
প্রতীকী ছবি
স্কুটি ছুটছে, রাস্তার দুই পাশের গাছপালা, বাড়িঘর, পুকুর-ক্ষেত সরে সরে যাচ্ছে। কখনো ঘন গাছের ডালপালার আলোছায়া-নকশায় ঢেকে যাচ্ছে স্কুটি ও শরীর, কখনো আদিগন্ত কৃষিক্ষেতের প্রেক্ষাপটে খুব সকালের লালচে আলোয় আলোকিত হয়ে উঠছে বাহনসুদ্ধ অবয়ব।
থুতনির নিচে ঝুলে থাকা মুখ-বন্ধনী উড়ছে বাতাসের ঝাপটায়, বাতাসে অবিন্যস্ত বোরখার মুক্ত অংশও। স্কুটি চালাতে চালাতে নিজেকে কিম্ভূতকিমাকার মনে হচ্ছে নার্গিসের। কেননা সে শুনতে পেল এক মায়ের কথা, কান্নারত বাচ্চাকে থামাতে নার্গিসকে দেখিয়ে মহিলা বলল, “চুপ কর, ওই দ্যাখ ‘জুজুবুড়ি’ আসছে!” চোখে অশ্রু নিয়ে বাচ্চাটা তার দিকে অবাক তাকিয়ে, লুকিং গ্লাসে দেখল সে। দেখল মায়ের এলোমেলো শাড়ি, পোশাকহীন বাচ্চা, রাস্তার পাশের দারিদ্র্যপীড়িত ঘরবাড়ির সামনে কিছু মানুষ।
সবাই ঘুরেফিরে দেখছে তাকে। সে যেন এক দর্শনীয় বিষয়। এসব মেয়ে কেউই বোরখা পরে নেই। দারিদ্র্যের সঙ্গে বোরখার সম্পর্ক নেই, ভাবল সে। নিজেকে ‘জুজুবুড়ি’ আখ্যায়িত হতে শুনে খানিক কষ্টই হলো। বাচ্চাদের ভয় পাওয়ানো জুজুবুড়ি সে হতে চায়নি।
আসলে বোরখা সে আজই পরেছে, মনের মধ্যে অস্বস্তি নিয়েই। লোকজনের তাকানো আর ‘জুজুবুড়ি’ আখ্যা পেয়ে অস্বস্তি আরও বেড়ে গেছে। সাধে কি আর বোরখা পরেছে সে? পিছনে পড়ে আছে এক লম্বা কাহিনি। ‘উফ!’, ঠোঁট ভেদ করে শব্দটা ছড়িয়ে পড়ে বাতাসে। স্কুটি চালাতে চালাতে মনে পড়ে যায় কত কথা।
‘এত পড়ে কী হবে বলো! সেই তো বিয়ে দিতেই হবে। বরং বেশি পড়াশোনা করলে সমস্যা, উপযুক্ত পাত্র পাওয়া যাবে না।’
‘তবু, ও পড়তে চাইছে। একবার সুযোগ দিয়েই...’
‘ওর মাথাটা খারাপ কোরো না তুমি। দেখছো না, শিক্ষিত মেয়েগুলো রাস্তায় দাঁড়িয়ে সিগারেট খায়, ছোট ছোট পোশাক পরে এমন কনফিডেন্স নিয়ে ঘোরে যে তাকাতেই লজ্জা করে। তারপর আরও কী কী সব করে কে জানে! মাঝে মাঝে খবরে দেখি... কার সঙ্গে কোথায় যে চলে যায়! না না, আমাদের মেয়েটাও যদি ওরকম... তাছাড়া বেশি পড়লেই স্বনির্ভর হতে চাইবে, নিজের অদ্ভুত অদ্ভুত মতামত তৈরি হবে, উচ্ছন্নে যাবে।’
‘আহা! এখন অব্দি সে রকম কিছু করেনি নার্গিস। বলতে নেই আমার সব কথাই ও শোনে। আর স্বনির্ভর হওয়া খারাপ হতে যাবে কেন? অশিক্ষিত মেয়েরাও আজকাল স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্য হয়ে কত কাজ করছে, নিজের পায়ে দাঁড়াচ্ছে। ভালোই তো।’
‘সে হোক। নার্গিসের রেজাল্ট বেরোনোর আগেই পাত্র ঠিক করতে হবে।’
ঘরের বাইরে দিয়ে যেতে যেতে মা-বাবার কথা শুনে থমকে দাঁড়িয়েছে নার্গিস। আড়ি পাতার অভ্যেস নেই; কিন্তু নিজের বিষয়ে কথা হচ্ছে শুনে না দাঁড়িয়ে পারেনি। শুনতে শুনতে নিরাশ হয়েছে, স্বপ্ন ভঙ্গের বেদনা ছড়িয়ে পড়েছে শরীরময়।
নিজস্ব কোনো ঘর নেই তার। ভাইবোনদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে হয় জায়গা। ফলে সে স্নানঘরে ঢুকে যায়। চোখ ফেটে অশ্রু বেরিয়ে আসে; কিন্তু স্নানঘরেও শান্তি নেই। এক বোন দরজা ধাক্কাচ্ছে, একটাই বাথরুম। চোখেমুখে জলের ঝাপটা দিয়ে বেরিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছে নার্গিস।
তার থমথমে মুখ দেখে দরজা ধাক্কানো বোন জানতে চেয়েছে, ‘কী হয়েছে আপা?’
