
প্রতীকী ছবি
ডাকাবুকো বাদামি কুকুরটার রয়েছে বিস্তর অবসর। প্রতি সন্ধ্যায় প্রভুর সামনে হাঁটু মুড়ে কিছুক্ষণ বসে থাকা আর ভেজা জিহ্বায় প্রভুর জুতোটার উপর আড়াআড়ি কয়েকটা চাটা দেওয়াই তার কাজ। নিরাপত্তার জন্য প্রভুর রক্ষীর সংখ্যা নিতান্ত কম নয়। ফলে ওই দিকে খুব একটা মনোনিবেশ তার না করলেও চলে। কেবল প্রভু যেদিন খাঁটি চামড়ার নতুন জুতো পরেন সেদিন বাদামির কিছুটা অসুবিধা হয়। ভেতরের কুক্কুট সত্তা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে, কামড় দিয়ে জুতোটার উপরাংশ উদরস্থ করে নিতে ইচ্ছে হয়।
লম্বা জিহ্বা জুতোর উপর রেখে ঝলসে ওঠা চামড়ার লোভ লুকিয়ে প্রভুর দিকে তাকায়। প্রভু বুঝতে পেরে পা সারিয়ে নেন, হাতের লাঠি শপাং শব্দে বসিয়ে দেন বাদামির পিঠ বরাবর। বাদামির ইচ্ছে হয় চিৎকার করে ডেকে উঠতে, পারে না, কেননা এতে আঘাতের বেগ ও পরিমাণ আরও তীব্র হয়ে উঠবে। কুই-কুই শব্দ করে একটু সরে বসে বাদামি। চাকরের পেছন পেছন ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। বাগানের মাঝ বরাবর টিনের থালায় জমানো হাড়ে মুখ লাগায়। মাংসহীন হাড় বেশিক্ষণ চিবাতে ভালো লাগে না। ভালো লাগে না এই আদরের বন্দিত্ব। তার চেয়ে রাস্তার প্রভুহীন কুকুরেরাই বরং ভালো আছে বলে মনে হয়। ইচ্ছে হয় খোলা দরজা দিয়ে চিরতরে বেরিয়ে যেতে। বাধা হয়ে দাঁড়ায় গলায় লাগানো বেল্টটা। এই বেল্ট গলায় থাকতে প্রভুহীন কুকুরেরা তাকে দলে ভিড়তে দেবে না। জায়গায় জায়গায় স্তূপ হয়ে থাকা খাবারের কাছে গেলে তেড়ে আসবে প্রভুহীনের দল।
থালা থেকে মুখ সরিয়ে নেয় বাদামি। ঝিমায়, তবে ঘুমায় না, ভাবে একটি কুকুরের পল্লী কীভাবে প্রতিষ্ঠা করা যায়! তবে কেবল পল্লী প্রতিষ্ঠা করাই যথেষ্ট নয়, খাবারেরও পর্যাপ্ত সরবরাহ রাখতে হবে, নয়তো যোগদানকারী কুকুরেরা থাকতে চাইবে না সেখানে। মানুষের সমাজে বঞ্চনা যত বেশিই হোক, উচ্ছিষ্টের অভাব কখনোই ঘটে না। তবে এই সব চিন্তা তাকে প্রতিজ্ঞা থেকে বিচ্যুত করতে পারে না। ক্ষমতার প্রতি দুর্নিবার আকর্ষণ তাকে কুরে কুরে খায়। একটি পল্লী প্রতিষ্ঠা করতেই হবে। সে হবে সেই পল্লীর প্রধান। বাদামি কুকুরের ভাবনা আরও একবার বাধাগ্রস্ত হয়। পরিবর্তিত বাস্তবতায় নিরঙ্কুশ আধিপত্য অপর কুকুরেরা মেনে নেবে না। ভাগ তাকে দিতেই হবে, কাউকে না কাউকে।