
তুর্কি সিনেমা। ছবি: সংগৃহীত
এমন একটা দেশের কথা ভাবুন তো যার গোটা শরীরটা একসঙ্গে থাকলেও তা ভাগ হয়ে পড়েছে দুই আলাদা মহাদেশে। দুই ভূখণ্ড পাশাপাশি হলেও আবহমানকাল ধরে তাদের বয়ে বেড়ানো ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতি ও চলন-বলন, রীতিনীতি, ভিন্ন ভিন্ন ধর্মের ধারা এবং মৃদুমাত্রায় ভূপ্রকৃতি ও আবহাওয়ার বৈচিত্র্য। এই সবকিছুর সঙ্গে নিয়ে দুটি আলাদা মহাদেশ থেকে এসে একসঙ্গে জুড়ে গিয়ে নিজেরা একটা দেশ হয়ে গেল!
সেই
দেশ আবার ৬০০ বছরের
বেশি সময় ধরে পৃথিবীর
অন্যতম বৃহৎ সাম্রাজ্য হিসেবে-এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপের বড় অংশকে শাসন
করেছে। ছিল বিশ্ব রাজনীতির
গুরুত্বপূর্ণ শক্তি, তার ধারাবাহিকতায় হয়ে
উঠেছে শিল্প-সাহিত্যের অন্যতম পীঠস্থান। হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন, তুরস্কের
কথাই বলছি।
আর তাই দুই মহাদেশের
সংস্কৃতি ধারণ করা এই
দেশের সিনেমা সম্পর্কে জানতে হলে অবশ্যই দেশটির
অতীত ইতিহাস সম্পর্কে আগে জেনে নিতে
হবে। কেননা ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে হাজারো গল্প লুকিয়ে থাকে।
চিত্রনাট্যকার থেকে পরিচালক সেই
গল্পগুলোকেই পর্দায় তুলে আনেন। বর্তমান
তুরস্কের অধিকাংশ অঞ্চলের প্রাচীন নাম আনাতোলিয়া। যিশু
খ্রিষ্টের জন্মের ১০ হাজার বছর
আগে থেকেই এখানে মানুষের বসবাস ছিল।
অটোমান
সুলতানদের পূর্বপুরুষ তুর্কিরা মূলত মধ্য এশিয়ার
বাসিন্দা ছিলেন। জাতিতে যাযাবর এই তুর্কিরা এখানকার
বাইজেনস্টাইন শাসকদের হারিয়ে একটি সালতানাত বা
রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীকালে ১৩ শতকের শেষ
দিকে উসমানী বা অটোমান খেলাফতের
শাসন শুরু হয় এই
ভূখণ্ডে। এরও প্রায় ৬০০
বছর পরে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ
উত্তর উসমান বা অটোমান সাম্রাজ্যের
পতন হয়।
আধুনিক তুরস্কের প্রতিষ্ঠাতা বলা হয় মুস্তফা কামাল আতাতুর্ককে, যার হাত ধরেই ১৯২৩ সালে আত্মপ্রকাশ করে তুরস্ক প্রজাতন্ত্র। এই দেশটির প্রায় ৯৭ শতাংশ ভূখণ্ড এশিয়াতে পড়লেও কিছু অংশ পড়েছে ইউরোপে। তাই শুধু দুটি দেশ নয় বরং দুটি ভিন্ন মহাদেশের সংস্কৃতির মেলবন্ধনের দেশ এই তুরস্ক। যার প্রভাবে এই দেশটির সংগীত থেকে কলা, চিত্রকলা, স্থাপত্য, দর্শন-এমনকি জনজীবনেও নান্দনিক ছাপ ফেলে যাওয়া এই