
ফাইল ছবি
পেশা জীবনের শুরুতে মাত্র ১০ হাজার টাকা বেতনে একটি প্রতিষ্ঠানের জুনিয়র এক্সিকিউটিভ হিসেবে কাজ শুরু করেন রাফসান। দুই বছরের অভিজ্ঞতা অর্জনের পর ভালো বেতনের আশায় চাকরি পরিবর্তন করে নতুন প্রতিষ্ঠানে ‘বিক্রয়কর্মী’ পদে যোগ দেন।
তবে চার মাস কাজ করার পরও কোনো বেতন পাননি, উপরন্তু প্রতিষ্ঠানটিই বন্ধ হয়ে যায়। এরপর পরিবারের পরামর্শে হোটেল ম্যানেজমেন্টে ছয় মাসের একটি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। রাফসানের আশা ছিল প্রশিক্ষণের পর বিদেশে ভালো বেতনের চাকরি পাবেন। প্রশিক্ষণ শেষে একটি ফাইভস্টার হোটেলে ছয় মাস চুক্তিভিত্তিক কাজ করে অভিজ্ঞতার সনদও সংগ্রহ করেন। কিন্তু তার বিদেশে চাকরির আশা পূরণ হয়নি। হতাশা বাড়তে থাকায় তিনি একটি ফাস্টফুড দোকানে মাত্র পাঁচ হাজার টাকা বেতনে সহকারী হিসেবে কাজ নেন। ভালো বেতনের আশায় তিন বছরে তিনি চারবার পেশা পরিবর্তন করেন। বর্তমানে রাফসান নিজের গ্রামে একটি এনজিওতে কাজ করছেন, তবে তিন মাস পার হলেও তিনি কোনো বেতন পাননি, কারণ এনজিওর প্রকল্প এখনো অনুমোদিত হয়নি।
রাফসানের এই অভিজ্ঞতা কেবল তার একার নয়; দেশের অনেক তরুণ একই চক্রে আটকে পড়ছেন। ভালো বেতনের আশায় বারবার পেশা পরিবর্তন করতে গিয়ে তারা হতাশাজনক জীবন যাপন করছেন।
পেশা নির্বাচন ও পরিবর্তনের ৫ ঝুঁকি
এক. আপনার পড়াশোনার বিষয় আর চাকরির ক্ষেত্র ভিন্ন হলে পেশাগত ঝুঁকি তৈরি হয়।
দুই. পেশা পরিবর্তন করার ফলে আগের পেশার সময়, শ্রম, অর্জিত দক্ষতা সবকিছুই বিফলে যায়। বারবার নতুন বিষয়ে নতুন অভিজ্ঞতায় সময় নষ্ট হয়ে যায়।
তিন. নতুন পেশা চাকরিই হোক আর ব্যবসাই হোক, ঝুঁকি অনুমান করতে পারা জরুরি কাজ। দ্বিগুণ বেতনের অফার পেলেই চাকরিতে ইস্তফা দিতে নেই। কে জানে এই প্রতিষ্ঠান টিকে থাকবে কি না। কোথায় যাচ্ছেন, কী পেশায় যাচ্ছেন, বেতন বা আয় ছাড়াও অন্য দিকগুলো ঠিক আছে কি না দেখে নিন।
চার. যখন পেশা নির্বাচনের জন্য পরামর্শদাতা নির্বাচন ভুল হয় তখন পেশাগত ঝুঁকি তৈরি হয়। কার কাছে পরামর্শ চাচ্ছেন জানা জরুরি।
পাঁচ. সঠিক পেশা নির্বাচন করতে গিয়ে দুই বা তিনবারের বেশি পেশা পরিবর্তন কাম্য নয়। প্রথমবার ভুল হতেই পারে। কিন্তু দ্বিতীয়বার ভুল করা ঠিক নয়। তার পরও যদি ভুল হয়েই যায়, তৃতীয়বারে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতেই হবে। এরপর আর পেশা পরিবর্তন করা উচিত হবে না। ঝুঁকি তৈরি হবে।
পেশা পরিবর্তনের আগে যা ভাববেন
১. নতুন পেশার জন্য আপনার যথেষ্ট দক্ষতা আছে কি? যদি না থাকে, কীভাবে সেই দক্ষতা অর্জন করবেন তা ভাবুন।
২. পেশা পরিবর্তনের সময় আর্থিক অনিশ্চয়তা মোকাবিলার জন্য কিছু সঞ্চয় রাখুন।
৩. নতুন পেশার সুযোগ-সুবিধা, কাজের ধরন এবং প্রতিযোগিতা সম্পর্কে জানুন।
৪. একজন অভিজ্ঞ মেন্টরের সাহায্য নিন, যিনি নতুন পেশা সম্পর্কে গাইড করতে পারেন।
৫. নতুন পেশায় প্রবেশের জন্য একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক তৈরি করুন।
৬. সরাসরি পেশা পরিবর্তন না করে ফ্রিল্যান্স বা পার্ট টাইম হিসেবে শুরু করা যেতে পারে।
পেশা পরিবর্তনের ক্ষেত্রে যদি সঠিক পথ পেয়ে যান তাহলে জীবনের জন্য বিশাল কাজ শেষ হলো ধরে নিন। দ্বিতীয়ত, যদি দীর্ঘ সময় পরে বুঝতে পারেন সঠিক পেশা নির্বাচনে ভুল হয়েছে, তাহলে যে ক্ষতির সম্মুখীন হবেন তা অপূরণীয়। এই অপূরণীয় ক্ষতির হাত থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় যত দ্রুত সম্ভব বুঝে নিন এই পেশা আপনার জন্য সঠিক কি না।