Logo
×

Follow Us

ঈদ সংখ্যা

তারকাদের ছোটবেলার ঈদ

Icon

এন ইসলাম

প্রকাশ: ১০ এপ্রিল ২০২৪, ২২:০১

তারকাদের ছোটবেলার ঈদ

তারিক আনাম খান, মিশা সওদাগর, ডলি জহুর, চম্পা ও শাহনাজ খুশি। ছবি- সংগৃহীত

ঈদ মানে আনন্দ। ঈদ মানে খুশি। তবে সেটি যদি ছোটবেলার ঈদ হয়, সে আনন্দের পরিধি আরও বেড়ে যায়। সব মানুষের মতো তারকাদেরও রয়েছে শৈশবের অনেক আনন্দময় স্মৃতি। যেসব স্মৃতি রোমন্থন করে তারা স্বস্তি পান, সাময়িকভাবে হারিয়ে যান শৈশবের সেই সব ফেলে আসা দিনে। আর বিশেষ করে ঈদের স্মৃতিগুলো অনেকেরই দারুণ মজার এবং আনন্দঘন। সাম্প্রতিক দেশকালের পাঠকদের জন্য আমাদের প্রিয় কয়েকজন জ্যেষ্ঠ তারকা তাদের শৈশবের ঈদ স্মৃতি রোমন্থন করেছেন। লিখেছেন এন ইসলাম।

তারিক আনাম খান

ছোটবেলায় রোজার ঈদের সময় শেষের দুই রোজা রেখে ঈদের প্রস্তুতি নিতাম। নতুন জামাকাপড় কখন হাতে পাব, তার জন্য ঈদের তিন-চার দিন আগে থেকেই দর্জির দোকানে গিয়ে বসে থাকতাম। ঈদের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে পুকুরে লাফ দিতাম। আমরা ছোটরা হইহুল্লোড় করে সারা পুকুর দাপিয়ে বেড়াতাম। তাড়াতাড়ি গোসল শেষ করতে মা-বাবার বকাও কম খাইনি। এরপর নতুন জামাকাপড় পরে বাবার সঙ্গে ঈদের মাঠে যেতাম। ঈদের দিন বিকেল পর্যন্ত আর বাড়ি ফেরা হতো না। পূর্ব ও পশ্চিমপাড়া নিয়ে আমাদের গ্রাম। ঈদের নামাজ পড়েই দল বেঁধে দুই পাড়ার বাড়িতে বাড়িতে ঘুরতাম। খাওয়া-দাওয়া করতাম। ২০ থেকে ২২ বছর বয়স পর্যন্ত গ্রামেই ঈদ করেছি। ১৯৭১ সালের একটি ঈদ আমার জন্য খুব মন খারাপের ছিল। তখন আমি মুক্তিযুদ্ধ করতে ৯ নম্বর সেক্টরে ছিলাম। বশিরহাটের মুক্তিযুদ্ধ সহায়ক ক্যাম্পে সেবার ঈদ করেছিলাম। সেদিন মা-বাবার কথা খুব মনে পড়ছিল। মা-বাবা ছাড়া ওই ঈদ উদযাপন করতে খুব কষ্ট হয়েছিল।

ডলি জহুর 

ঈদে ছোটবেলায় বাবার সঙ্গে গ্রামে যেতাম। সে সময়ের ঈদ আমাকে খুব নস্টালজিক করে দেয়। রোজার পুরো এক মাস ছুটি থাকত। সে আনন্দ এখন আর ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। শুধু উপলব্ধিতে আনা যায়। ছোটবেলায় মা-বাবা ছাড়াও মামাদের কাছ থেকে নতুন জামা পেতাম। তবে যখন পেতাম তখন লুকিয়ে রাখতাম। কাউকে দেখতে দিতাম না। আত্মীয়স্বজন থেকে শুরু করে বান্ধবীদের কাছে কোনো কিছু বলতাম না। ঈদের দিন যখন নতুন জামা পরতাম তখন প্রত্যেকের চোখ ছানাবড়া হয়ে যেত। ঈদের দিন দলবেঁধে সকালে বেরিয়ে পড়তাম। উদ্দেশ্য একটাই, সালামি নিতে হবে। প্রত্যেকের ঘরে যেতাম; কিন্তু খেতাম না। নজর থাকত কে কত টাকা সালামি দেয়। আমাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা চলত কে কত সালামি পায়। আস্তে আস্তে বড় হলাম। নিজেও রান্না করতাম। এ সময়ের ঈদের দিন আর আগের মতো নেই। ঈদের দিনেও বেশিরভাগ মানুষ নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত থাকে। আমি মনে করি, ঈদ ছোট ছেলেমেয়েদের জন্য আনন্দের বার্তা নিয়ে আসে। একই সঙ্গে বড়রাও এ দিনকে অন্য রকমভাবে উদযাপন করার সুযোগ পায়।

চম্পা

ছোটবেলার ঈদ ছিল অনেক মজার। সেখানে কোনো টেনশন ছিল না। ছিল না বাড়তি কোনো ঝামেলা। সবাই ঘুরতাম আড্ডা দিতাম। সেই ঈদের সঙ্গে এই ঈদের কোনো তুলনাই হয় না। আমাদের পরিবারে ঈদের আগে কেউ কারও জামা দেখতে পেতাম না, লুকিয়ে রাখতাম। আমি কী পরব, কীভাবে সাজব সেটা আমাদের কাছে বিরাট ব্যাপার ছিল। আমাদের তিন বোনের সম্পর্কটা অনেক চমৎকার। একসঙ্গে আমরা অনেক আনন্দ করি, মজা করি। একই সঙ্গে ছোটবেলার দিনগুলোকেও অনেক মিস করি। আমি মনে করি, মানুষের শৈশবের দিনগুলোই সব থেকে আনন্দের ও মজার। সেটি ঈদের বাইরের দিনগুলোও।

মিশা সওদাগর 

আমাদের ফেলে আসা দিনগুলোই রঙিন ছিল। ছোটবেলার অন্য আনন্দের চেয়ে ঈদের আনন্দ ছিল ব্যতিক্রম। আমার বেড়ে ওঠা পুরান ঢাকায়। অনেকেরই জানা আছে পুরান ঢাকার সংস্কৃতি কেমন। এখানে সব কিছু অন্যদের থেকে একটু ভিন্নভাবেই হয়। পুরান ঢাকার হওয়াতে আনন্দ করার সুযোগ একটু বেশি পেতাম। ঈদের নামাজ পড়ে বন্ধুরা বাড়ির বাইরে সময় কাটাতাম। আইসক্রিম, ফুচকাসহ নানারকম খাবার খেতাম। ঈদের দিন সালামি পেতাম বেশ। সালামি দিয়ে বন্ধুদের নিয়ে কত কী কিনে খেতাম! সালামির টাকা ফুরিয়ে গেলে বন্ধুরা মিলে প্ল্যান করতাম কার বাসায় গেলে সালামি পাব, কার বাসায় গেলে খাবার খেতে পারব। ছোটবেলার সেসব দিন কখনো ভুলে যাওয়ার নয়। ছোটবেলার আনন্দই সবার স্মৃতিতে গেঁথে থাকে।

শাহনাজ খুশি

ছোটবেলায় ঈদ শব্দের মধ্যে আনন্দে বিলীন হওয়ার একটা ব্যাপার ছিল। ঈদের আগের রাতে ঘুমাতে পারতাম না। সবাই মিলে সেহরি খাওয়ার সময়েই জেগে উঠতাম। ঈদে খুব কম সালামি পেতাম। তার পরও সালামির এ পর্বটা ছিল খুবই আনন্দের। দোয়েল পাখির ছবিওয়ালা ২ টাকার নোট, হরিণের ছবিওয়ালা ১ টাকার নোট। সারা দিন এত হইচই করতাম যে সন্ধ্যার আগেই ঘুমিয়ে যেতাম। তবে এখনকার ঈদ আর আগের মতো নেই। আগে আমি ছোট ছিলাম। এখন আমি আর সেই ছোট নেই। সংসারজীবনে আসার পর বাচ্চাদের নিয়ে, বন্ধুবান্ধব নিয়ে আনন্দ করা হয়। বছরে এই একটা দিন আমি মনে করি আনন্দের সঙ্গেই কাটাতে পারলে ভালো। সারা বছরই আমরা নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত থাকি। এ দিনটিতে কাছের মানুষদের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ ও কথা বলার সুযোগ হয়।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