দেশটির দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। খেলাফতের অবসান ঘটিয়ে তুরস্ক রাষ্ট্রটির বয়স শতাধিক হয়েছে বটে; কিন্তু তুর্কি সিনেমার উত্থান ঘটেছিল ১৯১৫ সালে নির্মিত তথ্যচিত্র ‘আয়স্তেফানোস’ (Ayastefanos) নির্মাণের মধ্য দিয়ে। রাশিয়ার স্মৃতিস্তম্ভ ধ্বংসের প্রেক্ষাপটে নির্মিত এই তথ্যচিত্রটির নির্মাতা সাবেক সেনা কর্মকর্তা ফুয়াত উজকিনে (Fuat Uzkınay)। উত্থান থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত তুরস্কে নির্মিত বা তুর্কি ভাষাভাষী সিনেমাগুলোকে কিছু মাপকাঠির ভিত্তিতে বেশ কয়েকটি যুগপর্বে ভাগ করা হয়। যেমন-নাট্যকারদের যুগ, চলচ্চিত্র নির্মাতাদের যুগ, ইয়েসিলকামের (Yeşilçam) যুগ, আধুনিক তুর্কি সিনেমার যুগ ইত্যাদি।
নাট্যকারদের
যুগ
চলচ্চিত্র
নির্মাণের ধরন, প্রকৃতি, নির্মাণশৈলী,
সৃজনশীলতার উপর ভিত্তি করে
এই যুগটিকে নাট্যকারদের যুগ বলা হয়।
আনুমানিক ১৯১৪ থেকে ১৯৪৮-এর মধ্যবর্তী সময়কালকে
নাট্যকারদের যুগ বিবেচনা করা
হয়। খ্যাতিমান অভিনেতা মহসিন এরতুগ্রুলের প্রভাব দেখা যায় এ
প্রজন্মের অন্যান্য নির্মাতা ও অভিনেতাদের কাজে।
উপজীব্য হিসেবে সাহিত্য ও ইতিহাসভিত্তিক নির্মাণ
এই যুগের চলচ্চিত্রে নিজস্ব স্বকীয়তা প্রদান করেছে।
এই সময়ের উল্লেখযোগ্য দুটি চলচ্চিত্রের মাঝে,
প্রথমটি ১৯২৩ সালে ‘খালেদা
আদিবের’ উপন্যাস নির্মিত সিনেমা ‘দ্যা শার্ট অব
ফ্লেম’ (Ateşten
Gömlek), যা তুরস্কের স্বাধীনতা যুদ্ধের উত্তাপকে প্রতিফলিত করে এবং এর
নির্মাতা মহসিন এরতুগ্রুল। এছাড়াও প্রেক্ষাপট, সফল নাটকীয় উপস্থাপনার
এবং বড় প্রযোজনায় নির্মিত
প্রথম তুর্কি সিনেমা এটি, পাশাপাশি প্রথমবারের
মতো তুর্কি নারীদের রুপালি পর্দায় অভিষেক ঘটে এই সিনেমার
‘মধ্য দিয়েই। দ্বিতীয় চলচ্চিত্রটি হলো-‘আ ন্যাশান
ইজ এওয়াকিং’ (A Nation Is
Awaking)। তুরস্কের স্বাধীনতা যুদ্ধে পূর্ববর্তী সময়ের প্রেক্ষাপট নিয়ে ১৯৩২ সালে
এই সিনেমাটি নির্মিত হয়। খ্যাতিমান নির্মাতা
মহসিন এরতুগ্রুলের আরেকটি মাস্টারপিস হিসেবে বিবেচনা করা হয় চলচ্চিত্রটিকে।
এই সময়কালে রাষ্ট্র কর্তৃক সিনেমায় প্রথম আইনি হস্তক্ষেপ হিসেবে দৃশ্যকল্প এবং চলচ্চিত্র নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৩৯ জারি করা হয়। অর্থাৎ প্রথমবারের মতো তুর্কি সিনেমা সরকারের নিয়ন্ত্রণে আসে।