‘কিছু না।’-কোনোরকমে বলতে পেরে সে চলে গেছে পড়ার টেবিলে, এ টেবিলও ভাগাভাগি করে নিতে হয় ভাইবোনদের সঙ্গে। নিজের বইপত্র ঘাঁটতে ঘাঁটতে নিজের ভেতর একটু শান্তি খোঁজার চেষ্টা করেছে নার্গিস।
আব্বু একবার কিছু সিদ্ধান্ত নিলে তাকে টলানো মুশকিল, যত যুক্তিই দেওয়া হোক সিদ্ধান্ত নড়চড় হবে না। কত কথা যে মনে পড়ে যাচ্ছে আজ! আজকের এই দিনটার জন্য কতদিন ধরে সে অপেক্ষা করেছে। আব্বুকে বোঝাতে না পেরে অনিচ্ছা সত্ত্বেও সেজেগুজে বসতে হয়েছে পাত্রপক্ষের সামনে। শেষে ইউসুফকে পাত্র হিসেবে পছন্দ হয়েছে আব্বুর। ভালোমন্দ না বুঝেই আব্বুর পছন্দ মেনে নিতে হয়েছে তাকে।
বাড়ির সদস্যদের দেখাশোনা শেষ হলে ইউসুফ একান্তে দেখা করতে চেয়েছে নার্গিসের সঙ্গে। আব্বুর খুব যে সম্মতি ছিল তা নয়; কিন্তু মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে। এদিকে ইউসুফের মা-বাবা ঘরের বউয়ের উচ্চশিক্ষা বা চাকরি করার পক্ষে নয়। সে কথা জানিয়ে দিয়েছে তারা। তা শুনে নার্গিস মনে মনে অস্থির হয়ে উঠেছে; কিন্তু মাকে ছাড়া কাউকেই সে কথা বলতে পারেনি।
মা চেষ্টা করেছিল আব্বুকে বোঝানোর। লাভ হয়নি। খুব মন খারাপ হলো নার্গিসের। একটা চাপা টেনশনে সে নাওয়া-খাওয়া ভুলেই গেল। একে তো নতুন একটা পরিবারে গিয়ে থাকতে হবে এবং সে পরিবারটাও থাকে গ্রামে। গ্রামে সে কখনো থাকেনি। কলকাতা ছেড়ে খুব একটা বাইরে বেরোয়নি। ফলে সে বিষয়েও তার উদ্বেগ বেড়েই গেছে। বাড়িতে একা হওয়া খুব মুশকিল। তবু সে বাথরুম ফাঁকা পেলেই সেখানে গিয়ে একা একা কেঁদে নিচ্ছে, রাতে সবাই যখন ঘুমোচ্ছে সে জেগে আছে।
ঠিকই খেয়াল করেছে মা। সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেছে, মেয়ের সঙ্গে নিজেও কষ্ট পেয়েছে; কিন্তু দুজনই জানে এসব সান্ত্বনা বৃথা, নার্গিসের ইচ্ছেগুলো বেমালুম মরে যেতে বসেছে। আপনজনের মৃত্যুর পর মানুষ যেমন কষ্ট পায়, কাঙ্ক্ষিত স্বপ্নের আসন্ন মৃত্যুতে সে রকমই কষ্ট পেয়েছে নার্গিস।
যখন সবই প্রায় হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে, তখন শেষ অস্ত্রটা শানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছে নার্গিস। ইউসুফের ঠিক করা এক রেস্তোরাঁয় ডিনার করতে গেছে দুজনে, এই প্রথম বার। সন্ধ্যের পর বাড়ির বাইরে থাকা নিষেধ হলেও এ ক্ষেত্রে আপত্তি করতে পারেনি আব্বু। বিয়ের আগে এত মেলামেশা মেনে নিতে পারেনি দু-বাড়ির লোকেরাই; কিন্তু ইউসুফ জেদ ধরেছে, যার সঙ্গে সারা জীবন থাকার সঙ্কল্প করেছে তার সঙ্গে মেলামেশা না করে কোনোভাবেই বিয়ে করা সম্ভব নয়। তার জেদের কাছে নতি স্বীকার করেছে সবাই। ফলে একসঙ্গে বেরোনোর বাধা থাকেনি আর।
ইউসুফকে অপছন্দ হয়েছে তেমন নয়, তবু নার্গিস একটা অনিশ্চয়তার মধ্যে থেকেছে। আদৌ কি মেনে নিতে পারবে এই মানুষটির সঙ্গে সারাজীবন থাকা? মানুষটি কি তার সঙ্গে কমনীয় ব্যবহার করবে? এসব আরেক উদ্বেগের বিষয়। তবু সে ধীরে ধীরে মানুষটিকে বোঝার চেষ্টা করেছে আর প্রথম দিনের নৈশভোজেই আস্তিন থেকে বের করেছে স্বপ্ন পূরণের শেষ অস্ত্র।
‘সত্যি করে বলো, আমাকে তোমার পছন্দ?’
এই প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে বোঝেনি সে। এসব ভেবেও দেখেনি। কোনো ছেলের সঙ্গে একলা বেরোনোর অভিজ্ঞতাও তার নেই। কখনো কাউকে ফ্যান্টাসাইজ করেছে ঠিকই কিন্তু বাস্তবত রোমান্সের ধারকাছ দিয়ে যাওয়ার অভিজ্ঞতা নেই। ফলে সব মিলিয়ে একটু সিঁটিয়েই আছে; কিন্তু একটা অন্তর্গত আগ্রহও টের পাচ্ছে। শক্তি সঞ্চয় করে চোখ পিটপিট করতে করতে সে ধীরে ধীরে বলেছে,
‘সত্যি বলব?’
‘অবশ্যই।’
‘সবকিছু এত হুট করে হয়ে গেল যে আপনাকে নিয়ে আলাদা করে ভাবার সময় পাইনি।’
‘সে তো ঠিকই। নতুন মানুষকে জানতে সময় একটু লাগবে।’
‘আপনাকেও যদি একই প্রশ্ন করি?’, লাজুক মুখে জিজ্ঞাসা করেছে সে।
“এই, ‘আপনি’ চলবে না।”
“আচ্ছা। “তুমি’।”
‘হা হা... তোমাকে অবশ্যই পছন্দ হয়েছে; কিন্তু তার পরেও কিছু বিষয় থাকে। সেজন্যই একান্তে...’
‘যেমন?’
‘পরস্পরকে বোঝার জন্য এটুকু দরকার, তাই না?’
নার্গিস কিছু বলেনি, মৃদু হেসে সম্মতি জানিয়েছে।
‘আচ্ছা, বিয়ে বিষয়ে তোমার ধারণা কী?’
‘উমমম... ঠিক জানি না। তবে... একটা কথা আপনাকে বলার আছে... মানে তোমাকে।’
‘দ্বিধা না করে বলে ফেলো।’
‘তুমিও কি... মানে কেউ চাইছে না আমি আরও পড়াশোনা করি, চাকরি করি। তুমিও...’
‘এই কথাটাতেই আসব ভাবছিলাম। তোমার ইচ্ছে বলো।’
‘বলব?’
‘নিশ্চয় বলবে।’
‘আরও পড়াশোনা করতে চাই, চাকরি করতে চাই।’
‘তুমি যদি মন দিয়ে কিছু চাও, কেউ আটকাতে পারবে না।’
‘কিন্তু...’
‘কোনো কিন্তু নয়, তুমি পড়বে, চাকরি করবে।’
‘সত্যি বলছেন!’
‘বিশ্বাস হচ্ছে না...?’
‘না না, হচ্ছে...’, (নার্গিসের মুখে মৃদু হাসি যেন সে স্বস্তি পেয়েছে)।
‘শোন না... একটা কথা বলি?’
‘বলুন, মানে বলো।’, মৃদু হাসে নার্গিস।
‘তোমার হাত স্পর্শ করতে পারি? : মানে... এখানে... এখন?’
‘মানুষজন? দূর! একটু সহজ হও। হাত স্পর্শ করতে চাইছি, অন্যকিছু ভেবো না।’
নার্গিস খুব লজ্জা লজ্জা করে ডান হাত বাড়িয়ে দেয়, যেন খুব দ্বিধা নিয়ে বাড়িয়ে দিচ্ছে অন্য কিছু, নিজের হাত নয়। কেননা এই মুহূর্তে হাতের ওপর নিয়ন্ত্রণ নেই তার। একটু যেন কেঁপেই উঠছে হাতটা, যেন বা ঠান্ডা লেগেছে হাতের। দ্বিধাগ্রস্ত হাতের ওপর ইউসুফ আলতো করে আঙুল ছুঁইয়েছে। তারপর হাতের তালু ধরেছে নিজের মুঠোর মধ্যে।
‘ভয় করছে?’
‘ন্...ন্...না... না তো!’
‘তাহলে হাত এত ঠান্ডা কেন?’
