ঘটে, না থাকলে কিছু ঘটে না। একটু আগে যা ঘটল। সেখানে অবজারভার কে ছিল? সে? নাকি ওই রিকশাওয়ালা মামা? নাকি অন্য কেউ? যে আসলে ‘কেউ না’!