Logo
×

Follow Us

বিনোদন

গানের ফেরিওয়ালা কুদ্দুস বয়াতি

Icon

শিরোপা আজিম

প্রকাশ: ২০ মার্চ ২০২০, ১৩:২১

গানের ফেরিওয়ালা কুদ্দুস বয়াতি

কুদ্দুস বয়াতি, বিখ্যাত লোক সংগীতশিল্পী। নব্বই দশক বা এর পরের প্রজন্মকে লোকগানের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন তিনি। চালচুলাহীন এই বয়াতি মুখে মুখে গান গেয়ে এক সময় ঘুরে বেড়িয়েছেন দেশের নানা প্রান্তে। স্কুল-কলেজে যেতেই পারেননি। সেই অনিশ্চিত জীবনে ঢাকার পথে একবার দেখা মেলে অভিনেতা আফজাল হোসেনের সঙ্গে। তিনি তাকে তার বিদেশি সংস্থার ডকুমেন্টে অভিনয়সহ চারণ সংগীত ব্যবহারের আগ্রহ প্রকাশ করেন।

একসময় সেই কাজ শেষও হয়। এরপরই দেশের মানুষ একটু একটু করে চিনতে পারেন কুদ্দুস বয়াতি নামের এক ‘ব কলম’ চারণ লোকজ শিল্পীকে। তবে তার জীবনের সবচে বড় টার্নিং পয়েন্ট ছিল কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদের নজরে পড়া। ১৯৯২ সালে কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ প্রাথমিক শিক্ষার প্রচারণামূলক একটি বিজ্ঞাপনচিত্র নির্মাণ করেন। এই বিজ্ঞাপনে ‘এই দিন, দিন না, আরও দিন আছে,’ গানটি গেয়েই রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে ওঠেন কুদ্দুস বয়াতি। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি, শুধুই সামনে এগিয়ে চলা।

মূলত পালা গানের শিল্পী হলেও কাজ করেছেন বহু বিজ্ঞাপনচিত্র, নাটক, সিনেমা, ডকুমেন্টারিতে। আগে মূলত গাইতেন মহুয়া, মলুয়া, দেওয়ান বাদশা, কাঞ্চন বাদশাহসহ হাজার বছর আগের নানা ধরনের পালার গান। সে সময় গানের এক ধারার শ্রোতা ছিল। এখন তা অনেকটাই পরিবর্তন হয়েছে। নিজের নিজস্বতা ধরে রেখে তাই আমরা কুদ্দুস বয়াতিকে অনেকটাই ভিন্নভাবে পাই ‘মামা হে’র মতো ‘গানে। গানটি মুক্তি পেয়েছিল ইউটিউবে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ইতিহাস ইতিহ্যের যে পরিবর্তন হয়েছে, মূলত তার সঙ্গেই চলার চেষ্টা করেছেন সবসময়।

এ যুগে শিল্পের নানা মাধ্যম। বিনোদনের অভাব নেই। তাই কুদ্দুস বয়াতি সবসময়ই চেষ্টা করেছেন পুরনো ঐতিহ্য এ গানগুলোকে মানুষের কাছে, মূলত তরুণ প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে। এ জন্য নিজস্বতা বজায় রেখেই আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার করতে চেয়েছেন তার নিজের গানে। লোকগানের মধ্যে আধুনিকতার সংমিশ্রণে তাই নতুনভাবে দর্শকদের সামনে হাজির হয়েছেন। শ্রোতারা সেটা গ্রহণও করেছিল। অবশ্য কিছু সমালোচনা যে তার কপালে জোটেনি তাও না। কিন্তু সময়ের সঙ্গেই চলেছেন এই লোকশিল্পী সবসময়। তাই প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে খুলেছেন ইউটিউব চ্যানেলও। তার নিয়মিত আপডেট পাওয়া যায় এই ইউটিউব চ্যানেলেই। যদিও বহু আগেই গান দিয়ে মানুষের হৃদয় স্পর্শ করেছেন। তারপরও নিজেকে প্রতিনিয়ত আপডেটেট রাখতে চান।

শুরুটা অবশ্য এত সহজ ছিল না। গান শিখেছেন মনসুর বয়াতির কাছে। গ্রাম-গঞ্জে পালা গান করে বেড়াতেন। ওস্তাতদের সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াতেন। এক-আধাসের চালের বিনিময়ে তিনি তখন গান করতেন। মানুষ খুশি হয়ে যা দিতেন তাতেই সন্তুষ্ট থাকতেন। ছোটবেলায় একবার তার ফুপা গান শুনে খুশি হয়ে তাকে এক টাকা দিয়েছিলেন। ওটাই ছিল কুদ্দুস বয়াতির প্রথম আয়, যা তিনি এখনো ভোলেননি।

একবার পাশের পাড়ায় ওস্তাদের ডাক পড়ল। ওস্তাদ সবার সঙ্গে তাকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি সেদিন গানের সঙ্গে মিল রেখে পোশাক পরেছিলেন আর কোমর দুলিয়ে গান গেয়েছিলেন। সেদিন সারারাত চলেছিল গানের এ আসর। একজন মানুষও আসর ছেড়ে যাননি। পাঁচ টাকা সেদিন ওই আসর থেকে আয় করেছিলেন। এভাবেই তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, গানটা তার হবে।

এরপর হুমায়ূন আহমেদের হাত ধরেই তার ঢাকায় থিতু হওয়া। অবশ্য এখনো সুযোগ পেলেই গ্রামে ছুটে যান। গুণী এই লোকশিল্পীর জন্ম ১৯৪৯ সালে, নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার, রাজীবপুর গ্রামে। ব্যক্তিজীবনে তিনি দশ সন্তানের জনক। মাঝখানে তিনি বেশ অসুস্থ ছিলেন। কিছুটা সুস্থ হয়ে এখন আবার গানের জগতে ফিরে এসেছেন। আশা করা যায়, দায়িত্ব নিয়েই পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে আবারও পালা গান, লোকসংগীতকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দেবেন এ সংগীতশিল্পী।

এখন পর্যন্ত কদ্দুস বয়াতির দুটি এককসহ প্রকাশ হয়েছে পাঁচটি অ্যালবাম। এ ছাড়া তিনি অসংখ্য জনপ্রিয় বিজ্ঞাপনচিত্র, নাটক ও প্রামাণ্যচিত্রে গান গেয়েছেন। টেলিভিশন ও রেডিও মাতিয়েছেন। নাটক ও চলচ্চিত্রে গান করেছেন।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