‘ও...ই... এমনিই।’
‘এত ভয় পেলে আমার সঙ্গে থাকবে কেমন করে?’
‘পাচ্ছি না তো... ভয়!’
‘বেশ।’
ওয়েটার খাবার নিয়ে আসে। ঝট করে হাত সরিয়ে নেয় নার্গিস। ওয়েটার দেখে কিন্তু তার মুখে কোনো আলাদা প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা যায় না। ইউসুফ ওয়েটারের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসে যেন বা ‘ধন্যবাদ’-এর প্রতিশব্দ এই হাসি। হাসিতে প্রত্যুত্তর দিয়ে খাবার সাজিয়ে ওয়েটার চলে যায়।
‘ভালো করে ভাবো। তোমার যদি বিয়েতে, মানে আমাকে বিয়ে করতে আপত্তি থাকে, এখনো সময় আছে, বিয়ে আটকে দেওয়া যাবে।’
‘না না... আব্বু যা ঠিক করেছে...’
‘এই তো! তাই বলে তোমার মতামত থাকবে না? আব্বু বলেছে বলেই...’
মহাফাঁপরে পড়ে নার্গিস। কী বলা উচিত বুঝে উঠতে পারে না। চামচ দিয়ে থালার ভেতর খাবার নাড়াচাড়া করে। ইউসুফ খেতে খেতে খুব মনোযোগ দিয়ে দেখে নার্গিসের মুখ ও তার চামচের নড়াচড়া।
‘সময় আছে... ভেবে নাও।’
‘না... মানে... ভাবার কিছু নেই... আপনাকেই বিয়ে... মানে তোমাকেই...’
হেসে ফেলে ইউসুফ।
‘তাহলে আমাকে পছন্দ হয়েছে?’
মাথা হেলিয়ে লজ্জা লজ্জা মুখে সম্মতি দেয় নার্গিস। হাসিতে যোগ দেয় ইউসুফও।
স্কুটি চালাতে চালাতে হাসে নার্গিস; কিন্তু সে হাসি মুখ-বন্ধনীর আড়ালে হারিয়ে যায়। শুধু তার কোঁচকানো চোখে লেগে থাকে হাসির রেশ। এক দঙ্গল ছাগল এসে পড়ে রাস্তায়, পিছনে ছাগলের সর্দার। স্কুটি থামিয়ে অপেক্ষা করে নার্গিস। সর্দার ছাগল তাড়িয়ে নিয়ে যেতে যেতে অবাক হয়ে দেখে নার্গিসকে এবং স্কুটিটাও। নার্গিস বোঝে, বোরখা পরে স্কুটি চালাতে আগে কাউকে দেখেনি লোকটা, আসলে কোনো মেয়েকেই হয়তো স্কুটি চালাতে দেখেনি। ছাগলের দঙ্গল নিয়ে চলে যাওয়ার পরও লোকটা পিছন ফিরে দেখছে।
ছাগলের দল চলে যেতেই আবার স্কুটি চালিয়ে দেয় সে। রাস্তার দুই পাশের দৃশ্য সরে সরে যায়। স্কুটি চালানো সে ভালোই প্র্যাকটিস করেছে। করেছে বলেই এই এবড়োখেবড়ো রাস্তাতেও সামলাতে পারছে। একটু যে বুক দুরুদুরু করছে না তা অবশ্য নয়। তবু এখন অব্দি ঠিকই চালিয়েছে।
‘দেনমোহরের বিষয়টা... কত কী দিতে হবে...’, ইউসুফের আব্বু জিজ্ঞেস করে নার্গিসের আব্বুকে।
‘কী যে বলেন, ভাই! আপনার ইচ্ছা।’, বলে নার্গিসের আব্বু।
‘না, তাও... জেনে নেওয়া ভালো।’
‘অত ভাববেন না। বরং ছেলেকে কত কী দিতে হবে সেইটা বলুন।’
‘এটা আবার আমি কী বলব!’
একটু দূরে মেয়েদের সঙ্গে বসে থাকা ইউসুফের মা উত্তর দেয়, ‘যা আপনাদের ভালো মনে হয়... আমাদের আর কী বলার...।’
ইউসুফ চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়ে, ‘কী হচ্ছে, মা? এসব আলোচনার কোনো প্রয়োজন দেখছি না। কোনো দাবি নেই আমার। নার্গিস, তুমি কি দেনমোহর চাও?’
