Logo
×

Follow Us

বিনোদন

দর্শকের ভালোবাসার প্রতিদান দিতে চাই: সামিরা খান

Icon

মোহাম্মদ তারেক

প্রকাশ: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৬:৫৩

দর্শকের ভালোবাসার প্রতিদান দিতে চাই: সামিরা খান

সামিরা খান মাহি। ছবি: সংগৃহীত

এ সময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী সামিরা খান মাহি। ভিউয়ের দৌড়ে এগিয়ে থাকছে তার নাটক। ঈদ উৎসবে বাজিমাত করছে মাহির কাজ। ক্যারিয়ারে যুক্ত হচ্ছে নানান সম্মাননা। সবকিছু মিলিয়ে তাকে নিয়ে নির্মাতাদের চাহিদা বাড়ছে। দিন দিন ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন মাহি।

নিজের ভাবনা ও প্রাসঙ্গিক বিষয়ে তিনি কথা বলেছেন মোহাম্মদ তারেকের সঙ্গে। 

সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপনার জনপ্রিয়তা টের পাওয়া যায়

গত কয়েক মাসে ছয় বছরের ক্যারিয়ারের চেয়েও বেশি দর্শকের সাড়া পেয়েছি। সোশ্যাল মিডিয়ায় তারা আগের চেয়ে বেশ সরব। তারা আমার সঙ্গে কমেন্ট ও পোস্টের মাধ্যমে যুক্ত থাকছে। আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।

জনপ্রিয়তা ধরে রাখার জন্য কাজের প্রতিও যত্নশীল থাকতে হয়। এ বিষয়ে আপনার অভিমত কী?

দর্শক আমাকে যেভাবে চাইবে সেভাবেই কাজ করব। সমালোচনা হতে পারে এমন কোনো দৃশ্যে অভিনয় করব না। তাদের মনোভাব বোঝার জন্য বিভিন্ন নাটকে বৈচিত্র্যময় চরিত্রে কাজ করছি।

আপনার শুরু মডেলিং দিয়ে। সেখান থেকে অভিনয়ে এলেন। কী পার্থক্য চোখে পড়ছে?

মডেলিংয়ের দর্শক নির্দিষ্ট শ্রেণির। তারা সকল ধরনের পোশাকে মডেলদের দেখে অভ্যস্ত। কিন্তু নাটকে দেশজুড়ে দর্শক বিস্তৃত। তারা যেভাবে গ্রহণ করবে সেভাবেই নিজেকে উপস্থাপন করতে হয়। নাটকের কাজ করলেও‌ মডেলিংয়ের এ জায়গাটা ছাড়তে পারব না। ভালোবাসা কাজ করে।

অভিনয় নিয়ে কী ভাবছেন?

ইদানীং বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করে অভিজ্ঞতা বাড়াচ্ছি। দর্শক আমাকে কোন ধরনের চরিত্রে পছন্দ করছে তা বোঝার চেষ্টা করছি। সম্প্রতি প্রচার হওয়া দুটি নাটকে বিপরীতধর্মী চরিত্রে অভিনয় করেছি। দেখলাম দর্শক প্রশংসা করছে। আমি তাদের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানাই। সবকিছু মিলিয়ে ইন্ডাস্ট্রিতে নিজের একটা জায়গা করে নেওয়াই আমার লক্ষ্য।

নাটকে জুটি প্রথা জমে উঠতে দেখা যায়। বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন?

এখন পর্যন্ত যে কাজগুলো করেছি তাতে দর্শকের ইতিবাচক সাড়া পেয়েছি। নির্দিষ্ট কোনো সহশিল্পীর সঙ্গে জুটি হবে এমনটি ভাবনায় আসেনি। অনেকের সঙ্গে এখনো কাজ করা হয়নি। যদি দর্শক কখনো চায় নির্দিষ্ট কোনো সহশিল্পীর সঙ্গে অভিনয় করি তাহলে জুটি হতে পারে। তা ছাড়া জুটি বেঁধে কাজ আমার ওপর নির্ভর করে না। আমি সবার সঙ্গেই কাজ করতে চাই।

আপনি মাঝে অভিনয়ে বিরতি দিয়েছিলেন... 

