Logo
×

Follow Us

ঈদ সংখ্যা

নিজার কাব্বানির কবিতা

Icon

মহিউদ্দীন মোহাম্মদ

প্রকাশ: ১২ মে ২০২৩, ১৪:২৬

নিজার কাব্বানির কবিতা

নিজার কাব্বানি ও তার স্ত্রী বালকিস আল-রাওয়ি। ছবি: সংগৃহীত

‘আমি রঙের সাগরে বসবাস করতাম। মেঝে আর দেওয়ালে ছবি আঁকতাম এবং নতুন রূপের সন্ধানে আমি যা কিছুতে হাত দিতাম তার সব কিছু মেখে দিতাম।’ নিজার কাব্বানি তার শৈশবকে এভাবেই বর্ণনা করেছেন। পুরো প্রজন্ম তাকে দেখেছে, কীভাবে নিজার শব্দ দিয়ে এঁকেছেন। একজন বিপ্লবী যিনি প্রেমকে মুক্ত করতে চেয়েছেন। তিনি বলেন-‘আরব বিশ্বে প্রেম একটি বন্দি জিনিস, আর এটাকে আমি মুক্ত করতে চাই। 

আমার কবিতার সঙ্গে আরব বোধ ও শরীর জড়িত।’ যদিও তার কবিতাগুলো এখনো অনেক বিতর্ক সৃষ্টি করে। বিশেষ করে ‘রুটি ও হাশিশ’ (খুবজ্ ওয়া হাশিশ) কবিতাটি নিয়ে এখনো সাহিত্যিকীয় বিতর্ক হয়। তবে কষ্টের বিষয় হলো, তার জন্মস্থান সিরিয়া যুদ্ধের কারণে বছরের পর বছর হিংসার আগুনে পুড়ছে। যেটা নেভানো জরুরি বলে আমরা মনে করি।

কাব্বানি সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের একটি বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিমনস্ক পরিবারে ১৯২৩ সালের ২১ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৫ সালে দামেস্ক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে স্নাতক হন। তারপর ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত তিনি মিশর, তুরস্ক, ব্রিটেন, চীন ও স্পেনে সিরিয়ার রাষ্ট্রদূত হিসেবে কাজ করেন। নিজার কাব্বানি একজন গুণী প্রকাশকও ছিলেন। তিনি ‘মানশুরাতে নিজার কাব্বানি’ নামে বৈরুতে একটি প্রকাশনা সংস্থা গড়ে তুলেছিলেন। তিনি তার সময়ে আরব বিশ্বের অন্যতম বিশিষ্ট সমসাময়িক ব্যক্তিত্ব হিসেবে বিবেচিত হন।

১৯৬৬ সালে তিনি চাকরি থেকে ইস্তফা দেন। তিনি ১৯৯৮ সালের ৩০ এপ্রিল লন্ডনে মারা যান, পরে তাকে দামেস্কে এনে সমাহিত করা হয়। তিনি প্রধান আরব লেখকদের মধ্যে একজনই, যিনি বড় ধরনের বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন। আরব সমাজে পরিবর্তনের প্ররোচনা দিয়েছেন। 

নিজার কাব্বানি ১৯৪১ সালে ‘দুনইয়াল হুরুব’ (যুদ্ধময় বিশ্ব) নামে একটি দীর্ঘ কবিতা প্রকাশ করেন। এরপর প্রায় ৪১টি কবিতা ও গদ্যের সংকলন প্রকাশ করেন। তিনি নাটক ও গানও রচনা করেছেন।

তার কবিতার বিষয়বস্তু প্রথমে কামোত্তেজক, রোমান্টিক ও রাজনৈতিক বিষয়গুলোকেও ছুঁয়ে গিয়েছিল। তিনি সহজ-সরল ভাষায় কবিতা প্রকাশের কারণে মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকা জুড়ে অগণিত আরবিভাষীদের মন জয় করেছিলেন। তিনি প্রগতিশীল আরব নাট্যকার আবু খলিল কাব্বানির নাতি ছিলেন। তিনি আরবি কবিতার নতুন দিকপাল হিসেবে প্রথমে ক্ল্যাসিক ফর্মে, তারপর মুক্ত ছন্দে লেখালেখি করেন।

