
গল্প। প্রতীকী ছবি
এক
চার বান্ধবী দোকানের বাইরে অপেক্ষা করছে সকাল থেকে, মনে হচ্ছে এতক্ষণ বাইরে দাঁড়িয়ে থেকে তারা শুধু অধৈর্য না, বশীরের ওপর বেশ রুষ্টও হয়ে উঠেছে। বশীর যে তাদের উপেক্ষা করছে তা নয়, কিন্তু যে মনোযোগ তারা চাইছে তা এখনো পেল না। এর জন্য তারা মনে মনে ফুঁসছে, হিংসায় জ্বলতে শুরু করেছে প্রায় এক সঙ্গে। বশীর একটা ফ্লার্ট, এ যুগের কাসানোভা। এক সঙ্গে এত মেয়ের কাছে তার ফষ্টিনষ্টি দেখে রাগে গা জ্বলে যায় চার বান্ধবীর। বশীর অন্য মেয়েদের পছন্দের কাপড় দেখিয়ে মাঝে মাঝে তাদের চার জনের দিকে তাকিয়ে তার ট্রেডমার্ক যে হাসি ছুড়ে দিচ্ছে তা যেন বলছে, এই তো হয়ে গেল। তারপরই আসব তোমাদের কাছে, আমার প্রিয় বান্ধবীরা। একটু ধৈর্য ধরো।
প্রিয় বান্ধবীরা! এই সম্বোধন অনুমান করে তাদের কেউ আনন্দে উৎফুল্ল হয়নি। কারণ বশীর সব মেয়েকে এভাবেই ডাকে। যে মেয়েদের সে এতক্ষণ পছন্দের কাপড় দিল, কাপড় দিতে দিতে হেসে হেসে কথা বলল, তাদেরকেও সে ‘প্রিয় বান্ধবী’ বলেছে। নিজেদের কানে শুনতে না পেলেও তারা তা ভালো করেই জানে। প্লেবয় বশীরের ওটা মজ্জাগত অভ্যাস এবং তা অনেক পুরনো।
অন্য মেয়েদের সঙ্গে হাসাহাসি করছে, পছন্দের কাপড় দেখাচ্ছে একের পর এক-এ নিয়ে চার বান্ধবীর খুব একটা মাথাব্যথা নেই। তারা তার প্রতি বিরক্ত হচ্ছে, ক্রমেই অসন্তুষ্ট হয়ে উঠছে তাদেরকে এতক্ষণ দোকানের বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখার জন্য। শারীরিক কষ্ট ছাড়াও তারা অপদস্থ হচ্ছে মানসিকভাবে তাদেরকে অবহেলা করা হচ্ছে ভেবে। নতুন কাপড় আর পোশাকের জন্য তারাও অপেক্ষা করছে সেই কবে থেকে, দু বছরের ওপর তো হবেই। তারা জানে, অন্য মেয়েরদেরও তাদের মতোই নতুন পোশাকের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে একইভাবে, দীর্ঘ দু বছর। তারা নতুন পোশাক পাক তাতে তাদের আপত্তির কিছু নেই, কেননা তারাও মেয়ে। তাদেরও নতুন কাপড় দেয়া হয়নি, পুরনো কাপড় পরেই থাকতে হয়েছে এতদিন। কিন্তু তাই বলে বশীর তাদের প্রতি এমন পক্ষপাত দেখাতে পারে না। তাদের চারজনের দিকে মাঝে মাঝে মিষ্টি হাসি ছুড়ে দিয়ে অন্য মেয়েদের পোশাক দিতে ব্যস্ত থাকবে, এটা বেশ বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে বশীরের পক্ষে।
অপলা, সীমা, বন্যা, পাতা-সবসময় একসঙ্গেই থাকে সেই কবে থেকে। বশীর ঠাট্টা করে তাদের নাম দিয়েছে বশীর’স অ্যাঞ্জেলস-চার্লিস অ্যাঞ্জেলসের অনুকরণে। তারা চার বান্ধবী যখন নতুন পোশাক পরে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে থাকে তখন তাদের দেখে বশীর হেসে বলে, ‘ইউনাইটেড কালার অব বেনেটন’। ইতালিয়ান ফ্যাশন হাউসের প্রতি এই রেফারেন্স দেওয়ার কারণ তাদের চারজনের গায়ের রেইনবো কালার। অপলা খুব ফর্সা, দেখলে ইউরোপিয়ান শ্বেতাঙ্গিনী মনে হবে। চুল হেনা রঙে ডাই করার পর সেই ভাবটা আরও