চলচ্চিত্র
নির্মাতাদের যুগ
১৯৪৮
সালে সরকার সিনেমা নির্মাণে কর কমিয়ে দেয়।
ফলে চলচ্চিত্র শিল্পের ক্ষেত্রে একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন
আসে যা পরবর্তী তুর্কি
চলচ্চিত্রের ভবিষ্যতের পথ প্রশস্ত করেছিল।
দেখা যায় এই অর্থনৈতিক
সমন্বয়ের সঙ্গে উৎপাদন সংস্থার সংখ্যা উল্লেখযোগ্যহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। অর্থনৈতিক মুক্তির পাশাপাশি এই যুগের সিনেমায়
নতুন ধ্যান ধারণা ও প্রযুক্তিগত কৌশল
ব্যবহার হয়, যা তুর্কি
সিনেমায় নতুন মাত্রা যুক্ত
করে।
এই সময়ের অন্যতম বিশিষ্ট চলচ্চিত্র নির্মাতা লুৎফি ওমর আকদ। এটা
বলা মোটেও অতিরঞ্জিত হবে না যে
তিনি ছিলেন তার সময় এবং
তার পরবর্তী সব সময়ের জন্যই
একজন প্রসিদ্ধ নির্মাতা। ওমর আকদই প্রথমবারের
মতো সফলতার সঙ্গে চলচ্চিত্রে শব্দের সংযোগ ঘটাতে পেরেছিলেন। তার নির্মিত প্রথম
চলচ্চিত্র ‘স্টাইক দ্য হোর; (vurun kahpeye,1949)। তার শ্রেষ্ঠ
নির্মাণের মধ্যে রয়েছে ‘দ্য ব্রাইড’, ‘দ্য
ওয়েডিং’, ‘দ্য স্যক্রিফাইস’ ইত্যাদি।
এই সময়ের মধ্যে বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট পরিচালক যেমনমেতিন এরকসান, আতিফ ইলমাজ, ওসমান সিনভ এবং মেমদুহ উনের মতো বেশ কয়েকজন চলচ্চিত্র নির্মাণে কাজ করেছেন।
ইয়েসিলকামের
যুগ
এই সময়কাল ষাটের দশক থেকে গত
শতাব্দীর আশির দশকের মাঝামাঝি
পর্যন্ত বিস্তৃত। এমন একটি সময়কাল
যা তুর্কি চলচ্চিত্র বিকাশের সবেচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়। এ যুগপর্বে
চলচ্চিত্র নির্মাণ উল্লেখযোগ্যহারে বৃদ্ধি পায় যে ১৯৭১
সালে কেবল এক বছরের
মাঝেই তিন শতাধিক চলচ্চিত্র
নির্মিত হয়। প্রথমবারের মতো
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট কেন্দ্রিক সিনেমা নির্মিত হতে দেখা যায়।
পাশপাশি চলচ্চিত্রে নতুন আঙ্গিকের উপস্থিতি
দৃশ্যমান হয়। যেমন-জাতীয়তাবাদী
চেতনা, রাজনৈতিক বিপ্লব কিংবা তুর্কি সংস্কৃতি ও লোকশিল্পকে সিনেমার
ভাষায় ব্যক্ত করার মতো নতুন
ধারার সৃষ্টি হয়।
এ সময়ের একজন প্রসিদ্ধ নির্মাতা
হলেন Yilmaz Guney, যিনি চলচ্চিত্রে একটি
প্রথাগত চিন্তার পরিবর্তন এনেছিলেন যে কেবল সুদর্শন
হওয়াই সিনেমায় নায়ক হওয়ার মাপকাঠি
নয়। এমনকি তুর্কি সিনেমার ইতিহাসে তিনি প্রথমবারের মতো
কান চলচ্চিত্র উৎসবে পাম ডি’অর
