
প্রতীকী ছবি
তিনতলা থেকে নিচের মাটিকে এতটা কোমল মনেহয়নি নাবিলার। তবুও বৃষ্টি হয়েছে। সবুজ ঘাসে ঘাসে জল আর শিশিরে মাটি নরম হয়ে আছে মাংসল শরীরের মতো। মায়ের বুকে আছাড় খেয়ে পড়লে শিশুটি যেমন অক্ষত থাকে নাবিলাও সেদিন অক্ষতই ছিল।
ডায়েরিটা তার হাতেই ছিল। শরতের সাদা মেঘ আর কাশবনের মোহময় দৃশ্য চোখে নিয়ে ক্লাসে বসে ছিল তারা। সেদিনও সে বসেছিল রঞ্জুর পাশে। রঞ্জুর গায়ের গন্ধ আজ ওর পরিচিত। এই তো সবে মিডটার্ম শেষ হয়েছে। সুযোগ পেলেই স্যার নাবিলাকে তুলে অন্য বেঞ্চে নিয়ে বসিয়েছে। মিডটার্মের দিনগুলোতে একসাথে বসতে পারেনি।
-এই তোমাদের অ্যাফেয়ার আছে তা ক্লাস রুমে বাইরে। ক্লাসে একসাথে বসবে না।
সেদিন নাবিলা আর রঞ্জুর মন যত খারাপ হয়েছিল তার থেকেও বেশি রাগ হয়েছিল স্যারের প্রতি। কাশফুলের দিন শেষ হয়, মাতাল করা হেমন্তের ছাতিমের দিনগুলো চলে আসে। ছাতিমের ঘ্রাণ নিতে নিতে সেদিন তারা ফাঁকা মেসটাতে ঢুকে যায়। বাইরে সন্ধ্যায় ফুলে ভরা ছাতিম গাছে চড়ুই এসে মিলতে থাকে।
হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে শুয়ে নাবিলা ভাবে সে তো লাফই দিয়েছিল তিনতলা থেকে। বেঁচে যাবে ভাবতে পারেনি। কিন্তু কীভাবে সকলে জেনে গেল সে রেলিং থেকে পড়ে গিয়েছে! এমনটা কে বলল? কাউকে কিছু বলতে পারছে না নাবিলা। শুধু রঞ্জুর বিশ্বাসঘাতক চোখ তার মনে পড়ছে। সেশনজটে পড়াশোনা পিছিয়ে না গেলে আজ মেসটেস খুঁজে এমন কাণ্ডকারখানা করতে হতো না তাদের। আরে সেশনজট সে তো বলা যাবে না। এও তো বলা যাবে না যে নাবিলা তিনতলা থেকে লাফ দিয়েছে। সম্ভ্রম গেলেও তো বলা যাবে না, ছি শব্দ কোরো না চুপ করো! নিঃশব্দ হও হে প্রেম।