অনেক স্পষ্ট দেখায়। সীমার গায়ের রঙ বাদামি, মেটে বলতে যা বোঝায়। বন্যার গায়ের রঙের বর্ণনা দিতে গেলে ওমর আলির ‘এ দেশে শ্যামল রঙ রমণীর সুনাম শুনেছি’-এর উল্লেখ করতে হয়। অপলার একেবারে উল্টো হলো পাতা, তার গায়ের রঙ আবলুশ কাঠের মতো কালো। কিন্তু ‘কালো তা সে যতই কালো হোক’-তাকে দেখে চোখ ফেরানো যায় নাএমন কমনীয় আর স্নিগ্ধ তার চেহারা। বশীর তাকে ‘ব্ল্যক বিউটি’ বলে ডাকে। মাঝে মাঝে বলে, বিয়ে করলে তোকেই করব। শুনে অন্য তিনজন কপট রাগ করে। চার বান্ধবীর বিচিত্র রঙের সমাহারের জন্য সেইই ‘ইউনাইটেড কালার অব বেনেটন’ কথাটি মাঝে মাঝে উচ্চারণ করে তাদের পাশাপাশি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে। আজও বলেছে ব্যস্ত হয়ে দোকানে ঢোকার পর। তারপর বলেছে, আহা...এই দু বছরে তোরা চার বন্ধু দেখি বেশ বদলে গিয়েছিস। আগের মতো ফ্যাশনেবল দেখাচ্ছে না। কিন্তু সঙ্গ ছাড়িসনি, এখনো পাশাপাশি আছিস। এত ঝড়-ঝাপ্টার মধ্যেও।
অপলা বলে, তুইও তো বদলে গিয়েছিস এই দুবছরে। কেমন শুকনো দেখাচ্ছে হাত, মুখ। গাল বসে গিয়েছে মাটি ধসের মতো।
বশীর তখন থতমত খায়, নিজের গালে হাত বোলায়। একটু নার্ভাস হয়ে হাসে। লাজুক হয়ে বলে, একটা অসুখ হয়েছিলরে। এখন সব ঠিক হয়ে যাবে। এই তোরা যেমন নতুন কাপড় পরবি।
দুই
কোভিডের দুবছর হেন কাজ নেই যা বশীর করেনি। ঢাকার বিখ্যাত শপিং মল বন্ধ হয়ে গেলে অন্যদের মতো তারও চাকরি চলে গিয়েছিল। দোকানের মালিক আগের পাওনা টাকা ছাড়া আর কিছু দেননি তাকে। কিছুদিন ধার-কর্জ করে চলেছে তার। তারপর সে একবেলা খেয়ে কাটিয়েছে মেসে। আম বিক্রি করেছে মাথায় ঝাঁকা নিয়ে। বন্ধ বাড়ি-ঘরের সামনে গিয়ে অনভ্যস্ত গলায় হাঁক দিয়েছে, ‘আম নিবেন, আম’ বলে। নিজের কাছেই সেই ডাক আর্ত চিৎকারের মতো মনে হয়েছে তার।
তার মতো আরও অনেকেই কোভিডের প্রথম লকডাউনের সময় নানা ধরনের কাজ করে বেঁচে থাকার চেষ্টা করেছে। সে শুনেছে কেউ কেউ কষ্ট সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যাও করেছে। তারপর যখন কিছুতেই সামান্য খেয়ে-পরে থাকা সম্ভব হয়নি তখন অনেক গরিব মানুষ গ্রামে চলে গিয়েছে। বশীরকেও যেতে হয়েছে গ্রামে। সেখানে গিয়ে সে ক্ষেতমজুর হয়ে গিয়েছে। মাঝে মাঝে মোবাইলে খবর নিয়েছে সে মলের দোকান খুলেছে কি না জানার জন্য।
মালিক বলেছেন, খোলেনি। কবে খুলবে ঠিক নেই। তারপর বলেছেন, তিনি দোকানের পজিশন বিক্রি করে দেওয়ার কথা ভাবছেন। এভাবে বিনা আয়ে তার পক্ষে মাসে মাসে ঘর ভাড়া, বিদ্যুতের বিল দেওয়া সম্ভব হবে না আর বেশিদিন। শুনে প্রায় পানিতে পড়ার মতো অবস্থা হয়েছে বশীরের। সে অনুনয়ের স্বরে কাতর হয়ে বলেছে, বিক্রি করবেন না স্যার। বিক্রি করবেন না। কোভিড চলে যাবে একদিন না একদিন। আবার সব আগের মতো চলবে।
শুনে মালিক বলেছেন, হ্যাঁ, একদিন কোভিড চলে যাবে। কিন্তু ততদিন আমরা বাঁচব কিনা তার ঠিক আছে?