(Palme d’Or) পুরস্কার পান এবং এরপর
থেকে তুর্কি চলচ্চিত্র ধীরে ধীরে আন্তর্জাতিক
অঙ্গনে প্রবেশ করতে থাকে।
চলচ্চিত্র নির্মাতা Metin Erksan পরিচালিত ড্রাই সামার (Susuz Yaz,1964) সিনেমাটি তুর্কি সিনেমার ইতিহাসে নিয়ে এলো আরও একটি সম্মানজনক পুরস্কার-গোল্ডেন বিয়ার অ্যাওয়ার্ড। তবে সত্তরের দশকের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা তুর্কি সিনেমায় যে স্থবিরতার সৃষ্টি করে তার ফলস্বরূপ ১৯৯১ সালে দেখা যায় বার্ষিক সিনেমা নির্মাণের সংখ্যাটি এসে দাঁড়ায় ত্রিশের ঘরে।
আধুনিক
তুর্কি সিনেমা
নব্বইয়ের
দশকে তুর্কি সিনেমা যখন সর্বোচ্চ স্থবির
সময় পার করছিল, তখন
টিভি চ্যানেলগুলো সেই স্থবিরতা কাটিয়ে
উঠতে অভাবনীয় ভূমিকা রাখে। নতুনভাবে তুর্কি নাটক, সিনেমার প্রেক্ষাপট ও আঙ্গিক তৈরি
হতে থাকে নবীন নির্মাতা
ও শিল্পীদের হাত ধরে। এ
সময়ে জনপ্রিয়দের মাঝে উল্লেখযোগ্য হলেন-Nuri
Bilge Ceylan, Dervis Zaim এবং Zeki Demirkubuz।
১৯৯৬ সালে চলচ্চিত্র পরিচালক
Yauvz Turgul -এর দ্য ব্যান্ডিট (Eşkıya) থ্রিলার সিনেমাটির
বিপুল জনপ্রিয়তার মধ্য দিয়ে দীর্ঘ
স্থবিরতার অবসান ঘটিয়ে তুর্কি সিনেমার নতুন পথচলার শুরু
হয়।
গত প্রায় তিন দশক ধরে নানা ক্যাটাগরিতে তৈরি হওয়া আধুনিক তুর্কি সিনেমার বৈচিত্র্যময়তা এবং একইসঙ্গে সমৃদ্ধ তার পথচলা। ড্রামা, রোমান্স, ক্রাইম থ্রিলার, হরর, ইতিহাসভিত্তিক সিনেমা, কমেডি, মিস্ট্রি, সাই-ফাই-কী নেই তুর্কি সিনেমার ঝুলিতে! কিন্তু কিছু সিনেমা থাকে যেগুলো সব প্রজন্মের কাছেই বিশেষ আবেদন রাখে। আর তেমনি কিছু সিনেমা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক এবার।
মাদার
ল্যান্ডস হোটেল (Anayurt Oteli)
বিখ্যাত
তুর্কি লেখক Yusuf Atilgan-এর উপন্যাস অবলম্বনে
নির্মিত ক্রাইম, ড্রামা ঘারানার এই সিনেমাটির পরিচালক
Anayurt Oteli, যিনি একাধারে একজন লেখক, প্রযোজক
ও চলচ্চিত্র নির্মাতা। ১৯৮৭ সালে নির্মিত
এই সিনেমায় দেখা যায়, তুরস্কের
একটি মফস্বল শহরে একটি ছোট
হোটেল মালিক Zebercet নামের মধ্যবয়সী এক নিঃসঙ্গ পুরুষকে।
হঠাৎ একরাতে একজন সুন্দরী নারী
থাকতে আসে তার হোটেলে
এবং তার পর দিনই
চলে যায় এটা বলে
যে সপ্তাখানেকের মাঝে আবার ফিরে
আসবে। কিন্তু আর ফিরে আসে
না। অপরদিকে হোটেল মালিক Zebercet এক রাতের পরিচিত
সেই নারীর কল্পনায় বিভোর হয়ে তার জীবনে
