Logo
×

Follow Us

চাকরি

সরকারি চাকরি নাকি বেসরকারি চাকরি

Icon

ফারিহা জান্নাত কুয়াশা

প্রকাশ: ১৭ অক্টোবর ২০২৪, ১২:৫২

সরকারি চাকরি নাকি বেসরকারি চাকরি

প্রতীকী ছবি

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য স্নাতক পাশ করেছে রাসেল। তার পরিবার, সিনিয়র ভাইয়েরা, আত্মীয়-স্বজন সবাই সরকারি চাকরি করার জন্য তাকে অনুপ্রাণিত করছে। কেননা সরকারি চাকরি মানেই নিশ্চিত ভবিষ্যৎ, নিরাপত্তা, আর সমাজে সম্মান। কিন্তু রাসেল বেসরকারি চাকরি, বিশেষ করে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে কাজ করতে চান। কেননা এই কাজ থেকে তিনি পাবেন দ্রুত সাফল্য, উচ্চ আয়ের সুযোগ এবং আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা। এখন তার বাসার সবাই তাকে বলছেন যে বেসরকারি চাকরিতে সিকিউরিটি নেই, যে কোনো সময়ই চাকরি চলে যায় ইত্যাদি। এখন তা হলে কী করবে রাসেল? কীভাবে ঠিক করবে কোন চাকরি তার জন্য সবচেয়ে ভালো? সরকারি নাকি বেসরকারি? এই দ্বিধা কাটিয়ে উঠতে, আসুন এ চিরায়ত দ্বন্দ্বের গভীরে যাই।

সরকারি চাকরির আকর্ষণীয় দিকগুলো
সরকারি চাকরি দীর্ঘদিন ধরে সমাজে এক ধরনের নিরাপত্তা ও সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। এর কিছু মূল বৈশিষ্ট্য হলো-

চাকরির নিরাপত্তা ও স্থায়িত্ব : সরকারি মানেই স্থায়ী চাকরির নিশ্চয়তা। একবার চাকরি পেলে হারানোর আশঙ্কা খুবই কম। এটি একটি বড় আশ্বাস, বিশেষ করে বর্তমানের অনিশ্চিত কর্মজীবনের প্রেক্ষাপটে।

পেনশন ও অন্যান্য সুবিধা : অবসরকালীন পেনশন এবং অন্যান্য সুবিধা, যেমন স্বাস্থ্য বীমা, চাকরিজীবনের শেষ প্রান্তে আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। ফলে অবসরের পরও জীবন নির্বিঘ্নে কাটানো যায়।

কাজের চাপ কম : অনেকেই সরকারি চাকরির কম কাজের চাপের বিষয়টি প্রশংসা করেন। নিয়মিত কর্মঘণ্টা এবং ছুটির সুবিধা থাকার কারণে ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনের মধ্যে ভারসাম্য রাখা সহজ হয়।

তবে সরকারি চাকরিরও কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে-

উন্নতির ধীরগতি : পদোন্নতি পেতে অনেক সময় লম্বা সময় ধরে অপেক্ষা করতে হয়। কাজের ধরন এবং সুযোগও সীমাবদ্ধ হতে পারে, যা কর্মচারীদের কিছু ক্ষেত্রে হতাশ করতে পারে।

একঘেয়ে কাজের পরিবেশ : অনেকেই সরকারি চাকরিতে সৃজনশীলতার ঘাটতি এবং কাজের গতানুগতিক ধরনের অভিযোগ করেন। যারা চ্যালেঞ্জ নিতে ভালোবাসেন, তাদের জন্য এটি ক্লান্তিকর হতে পারে।

বেসরকারি চাকরির সুযোগ

অন্যদিকে বেসরকারি চাকরির জগৎ তার গতি, উদ্যম এবং সম্ভাবনার জন্য আকর্ষণীয়। যারা দ্রুত ক্যারিয়ার উন্নতির স্বপ্ন দেখেন, তাদের জন্য এটি হতে পারে সেরা বিকল্প।

দ্রুত পদোন্নতি ও বেতন বৃদ্ধি : বেসরকারি খাতে দক্ষতা এবং মেধার ভিত্তিতে দ্রুত পদোন্নতির সুযোগ পাওয়া যায়। বিশেষ করে আইটি, ব্যাংকিং, এবং কর্পোরেট সেক্টরে বেতন বৃদ্ধি এবং প্রমোশনের সম্ভাবনা অনেক বেশি।

চ্যালেঞ্জিং কাজ : যারা প্রতিনিয়ত নতুন কিছু শিখতে এবং চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পছন্দ করেন, তাদের জন্য বেসরকারি চাকরি উপযুক্ত। কাজের বৈচিত্র্য এবং সৃজনশীলতার সুযোগ এ খাতে প্রচুর।

আন্তর্জাতিক সুযোগ : অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাজ করার সুযোগ দেয়। ফলে আপনি বিভিন্ন দেশের 

সংস্কৃতি, কাজের ধরন, এবং বাজার সম্পর্কে জানতে পারেন, যা আপনার অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা বাড়ায়।

তবে বেসরকারি চাকরিরও কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে-

চাকরির অনিশ্চয়তা : বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি সব সময় স্থায়ী হয় না। অর্থনৈতিক মন্দা বা কোম্পানির লাভ-ক্ষতির ওপর নির্ভর করে চাকরির স্থায়িত্ব পরিবর্তিত হতে পারে।

উচ্চ কাজের চাপ : বেসরকারি খাতে কর্মঘণ্টা দীর্ঘ হতে পারে এবং কাজের চাপও অনেক বেশি। অতিরিক্ত সময় কাজ করা এবং সময়সীমার মধ্যে প্রকল্প শেষ করার চাপ ব্যক্তিগত জীবনে প্রভাব ফেলতে পারে।

সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব আপনারই- সরকারি চাকরির স্থায়িত্ব, পেনশনের সুযোগ নাকি বেসরকারি খাতের দ্রুত অগ্রগতি এবং উচ্চ আয়ের সম্ভাবনা বেছে নেবেন? 

মূলত এই সিদ্ধান্তটি নির্ভর করে আপনার পেশাগত লক্ষ্য, ব্যক্তিগত জীবন এবং ঝুঁকি গ্রহণের ইচ্ছার ওপর। আপনি যদি স্থায়িত্ব এবং নিশ্চিত ভবিষ্যৎ চান, তবে সরকারি চাকরি আপনার জন্য সঠিক হতে পারে। অন্যদিকে যদি আপনি দ্রুত অগ্রগতি, সৃজনশীলতা এবং চ্যালেঞ্জ পছন্দ করেন, তবে বেসরকারি খাত হতে পারে আপনার জন্য সেরা বিকল্প।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