নার্গিস অত্যন্ত ঘাবড়ে গিয়ে বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। ইউসুফ সেটা লক্ষ করে বলে, ‘বাবার উত্তরের দিকে তাকিয়ে থেকো না, নিজের মত বলো।’
নার্গিস খুব অস্বস্তি বোধ করে। সবাই ওর দিকে তাকিয়ে। কোথাও কোনো শব্দ নেই। অত্যন্ত সংকোচে আনত চোখ তুলে দেখে নেয় সবাইকে এবং চোখ নামিয়ে দুপাশে মাথা নেড়ে ‘না’ সূচক ইঙ্গিত করে। ইউসুফ একটু উত্তেজিত হয়ে বলে, ‘নার্গিস, কথা বলো। চুপ করে থাকার সময় নয় এখন।’
নার্গিস আরও অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। কোনোরকমে বলে, ‘দেনমোহর চাই না।’
নার্গিসের মা অত্যন্ত নিচু কণ্ঠে বলে, ‘দেনমোহর স্ত্রী-ধন, সেটা না হলে...’
ইউসুফ নার্গিসের মাকে বলে, ‘ক্ষমা করবেন, নার্গিস নিজের ধন নিজেই বানিয়ে নেবে। চাকরি করবে ও। কী? ঠিক বলছি, নার্গিস?’
নার্গিস আরও ফাঁপরে পড়ে। ইউসুফের মা অসন্তুষ্ট হয়। বলে, ‘ঘরের বউ চাকরি করলে ঘর সামলাবে কে?’
ইউসুফ নিজের মাকে বলে, ‘ওসব চিন্তা কোরো না মা। আমি ঘরের কাজ সব পারি, রান্না করতেও পারি। আর তোমরা আছো। সবাই মিলে সামলে নেব।’
ইউসুফের মা পাল্টা বলে, ‘তবু বাচ্চাকাচ্চা হলে...’
এ কথায় নার্গিস খুব লজ্জা পায়। সবার সামনে এসব আলোচনা হবে সে বোঝেনি। সে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়। ইউসুফ সেটা খেয়াল করে, ‘চলে যেও না, নার্গিস। তোমাকে আর আমাকে নিয়ে কথা হচ্ছে। আমাদের থাকতে হবে।’
নার্গিস ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়ায়। অযথাই ওড়না ঠিক করে। ইউসুফ বলে, ‘আমরা স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্টে বিয়ে করব।’
নার্গিসের বাবা বলে, ‘কিন্তু আমাদের মুসলিম ম্যারেজ অ্যাক্ট আছে তো!’
ইউসুফের বাবা বলে, ‘আমাদের নিজেদের আইন থাকতে আবার...’
তার কথা কেড়ে নেয় ইউসুফ, ‘স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্টও আমাদের নিজেদের আইন, আব্বা। আমরা দেশের নাগরিক নই?’
ইউসুফের বাবা বলে, ‘তা বটে; কিন্তু...’
‘কী আর করি! যা ভালো বুঝিস কর। তোর জেদের কাছে...’, বলে তার মা।
‘জেদ বলছো কেন? সচেতন থাকা কি জেদ? স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্টে স্ত্রীকে যে অধিকার দেওয়া হয়েছে মুসলিম ম্যারেজ অ্যাক্টে সে অধিকার স্ত্রীর নেই। এটুকু তো মানবে? স্ত্রীকে অধিকার প্রাপ্ত নাগরিক মনে করলে দোষ কোথায়?’
ইউসুফের মা বলে, ‘তা অবশ্য ঠিক। আজ যদি তোর আব্বার ভালোমন্দ কিছু হয়ে যায় ওর কোনো কিছুর ওপর আমার আইনি অধিকার থাকবে না। নিজেকে দিয়ে যদি ভাবি তাহলে তুই ঠিকই...’
নার্গিসের বাবা এতক্ষণ চুপ করে শুনছিল। গলা পরিষ্কার করে নিয়ে বলে, ‘তাহলে বিয়ের দিনক্ষণ...’
ইউসুফের বাবা যোগ দেয়, ‘হ্যাঁ, দিনটা যত তাড়াতাড়ি হয় ততই ভালো।’
দু-পক্ষই আগ্রহ নিয়ে দুই বাবার দিকে তাকিয়ে থাকে। শুধু ইউসুফ বলে, ‘বিয়ের জন্য আপনাদের সবাইকেই একটু অপেক্ষা করতে হবে। নার্গিস এমএ পড়া শেষ করবে, চাকরির জন্য পড়াশোনা করবে, চাকরি পাবে... তারপর।’
নার্গিসের বাবা একটু শঙ্কিত হয়ে ওঠে, ‘তুমি যখন চাইছো তখন আমাদের আর কী বলার আছে! কিন্তু রেজিস্ট্রেশনটা করে রাখলে...’
ইউসুফ বলে, ‘আমার মনে হয়, আমরা পরস্পরকে জানার আরেকটু সুযোগ পাব।’
নার্গিসের বাবা বলে, ‘কিন্তু এত দেরি হলে...’