ঘটে যায় আমূল পরিবর্তন।
আর এভাবেই সিনেমার প্লট এগোতে থাকে।
হোটেল মালিক Zebercet-এর চরিত্রে অভিনয়
করেছেন বিশিষ্ট তুর্কি অভিনেতা মাজিদ কোপার (Macit Koper)।
পিয়ানো
পিয়ানো কিড (Piano Piano Bacaksiz)
১৯৯১ সালে নির্মিত এই সিনেমাটির প্রেক্ষাপট পেছনের দিকে। ১৯৪০ সালের দিকে যখন তুরস্কের গৃহযুদ্ধ শেষ; কিন্তু পার্শ্ববর্তী দেশগুলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। যুদ্ধের ভয়াবহতা কাটিয়ে উঠতে থাকা ভীতসন্ত্রস্ত একটি পরিবারের শান্তির আশায় দিন যাপন করতে দেখা যায়। সেই পরিবারেরই এক ছোট শিশুর চোখে যুদ্ধের ভয়বহতা, আতঙ্ক, মমতা, বেঁচে থাকার আশা সামগ্রিক একটি অনুভূতির প্রতিফলন দেখা যায়। সিনেমাটির চিত্রনাট্য এবং পরিচালনায় ছিলেন Tunç Basaran। অপর দিকে অভিনয়ে দেখা যায় Emin Sivas, Serap Aksoy এবং Rutkay Aziz, Aysegul Unsal।
১৯৮৩
সালে নির্মিত এই তুর্কি সিনেমাটির
নির্মাতা একাধারে একজন লেখক, পরিচালক
ও রাজনৈতিক কর্মী ইলমাজ গুনি (Yilmaz Güney) এবং এটি তার
শেষ কাজ। বেশিরভাগ সেরা
কাজের মতো (যেমন-BIj¸wb) নিজের
দেশে তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার
উপর ভিত্তি করে সিনেমাটি তৈরি
করেছেন। প্রধান চরিত্রে অভিনয় করে একদল তরুণ
ভোটাধিকারহীন অনাথ, যারা তুরস্কের একটি
শহর আঙ্কারার একটি কারাগারে আটক।
এই তরুণেরা প্রতিনিয়ত রক্ষীদের দ্বারা নির্মমতা ও ধর্ষণের শিকার
হয়। বন্দিরা শেষ পর্যন্ত একটি
নিষ্ক্রিয় বিদ্রোহ করে এবং কাহিনি
এভাবেই এগিয়ে যেতে থাকে।
সামারসল্ট
ইন আ কফিন (Tabutta Rövaşata)
কেন্দ্রীয়
চরিত্রে অভিনয় করেন মাহসুন নামের
একজন গৃহহীন, বেকার ও ছন্নছাড়া এক
যুবক। কখনো গাড়ি চুরি
আবার কখনো জেলেদের সঙ্গে
মাছ ধরে বেঁচে থাকার
চেষ্টা করা মাহসুন এক
পতিতার প্রেমে পড়ে যায় গল্পের
এক পর্যায়ে। তুরস্কের প্রাত্যহিক জীবনের একটি ধারণা পাওয়া
যায় এই সিনেমা থেকে।
প্রথাগত ধারার সিনেমা থেকে বের হয়ে
এসে আর্টফিল্ম ঘরানার এই সিনেমাটি ধ্রুপদি
তুর্কি সিনেমার তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে। তুর্কি
চলচ্চিত্র নির্মাতা Dervis Zaim পরিচালিত এই সিনেমাটি মুক্তি
পায় ১৯৯৬ সালে।
ইনোস্যান্স
(Masumiyet)
১৯৯৭
সালে মুক্তি পাওয়া এই তুর্কি সিনেমাটি
মধ্যবিত্তের পারিবারিক জীবন কাঠামো কেন্দ্রিক
একটি প্লটে নির্মিত হয়, যেখানে সাজাপ্রাপ্ত
এক আসামির জীবনে পরিবার থেকে দীর্ঘ বিচ্ছিন্নতা
তুলে ধরা হয়। পাশপাশি
অপরিচিত এক পরিবারকে আপন
করে পাওয়ার মানবিক একটি গল্পকে কেন্দ্র
করে সিনেমাটি দর্শকের মন জয় করে
নেয়। সিনেমাটির একইসঙ্গে চিত্রনাট্য ও পরিচালনায় ছিলেন
Zeki Demirkubuz।
এছাড়াও ২০০০ সাল পরবর্তী জনপ্রিয় তালিকায় থাকা তুর্কি সিনেমাগুলোর মাঝে রয়েছে, ‘ফেইট’ (Yazgı, 2001), ‘তাকভা-এ ম্যানস ফিয়ার অভ গড’ (২০০৬), জার্মান-তুর্কি যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত সিনেমা ‘দ্য এইজ অভ হ্যাভেন’ (Yaşamın Kıyısında, 2007), ‘উইন্টার স্লিপ’ (Kış Uzkusu, 2014), ‘ওয়ান্স আপঅন এ টাইম ইন আনাতোলিয়া’ (Bir Zamanlar Anadolu’da, 2011), ‘দ্য মিরাকেল’ (Mucize, 2015), ‘দ্য ওয়াইল্ড পিয়ার ট্রি’ (Ahlat Agaci, 2018), ‘বার্নিং ডেইজ’ (Kurak Günler, 2022) ইত্যাদি। গত দুই দশকে আন্তর্জাতিক মানের সিনেমা নির্মাণ করে তুর্কি সিনেমার জনপ্রিয়তা বেড়েছে বহুগুণে।
টিভি
সিরিয়াল
বর্তমান সময়ে সিনেমার পাশাপাশি টেলিভিশন ধারাবাহিকে জনপ্রিয়তায় শীর্ষে তুর্কি সিরিয়ালগুলো। গল্পের বৈচিত্র্য, অ্যাকশন, অ্যাডভেঞ্চার, রহস্য, তুরস্কের ইতিহাস-ঐতিহ্য-সংস্কৃতি-আভিজাত্য, ধর্মীয় মূল্যবোধ, রাজত্ব-রাজা আর শাসন ব্যবস্থার নান্দনিক উপস্থাপন, সংলাপ, অভিনয়, সংগীত আয়োজন, পোশাক ও সেট ডিজাইন বেশ নজরকাড়া। যার ফলে তুর্কি সিরিয়ালগুলো বর্তমানে দর্শকপ্রিয়তায় বেশ দাপুটে অবস্থানে আছে।
বাংলাদেশে
সম্প্রচারিত তুর্কি নাটকের মধ্যে জনপ্রিয়তার তালিকায় রয়েছে তুরস্কের ত্রয়োদশ শতাব্দীর ঘটনা অবলম্বনে ঐতিহাসিক
নাটক ‘দিরিলিস : আরতুগ্রsল’, ষোড়শ শতাব্দীর
অটোম্যান সাম্রাজ্যের ওপর ভিত্তি করে
নির্মিত ‘সুলতান সুলেমান’ ও ‘কোসেম সুলতান’
এবং সামাজিক নাটক ‘বাহার’, ‘ফাতমাগুল’, ‘ফেরিহা’। তুর্কি ভাষায়
নির্মিত এই সিরিয়ালগুলো বাংলাদেশসহ
৮০টির মতো দেশ তাদের
নিজস্ব ভাষায় ডাবিং বা সাবটাইটেলসহ প্রচার
করে থাকে।
আধুনিক
রাষ্ট্রভিত্তিক পৃথিবীতে নাটক ও সিনেমা
শিল্পের এমন একটি জায়গা
যেখানে কোনো একটি জাতির
ইতিহাস, ধর্ম, দর্শন, সংস্কৃতি, রাজনীতি, অর্থনীতি, ভাষা, প্রেম, বিপ্লব সব কিছুর একটি
সামগ্রিক প্রতিফলন ঘটে। আর শিল্পের
সাবলীল চর্চা ও তার সংরক্ষণই
একটি জাতির সংস্কৃতির বহমানতাকে বাঁচিয়ে রাখতে পারে।