তারা আছে, তারা নেই

এক

শেষ রাতে বুঝি হালকা বৃষ্টি হয়ে গেছে। পায়ের তলায় প্যাঁচ প্যাঁচে কাদা। বাতাসে তাজা ভাব। ধুলোহীন চারদিক। এখানে যারাই এসেছেন তাদের চোখে মুখে তাড়া, হাতে হাতে ভিডিও ক্যামেরা তাক করা। কেউ কারো দিকে তাকাচ্ছে না, কথা বলছে না। ধবধবে সাদা পাঞ্জাবি, তাতে সুগন্ধি মাখা প্রায় সবার। আমি শেষ মুহূর্তে একটা খদ্দরের চাদর চাপিয়ে নেমেছি। পায়ের চটি কাদায় মাখামাখি। কিন্তু কে দেখবে, এখানে তেমন কী পরে এলাম! 

একটু দূরে শাহানার শরীরটা রাখা। ওর ভাইয়ের সাথে চোখাচোখি হলো একবার। দৃষ্টিতে তাচ্ছিল্য প্রকট প্রথম দিনের মতোই। আর যারা যারা এসেছেন তাদের ভেতর দু-একজন শাহানার অফিসের হবে, আত্মীয়কুলেরও আছে হয়তো দু-একজন। মুখগুলো চেনা-অচেনায় মেশানো। সকালে ফোনটা যখন এলো ঘুমে তলিয়ে ছিলাম। 

গোটা রাত বারান্দায় বসে, ভোরের দিকে ঘুমোনোর অভ্যেস অনেক দিনের। তবে আজই যে শাহানাকে কবর দেওয়া হবে জানতাম না। গতকাল সন্ধের দিকে ওর ছেলে-মেয়ে যখন জানাল আসতে পারছে না তখনো আমাকে শাহানার ভাই জানানোর প্রয়োজন মনে করেনি। কবরের মাটিগুলো কোদালের পর কোদাল উঠে এসে স্তূপ হচ্ছে একপাশে। আমি মাটির রঙ দেখছি একমনে, আশ্চর্য প্রতি কোপের মাটি আলাদা লাগছে আমার কাছে। কেউ একজন বলে বসলো, তার দেরি হয়ে যাচ্ছে। জরুরি কাজ ফেলে এসেছে।

তখনই ঝুপ করে প্রাচীর ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা পলাশ গাছ থেকে একটা পলাশ পড়ল নিখুঁত করে খোঁড়া সদ্য গর্তটাতে। ফুলসহই কোদালের জিহ্বায় মাটি জড়ো হলো ওপরে আরওখানি। ফুলটা তুলে নিলাম চট করে। এই গাছটি আমাদের বারান্দার নিচে শাহানাই লাগিয়েছিল। যে বছর প্রথম ফুল ফুটল, ও তখন ফুকেটে স্কুবা ডাইভিং করছে মেয়েকে নিয়ে। এরপর কতবার ফুটেছে, কতবার ঝরেছে; কিন্তু শাহানার সময়ই হয়নি বারান্দায় বসে পলাশ দেখবার। আজ দেখছে কি?

আরও একটা খাটিয়া ঢুকল গোরস্তানে। মৃদু কান্নার আওয়াজে তাকালাম ওদিকে। না, তারা কেউ সাদা রঙে সজ্জিত হয়ে আসেননি। পরিপাটি হয়ে কেবল একজনই এসেছে। কাঁদছে আর হাতের তালু দিয়ে চোখ মুছছে, পরিপাটি সাজে সেই-ই। চশমা আনিনি, ফলে মুখটা তেমন স্পষ্ট নয়; কিন্তু এই সাজে কবরস্থানে তার আসার কথা না। চুলের বেণিতে হলুদ ফুল, শাড়ি, চুড়ি, মালাতে হালকা কমলা, গাঢ় কমলা, মৃদু বাসন্তী রঙের ছড়াছড়ি। মনের অতল থেকে কেউ যেন ধাক্কা দিল আলতো-“ওরে হতবুদ্ধি, ভুলে গেছিস আজ বসন্ত!” আমি মেয়েটির দিকে নির্লজ্জের মতো তাকিয়ে আছি। ওর সুন্দর কান্না অনেক দিন পর মনে করিয়ে দিল, এটা কবরস্থান, কেউ মারা গেছে আজ।