নিজার সম্পর্কে সমালোচকরা বলেছেন যে, তিনি একটি ‘কবিতার স্কুল’, ‘একটি সামাজিক বাস্তবতা’, ‘একটি সাংস্কৃতিক ঘটনা’। হুসাইন ইবন হামজাহ (১৯৬৩-) তাকে ‘কবিতা প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি’ বলে অভিহিত করেছেন। তাকে ‘দৈনন্দিন কবিতার অন্যতম জনক’ও বলা হয়, কারণ তিনি কবিতাকে সাধারণ মানুষের কাছাকাছি নিয়ে এসেছিলেন। 

মিশরীয় লেখক আহমেদ আবদেল-মোয়াতি হেজাজি (১৯৩৫-) নিজারকে ‘নিজস্ব ভাষায় সাহসী হওয়ার পাশাপাশি তার বিষয়বস্তু’ বাছাইয়ের কৌশলকে প্রকৃত কবির কাজ বলে বর্ণনা করেছেন। তবে তিনি তার সাহসিকতার সমালোচনা করে বলেছেন, যা তার কবিতার শেষ পরিণতিতে পৌঁছেছিল। যা অপমানের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ হয়ে ওঠে। তার রাজনৈতিক কবিতা সম্পর্কে হুসাইন ইবন হামজাহর মন্তব্য প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেন, ‘আরবরা ক্রোধ ও বেদনা প্রকাশের কার্যকর উপায় বের করতে গিয়ে আত্মপরিচয় ও শাসকদের বেত্রাঘাতের সমন্বয়ে নানা বিড়ম্বনার সম্মুখীন হয়েছেন।’

তিনি (আধুনিক) আরবি কবিতার বিষয়গুলোকে হালনাগাদ করার ক্ষেত্রেও একটি বিশিষ্ট ভ‚মিকা পালন করেছিলেন,  যেহেতু তিনি রাজনৈতিক ঝামেলা ও নিষেধাজ্ঞার প্রথম মুখোমুখি হয়েছিলেন। নিজারের কাব্যিকভাষা সম্পর্কে বলা হচ্ছে, ‘আধুনিকতা ও সাংবাদিকতার কাছাকাছি এমন একটি ভাষায় তিনি লিখেছেন যা বৃহত্তর মানসিক রূপকগুলোতে অভ্যস্ত ব্যক্তিদের চমকে দেয়। 

নিজারের কবিতাগুলো দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার কারণে প্রতিটি কবিতার বইয়ের উপর তার আধুনিক চিন্তাধারার বিরাট ছায়া পড়েছে।’ 

অন্যদিকে তার কবিতা ‘রুটি ও হাশিশ’ এবং ‘চাঁদ’ একটি বিশাল বিতর্কের কারণ হয়ে উঠেছিল,  যা দামেস্কে ছড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি পার্লামেন্ট পর্যন্ত গড়ায়। যার ফলে কিছু আলেম তার বিরুদ্ধে আপত্তি জানিয়েছিলেন। তারা তার মৃত্যুদণ্ডও দাবি করেছিলেন। তাই তিনি শুধুমাত্র সিরিয়ার বাইরে এটি পুনঃপ্রকাশ করেছিলেন। 

