
প্রতীকী ছবি
আজিম সাহেব খুব চিন্তায় আছেন। আলমারির চাবিটা হারিয়ে ফেলেছেন। বউ বাপের বাড়ি গেছেন, এক সপ্তাহের জন্য। যাওয়ার আগে বলে গেছেন আলমারির চাবিটা যেন দেখে রাখেন। আর সেই চাবিই কি না তিনি হারিয়ে ফেলেছেন, কোনো মানে হয়? নিজেকে ইচ্ছে হচ্ছে জুতা পেটা করেন।
আর সেই রাতেই এক কাণ্ড হলো। বই পড়ছিলেন। চোখের পাতা ভারী হয়ে আসছে। বইটা রেখে লাইট নিভিয়ে ঘুমিয়েও পড়েছিলেন প্রায়। তখন হঠাৎ কী একটা শব্দে ঘুম ভেঙে গেল। প্রথমে বুঝতে পারেননি; একটু বাদেই টের পেলেন ঘরে চোর ঢুকেছে। এবং চোর আলমারি খুলেছে। আজিম সাহেব ভিতরে ভিতরে খুশি হলেন। তার মানে চাবি পাওয়া গেছে। এবং তিনি আনন্দ চেপে রাখতে না পেরে বলেই ফেললেনজ্জ
-ভাই চোর, আলমারির চাবি কোথায় পেলেন?
-মুরব্বি কি জাগা?
-জি আলমারি খোলার শব্দেই ঘুমটা ভাঙল।
-চুপচাপ শুয়ে থাকেন। ঘুমানোর চেষ্টা করেন। আমি কাজের সময় কোনো ঝামেলা পছন্দ করি না।
-না না ঝামেলা করব না। আপনার কাজ করেন। শুধু একটা অনুরোধ।
-কী অনুরোধ?
-আলমারির চাবিটা টেবিলের ওপর রেখে যায়েন।
-আচ্ছা রেখে যাব। ঘুমান।
-জি।
মিনিট দশেক খুটখাট শব্দের পর হঠাৎ চোর কথা বলে উঠল।
-মুরব্বি কি জাগা?
-জি।
-আপনার আলমারিতে তালা মাইরা রাখছিলেন কেন?
-কেন ভাই? প্রশ্নের উত্তরে প্রশ্ন।
-আলমারির ভিতরে তো কিছু নাই। টাকা পয়সা সোনা দানা গহনা সব কই?
-কিছুই নাই?
-না, একটা ভালো শাড়িও নাই যে আমার বউয়ের লাইগা নিমু।
-আশ্চর্য! আজিম সাহেব নিজেও আশ্চর্যবোধক একটা শব্দ করলেন মুখে।
-এই বাসায় ঢোকাটাই লস হইছে। দেন সার্ভিস চার্জটা দেন যাইগা।
-মানে? কিসের সার্ভিস চার্জ?
-আরে মর জ্বালা সব পেশাতেই একটা সার্ভিস চার্জ থাকে। আমগো পেশাতেও আছে। এই যে কষ্ট কইরা আপনের বাসায় ঢুকলাম। এর একটা খর্চা আছে না! সেই খর্চা কে দিব? আমরা চুরি কইরা সার্ভিস চার্জ পোষায়া লই এখন এই বাসায় তো কিছুই পাইলাম না।
-সার্ভিস চার্জ কত?
-৫০০ টাকা
-টেবিলের ওপর মানিব্যাগ আছে। ওখান থেকে নিয়ে যান।
একটু পর। চোর আবার কথা বলে উঠল, গলার স্বরে বেশ বিরক্তি।
-কই? মানি ব্যাগে দুইটা ২০ টাকার নোট। একটা আবার স্কচ টেপ মারা।
-টাকা নাই? ওহ স্যরি স্যরি ... মনে পড়ছে। কালকে মেট্রো রেলের কার্ডটা রিচার্জ করেছিলাম। ওখানেই ৫০০ টাকা চলে গেছে।
-তাইলে কার্ডটাই নিয়া যাই। আপনে আরেকটা কার্ড কইরা নিয়েন। আজিম সাহেব কিছু একটা বলতে গিয়েও বললেন না। তিনি টের পেলেন চোর নাই অদৃশ্য হয়ে গেছে। মানে চলে গেছে।
পরদিন স্ত্রী এসে বললেন। ‘আলমারির চাবি কই?’
-টেবিলের উপর।
-টেবিলের উপর চাবি কই? এই যে তারটা পড়ে আছে।
-মানে?
আজিম সাহেব কাছে এসে দেখেন তাই তো একটা বাঁকা ত্যাড়া তার। তাহলে এটা দিয়েই চোর আলমারি খুলেছে। এটাই তার চাবি। তখন বাধ্য হয়ে সব খুলে বললেন স্ত্রীকে। স্ত্রী ঠান্ডা
মাথায় সব শুনলেন। তারপর লম্বা করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। জানতাম এমন একটা কিছুই হবে।
-আচ্ছা তোমার সোনা-দানা, টাকা পয়সা সব কই?
-সব ডিপ ফ্রিজে লক করে গেছি। তোমার বুদ্ধিতে আমি চলি? এই যে আলমারির চাবি ডিপ ফ্রিজের চাবি। দুটোই সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছিলাম, তোমাকে একটু পরীক্ষা করলাম। আজিম সাহেব ভিতরে ভিতরে স্ত্রীর প্রতিভায় আশ্চর্য হলেন। আরও আশ্চর্য হলেন ডিপ ফ্রিজ যে লক করা যায় এটাও তিনি জানতেন না।
-চোর অবশ্য আমার মেট্রোরেলের কার্ডটা নিয়ে গেছে। আজিম সাহেব হতাশ গলায় বললেন।
-কই এই তো মানিব্যাগের মধ্যে তোমার মেট্রোর কার্ড।
-তাই তো! কার্ডটাও নেয় নাই। অসীম কৃতজ্ঞতা বোধ করলেন চোরের প্রতি। দেশ থেকে সবাই বলে মানবিকতা হিউম্যানিটি এসব উঠে গেছে। কথাটা পুরোপুরি মিথ্যে।