শাহানাকে নামানো হবে এবার। আমাকে সাদা পাঞ্জাবিদের কেউ একজন হাত ধরে সামনে ঠেলে দিল। ওর ভাই ঠান্ডা গলায় জানিয়ে দিল আমাকে ধরতে হবে না। সবাই দোয়া পড়ছে, বিড়বিড় করছে। আমি শুধু শাহানার ভাইয়ের ফোনের স্ক্রিনে দেখছি, রাসেল আর ইরার মুখ, মায়ের শেষকৃত্যে অসাড় মুখে তাকিয়ে আছে কেবল। ওদের দিকে এটাই বোধহয় শেষ তাকানো আমার। শাহানার শরীরটা মাটি ছুঁলো। সবার ক্যামেরায় মুহূর্তে শাহানার শেষ শয়ন আরও একবার। মুঠো মুঠো মাটি ছড়িয়ে পড়ছে। যে মুঠোতে পলাশটি গোঁজা ছিল তাতেই মাটি তুলে ছড়িয়ে দিলাম। আবারও কেউ বলল, আরে বাম হাতে না, বাম হাতে না, ভাই ডান হাতে দিন। হুজুর মহাব্যস্ত হয়ে ওদিকের দলে চলে গেলেন। যেখানে এখনো কান্নার, শোকের থমথমে মুখগুলো থেকে দোয়া উঠে আসছে কারবালার মাতমের মতোন। অথচ আজ বসন্ত!

আরে খেয়ালই করিনি। হ্যাঁ কোকিলও ডাকছে। পলাশের ফুলন্ত ডাল নুয়ে আছে কবরগুলোর দিকে। যেন ওরাও দোয়া পড়ছে। আমাদের দলের সাদা পাঞ্জাবিরা তাড়া খাওয়া মোষের মতো ছুটে পালাল একপ্রকার। শাহানার ভাই কাছে এসে হাতটা ধরে বলল, ‘তোমার এভাবে আসা ঠিক হয়নি। শুক্রবার উত্তরায় দোয়া পাঠ, যদি ইচ্ছে হয় এসো। আর এই বাড়িটা পারলে দেখে রেখো। শাহানা খুব ভালোবাসতো, আম্মা তো এখানেই মারা গিয়েছিল।’ পরের কথাটা আমার জন্য ছিল না। মানুষটার হাত কাঁপল একটু। তার মতো আমিও তাকিয়ে আছি সামনের পাঁচতলা বাড়িটার দিকে। যাদের বাড়ি তারা আজ এই মাটির তলে, নিচে, অনেক নিচে। 

-ঘরে চলেন ইউনুস ভাই। 

-নাহ!

ডান হাতের কব্জিটা ছেড়ে শান্ত পায়ে এগুলেন। তার হাতের চটপটে ঘড়িতে অনেকগুলো মিসকল জমা হয়েছে। উত্তরায় যেতে যেতে সেসবে ডুবে যাবেন। মৃত বোনের কবর, মায়ের বাড়ির স্মৃতি, দোয়াপাঠ সমস্ত ডুবে যাবে সামনে এগিয়ে যাওয়ার কাজের চাপে। তীব্র দৌড়ে, নতুন নতুন পণ্যের চমকে সত্যিকারের কবর হয়ে যাবে আজকের দিনটি। তিন দিন আগেও শাহানার শরীর জ্যান্ত হাড়, মাংস, রক্ত নিয়ে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আমার সঙ্গে কথা বলতো। সেদিন সকালে অফিসে গিয়ে ফোনে বলেছিল শুধু, 

- পান্না, আমার ফিরতে দেরি হবে আজ; তোমার সঙ্গে যাওয়া হবে না বিকেলে। 

ভালো-মন্দ, কালো-সাদায় আমরা অনেকগুলো বছর একসাথে কাটিয়ে দিয়েছিলাম। রাগে, উত্তেজনায়, প্রেমে, আহ্লাদে, অভিমানে, অপ্রেমে, চাতুরীতে, সত্যি-মিথ্যায় সবটা নিয়েই আমরা ছিলাম ঘরে-বাইরের স্বামী-স্ত্রী। শাহানার মাটির বিছানায় হাত বুলিয়ে দিলাম সামান্য। পানসে থিকথিকে একটা কেঁচো সেঁধিয়ে গেল মাটিতে। রোদ চড়ে গেছে, অন্য মানুষটির শরীর নামছে এখন। কল দেয়া পুতুলের মতো আমিও মুঠোতে মাটি নিয়ে ছিটালাম। দোয়াও বিড়বিড় করেছি কী করিনি জানি না। কিন্তু মন মুষড়ে উঠছে অজানা ব্যথায়। যেন আমারই কেউ হয়।

-বাবাকে চিনতেন আপনি? মেয়েটির আর্দ্র স্বরে ভিজলাম।

-না।

আহত চোখ আরও আহত হলো তার। কেন যে বললাম চিনি না। কত মিথ্যে কথা জীবনে বলেছি, আজ বললে কী হতো! মৃদু তিরস্কার করলাম নিজেকে। কয়েক কদম আসতেই মেয়েটি ছুটে এলো। 

-ওই পলাশের ডালটি পেড়ে দেবেন? বাবা খুব ভালোবাসতেন। ওদের বললেই ধমক খাবো। 

আমার লম্বা শরীর আর লম্বা হাত দুটোই কোনো কাজে আসলো না। চোখের দৃষ্টিতে যা কাছে মনে হচ্ছে, সেটা তো নাগালে না। যদিও লাফ দিলেই পারব জানি। কিন্তু এখানে পরিষ্কারভাবে অসম্ভব তা। 

-তুমি কি দাঁড়াবে একটু, ওই যে তিনতলার বারান্দাটা দেখছ, ওটা আমার ঘর। ওখান থেকে সহজে নাগাল পাবো। 

মেয়েটির স্বর এই প্রথম তার সাজগোজের সঙ্গে মিলেমিশে এক হলো।

-আমি পাড়তে চাই, আপনার অনুমতি থাকলে যেতে পারি। 

আমাদের কথার ফাঁকেই অন্যরা ব্যস্ত পায়ে ছুটে গেছে যে যার মতো গেটের দিকে। মেয়েটির দিকে কারও মনোযোগ নেই।

-ওরা চিন্তা করবে না। জানিয়ে এসো। 

অদ্ভুত শূন্য হাসি খেলে গেল ভেজা গালে তার।

-ওরা বাবারই কেউ হয়ে ওঠেনি কোনোদিন, আমার জন্য কী চিন্তা করবে?

ঘাড় ফিরিয়ে নামের ফলকটা দেখলাম। ফুলের তোরণেও নানা বিশেষণ যুক্ত করা নামের আগে। আরেহ, চিনিই তো। ইনি তো ইংরেজির অধ্যাপক ঢাকা ভার্সিটির। কলাম লিখতেন কাগজে। কী একটা বিতর্কে চাকরিটা তার যেতে বসেছিল বছর পাঁচেক আগে। খুব লিখতেন ভদ্রলোক। আহা!

-আমাদের লিফট নেই। একটু কষ্ট করে ওপরে উঠতে হবে বললাম। 

সিঁড়ি বাইতে বাইতে হড়হড় করে কথা বলছে মেয়েটি। 

-ভাবতে পারেন, ও বাসার কাজের লোক আমাকে ফোন করে জানিয়েছে। তা না হলে কেউ আমাকে জানাতোই না পর্যন্ত। কী পাষণ্ড সব! আমি এসেছি তাতেই তাদের মুখ কালি। নিজের বাবাকেও দেখতে দিচ্ছিল না ওরা!

মেয়েটির চোখে-মুখে কান্নার ঢেউ এসে জড়ো হলো পুনরায়। দরজা খোলা রেখেই চলে গেছিলাম। ঘরে ঢুকেই আমার বসার ঘর। তারই পাশে বারান্দা। সেখানে বেতের চেয়ার পাতা। একটা বড় শূন্য খাঁচা ঝুলছে সিলিংয়ে। একসময় পাখি পুষতেন শাহানার মা। দীর্ঘদিনের অভ্যাসে মেয়েটির জন্যে এক গ্লাস জল নিয়ে আসলাম খাবার ঘর থেকে। ঠায় দাঁড়িয়ে একমনে বাবার কবর দেখছিল মনে হয়। কী বলব ভেবে পেলাম না। ছোট্ট একটা ডাল ভেঙে নিয়ে জানাল,

-ধন্যবাদ, কী সুন্দর এ জায়গাটা। 

গ্লাস দেখিয়ে বললাম,

-সকালে খেয়েছো কিছু?

ঢক ঢক করে জল খেয়ে মাথা নাড়ালো। 

-একটু বসো। দেখি কী আছে টেবিলে।

-না না এখন খাবো না। আসি আগে।

বলেই ব্যাগ থেকে ফোন বের করে আমার নম্বর চাইল। দিলাম, একটা কলও এলো টেবিলে পড়ে থাকা ফোনে।

ও চলে যাবার পরে ফোনটা নিয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়ালাম। কোথাও কান্না নেই। লাশ নেই। শান্ত ফাঁকা বুদ্ধিজীবী কবরস্থান। মেয়েটি ফুলের ডালটা গেঁথে দিল বাবার কবরে। পর পর দুটো ছবি তুললাম। হাতটা বাঁ দিকে ঘুরিয়ে শাহানার কবরের ছবিও তুললাম। 

দুই

ফাল্গুন কেটে গেছে। বৈশাখ মাস এখন। রোদের তেজে টেকা দায়। আমার রেস্তোরাঁ ব্যবসা তুঙ্গে একেবারে। মাঝে মাঝে অফিস ঘরটায় গিয়ে বসি। না আসলেও চলে। বাড়িতেই একটা অফিস ঘর আছে। দেয়ালের স্ক্রিনে গোয়েন্দা ক্যামেরার ছবি প্রতিটি কর্নারের। ফলে হাত-পা গুটানো মানুষ আমি একপ্রকার। শাহানা চলে যাবার পর থেকে অ্যালিজিকেও বিদায় করেছি। 

