নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:০২ পিএম
আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:০৩ পিএম
নির্বাচনে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করতে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার প্রকল্প নিয়েছিল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ভোট জালিয়াতির আশঙ্কায় শেখ হাসিনা সরকারের সময় নেওয়া এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছিল বিরোধী দলগুলো। এবার সেই ইভিএম নিয়ে বড় বিপদে পড়েছে ইসি। কারণ ইসির প্রকল্পে ইভিএম ব্যবহারে কথা থাকলেও সংরক্ষণের বিষয়টি নেই। ফলে অন্য প্রতিষ্ঠানের ওয়্যারহাউজ ব্যবহার করতে হয় প্রতিষ্ঠানটিকে। এর জন্য গুনতে হয় বিপুল অঙ্কের টাকা। সম্প্রতি সেই ভাড়াও দিতে পারছে না ইসি। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবেও নষ্ট হচ্ছে অনেক ইভিএম। সবমিলিয়ে এই প্রকল্পটি যেন ইসির গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছে।
ইসির একটি সূত্র জানিয়েছে, ইভিএম সংরক্ষণে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির (বিএমটিএফ) ওয়্যারহাউজ ব্যবহার করে প্রতিষ্ঠানটি।
ইভিএম সংরক্ষণের জন্য ওয়্যারহাউজ ভাড়া বাবদ ৫৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা (৫০ মাসের ভাড়া) দাবি করেছে বিএমটিএফ। এছাড়া ইভিএম রক্ষণাবেক্ষণেও দরকার ৬০ কোটি টাকা। এ অবস্থায় ইভিএম সংরক্ষণে নিজস্ব ওয়্যারহাউজ নির্মাণের চেষ্টা চালায় ইসি। তবে সেটি সম্ভব হয়নি। এমনকি বিএমটিএফের বকেয়া ভাড়ার বিষয়টিও এখনও সমাধান হয়নি।
ইসি সচিব শফিউল আজম বলেন, ‘ইভিএম রক্ষণাবেক্ষণ ভাড়া বাবদ ৫৩ কোটি টাকা বাকি আছে। বারবার ইভিএম রক্ষণাবেক্ষণ ভাড়া দেওয়া সমাধান নয়। সরকারের টাকা অপচয় বন্ধ করতে হলে ইসির নিজস্ব ওয়্যারহাউজ নির্মাণ করা দরকার। আমরা এজন্য জমি খুঁজছি।’
এদিকে বিভিন্ন নির্বাচনে একই ইভিএম বারবার ব্যবহার করায় এগুলোর অধিকাংশের এখন রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত প্রয়োজন। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ায় সরিয়ে দেওয়া হয়েছে ইভিএম প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালককে। প্রকল্পটি বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির অন্তর্ভুক্তও নয়। এমনকি সদ্য সমাপ্ত প্রকল্পটি ইসিকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। এসব কারণে ইভিএম প্রকল্প নিয়ে বিপাকে পড়েছে ইসি।
প্রকল্পের ডিপিপির ক্রয় প্যাকেজের আওতায় ২ লাখ ৩৪ হাজার ৩৭৩ টাকা দরে মোট দেড় লাখ ইভিএম সেট কেনা হয়। ২০১৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর একনেক সভায় অনুমোদন পায় প্রকল্পটি। চলতি (২০২৪ সালের) জুনে প্রকল্পের কাজ শেষ হলেও এখনো তা ইসিকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি।
২০১১ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে একটি ওয়ার্ডে বুয়েটের তৈরি ইভিএম প্রথমবার ব্যবহার করা হয়। পরে স্বল্প পরিসরে ইভিএম ব্যবহার শুরু হয়। কে এম নূরুল হুদা কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশনের জন্য ইভিএম তৈরি করে বিএমটিএফ।
ইসি ইভিএম প্রকল্পের মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ৩ হাজার ৮২৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। চলতি বছরের ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মোট ব্যয় হয়েছে ৩ হাজার ৬৭৩ কোটি ১৯ লাখ টাকা। প্রকল্পের ডিপিপি অনুসারে আর্থিক অগ্রগতি মোট প্রাক্কলিত ব্যয়ের ৯৬ শতাংশ এবং বাস্তব ক্রমপুঞ্জিত অগ্রগতি ৯৬ দশমিক ৪৮ শতাংশ।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৫০ আসনে ইভিএম ব্যবহার করতে চেয়েছিল কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন। এজন্য ২ হাজার ইভিএম কিনতে ৮ হাজার ৭১১ কোটি টাকার প্রকল্পও হাতে নিয়েছিল ইসি। কিন্তু আর্থিক সংকটের কারণে তাতে সায় দেয়নি সরকার।
পরে সংরক্ষণে থাকা দেড় লাখ ইভিএমের ওপর ভরসা রাখে ইসি। কিন্তু তখন দেখা যায়, ৪০ হাজার ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বাকি এক লাখ ১০ হাজার ইভিএম মেরামতে এক হাজার ২৬০ কোটি টাকা প্রয়োজন। এই টাকা দিতেও সরকার অপারগতা প্রকাশ করলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনেই ব্যালটের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করে ইসি।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
বিষয় : ইসি ইভিএম নির্বাচন ইভিএম নিয়ে বিপদে পড়েছে ইসি
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh