Logo
×

Follow Us

নির্বাচন

‘উৎসবের মর্যাদা’ হারিয়েছে ভোট

Icon

হামিদ সরকার

প্রকাশ: ২১ জানুয়ারি ২০২১, ০৮:৪৭

‘উৎসবের মর্যাদা’ হারিয়েছে ভোট

টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী পৌরসভা নির্বাচনে ভোট কেন্দ্রের বাইরে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় এক যুবক আহত হয়। ছবি: স্টার মেইল

ক্রমেই সহিংস হয়ে উঠছে দেশের নির্বাচন। বাংলাদেশে ভোট আজ উৎসব নয়; জনজীবনের ও রাজনৈতিক জীবনের জন্য একটি আতঙ্কে পরিণত হয়েছে। 

স্থানীয় সরকার নির্বাচন বিশেষ করে পৌরসভা নির্বাচনের প্রথম ধাপের চেয়ে দ্বিতীয় ধাপ সহিংস ও রক্তক্ষয়ী হয়ে উঠছে। জীবনহানি হচ্ছে। নির্বাচনের গণতান্ত্রিক পরিবেশ হারিয়ে যাচ্ছে। 

পৌরসভা নির্বাচনের প্রথম ধাপের চেয়ে দ্বিতীয় ধাপে ভোটের হার কমেছে। ভোটার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। ইসির হিসাব অনুযায়ী, প্রথম ধাপে গড়ে ভোট পড়ে ৬৫ শতাংশ। আর সদ্যসমাপ্ত দ্বিতীয় ধাপে তা কমে ৬১.৯২ শতাংশে দাঁড়ায়। দুই ধাপে এ পর্যন্ত মোট ৮৪টি পৌরসভায় নির্বাচন হয়েছে। তাতে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ ৬৪টি ও বিএনপি আটটিতে জয়ী হয়েছে। 

নির্বাচিত হয়েও একজন কাউন্সিলরকে প্রতিপক্ষের সমর্থকদের হাতে নির্মমভাবে খুন হতে হয়েছে। তারপরও নির্বাচন কমিশনের সচিব বলছেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপের নির্বাচন নিয়ে জনমনে শঙ্কা বিরাজ করছে।

প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, দ্বিতীয় ধাপে নির্বাচন হয় ৬০ পৌরসভায়। আর ৫৮টি পৌরসভার মধ্যে ৪৪টিতে মেয়র পদে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও ছয়টিতে বিএনপি জয়ী হয়। আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা নৌকা প্রতীক নিয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। ছয়টি পৌরসভায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী, চারটিতে বিএনপির প্রার্থী, দুটিতে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী মেয়র পদে জয়ী হয়েছেন। একটি পৌরসভায় জাতীয় পার্টি ও একটিতে জাসদের প্রার্থী মেয়র পদে জয় পেয়েছেন। অন্যদিকে, ভোট গ্রহণের আগেই চারটি পৌরসভায় মেয়র পদে জয়ী হন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা।

প্রথম ধাপের পৌরসভা নির্বাচনে তিন প্রার্থীর বিজয়কে পুঁজি করে পরবর্তী ধাপের নির্বাচনগুলোতেও ভালো ফলের প্রত্যাশা নিয়ে মাঠে নেমেছে দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি। মাঠ পর্যায়ে নেতা-কর্মীদের মনোবল চাঙ্গা রাখতে নির্বাচনি প্রচারে অংশ নিতে তৃণমূলের সাথে মতবিনিময় করছেন দলটির শীর্ষ নেতারা। দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে বিএনপি বিদ্রোহী প্রার্থীসহ মোট ছয়টি মেয়র পেয়েছে।

ইসির তথ্য, বতর্মানে দেশে ৩২৯টি পৌরসভার মধ্যে নির্বাচন উপযোগী ২৫৯টি। এর মধ্যে তিন ধাপে ১৫০টি পৌরসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বাকি পৌরসভাগুলোতেও নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। 