বাহারি ইলেকট্রনিক্সের যন্ত্র অন্যদের ঘিরে থাকলেও আমি এখনো মানুষের জন্যে অপেক্ষা করি, মানুষের কথা শোনার কৌত‚হলে মরি। আজ থেকে প্রায় নয় বছর আগে প্যানডেমিকে আমাদের তিন বন্ধুর এই রেস্তোরাঁ ব্যবসাটা শেষ হয়ে গিয়েছিলপ্রায়। ওরা হাল ছেড়ে আমার ঘাড়ে চাপিয়ে পালাল। দাঁতে কামড় দিয়ে বেড়ালের মতো বাচ্চা পার করার মতো খেটেছি টানা দুই বছর। 

জীবাণু আতঙ্কে মানুষ সে সময় দিশেহারা। খাবারে অতিরিক্ত নজর দিচ্ছিল নগরবাসী। সবখানে একটা হৈচৈ ফেলে দিয়েছিল নতুন শব্দ ‘অর্গানিক’। আমি সেটাকেই আঁকড়ে ধরে সামনে চলতে শুরু করলাম। শাহানার প্রথম স্বামীর রিসোর্ট ছিল গাজীপুরে। সেটাতে কী করে যেন অংশীদার হলো ও। পরেরবার পুরোটাই আমি ভেঙে নতুনভাবে কৃষি খামারে রূপান্তর করে ফেললাম। সে একদিন গেছে বটে! তারই সুফল পাচ্ছি এখন। 

ওর স্বামীর থেকে অনেক চোট পেতে পেতে অনেকটা রুক্ষ আর একমুখী স্বভাবের হয়ে উঠেছিল। আমার তা নিয়ে বিশেষ আক্ষেপও ছিল না। শহরে তখন সম্পর্কের ভাঙচুর তুমুল। ঘরগুলো ভাগ হচ্ছিল সাততাড়াতাড়ি। সন্তানেরাও। সময়ের সঙ্গে দ্রুততালে পা মেলাতে গিয়ে সম্পর্কে দানা বাঁধছিল না মোটেও।

সেই হুড়োহুড়ির কালে আমি আর শাহানা এক হয়েছিলাম। না রেজিস্ট্রি বিয়ে-টিয়ের দিকে যাইনি দুজনে। ভালোলাগার তীব্রতা আমাদের এক ছাদের তলায় এনে ফেলে দিয়েছিল। পরস্পর স্বাধীন আর ব্যস্ত জীবনের আচ্ছাদনে ঘিরে ছিলাম। শাহানাকে পুরোটা পাইনি যেমন, বুঝিওনি ওত। আমাকেও বুঝতে আসতে চাওয়ার রোখ দেখিনি ওর ভেতর। কাদামাটি আর বিশুদ্ধ খাবারের পেছনে ছুটছিলাম তখন। মাঝে মাঝে গাজীপুর থেকে ফিরে এসে দেখতাম শাহানা ওর বন্ধুর বাড়ির পার্টি থেকেই ভিডিও কল করে বলত আজ আসছি না।

আর সেই রাতটাতেই কিনা কাঙালের মতো পেতে ইচ্ছে হতো ওকে। না পেয়ে নিজের অস্ত্র নিজেই তুলে নিতাম হাতে। খুলনার বাড়িতে আমাকে খুঁজে পেতাম সে রাতে। বড় আপার নতুন বিয়ে হয়েছে। সারা বাড়ি আলপনা, এমনি এমনি খিলখিল হাসত সবাই। দুপুরে বড় আপা দুলাভাই ঘরে খিল দিলে আমার টসবগে তরুণ শরীরে ঝিম ধরত। আগুনের হলকা গিলে খেতাম ঢক করে। পাড়ায় মান্দার গাছে ফুটে থাকা ফুলের মতো কান লাল করে বড় আপা বিকেলে চা খেতে দিত সবাইকে। আমাদের বাড়িটা তার পরে আর ছিল না। 

তিন

এ বাড়িতে কোনো এক ভাড়াটিয়া চলে যাচ্ছে আজ। মালপত্র ওঠানামার শব্দে ঘুমটা ভাঙল যখন সকাল ১১টা ঘড়িতে তখন। লিফট নেই এখানে। সহজে তাই ভাড়াটে পাওয়া যায় না। বেসরকারি একটা ব্যাংকের ফাইলপত্র রাখার গোডাউন হচ্ছে খালি বাসাটাতে। কাঠের দরজা ফেলে দিয়ে ওরাই আধুনিক সুব্যবস্থার যন্ত্রটন্ত্র বসাচ্ছে। ফলে শব্দ যন্ত্রণায় পাগল হয়ে গেলাম। রেস্তোরাঁয় এলাম কোনোমতে। সকালের এভাগে লোকজন তেমন খেতে আসে না। সামান্য খাবার মুখে তুলে একটু হিসাবে চোখ বুলাচ্ছিলাম। ফোনটা বাজল এই সময়। ট্রু কলারে নাম এসেছে পল্লবী আযাদ। মনে করতে পারছি না এই নামে কে আছে আমার? নামটার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই কেটে গেল। নিজেই কল দিলাম।

-হ্যালো, চিনতে পারছেন?

