ব্যবসা কোনো চ্যারিটি নয়। এর প্রথম ও শেষ কথা মুনাফা। তাই অনেকের কাছে ব্যবসা ধনী হওয়ার অন্যতম হাতিয়ার। বলা হয়ে থাকে, ব্যবসায় দশ দিক থেকে আয় করা যায়, আবার সে অর্থ মনের মতো করে খরচ করাও যায়। যেটাকে পুঁজি করেই পৃথিবীর সফল ব্যক্তিত্বরা তাদের লক্ষ্য অর্জন করেছেন, জায়গা করে নিয়েছেন সাফল্যের শিখরে। যেখানে বসার তীব্র আকাঙ্ক্ষা প্রায় প্রতিটি মানুষকেই তাড়া করে। বুকের গভীরে লালিত সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দিতে, অনেকেই বেছে নেয় ব্যবসাকে। আজ আমরা সেই সফলতার মন্ত্রগুলো নিয়েই আলোচনা করব।

লক্ষ্য স্থির করা

প্রত্যেক সফল ব্যবসার মূলে রয়েছে একটি স্পষ্ট লক্ষ্য; যা হতে পারে গ্রাহকদের সেবা, আর্থিক সফলতা বা সামাজিক অবদান। লক্ষ্য অনুযায়ী পরিকল্পনা করলে ব্যবসায়ের সফলতার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।

বাজার নিয়ে গবেষণা

ব্যবসা শুরুর আগে যে পণ্য বা সেবা নিয়ে ব্যবসা করতে ইচ্ছুক, তার বাজার সম্পর্কে গবেষণা করতে হবে। পণ্যটির চাহিদা কেমন, বাজারে সেটার জোগান কেমন, বিপণনে কী কী সুবিধা পাওয়া যাবে, কোথায় বিপণন করা হবে- এসব যাচাই-বাছাই করতে হবে। একই সঙ্গে বর্তমান বাজারের অবস্থা ও মূল্য সম্পর্কেও জানতে হবে। এমনকি বাজারের প্রতিযোগীদের নিয়েও চিন্তা-ভাবনা করতে হবে।

ব্র্যান্ডিং করা

যে কোনো কোম্পানি বা বিজনেস দাঁড় করানোর পূর্বশর্ত ব্র্যান্ডিং। যদি মার্কেটে লং টাইম থাকতে চান এবং পরিচিতি লাভ করতে চান, তাহলে অবশ্যই ব্র্যান্ডিং করতে হবে। বিজনেস ব্র্যান্ডিংয়ের কিছু ওয়ে রয়েছে। বর্তমানে ফিজিক্যালি অ্যাডভার্টাইজমেন্ট না করে, সম্পূর্ণ ডিজিটালি করাটাই সাশ্রয়ী। ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য আলাদা একটা মার্কেটিং বাজেট ধরে রাখতে হবে। আপনি ফেসবুক, গুগল কিংবা বিং ইউজ করে আপনার বিজনেসের বিজ্ঞাপন করতে পারবেন অনেক কম খরচে। এতে করে অনেক ঝামেলা ছাড়াই আপনি আপনার টার্গেটেড কাস্টমারের কাছে পৌঁছতে পারবেন।

ব্যবসায়িক কাঠামো তৈরি 

ব্যবসা ব্যক্তিমালিকানা, অংশীদারী কিংবা কোম্পানিভিত্তিক হবে তা নির্ধারণ করা জরুরি। এই কাঠামোর সঙ্গে বিনিয়োগের সম্পর্ক ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ব্যক্তিমালিকানা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ব্যক্তি নিজে বিনিয়োগ করে থাকেন। অংশীদারী ব্যবসায়ে কয়েক জন মিলে বিনিয়োগ করে থাকেন। আর কোম্পানিভিত্তিক ব্যবসায়ে নির্দিষ্ট সংখ্যক ব্যক্তি একত্রিত হয়ে বিনিয়োগ করে থাকেন।

প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার

আধুনিক ব্যবসার ক্ষেত্রে প্রযুক্তি একটি বড় হাতিয়ার। প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার করলে ব্যবসার উৎপাদনশীলতা এবং কার্যকারিতা বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। আপনি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম, ই-কমার্স, ডিজিটাল মার্কেটিং এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে ব্যবসাকে আরও সফল করতে পারেন। প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকতে পারবেন।

ঝুঁকি নিতে হবে

ঝুঁকি ছাড়া যদি কোনো ব্যবসার ধারণা আপনার থাকে, তবে মনে করবেন, কেউ না কেউ সে ব্যবসা করছে। আপনাকে এমন কিছু করতে হবে, যা ঠিকমতো কাজ করবে না। অনেকটা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার মতো বিষয় নিয়ে আপনাকে এগোতে হবে। 

ব্যর্থতার ভয় থাকা চলবে না

ব্যর্থতাই সফলতার চাবিকাঠি। ব্যর্থ হওয়ার ভয় থাকলে সফল হওয়া কঠিন। নতুন নতুন ধারণা নিয়ে এগোতে হবে। এতে ব্যর্থ হলে ভেঙে পড়া চলবে না। নতুন করে আবার উঠে দাঁড়াতে হবে। নতুন করে কাজ শুরু করতে হবে। ব্যবসায় যত দ্রুত ঘুরে দাঁড়াবেন, ততই সফল হবেন। তবে কোথায় থামতে হবে, সেটাও জানা জরুরি।

কথা শুনতে হবে

যারা সফল হতে চান, তাদের মনোযোগ দিয়ে প্রচুর কথা শুনতে হবে। তারপর তাদের মনোজগতে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে হবে। পাশাপাশি মৌলিক গোঁড়ামিকে প্রশ্রয় দিলে চলবে না। 

অলটারনেটিভ প্ল্যান রাখা

প্রতিটা ফিক্স প্ল্যানের সঙ্গে একটা অলটারনেটিভ প্ল্যান থাকা উচিত সব ব্যবসায়। কারণ কারও প্ল্যান যে ১০০% সঠিকভাবে কাজ করবে, সেটার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তাই আপনি যদি কোনোভাবে আপনার প্রথম প্ল্যান বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হন, তাহলে যেন আরেকটা প্ল্যান আঁকড়ে ধরে উঠে দাঁড়াতে পারেন।

ধৈর্য ও পরিশ্রম

ব্যবসায় সাফল্য এক দিনে আসে না। দীর্ঘদিনের পরিশ্রম, ধৈর্য এবং আত্মবিশ্বাসের মাধ্যমে সফলতা অর্জন করা সম্ভব। চ্যালেঞ্জ এবং বিপদ আসবেই, কিন্তু সেগুলো মোকাবিলা করার মানসিকতা রাখলে আপনি সফলতার পথে এগিয়ে যাবেন।