তবু আশা নিয়ে ক্ষেতমজুরের কাজ করে গিয়েছে বশীর। তার মনে দৃঢ় বিশ্বাস, আগের দিন ফিরে আসবে। এইভাবে মাসের পর মাস গিয়েছে। দিনের শেষে ক্ষেতের কাজ করে সে দূর সম্পর্কের চাচার বাড়ি ফিরে সামান্য খেয়ে শুয়ে পড়েছে। মাঝে মাঝে সে স্বপ্ন দেখেছে অপলা, সীমা, বন্যা আর পাতা তাকে ডাকছে। বলছে-
কোথায় গেলি তুই আমাদের ফেলে? আমাদের যে কাপড়-চোপড় ময়লা হয়ে গেল। নতুন কাপড় পরতে হবে, তাড়াতাড়ি দোকান খোল এসে। শুনে ঘুমের মধ্যেই হেসেছে বশীর। মেয়েদের কারবারই আলাদা। মানুষ মরে কি বাঁচে-এই অতিমারিতে তার ঠিক নেই। তারা নতুন পোশাকের কথা ভাবছে। সত্যি, মেয়েদের জবাব নেই, লা-জওয়াব।
কোভিডের ঠিক দুবছর পর মালিক বশীরকে ফোন করে বললেন দোকান খোলা হবে। সে যেন এসে যোগ দেয় কাজে। পুরনো লোক যারা ফিরে আসতে চায় তাদের নিয়েই নতুন করে ব্যবসা শুরু করবেন তিনি। শুনে বশীরের আনন্দে আত্মহারা হওয়ার মতো অবস্থা। তার দুই হাতের দিকে তাকিয়ে সে কেঁদে ফেলে। ক্ষেতের কাজ করে তার হাত অন্যরকম দেখায়, রুক্ষ, খসখসে, ভঙ্গুর-যেন নিজের হাত না। অপেক্ষা করে করে সে ভাবতে শুরু করেছিল তার পুরনো জীবনে আর ফেরা হবে না। সেই জীবন যে সচ্ছলতায় মসৃণ ছিল বা সেখানে উপভোগের জন্য অঢেল অবসর ছিল, তা নয়। কিন্তু সেই জীবনে সে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিল, যে কাজ সে করত তার পরিবেশে গতি ছিল, ছন্দ ছিল।
ক্ষেতের কাজের মতো একঘেয়ে আর কষ্টকর মনে হয়নি শহরের দোকানে সেই কাজ। আরও একটা ব্যাপার ছিল যা গ্রামে ক্ষেত-খামারের কাজে দেখতে পায়নি সে। তা হলো, শহরের সেই কাজে এক ধরনের মিলে-মিশে করার সুযোগ ছিল। গ্রামের সব কাজ, বিশেষ করে ঘরের বাইরে একা একাই করতে হয়। জমি চাষ করা থেকে বীজ বোনা-সবকিছুই কৃষক বা শ্রমিকের একার। সে যে দোকানে কাজ করত সেখানে সহযোগিতার একটা ব্যাপার ছিল।
গ্রামে এসে ক্ষেত-খামারে কাজ করতে করতে তার মনে হয়েছে সে জেলখানার কয়েদির মতো তার জন্য নির্ধারিত করে দেওয়া নির্দিষ্ট কাজ করে যাচ্ছে। সে হাঁপিয়ে উঠেছিল ক্ষেতের কাজ করতে করতে। দু-একবার আত্মহত্যার কথাও ভেবেছে সে। যা-ই হোক, দেরিতে হলেও সে এই বন্দিজীবন থেকে মুক্তি পেয়েছে। মানে, পেতে যাচ্ছে। শপিং মলের বড় ফ্যাশন দোকানের মালিক তাকে ডেকেছেন, দোকান খুলতে যাচ্ছে।