-না তো।

-বাবার জন্যে ফুল নিয়েছিলাম আপনাদের বারান্দা থেকে। স্যরি সেদিন যেতে পারিনি আর। 

-আচ্ছা, কেমন আছেন এখন?

-ভালো। পরশুদিন মিরপুর গিয়েছিলাম। দেখলাম আপনি বারান্দায় বসে ছিলেন। অনেকবার হাত নেড়ে ডেকেছিলাম। 

-ওহ! তাই নাকি। খেয়াল করিনি তো। আপনি চাইলে কফি খেতে পারি কোথাও। 

-নিশ্চয়ই! 

নিজের রেস্তোরাঁর ঠিকানা পাঠিয়ে বসে আছি। আজও হতশ্রীদশা আমার। সাধারণ পাজামার ওপর ঢলঢলে সুতি জামা গলিয়ে এসেছি। তাতে অবশ্য কী আসে যায়। অপেক্ষা অনেক সময় ক্রুশবিদ্ধ যিশুর মতো যন্ত্রণার। হাতের তালু বেয়ে ঘাম ঝরছে এয়ারকুলার থাকা সত্ত্বেও। খুলনার টুটপাড়ার বাড়িটায় বাবা সুন্দর পাখা লাগিয়েছিলেন।

তখনকার দিনে ওটাই ছিল বিশাল ব্যাপার। আম্মা বাজারের পয়সা বাঁচিয়ে ভালো পর্দা লাগাতেন। ভালো চাদর বিছাতেন। আমাদের নিয়ে খালিশপুর বোনের বাসায় যেতেন। সবকিছু একসঙ্গে পেতাম না কোনোদিন আমরা। বড় আপার ছিল চুল কাটার শখ। অফিস ছুটির দিনে ছাদে টুল পেতে বাবা আমাদের চুল কেটে দিতেন।

কিন্তু বড় আপা কাঁদত খুব। ওর বন্ধুদের মতো হতো না বলে। আম্মা পয়সা বাঁচিয়ে আপার চুল কাটিয়ে আনতেন নিউমার্কেট গিয়ে। বয়স বাড়ছে প্রতিদিন আমার। সেই সঙ্গে পুরনো দিনের চর্চাও বাড়ছে মনের তলায়। অনেক দিন বাঁচার ইচ্ছে নেই। দুঃসহ মহামারির পর থেকে প্রতিদিনই নতুন জীবন আমার।

এই যে আজ পল্লবী নামের মেয়েটি আসবে-এই চমকের জন্যই মাঝে মাঝে বাঁচাটা অন্যরকম হয়ে ওঠে। চঞ্চল প্রজাপতির মতো দরজা ঠেলে ও ঢুকল যখন, মনে হলো আবার পঁচিশ বছরের যুবক আমি। প্রথম কথা ওর থেকেই শুরু হলো। সে কথার তাল, লয়, সুর হাজার রাগে বেজে চলল আমার কানে। কথায় কথায় দুপুর, যখন ও জানাল, আর একদিন আসবে গল্প করতে। দমকা হাওয়ার মতো চলে গেল যখন, রেস্তোরাঁটা বিস্বাদে জবুথবু।

করল্লার মাচাতে নিমের তেতো জল ছিটাচ্ছি আজ। ছোট ছোট হলুদ প্রজাপতি পাতলা ফিনফিনে পাখা মেলে উড়ছে চারদিক। শাহানা দু-একবার এসেছিল শুরুর দিকে। কিন্তু মন দিয়ে দেখত না তেমন। বলত, তুমি যে এমন চাষা হয়ে যাবে কে জানত?

খুব চটেছিলাম সেবার। মিরপুরে একাই ফিরেছিল ও। শাহানা ঠোঁটে কি একটা সার্জারি করেছিল। কাছে ঘেঁষতে দিত না তেমন। ওর সুন্দর থেকে আরও সুন্দর হওয়ার নেশায় সম্পর্কের সৌন্দর্য কদাকার হয়ে উঠেছিল আমাদের ভেতর। এই খামারে কাজ করে নিমাই মোহন্ত।

বেগুনের ঝোপে গোবর দিচ্ছে সে। সারা গায়ে ঘামাচি ওর। সেই ঘামাচি গেলে দেয় ওর বউ। দূর থেকে ওদের ঘামাচি গেলে দেয়ার দৃশ্য দেখি যখন নিজেকে সুখী দর্শক লাগে। নিমাইয়ের দুই বউ। বড় বউ দিনাজপুরে থাকে। সে ঘরের ছেলেমেয়েদেরও বিয়ে হয়ে গেছে। নিমাই বড় পরিশ্রমী মানুষ। সারাক্ষণ হাসি লেগেই থাকে মুখে। দুপুরে একসঙ্গে খাই আমরা। মাঝে মাঝে ঠাট্টা-তামাশা করি দুজনে। 

-নিমাই তোমার কোন বউ বেশি ভালো?