যে এলাকায় কবি জন্মেছিলেন তার নামে সেখানকার একটি রাস্তার নামকরণ করেছিলেন দামেস্কের মেয়র। এটা সম্পর্কে নিজার বলেছেন, ‘দামেস্ক যা আমাকে দিয়েছে, এটা সারাজীবনের সেরা উপহার। আর এখানকার বাড়িটি যেন জান্নাতে আমার মালিকানাধীন সবচেয়ে সুন্দর একটি বাড়ি। মনে আছে আমি একসময় এই রাস্তার বাচ্চাদের একজন ছিলাম, এর পাথর নিয়ে খেলতাম, এর ফুল কুড়াতাম আর এর ঝরনার জলে আঙুল ডুবিয়েছিলাম।’ 

নিজার কাব্বানির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কৃতিত্ব নিয়ে ফিলিস্তিনি কবি ইজ আল-দিন আল-মানসরা বলেছেন, ‘তিনি আধুনিক আরবি কবিতায় প্রেমের বিষয়টিকে বাহ্যিক বর্ণনা থেকে একটি বিশেষ বিষয়ে স্থানান্তর করেছেন, যেখানে কেউ তার সদৃশ নয়।’

২০০৮ সালে তার ৮৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ‘আরব সংস্কৃতির রাজধানী’ দামেস্ক ও আন্তর্জাতিক কবিতা দিবস উদযাপনের সঙ্গে মিল রেখে পর্যটক ও নাগরিকরা উৎসবে মেতেছিলেন। ওই বছর তার নামে একটি স্মারকগ্রন্থ বের হয়। যার বাংলা হচ্ছে-নিজার কাব্বানি: দামেস্কের তোরণে একটি সবুজ বাতি’। যেটি সম্পাদনা করেছিলেন খালেদ হুসাইন।

১৯৭৩ সালের এপ্রিলে খ্যাতিমান ঔপন্যাসিক ও অধ্যাপক তায়্যিব সালেহ কবি নিজার কাব্বানির একটি সাক্ষাৎকার নেন লন্ডনে। এটি বিবিসির সঙ্গে সম্পৃক্ত ম্যাগাজিন ‘হুনা লন্ডন’-এ প্রকাশিত হয়েছিল। এই সাক্ষাৎকারে প্রথম প্রশ্ন ছিল-‘নিজার, আপনি কোথাও বলছেন, আপনি কবিতাকে সব মানুষের রোজকার রুটিতে পরিণত করতে চান, আর আমার মনে হয় সমসাময়িক কোনো কবি যদি এমনটি করে থাকেন, তবে আপনিই?’

উত্তরে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি খুবই সহজ, আমি কবিতাকে অভিজাতদের আকাশ থেকে মানবজাতির দেশে নিয়ে এসেছি। আমি আমার কবিতা শুরু থেকেই পুরোপুরি বিশ্বাস করেছিলাম যে লেখা কবিতা মানুষের জন্য এবং প্রতিটি কাব্যে মানুষই শুরু ও শেষ। কাজ বিশেষ শ্রেণির জন্য, রাজরাজড়া ও অভিজাতদের জন্য লেখা কবিতার মিথ শেষ হয়ে গেছে।

আমরা এমন এক যুগে আছি যেখানে কবিতার সুবিধাভোগী হওয়া উচিত জনগণের। আমি মূলত এই ফলাফল প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করেছি। আমি ১৯৪৮ সালে আমার ‘তুফুলাতু নাহদা’ (নাহদার শৈশব) বইতে এটি ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলাম এবং আমি একটি কাব্যিক সমীকরণে পৌঁছেছিলাম-যেখানে মানুষ কবিতার অবিচ্ছেদ্য অংশ হবে।’

তাকে আবার প্রশ্ন করেন সালেহ, ‘এই উপলব্ধিটি কি হঠাৎ ঘটেছিল, নাকি এটি এমন একটি উপলব্ধি ছিল যা আপনার ধারণা নিয়ে জীবনযাপনের মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠেছে, আর সম্ভবত আপনি প্রত্যাখ্যান করেছেন... অন্যান্য আরব কবির কবিতা?’