আইন অনুযায়ী, পৌরসভায় নির্বাচিত মেয়র-কাউন্সিলরদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্বে ৯০ দিনের মধ্যে ভোট গ্রহণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। জানুয়ারিতেই মেয়াদ শেষ হবে ১১টি পৌরসভার। ফেব্রুয়ারির মধ্যে মেয়াদ শেষ হবে ১৮৫ পৌরসভার। মার্চে শেষ হবে ২৮ পৌরসভার মেয়াদ। এপ্রিল থেকে নভেম্বরে শেষ হবে ৩০টির মেয়াদ।

বিশ্লেষকদের অভিমত, স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচনকে ঘিরে বাড়ছে সহিংসতা, ঘটছে প্রাণহানি। এই সহিংসতার জন্ম দিচ্ছে মূলত কাউন্সিলর পদপ্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকরা। কাউন্সিলর পদে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন না হওয়ায় সংঘাত-সংঘর্ষ ঘটছে। দলীয় প্রতীক না থাকায় একই ওয়ার্ডে একই দলের একাধিক প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নির্বাচিত হওয়ার জন্য তাদের মরিয়া চেষ্টা শেষ পর্যন্ত রূপ নিচ্ছে সহিংসতায়। আর সহিংসতার নেপথ্যে রয়েছে সংশ্লিষ্ট দলের প্রভাবশালী নেতারা। নির্বাচন কমিশনের দুর্বলতার কারণেই এমন সহিংসতা সম্ভব হচ্ছে বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের। 

স্থানীয় সরকার নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা থাকলেও তারা তা পালন করতে পারেনি। এর মূল কারণ- এই নির্বাচনেও প্রার্থী কেন্দ্রীয়ভাবে নির্বাচিত হয়; কিন্তু অন্যান্য দেশে এটি স্থানীয়রা নির্বাচিত করে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ক্ষমতা চরমভাবে কেন্দ্রীভূত।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, আগামী নির্বাচনে এর চেয়ে ভালো কিছু আশা করা যায় না। বিগত নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বেশি হওয়ায় সহিংসতা বেশি হয়েছে। এমনকি আওয়ামী লীগের একচেটিয়া বিজয় হয়েছে। মনে হয়, এসব দেখে পরবর্তী ধাপে ভোটার সংখ্যা কমে যাবে। ভোটারদের মনে ভীতি কাজ করছে। পৌর নির্বাচনে খুব বেশি সংঘাত হয়েছে, এমনটি বলা যাবে না। তবে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে কমিশন তাদের ভূমিকা যথাযথভাবে পালন করতে পারেনি। কিছু এলাকায় শান্তিপূর্ণ হলেও কয়েকটি এলাকায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। একজন নির্বাচিত কাউন্সিলরকেও হত্যা করা হয়েছে।

নির্বাচন কমিশনের জ্যেষ্ঠ কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘সাভার পৌরসভা এলাকায় আমি বিরোধীদলীয় প্রার্থীর কোনো পোস্টার দেখতে পাইনি। এমতাবস্থায়, এ নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক বলা যায় না।’ 

তিনি আরো বলেন, ‘পৌরসভার নির্বাচনে ক্রমাগত সহিংসতা বেড়েই চলেছে। সহিংসতা ও নির্বাচন একসাথে চলতে পারে না। নির্বাচন প্রক্রিয়ার পরিবর্তন না হলে এ সহিংসতা বন্ধ করা সম্ভব নয়। এ বিষয়ে সবার ঐকমত্য আবশ্যক। যেকোনো নির্বাচনের চেয়ে মানুষের জীবন অনেক বেশি মূল্যবান।’

স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ও সুজন সম্পাদক অধ্যাপক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘সরকার ও নির্বাচন কমিশন যৌথভাবে দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে ভেঙে ফেলেছে। এটিকে ঠিক করা বা আরো খারাপ করা- দুটিই করার ক্ষমতা একমাত্র ক্ষমতাসীন সরকারের আছে।’ 

তার মতে, ‘নির্বাচন কমিশনের অগাধ ক্ষমতা থাকলেও তারা তা সুচারুভাবে পালন করতে পারেনি। মানুষ মরে যাচ্ছে, গুলি করছে, ব্যালট ছিনতাই হওয়ার পরও কমিশনের কোনো বিকার নেই। নির্বাচন কমিশন যে অকার্যকর, এই ভোটে তা ফের প্রতীয়মান হয়েছে।’

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