এক হাত জিহ্বা বের করে নিমাই বলল-

-কী যে বলেন? বউ কি বিচারের জিনিস? দুজনাই ভালো।

আমি হেসে আরও ঘনিষ্ঠ হয়ে প্রশ্ন করি,

-তবুও ভেবে বলো তো দেখি। 

-ভাবতে যাব কেন? দুজন সন্তানের ভেতর কে বেশি ভালো তা কি নির্ণয় করা যায়! বলেন আপনি? 

নিমাইয়ের এই এক ভাব। কথা না বলে পা নাচাতে নাচাতে বউয়ের জন্য সুপারি কাটবে। ওর চিন্তা-ভাবনায় এক গতির নদী ছাড়া কিচ্ছুটি নেই। বউ নাকি সন্তানের মতো! এ কথা নিমাই-ই ভাবতে পারে কেবল! পল্লবীকে বলেছি একদিন এখানে আসতে। নতুন একটা কাজে যোগ দিয়েছে। সময় পায় না। আমার সঙ্গে ওর বয়সের তফাত অনেক। তবু আজকাল বন্ধুর মতোই কথা বলি। অনেকের থেকে আলাদা ও। সাধারণ চেহারা। কিন্তু কোথাও কোনো কিছুর আধিক্য নেই। সেই যে ওর বাবা মরার দিন দেখেছিলাম সাজগোজে এরপর আর দেখিনি। 

ওরই উৎসাহে বরং আমি পরিপাটি থাকি। লম্বা সময় নিয়ে দাড়ি কামাই। মৌমাছির সৈন্য-সামন্তর মতো মধু আহরণ করি। এতটুকু ভুল হতে দেই না। এই যে হুট করে ভালো লাগতে শুরু করেছে জীবন, এর রেশ নিয়ে চলতে পারি নাই কখনো। বারবার ঘন কুয়াশায় ছেয়ে গেছে সবুজ বন। ঝড়ে ওলট-পালট হয়েছে বাড়ি-ঘর। সেইসব ভাঙাভাঙি খেলায় নিজের পাশে কাউকে না পেয়ে মরা পাতা হয়ে যেতাম। তবুও জীবন চরৈবেতি মরা কাঠে শ্যাওলা জমতে জমতে তরতাজা গাছ বলে ভ্রম হয়। শসার মাচায় শত শত প্রজাপতি আজ। ওদের ফুরফুরে মেজাজ, রঙিন আনন্দ আর পাখায় পাখায় আলিঙ্গন দেখে নিজের তরুণ বয়সের কথা মনে পড়ে। 

এমনি প্রজাপতি দুলত আমাদের বারান্দায়। রঙিন কাগজ কেটে বানানো হতো সেসব। বসার ঘরে বড় আপার বন্ধুরা যেদিন আসত মনে হতো বাড়িটা কাশ্মীরের ফুলের হাটবাজার হয়ে গেছে। পাড়ার দোকান থেকে দৌড়ে মুড়ি, চানাচুর আনতাম। শিমু আপা কোমরে ওড়না পেঁচিয়ে পেঁয়াজ কাটত আর চোখ ভেসে যেত জলে। হাসলে টোল পড়ত গালে। সেই শিমু আপা একদিন হুট করে পালাল পাড়ারই এক ছেলের সঙ্গে। ইলেক্ট্রিক মিস্ত্রি ছিল ছেলেটা।

বড় আপাকে আম্মার সে কী বকাবকি। তার পরপরই আব্বা আপার বিয়ে দিয়ে দিল। আমি তখন খুলনা ছাড়ার পথে। সেই শিমু আপার সঙ্গে দেখা একদিন গ্রিন রোডে। চিনতেই পারিনি আমি। ডাকছিল গাড়ির কাচ নামিয়ে। প্রায় ২২ বছর পর দেখা হয়েছিল। মায়ের মতো আচরণ করছিল শিমু আপা। একটু পর পর চোখের পাতা দিয়ে সেই পেঁয়াজ কাটার সময়ের মতো টপ টপ করে জল পড়ছিল। 

সেই সময় আমি পুড়ে ছারখার হয়ে যাওয়া একজন মানুষ। যাকে দেখলে নব্বই দশকের সদ্য তরুণের বুকে রক্ত ছলক দিত, সেই শিমু আপা নিতান্ত অপরিচিত ভদ্রমহিলা মাত্র তখন।  সেদিনের পর থেকে শিমু আপা খুব যোগাযোগ করত। আমারই উদাসীনতায় সেই যোগসূত্রের বিলুপ্তি ঘটে এক সময়। 

চার

টানা দুদিনের ঝড়ে খামারের সব লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। নিমাই, আমি সঙ্গে আরও লোকজন মিলে সারাদিন কাজ করেও কুলাতে পারিনি। স্ট্রবেরিগুলো সব থেঁতলে গেছে শিলে। লাউ, কুমড়ো সব, সব নষ্ট হয়ে গেছে। আজকের মতো ফিরে এলাম। রান্নার বালাই নেই। রেস্তোরাঁ থেকেই খাবার দিয়ে যায়। গোসল সেরে খেতে বসেছি তখনই কলিংবেলটা বাজল। 

-তুমি?