নিজার উত্তর দেন,  ‘শুরু থেকেই অনুভব করতাম কবি ও শ্রোতাদের মধ্যে বিরাট ব্যবধান। এক ধরনের ভাষাগত প্রাচীর ছিল যা মানুষকে কবিতা আস্বাদন থেকে বিরত রাখত। আর আমাদের প্রাচীন কবিতা, যা প্রাক-ইসলামি যুগ থেকে বিশ শতাব্দীর শুরু পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। কবিতা কঠিন ছিল, কারণ এটি ভাষাগত কাঠামো, শিলালিপি ও অলঙ্করণের উপর নির্ভর করে। আমি চেয়েছিলাম একাডেমির দেয়াল থেকে কবিতা বেরিয়ে আসুক, প্রকাশ্য উদ্যানে প্রকাশ করুক, মানুষের সঙ্গে থাকুক এবং কথা বলুক।’ 

নিজারের এই দুটি উত্তরে তার কাব্যভাবনা সুস্পষ্ট হয়ে আছে। সহজ-সরল কাব্য ভাবনায় তিনি প্রত্যেক পাঠককে নাড়িয়ে দিয়ে যান। যে কারণে সারাবিশ্বে তার কবিতার বিপুল পাঠক রয়েছে। বিভিন্ন ভাষায় তার কবিতা অনূদিত হয়ে পাঠকের পাঠাভ্যাস উন্নত করছে। 

জেরুজালেম

চোখের জল যতক্ষণ না শুকিয়েছে আমি কাঁদতে থাকি

প্রার্থনায় মগ্ন থাকি মোমবাতি ফুরনো পর্যন্ত

যতক্ষণ না ক্লান্ত হয়েছি-ঝুঁকে থাকি রুকুতে 

আমার জিজ্ঞাসা তোমাকে মুহাম্মদ ও ঈসা বিষয়ে 

হে জেরুজালেম, নবীদের সুবাসিত নগরী

আকাশ ও জমিনের হে সংক্ষিপ্ত সংযোগপথ!

হে জেরুজালেম, আইনের প্রদীপ

হে পোড়া আঙুলের সুন্দরী মেয়ে

তোমার চোখে বিষাদ, হে কুমারী শহর

কী এক ছায়াময় মরূদ্যানের মধ্য দিয়ে নবীজি হেঁটে গিয়েছিলেন

সে রাস্তায় খতরনাক পাথর

মসজিদের মিনার বিষণ্ন

হে জেরুজালেম, হে কালো কাপড়ে মোড়ানো সুন্দরী

কিয়ামাহ গির্জায় কে বাজাবে ঘণ্টা বলো

রবিবার সকালে...

সন্তানের জন্য খেলনা নিয়ে যাবে কে

বড়দিনের রাতে...

হে জেরুজালেম, হে দুঃখের নগরী

চোখের পাতায় ওড়ে বড় অশ্রুদানা

আগ্রাসন কে থামাবে তবে

তোমাতে ধর্মের আছে মণি-মুক্তো 

তবে দেওয়ালে পাথরে রক্তের দাগ, কে ধুয়ে দেবে

ইঞ্জিল, কে রক্ষা করবে

কে বাঁচাবে কোরান

যারা খ্রিষ্টকে হত্যা করেছে, 

তাদের হাত থেকে খ্রিষ্টকে কে রক্ষা করবে

কে সেইজন যে মানুষকে বাঁচায়

হে জেরুজালেম... আমার শহর

হে জেরুজালেম... আমার ভালোবাসা

আগামীকাল... কালই... লেবুফুল ফুটবে

আর সবুজ ফসল ও জলপাই শিহরিত

চোখে খুশি ঝলকাবে

পরিযায়ী কবুতর ফিরবে 

নিঃসঙ্কোচে ছাদে

আর শিশুরা ফিরবে খেলায়

দেখা হবে পিতা-পুত্রের 

তোমার উজ্জ্বল কাঁধে...

আহারে..

হে শান্তি ও জলপাই নগরী!

৫ মিনিট

মাত্র মিনিট ৫ বস নারী

সে চায় না পাঁচ মিনিট ছাড়া

কবিতা যাক দরবেশের মতো 

দীর্ঘ কোমায়...

স্রেফ ৫ মিনিট...

সে চায় না কবিতা খালি 

কাগজের মাংসে বিঁধে থাকুক

আমাকে ভালোবাস তুমি মিনিট কয়েক 

আর দূরে অদৃশ্য হ’য়ো

কয়েক মিনিট পরেই।

লক্ষ লক্ষ আগুন জ্বালতে 

একটা দেশলাইয়ের বেশি

আমার দরকার নেই।

জানি একটি শক্তিশালী প্রেমের গল্প

৫ মিনিটের বেশি টেকে না।

স্বদেশ আঁকি

কাপ ১

যখন আমি প্রথম কাপ পান করি

আমি স্বদেশকে সবুজ অশ্রæতে আঁকি

আর আমি পোশাক খুলে ফেলি...

আমি তাতে গোসল করি...

কাপ ২

যখন আমি দ্বিতীয় কাপ পান করি

দেশকে আমি সুন্দরী রূপে আঁকি...

আর আমি তার বুকের মধ্যে ঝুলে পড়ি...

কাপ ৩

আমি যখন তৃতীয় কাপ পান করি

আমি দেশকে কারাগারের মতো আঁকি...

আমি কবিতাকে যাবজ্জীবন দণ্ড দিই।

কাপ ৪

বোতল যখন শূন্য হয়ে যায়

আমি স্বদেশ আঁকি ফাঁসির মঞ্চে 

গৌরবময় অনুষ্ঠান থেকে কবিতা বিদায় নেয়

সিংহ দরোজায় হাজির হয়-

তার কুকুর

আর তার উপদেষ্টা

জানাজা প্রধান

আর শিক্ষামন্ত্রী মহোদয়

লেখক সংঘের সভাপতি 

প্রধান পুরোহিত ও প্রধান বিচারক...

আর জরুরি ডিক্রিতে নিয়োগপ্রাপ্ত মন্ত্রীরা

সবাই একত্রিত হয় কবিকে হত্যা করতে

কবির দাফনে হেঁটে যেতে...

ছোট গল্প

বৃষ্টির করুণা থেকে কখনো নিরাশ হয়ো না

আমি তোমাকে ভালোবাসি পঞ্চাশ বছর বয়সে 

আমি তোমাকে ভালোবাসছি, আর গাছগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে,

হৃদয়ে ও চুলে আমার তুষারপাত।

আমি তোমাকে ভালোবাসছি, 

যখন গ্রীষ্ম আমাদের ছেড়ে চলে গেল

তারপর মাটি কাঁদল ফলের জন্য।

ও আমার চড়–ইপাখি, আমি তোমাকে ভালোবাসি। 

আমি এখন বিষাদ আর একঘেয়েমির পাহাড়ে...

বাতাস যেন অস্বস্তিকর খবর 

বয়ে আনছে তোমাকে দিতে,  

ভোরের আগ পর্যন্ত  তাই অপেক্ষা কর...

প্রেমে হারার বাজি থেকে তুমি বের হয়ো না

আমার ঐতিহ্য আছে...আর গাছের আছে জ্ঞান...

ঐতিহ্যিক সভ্যতাগুলো উপভোগ কর

আমার ঠোঁটে, আমি শেষ শহুরে পুরুষ...

আমি তাকে কবিতা পড়ে শোনাই... আর সে ঘুমায়

সে আমার অস্তিত্ব ও আমার ছবি দেখতে পাচ্ছে না

কাব্যের অন্ত্যমিলে উত্তেজিত হচ্ছে না

অথবা গিটারের টুংটাং তাকে টানছে না

আমি তার বাহু ঝাঁকালাম... সে খেয়াল করেনি

আমি ডাক দেই:

ও আমার সাদা বিড়াল... ও আমার জীবন

ওঠো... আমি তোমাকে খচিত মুকুট দেব...