বশীর একটুও দেরি না করে দূর সম্পর্কের চাচার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ঢাকা রওয়ানা হলো। বাসে আসার সময় দুপুরে রাস্তাতেই খেয়ে নিল বন রুটি আর কলা। বিকেলে ঢাকা পৌঁছে সোজা চলে গেল শপিং মলে তাদের পোশাকের দোকানে। মলে ঢুকতেই দেখল চারিদিকে ধোয়া-মোছা চলছে, দোকানের ভেতর ঝাড়– দিয়ে বের করা হচ্ছে জমে থাকা জঞ্জাল। ফিনাইলের কটু গন্ধে নিঃশ্বাস নেওয়া ভার। লোকজন ছোটাছুটি করছে, যেন বিয়েবাড়ির উৎসব শুরু হয়েছে। অবশ্য খরিদ্দারদের জন্য আজ দোকান বন্ধ, সব সাফ-সুতরো করার পর আগামীকাল থেকে শুরু হবে বেচা-কেনা। ভাবতেই উত্তেজনায় বশীরের রোমকূপ দাঁড়িয়ে গেল। আগের দিন ফিরে আসছে।
তিন
বশীর দোকানের ভেতর বন্ধ আলমারি খুলে মেয়েদের কাপড় বের করছে। শাড়ি, থ্রিপিস, লেহেঙ্গা, ট্রাউজার, শার্ট। বাইরে দঁড়িয়ে থাকা চার বান্ধবী অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। এক একটা কাপড় বের করছে বশীর আর চার বান্ধবী একসঙ্গে চেঁচিয়ে বলছে, ইয়েএএএ।
বশীর শাড়ির আলমারি খুলে শাড়ি বের করতেই অপলা বলল, আমাকে আসমানী নীল জামদানিটা দেবে।
সীমা চেঁচিয়ে বলল, আমি লেহেঙ্গা পরব।
বন্যা বলল, আমি বেনারসী পরব।
পাশ থেকে পাতা বলল, তোর কি আজ বিয়ে? বেনারসী পরতে চাস কেন?
বন্যা বলল, আমার খুশি। এতদিন পর নতুন কাপড় পরব, তাহলে বেনারসী নয় কেন?
বশীর ডেনিম ট্রাউজার বের করতেই পাতা বলল, আমার জন্য লাইট ব্লু ট্রাউজার আর সাদা টপস।
কাজ করতে করতে বশীর চার বান্ধবীর কথা শুনছে আর হাসছে। মনে মনে বলছে, পোশাক বদলানো ছাড়া আর কোনো কাজ নেই মেয়েগুলোর। বেশ মজায় আছে। তারপর সে ভাবল, করুক না ফুর্তি। দুবছর কিছু করতে পারেনি বেচারিরা। পুরনো কাপড় পরেই কাটিয়েছে। এখন দোকান খুলতেই তারা উত্তেজিত হয়ে পড়েছে। নতুন কাপড় পাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে পড়েছে। সব ছেলেমানুষ। হাসল বশীর। দুটো শাড়ি হাতে সে দোকানের ভেতর দাঁড়িয়ে থাকা ফর্সা মেয়েটির দিকে এগিয়ে গেল। অন্য মেয়েদের গা থেকে শরীর বাঁচিয়ে কাছে যেতেই একটি মেয়ের স্তন স্পর্শ করল তার কনুই।
সামনে থেকে দেখে অপলা সঙ্গে সঙ্গে তিন বান্ধবীকে বলল, দেখলি কাণ্ড? বশীর মেয়েটির বুকে হাত দিল।
বন্যা দেখে বলল, মনে হয় না ইচ্ছে করে।
পাতা বলল, বশীর কোনোদিন আমার স্তন স্পর্শ করেনি। অবশ্য শরীর ছুঁয়েছে।
পাতা বলল, আমারও।
অপলা বলল, শরীর না ছুঁয়ে উপায় কী? কেমন মানায়, তা দেখার জন্য একটু-আধটু শরীর ধরতেই হয় তাকে। আমরা তাতে কিছু মনে করিনি।
পাতা বলল, বশীর বহু মেয়ের সঙ্গে ফ্লার্ট করে ঠিকই, কিন্তু সে লুচ্চা নয়।
বন্যা বলল, বশীর যে দুশ্চরিত্রের নয় তা কি আমরা এতদিনে জেনে যাইনি?
চার বান্ধবীর কথা বলার মাঝখানে বশীর তাদের দিকে এগিয়ে এলো। দেখে চার বান্ধবী উচ্ছ¡সিত হয়ে বলে উঠল, অবশেষে নাগর আসিতেছে। আসিতেছে। তোরা সব উলুধ্বনি কর।
বশীর চার বান্ধবীর কাছে এসে পৌঁছেছে, কিছু বলতে যাচ্ছে। এই সময় দোকানের মালিককে দেখা গেল হন্তদন্ত হয়ে দোকানের কাছে আসতে। সব কর্মচারী কাজ থামিয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকল। তিনি হাত তুলে তাদের যেন নিষেধ করছেন। কিসের জন্য নিষেধ? কেউ বুঝতে না পেরে তাকিয়ে থাকল তার দিকে। কিছুক্ষণ পর তিনি কাছে এসে বললেন, দোকান বন্ধ করো। বন্ধ করো।
বশীর যেন বিশ্বাস করতে পারছে না, এমন ভঙ্গিতে তাকিয়ে বলল, বন্ধ করব কেন স্যার?
মালিক রুমাল দিয়ে মুখ মুছে বললেন, সিদ্ধান্ত হয়েছে বন্ধ রাখার। আংশিক লকডাউন করতে হবে। এই আংশিকের মধ্যে আমাদের এই শপিং মল পড়েছে।
বশীর ফ্যাসফেসে গলায় আকুল হয়ে বলল, বন্ধ করবেন না স্যার। বন্ধ করবেন না।
মালিক তার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে কিছুটা বিরক্ত হয়ে বললেন, এ কি আমার সিদ্ধান্ত? কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত। আমার না মেনে উপায় আছে?
বশীর তার সামনে গিয়ে হাত জোড় করে বলল, বন্ধ করবেন না স্যার। আমরা মরে যাব।
মালিক আরও বিরক্ত হয়ে বললেন, বললাম না-এটা কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত। বন্ধ করতে হবে। সবাই বন্ধ করছে।
বশীর আগের মতোই হাত জোড় করে বলল, কতদিনের জন্য স্যার?
মালিক বললেন, এক মাস। অবস্থা নিয়ন্ত্রণে না এলে আরও কয়েক মাস বাড়তে পারে। কিছু ঠিক নেই।
বশীর এবার মাটিতে বসে তার হাঁটু জড়িয়ে বলল, বন্ধ করবেন না স্যার। আমরা মরে যাব, মরে যাব। তার গলা কান্নায় ভেঙে আসে।
দোকানের মালিক খুব অপ্রস্তুত হয়ে যান বশীরের কাÐ দেখে। তিনি তাড়াতাড়ি তার হাঁটু ছাড়াবার চেষ্টা করে বলেন, আহা করছ কী? পা ছাড়ো, ছাড়ো।
বশীর কাঁদতে কাঁদতে এবার আরও জোরে তার দু’পা জড়িয়ে ধরে ভাঙা গলায় বলতে থাকে, বন্ধ করবেন না স্যার। বন্ধ করবেন না।
মালিক এবার রেগে গিয়ে জোর করে পা দিয়ে ঠেলে দেন বশীরকে। তার পা মুক্ত হয়ে যায় বশীরের হাত থেকে। বশীর টাল সামলাতে না পেরে পড়ে যায় পিছনে, চার বান্ধবীর দিকে। শব্দ করে তার মাথা পড়ে মেঝেতে। ধাক্কা লেগে চার বান্ধবী পড়ে যায় নিচে, তার অচেতন শরীরের ওপর।
দোকানের মালিক মেঝের দিকে তাকিয়ে খুব বিরক্তির সঙ্গে চেঁচিয়ে বলেন, দেখেছ, চার চারটে ম্যানিকিন ভেঙে ফেলল। ওর কি কোনো হুঁশ ছিল না? তারপর জোর গলায় হুকুম দিলেন, ম্যানিকিনগুলো তোলো মাটি থেকে। নতুন ম্যানিকিন, অনেক টাকা দিয়ে কেনা। হারামজাদা মনে হয় ভেঙেই ফেলল। দাঁড় করাও ওগুলো। দেখি কী অবস্থা।
দোকানের ভেতর থেকে দুজন কাজের লোক বেরিয়ে এলো। তারা দেখল চারটা পোশাক পরানোর ম্যানিকিন তাদের হাত সামনে ছড়িয়ে বশীরের শরীরের ওপর পড়ে আছে। যেন তাকে আগলে রেখেছে তারা।