-ফোনটা দেখুন একবার। কথাটা বলেই পল্লবী টেবিল থেকে বোতল তুলে ঢক ঢক করে জল খেল। 

-আমি তো গাজীপুর ছিলাম। ফোন সঙ্গে নেইনি। কী হয়েছে বলো। তার আগে খাবে চলো। 

-হ্যাঁ ভীষণ খিদে পেয়েছে। প্যাকেট খুলে বলল, না না এসব না। ডাল ভাত খাব। 

রান্না ঘরে ঢুকলাম অনেক দিন পর। ডাল, চাল চড়ালাম। পল্লবী থম মেরে বসে আছে তো আছেই। দেয়ালের দিকে তাকিয়ে বলল-

-আপনার ছেলেমেয়েরা এ বাসায় আসে না কখনো? 

-ওরা শাহানার ছেলেমেয়ে। আমার সঙ্গে তেমন ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠেনি কখনো। তোমার বাবার দাফনের দিন শাহানাকেও কবর দেয়া হলো। সেদিনও ওরা আসেনি। 

-কিন্তু সেদিন যে বললেন ফোনে। ওরা আসছে।

-ওহ! চলেও গেছে। ওরা এসেছিল মায়ের সহায়-সম্পত্তি বুঝে নিতে। কবরও দেখতে আসেনি। জানো, এই বাড়িটার দুটো ফ্ল্যাট ছাড়া সবকিছু এখন ওদের।  

-ওহ! আমার বাবার ছেলেদেরই এতদিন ভুল বুঝতাম তাহলে। সবাই এরকম হয়ে যাচ্ছে কেন?

-সময়টাই এরকম।

বৃষ্টি শুরু হলো আবার। ভাত, ডাল খেতে খেতে রাত ৯টা বেজে গেল। গাড়ির চাবিটা নিয়ে বললাম

-চলো তোমাকে পৌঁছে দিয়ে আসি।

-কোথায়?

-তোমার বাড়ি।

পল্লবী কিছু না বলে একটানে টপস তুলে পিঠ দেখাল। সারা পিঠে কালশিটে, চাকা চাকা রক্তাভ সে পিঠ থেকে চোখ সরিয়ে নিলাম মুহূর্তে। 

-আপনাকে দুপুর থেকে কল করছিলাম। না পেয়ে চলে এসেছি। সকালে চলে যাব। 

এই অবস্থায় কী বলব বুঝতে না পেরে ওর পাশে গিয়ে বসলাম। 

-আমারই ভুল! আসলে ইমনের সঙ্গে থাকতে গিয়ে বুঝতে পেরেছি ওর আসল চেহারা। টিভিটা ছাড়–ন। আজকেও খবর পড়ছে নিশ্চয়ই। ছোটবেলায় সৎভাই নানাভাবে অত্যাচার করত। বাবাকে বললেও কিছু বলত না। মাকে বলার পর পাঠিয়ে দিল হোস্টেলে। ভালোবাসলাম, সেও বর্বর, পশুরও অধম!

-কেঁদো না। শান্ত হও। 

পল্লবীর আহত পাখির মতো শরীরটাকে ধরে ধরে শাহানার বিছানায় শুইয়ে দিলাম। জানি না কী ভেবে আমার কাছে এসেছে ও। তবে এই নিয়ে দুবার এ বাড়িতে ব্যথায় দিশেহারা হয়েই এসেছে। ভেজা বারান্দায় এসে কবরস্থানের দিকে তাকালাম। মৃত মানুষদের কোনো ব্যথা নেই, শোক নেই, কান্না নেই। সেই কবে থেকে কবরবাসীর মতো হিম, শোক-তাপহীন হৃদয় হয়ে গেছে আমার। ঢাকা ভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে গেছি ততদিনে। 

খালিশপুরে থাকে তখন বড় আপারা। প্রতি সপ্তাহে আম্মাও বাড়ি হয়ে আসে। পাড়ার বিকেলের চিত্র বদলে গেছে অনেকটা। আমিও আড্ডা দিয়ে অনেক রাতে বাড়ি ফিরি। এশার আজানের পর আম্মা ঘুমিয়ে যায়। আব্বা আমার জন্য অপেক্ষা করে। টিভি দেখে একসঙ্গে খেতে খেতে আমরা এ গল্প সে গল্প করি। বাবা খুব শান্ত স্বভাবের বরাবর। বাবার ব্যাংকের চাকরিতে আমরা মোটামুটি সচ্ছল পরিবারই তখনকার দিনে। 

কখনো উচ্চৈঃস্বরে কথা বলতে দেখিনি তাকে। ভীষণ নিয়মনিষ্ঠ সদালাপী বাবা হঠাৎই কী যে করে বসল। সে রাতে একটু বেশি দেরি করে ফেলি। বসার ঘরে টিভি চলছে। টেবিলে খাবার সুন্দর করে ঢেকে রাখা। বাবার ঘরটায় আলো নেভানো। পরদিন সকালে আমি আর আম্মা আবিষ্কার করলাম বাবা দরজা খুলছে না। সকালের খাবারও খেতে আসছে না। সেই দরজা ভাঙার পর বাবাকে ঝুলন্ত অবস্থায় পাই। লুঙ্গিটা খুলে নিচে পড়েছিল। 

বাবার সেই করুণ বীভৎস দৃশ্য এক মুহূর্তে আমাকে বড় করে দিয়েছিল। আর মাকে ঠেলে দিয়েছিল দীর্ঘ শোকের পাথারে। বাবাকে মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়েছিল। কাউকে কিছু বুঝতে না দিয়ে নীরবে আত্মাহুতি দিয়েছিল বোকার মতো। বাড়িটা শেষ পর্যন্ত বিক্রি করে দেই আমরা। পড়াশোনায় মন বসত না। উদ্ভ্রান্তের মতো এদিক-সেদিক ঘুরি। তারই ভেতর আম্মাও চলে গেল একদিন। মৃত্যু তত দিনে আমার কাছে ভাত খাওয়ার মতো সাধারণ হয়ে গেছে। 

পাঁচ

কবরস্থানে লাশ এসেছে ভোর বেলাতেই। আমার চোখে তখনো নদী ভাঙা গৃহস্থের শূন্যদৃষ্টি। গাবতলীর বড় রাস্তা থেকে ভারী ট্রাকের হর্ন ছাপিয়ে দোয়া-দরুদ শুনতে পাচ্ছি। পল্লবী গভীর ঘুমে। জানি সাড়ে ৭টার দিকে খাবার এসে যাবে। টেবিলে একটা নোট রেখে শুতে গেলাম। একটা নিষ্কলঙ্ক কাম অজগরের মতো পেঁচিয়ে যে ধরেনি তা নয়। কিন্তু সেই বন্য জংলি ইচ্ছাটাকে দমন করতে হয় নিজেকে খুইয়ে দিয়ে। নগ্ন হওয়া এত সহজ নয়। 

অন্তত এই সাতান্ন বছর বয়সে। দেখতে খারাপ নই। এখনো পঞ্চাশের নিচে লাগে দেখতে হালকা-পাতলা গড়নের জন্য। বাবার মতো একটা চোখা নাক পেয়েছি তাতে অনেকের কাছে আকৃষ্ট ছিলাম। কিন্তু সময়ের তীক্ষ্ন তলোয়ারের ধারে যখন যা করার ছিল, যা পাওয়ার ছিল সেসব ফালা ফালা হয়ে কেটে মরে গেছে। স্যাভলন ক্রিম আঙুলের ডগায় করে লাগিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে ওর পিঠের জখমে। কিন্তু আমাদের দুজনার ভেতর কেউই সীমা লঙ্ঘনকারী হতে পারিনি। 

বয়সের দুস্তর ফারাক নাকি ভদ্রতার খোলসে, কোথায় আটকা পড়েছি জানি না। পল্লবীর পিঠের জখম আর জ্যান্তব কামড়ের চিহ্নগুলো জিভ বুলিয়ে আদরের তরঙ্গে ভাসাতে মন চেয়েছে। একটা রাক্ষুসে পাওয়ার গহ্বরে তলিয়ে গেছি আমি। পল্লবী চলে গিয়েছিল নীরবে, না ডেকেই। আমার নোটের কোণে ধন্যবাদ লিখেছিল মাত্র। এরপর কখনো ফোন আসেনি ওর। আমার নিঃসাড় অক্ষম ভালো লাগার কৌত‚হল অকেজো চাকুর মতো পড়ে রইল মাত্র। আজ ষাটে পা দিয়েছি। এমন সুন্দর সকালে পল্লবীকে ফোন দেওয়া যেতেই পারে। ষাট বছর বয়সটায় এইটুকু সাহস থাকা উচিত। ফোনের ওপাশ থেকে পর পর দুবার শ্রুতিমধুর অথচ করুণ বিলাপের মতো ভেসে এলো একটি লাইন আপনি যে নম্বরে কল করেছেন তা এই মুহূর্তে বন্ধ আছে। 

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2025 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh