সংস্কার কমিশনের যে সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ প্রশাসন ক্যাডাররা

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৬:৫৪

সচিবালয়। ছবি: সংগৃহীত
উপসচিব পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে প্রশাসন ও অন্যান্য ক্যাডার কর্মকর্তাদের জন্য ৭৫:২৫ শতাংশের বদলে ৫০:৫০ শতাংশ করার সুপারিশ দেবে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন।
কমিশনের এমন সিদ্ধান্তে চরম ক্ষুব্ধ প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তারা।
নিজেদের করণীয় ঠিক করতে গতকাল মঙ্গলবার রাতে জরুরি বৈঠক করেছে প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন (বিএএসএ)। তাদের অভিযোগ, সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী উপসচিব পদে পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডার থেকে ৭৫ শতাংশ এবং অন্য ক্যাডার থেকে ২৫ শতাংশ নেওয়া হয়। এটি পরিবর্তন করা দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায় উপেক্ষা করার শামিল। এতে প্রশাসনে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হবে।
অন্যদিকে কমিশনের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন প্রশাসন ছাড়া অন্যান্য ক্যাডার কর্মকর্তারা। তাদের মতে, উপসচিবের মতো যুগ্ম সচিব ও অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রেও একই সুবিধা থাকতে হবে। এটি করা হলে প্রশাসনের দীর্ঘদিনের আন্ত ক্যাডার বৈষম্য দূর হবে। প্রশাসনে সব ক্যাডারে সমতা ফিরবে।
তবে উল্লিখিত বিষয়ে নাম প্রকাশ করে দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তাই মুখ খুলতে রাজি হননি।
গতকাল দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়সভা করে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। সভায় কমিশনের প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী জানান, পরীক্ষা ছাড়া সিভিল সার্ভিসের উপসচিব ও যুগ্ম সচিব পর্যায়ে কেউ পদোন্নতি পাবেন না। পাবলিক সার্ভিস কমিশন পরীক্ষা নেবে। ৭০ নম্বর না পেলে পদোন্নতি পাবেন না।
পরীক্ষায় একজন কাস্টমস ক্যাডারের কর্মকর্তা সবচেয়ে বেশি নম্বর পেলে তিনি উপসচিবের তালিকায় ১ নম্বরে আসবেন। এর মাধ্যমে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য দূর হবে। যেকোনো ক্যাডারের যে কেউ ৭০ নম্বর পেলে প্রশাসন ক্যাডারে আসতে পারবেন। এ ছাড়া উপসচিব পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জন্য ৫০ শতাংশ এবং অন্য ক্যাডার থেকে ৫০ শতাংশ সুপারিশ করা হচ্ছে। বর্তমানে উপসচিব পদে পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডার থেকে ৭৫ শতাংশ এবং অন্য ক্যাডার থেকে ২৫ শতাংশ নেওয়া হয়।
গণমাধ্যমে এমন খবর প্রকাশিত হলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে। প্রশাসন ক্যাডারের ব্যাচভিত্তিক সংগঠনগুলোর গ্রুপে এ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। কর্মকর্তাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের গ্রুপগুলোতে এ নিয়ে আলোচনা হতে থাকে। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তাদের সংগঠন বিএএসএ গতকাল রাতে রাজধানীর বিয়াম মিলনায়তনে জরুরি বৈঠক আহ্বান করে। সংগঠনটির যুগ্ম মহাসচিব শেখাবুর রহমানের সই করা নোটিশে সভার আলোচ্যসূচিতে রয়েছে ‘সংগঠনের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ও ভবিষ্যৎ করণীয় নির্ধারণের বিষয়ে আলোচনা’।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএএসএর এক নেতা গণমাধ্যমকে বলেন, এটা হতে পারে না। পদোন্নতির ক্ষেত্রে পরীক্ষা নিতে চাইলে নেবে, এতে তেমন আপত্তি নেই। কিন্তু উপসচিব পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী কোটা পদ্ধতি চালু রয়েছে। সেখানে কিভাবে সংস্কার কমিশন হাত দেয়। এটা রীতিমতো আদালত অবমাননার শামিল। এটা কোনোভাবেই মানা হবে না। এই পরিস্থিতি কিভাবে মোকাবেলা করা হবে, তা নির্ধারণ করতেই বিয়ামে বৈঠক আহ্বান করা হয়।
এদিকে প্রশাসন ছাড়া অন্য ২৫ ক্যাডার কর্মকর্তাদের সংগঠন ‘আন্ত ক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ’ সংস্কার কমিশনের এমন প্রস্তাবে খানিকটা খুশি। তারা মনে করছে, উপসচিব পদের মতো সরকারের সব পদেই মেধার ভিত্তিতে পরীক্ষার মাধ্যমে পদোন্নতি হওয়া উচিত। তাঁরা বলেন, কোনো কোটাই থাকা উচিত নয়। এর পরও কমিশন যেহেতু আমাদের দাবি আমলে নিয়ে কোটায় সমতা এনে প্রস্তাব করেছে, এতে কিছুটা হলেও আমরা সন্তুষ্ট।
জানতে চাইলে সংগঠনটির সমন্বয়ক বিসিএস (শিক্ষা) ক্যাডার কর্মকর্তা ড. মো. মফিজুর রহমান বলেন, ‘আমরা কমিশনের এমন প্রস্তাবের বিরোধিতা করছি। সরকারি পদে কোনো ধরনের কোটা থাকা সংবিধানবিরোধী। আমরা শিগগিরই এ বিষয়ে বৈঠক করে আমাদের দাবি জানাব। কর্মসূচি দেব। সরকারের পদে পদোন্নতি হবে মেধার ভিত্তিতে। কোনো ধরনের কোটা থাকবে না।’