ইউসুফ হাসে, ‘পালিয়ে যাব না, এত ভাববেন না। তাছাড়া পাত্র পালালে আরও পাত্র পাওয়া যাবে। আপনি বরং নিজের মেয়ের কোয়ালিটি বের করে আনার চেষ্টা করলেই ভালো করবেন।’
তার কথার ফাঁকে ‘পাত্র পালালে...’ শুনে নার্গিস চোখের ইশারায় ইউসুফকে বকে দেয়। ইউসুফ তার দিকে তাকিয়েই হেসে হেসে কথাটা বলেছে।
ইউসুফের মা সেটা খেয়াল করে। বলে, ‘বাবু, এতটাও ভালো না। তুই বাড়ির লোকদের কোনো কিছুই মানবি না, তা কী করে হয়? রেজিস্ট্রেশনটা করেই রাখ।’
নার্গিসের মা স্বস্তি বোধ করে। নার্গিস উত্তরের প্রতীক্ষায় চেয়ে থাকে ইউসুফের মুখের দিকে। ইউসুফ বলে, ‘কোনো কিছু মানি না, এটা কিন্তু ঠিক নয়, মা।’, কিছুক্ষণ সময় নেয় সে, ‘শোন, তোমাদের ইচ্ছে অনুযায়ী রেজিস্ট্রেশন হোক তাহলে; কিন্তু কোনো জাঁকজমক করা যাবে না। জাস্ট বাড়ির লোকজন। বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজনকে পরে ডেকে চা খাইয়ে দেব। বিয়েতে যতসব বাজে খরচ আর লোক দেখানো আড়ম্বর! এসব আমরা চাই না। কী বল নার্গিস?’
নার্গিস কিছুই বলে না; কিন্তু তার মুখে হাসি লেগে থাকে। নার্গিসের এক বোন বলে, ‘আপা সাজবে তো বিয়ের দিন?’
সে কথায় সবাই হেসে ওঠে।
বিয়ের দিন দুই বাড়ির লোকদের উপস্থিতিতে রেজিস্ট্রেশন হয়। যে রেস্তোরাঁয় তাদের দুজনকে আগে খেতে দেখা গেছে সেখানেই হয় বিয়ের অনুষ্ঠান। সবাই যখন খাচ্ছে ইউসুফের মা বলে, ‘তাহলে নার্গিস এখন আমাদের বাড়িতেই থাকতে পারবে। কী বলিস, বাবু?’
‘কদিন নিশ্চয়ই থাকবে। তারপর বাবা-মার কাছে থেকেই ও পড়াশোনা করুক। সেখানেই স্বচ্ছন্দ বোধ করবে ও। তাতে পড়াশোনাও ভালো হবে।’
‘বাবু... সবকিছুতেই তোর...’
‘মা, এ নিয়ে কথা হয়ে গেছে। এখন ভালো করে খাও।’
ইউসুফের বাবা বলে, ‘সেই ভালো।’
নার্গিসের বাবা বলে, ‘তোমরা কোথাও বেড়াতে যাবে তো? এই খরচটা কিন্তু আমার উপহার।’
ইউসুফ হাসতে হাসতে বলে, ‘এটা আমরা মেনে নিচ্ছি, কি নার্গিস?’
নার্গিস সহজভাবে বলে, ‘হ্যাঁ, সেটাই হবে আব্বু।’
বাবা বলে, ‘স্নাতক স্তরে ভালো রেজাল্ট করার উপহার। ভাবিস না যে তোর অ্যাচিভমেন্ট আমি অ্যাপ্রেশিয়েট করতে পারি না।’
আদুরে গলায় নার্গিস বলে, ‘আব্বু, ইউ আর দ্য বেস্ট! অ্যান্ড মা অলসো।’
পাশে বসে থাকা মায়ের গালে চুমু খায় নার্গিস। সবাই হাসে।
‘তাহলে কোথায় বেড়াতে যাবি, বাবু?’, ইউসুফের মা বলে।
তারপর সমুদ্রের হাওয়া মেখে দুজনে ঘুরতে থাকে জনমানবশূন্য তট জুড়ে। ক্যাজুরিনা পাতারা শিরশির করে কেঁপে উঠে অভিবাদন জানায় তাদের। তারা বালি মাখে, নোনা জল মাখে, তট ও জলের সীমারেখায় পরস্পরকে ছুঁয়ে শুয়ে থাকে, আলতো চুমু খায় পরস্পরের ঠোঁটে। ক্যাজুরিনা পাতারা আবার কেঁপে ওঠে শিরশির।
পড়াশোনা শেষ করে চাকরির ইন্টারভিউ দেয় নার্গিস। ইংরেজি তার বিষয় হলেও কথ্য ইংলিশ সে ভালো বলতে পারে না। ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে থেমে থেমে ভেবে ভেবে শব্দ চয়ন করে, হোঁচট খায়। ফলে সে সহজে চাকরি পায় না। শেষে ইউসুফের বাড়ি থেকে একটু দূরের গ্রামে একটা নতুন স্কুলে ইংরেজি শিক্ষকের চাকরি পায়। কিছুদিন বাদেই জয়েন করতে হবে।
ইউসুফদের চারচাকা আছে ঠিকই; কিন্তু বাড়ির নানান কাজে লাগে তা। ইউসুফকেও কাজে যেতে হবে। রোজ সকালে তাকে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে হয়। বাইকে করে নার্গিসকে স্কুলে পৌঁছে দিলেও সেটা স্থায়ী সমাধান হতে পারে না। কাউকে কিছু না বলে একদিন ইউসুফ একটা স্কুটি কিনে নিয়ে চলে আসে। তার মা-বাবা এবং নার্গিসও অবাক হয়ে যায়।
‘কিনে ফেললাম।’, মৃদু হেসে মা-বাবাকে বলে ইউসুফ।
‘স্কুটি কী হবে?’, অবাক হয়ে জানতে চায় মা।
‘নার্গিসের জন্য। এটা চালিয়ে স্কুলে যাবে নার্গিস।’, বলে ইউসুফ।
‘স্কুটি...!’, বাবা কথা গিলে নিয়ে বলে, ‘অবশ্য এখন অনেক মেয়ে স্কুটি চালায়, গাড়ি চালায়, এরোপ্লেনও...’