আমি তোমাকে সাগরের সব মুক্তো কিনে দেব।

আমি তোমাকে পুরো দেশ কিনে দেব...

আমি তোমাকে রোদ কিনে দেব... আর চাঁদ...

আমি ডাকলাম... চিৎকার করলাম... কিন্তু কেউ উত্তর দিল না

বাতাস ও বৃষ্টি ছাড়া ভালোবাসার বাহুডোরে...

আমি তার কাছ থেকে তার লজ্জা সরিয়ে দিয়েছি... 

তাই সে পাত্তা দেয়নি, যেন সে আমাকে নিয়ে হতাশ।

আর আমার রাত দীর্ঘ হলো...যথারীতি

আমি পাথুরে দুটি কবরের ওপর কাঁদতে থাকলাম।

আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি

আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি

আর আমি জানি যে অসম্ভবের রাস্তা দীর্ঘ

এবং জানি তুমি ষষ্ঠতম নারী

আর আমার কোনো বিকল্প নেই

আমি জানি নস্টালজিয়ার সময় শেষ

আর সুন্দর কথাগুলো মারা গেছে

কীভাবে ষষ্ঠতম নারীকে বলি

আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি...

আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি 

এবং জানি আমি প্রবাসে বাস করি

আর তুমিও প্রবাসে

তোমার ও আমার মাঝে

হাওয়া

মেঘ

ও বিদ্যুৎ

বজ্র

আর বরফ ও আগুন

আর আমি জানি আমার জন্য তোমার মায়া পড়ে আছে

আমি জানি যেকোনোভাবে তোমার কাছে পৌঁছতে পারি

আত্মহত্যা,

আমার সুখ

তোমার জন্য ছিঁড়েখুঁড়ে ফেলা

কোনো ব্যাপারই না

আর যদি তারা আমাকে বেছে নিতে বলে

দ্বিতীয়বার তোমাকে ভালোবাসতে বলে

গাছের পাতার যে জামা তোমার 

ধৈর্য ধরে বৃষ্টির ফোঁটা থেকে রক্ষা করেনি কেউ তা

আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি

আর আমি জানি তোমার চোখের সাগরে 

আমি ভ্রমণ করছি নিশ্চয়তা ছাড়াই

আর আমি আমার মনকে পেছনে ফেলে ছুটে যাচ্ছি

আমি দৌড়াচ্ছি

আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি

যে কোনো নারী তার হাতে একটি হৃদয় ধরে রেখেছে

আমি আল্লাহকে বলেছিলাম আমাকে ছেড়ে না যেতে

আমাকে ছেড়ে যেও না,

তুমি না থাকলে আমি কি হতাম?

আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি

এবং আমি তোমার ভালোবাসার আগুন থেকে 

সরে যেতে অস্বীকার করছি

যে একে অপরকে ভালোবাসে সে কি স্বাধীন হতে পারে...

আর আমি পাত্তা দেব না

যদি বেঁচে থেকে ভালোবেসে যেতে পারি

আর আমি পাত্তা দিই না

জীবন বের হয়ে গেলেও...

উপরে

আমি এমন একজন মানুষ যে বিশ্রাম নেয়নি

যার বিশ্রামও নেই...

অন্ধকার রাস্তায় আমাকে সঙ্গ দিও না

আমার কবিতা নিয়ে নিন্দা করা হয়,

আমার গদ্যও নিন্দিত

আর আমার স্বাভাবিক গন্তব্য হচ্ছে কবিতা ও আদালত

আমি সম্মানিত যে আমি একটি পদক গ্রহণ করিনি

আমিই যে পদক দেই...

আমি কোনো নিয়মের মুখপাত্র ছিলাম না

আমার কবিতা রাষ্ট্র ও শাসনের উপরে...

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