‘তুমি চুপ কর তো! সবকিছুতে লাই দিয়ে দিয়ে ছেলেকে...’, মা কিছুটা ক্ষোভেই যেন ক্ষণিকের জন্য চুপ করে যায়। আবার শুরু করে, ‘তোর সবকিছু মেনে নিয়েছি, বাবু। এবার একটু আমাদের কথাও...।’
‘মা, তুমি অযথাই রেগে যাচ্ছ। শোন আমার কথা।’, বলে ইউসুফ।
নার্গিস ঘরের ভেতর থেকে জানালা দিয়ে সব দেখছিল এতক্ষণ। ইউসুফের মায়ের কথা শুনে সে গোটানো পর্দার আড়ালে সরে যায়, কিন্তু তার একটা চোখ পর্দার আড়াল সরিয়ে বাইরে চেয়ে থাকে। ইউসুফ কী করবে ঠিক বুঝতে পারে না। স্কুটিটা সে উঠোনে দাঁড় করিয়ে মায়ের কাছে আসে।
‘মা, এরকম কেন করছো তুমি? আমার বেলায় তো সবকিছুতেই সায় দিয়েছো। এরকম করে না, মা।’, নরম গলায় বলে ইউসুফ।
‘শাড়ি পরে ইস্কুলে যেতে হবে, স্কুটি চালাতে চালাতে কি পোশাক ঠিক রাখা যায়! বাড়ির বউ... ছিঃ ছিঃ!’
‘যুগ পাল্টেছে, একটু মানিয়ে নিতে হবে না, বাবুর মা?’, বাবা বলে।
‘মানিয়ে তো সবকিছুই নিচ্ছি। আমার কথা শুনছে কে? না না, স্কুটি চালাতে গেলে বোরখা পরতে হবে। আমার কথার নড়চড় হলে একটা দানাও মুখে তুলব না আমি, এই বলে রাখলাম।’
‘কী শুরু করেছো, বাবুর মা?’, বাবা বিরক্ত।
‘ও, এখন তোমার খুব আঁতে লাগছে, না? কী ভালো রেজাল্ট ছিল আমার, একটা স্কুলে কাজও পেলাম। এই তুমিই, তুমিই তো চাকরিটা করতে দিলে না!’, মা ফুঁপিয়ে ওঠে।
‘তখন বাড়ির লোকেরা এত আপত্তি করল যে... আমি...’, বাবা দ্বিধা নিয়ে বলে।
মা চোখে আঁচল চাপা দিয়ে বাচ্চা মেয়ের মতো কেঁদে ফেলে। ইউসুফ মাকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে নেয়। তার বুকে মুখ গুঁজে মা কেঁদেই চলে।
ইউসুফের মায়ের কষ্ট চারিয়ে যায় নার্গিসের মধ্যে। তার চোখের কোণ বেয়ে এক ফোঁটা অশ্রু ঝরে পড়ে। যে সুযোগ সে পেয়েছে, তা হারিয়েছে তার শাশুড়ি এবং আর কোনোদিন ফিরে পাবে না। তার যে এমন হলো না সেজন্য মনে মনে নিজের ইচ্ছে এবং ইউসুফকে ধন্যবাদ দেয়।
স্কুটি শেখা বেশ ঝক্কির। তবু ইউসুফ ধরে ধরে শেখাচ্ছে নার্গিসকে। খুব সকালে একটা খেলার মাঠের মধ্যে চলে যায় দুজনে। বেশ কিছুদিন ধরে স্কুটি শেখে নার্গিস। কিছুদিন পর নিজেই চালাতে শিখে যায়। ইউসুফ নিশ্চিন্তে তার পিছনে বসে থাকে। স্কুটি চালিয়ে এদিক ওদিক ঘুরে বেড়ায় দুজন। নার্গিস চাইলেও ইউসুফ কিছুতেই ড্রাইভ করে না। স্কুটিতে বসে রোমান্স করে দুজনে। ইউসুফের দুষ্টুমির চোটে কখনো স্কুটি এলোমেলো হয়ে যায়। স্টেডি করার জন্য ইউসুফকেই হাত লাগাতে হয়। এভাবেই স্কুটি চালানোর প্রশিক্ষণ পেয়ে যায় সে।
নার্গিস স্কুলে পৌঁছায়। পৌঁছেই আগে সে বোরখা খুলে ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখে। টিচার্স রুমে যায়। হেড মাস্টার তার সঙ্গে বাকি টিচারদের আলাপ করিয়ে দেয়। তারপর ক্লাস নিতে যায়। বাচ্চাদের সঙ্গে কথা বলে ভালো লাগে তার। বাচ্চারা ক্লাসের মধ্যে কথা বলে। নার্গিস খেয়াল করে; কিন্তু কিছুই বলে না। বাচ্চাদের সঙ্গে আলাপ করে পড়া শুরু করতেই ক্লাস শেষের ঘণ্টা পড়ে যায়। নার্গিস বইপত্র গুছিয়ে বেরিয়ে আসে।
স্কুটির কাছে এসে বোরখা পরে ঘরে ফেরার জন্য স্কুটি চালিয়ে দেয় নার্গিস।
‘কেমন হলো?’
‘ভালোই।’
‘তাহলে দিদিমণি, আমার ক্লাস কখন নেবেন?’, ইউসুফ আদর করে কাছে টেনে নেয় নার্গিসকে।
‘দুর! দুষ্টু একটা!’, নার্গিস চোখ পাকায়।
‘আমি দুষ্টু, না?’, নার্গিসকে কাতুকুতু দেয় ইউসুফ। প্রবল হেসে উঠে ইউসুফের হাত দুটো ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করে নার্গিস। হাসি থামিয়ে বলে, ‘প্রথম মাইনে পেয়ে সবার জন্য উপহার কিনব। তুমি কী নেবে বলো?’
‘আমি? সে তুমি এখনই দিতে পারো।’, ঠোঁট উত্তল করে নার্গিসের দিকে বাড়িয়ে দেয় ইউসুফ।
‘যাঃ!’, লজ্জা পেয়ে সরে যায় সে। ‘কাজের কথা শোনো, মাকে ঠিক রাজি করিয়ে নেব। বোরখা আমি আর পরতে পারব না। দম বন্ধ হয়ে আসে। শাড়ি এলোমেলো হবে না, দেখো। শাড়ি পরেই স্কুটি চালাব।’
‘দেখ চেষ্টা করে।’
কিছুটা যেন অসন্তুষ্ট হয় ইউসুফ। যে মেয়েকে সে দেখেছিল ছোট ছোট বিষয়েও অন্যের ওপর নির্ভর করতে আজ সে নিজেই বড় সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। এই মুহূর্তে ইউসুফের মনে হয় বোরখা পরাটাই নার্গিসের পক্ষে ঠিক হবে; কিন্তু মুখ ফুটে সে কথা বলতে পারে না। ইউসুফের হঠাৎ নিষ্প্রভ হয়ে যাওয়া নার্গিস খেয়াল করে।
‘কী হলো?’
‘কিছু না তো!’
‘আমি এবার গাড়ি চালানো শিখব।’
আব্দার করে নার্গিস। এ কথার কোনো উত্তর দেয় না ইউসুফ। ঘর থেকে বেরিয়ে যায় সে। সেদিকে চেয়ে একা বসে থাকে নার্গিস।
কিন্তু পরের দিন বোরখা পরেই স্কুটি চালায় সে। যে আদিগন্ত কৃষি ক্ষেতের মাঝখানের রাস্তা দিয়ে তাকে আগেই স্কুটি চালাতে দেখা গেছে সেখানেই একটা বড় গাছের নিচে থামে। গাছের পাতারা প্রবল হাওয়ায় দুলছে। নার্গিস বোরখা খোলে। মুখে জমে ওঠা ঘাম বোরখা দিয়েই মুছে নেয়, ‘উফ!’ শব্দ করে শ্বাস নেয়, যেন বা হাঁপ ছেড়ে বাঁচে। সকালের নরম আলো আর গাছের পাতার সচল আলোছায়া ছড়িয়ে আছে তার মুখময়। হঠাৎ বাতাসের এক ঝটকায় হাতে ধরা বোরখাটা পতপত করে ওড়ে।