কয়েকটি নাটকে কাজ করেছিলাম আগে। মনে হতো অভিনয় করা সহজ নয়। বিরতির পর যখন শুরু করলাম, তখন দর্শকের ভালোবাসা সে ধারণা বদলে দিয়েছে। দর্শকের ভালোবাসার প্রতিদান দিতে চাই আগামীতে।

অভিনয় শুরুর গল্পটা জানতে চাই।

আমি টুকটাক মডেলিং করতাম। আইন বিষয়ে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছি। হঠাৎ করে অভিনয়ের সিদ্ধান্ত নিই। আরও কয়েক বছর আগে, ২০১৬-১৭ সালের দিকে কয়েকটা নাটকে অভিনয় করি। তখন থেকে অনেকেই নিয়মিত অভিনয় করতে বলত। তাহলে নাকি ভালো করব। একটা সময় এসে ভালো লাগা তৈরি হয়। আমার কাছেও ইন্টারেস্টিং লাগতে শুরু করল। প্রতিটা দিন নতুন একটা চরিত্রে নিজেকে এক্সপ্লোর করছি। নতুন একটা মানুষ। আমার কাছে মনে হয়েছে যে আমরা টিভিতে যেটা দেখি, ওয়াও, কী সুন্দর মোমেন্ট পার করছে! অ্যাকচুয়ালি, যারা অভিনয় করেন, তারা ওই মোমেন্ট পার করেন কিন্তু। কল্পনা করে হলেও করেন।

অভিনয়ে পরিবারের কেউ জড়িত ছিল?

আমার চৌদ্দ পুরুষের কেউ অভিনয়ে ছিলেন না। বাবা সরকারি চাকরি করতেন, এখন অবসরে। মা গৃহিণী। আমরা তিন বোন, এক ভাই। আমার পরিবার শুরুতে অভিনয়টা সহজে মেনে নেয়নি। আমাদের পরিবারও ভীষণ কনজারভেটিভ। এখন অবশ্য আব্বু খুব খুশি।

সম্প্রতি আপনাকে লন্ডনে ঘুরতে দেখা গেছে। অভিনয় করতে গেলেন?

আসলে আমার ভাই লন্ডনে থাকে। ওর সঙ্গে আমিও ভিসার আবেদন করেছিলাম। মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছিল, সে কারণে যাওয়া। যাওয়ার পর মনে হয়, কিছু কাজের ব্যাপারে লিংক শেয়ার করতে পারি। মিটিং করতে পারি। এরপর অনেক জায়গায় মেইল করি, কিছু জায়গা থেকে রিপ্লাই এসেছে। সেখানে শুটিং করিনি। ওখানকার একটা প্রোডাকশন একটা ওয়েব সিরিজ বানাচ্ছিল। আমাকে ছোট্ট একটি চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব দিয়েছিল। বলেছিল, সিরিজটি নেটফ্লিক্সে যাবে। ওরাই আবার পরে নেটফ্লিক্সের জন্য অন্য একটা পরিকল্পনাও করছিল। বলছিল, অডিশন যেহেতু দিবা, এবারেরটায় ছোট্ট একটা চরিত্র করতে পার। কিন্তু করিনি। বলেছি, এখন নয়। তবে পরেরটায় যদি সিলেক্ট হই, তাহলে হয়তো দু-তিন মাসের মধ্যে আবার যাব। ওরা তো নাটক দেখে না। আমার চরকিতে মুক্তি পাওয়া ওয়েব সিরিজ দেখিয়েছি।

প্রথমবার আপনি ওয়েব সিরিজে অভিনয় করলেন। বাশার জর্জিস পরিচালিত ‘ওভারট্রাম্প’ সিরিজে কাজের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?

এবারই প্রথম ওয়েবে কাজ করলাম। চ্যালেঞ্জিং চরিত্র ছিল। চঞ্চল চৌধুরী, মোস্তফা মনোয়ারের মতো অভিনেতাদের সঙ্গে কাজ করেছি। কাজটির জন্য রিহার্সেল করেছি। অনেক দিন সময় দিয়েছি। নাটকের চেয়ে এখানে কাজের অভিজ্ঞতা আলাদা। নাটকে কাজের জন্য সময় পাওয়া যায় না। কম সময়ে একটি নাটকের কাজ শেষ করা হয়। সে জায়গায় ওয়েবের কাজ করতে গিয়ে যথেষ্ট সময় মেলে। একটি চরিত্রের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করা যায়। নাটকে তো আমরা দুদিন আগে চিত্রনাট্য পাই। কিন্তু এই ওয়েব সিরিজে কাজের আগে প্রপারলি চিত্রনাট্য পাওয়া, মহড়া, অভিনয় নিয়ে আলোচনা আমাকে মুগ্ধ করে। আমি এই কাজটা করে অনেক অনুপ্রাণিত হয়েছি। সব মিলিয়ে বলব, অসাধারণ অভিজ্ঞতা।

দর্শকের কেমন প্রতিক্রিয়া পেয়েছেন?

যারাই দেখেছে, আমার অভিনয়ের প্রশংসা করেছে। চরিত্রটা ভীষণ চ্যালেঞ্জিং ছিল, একটু উনিশ-বিশ হলেই ভালগার লাগত। যাদের সঙ্গে আমার কখনো কাজও হয়নি, তারাও ইতিবাচক কথা বলেছেন। 

একটু অন্য প্রসঙ্গে আসি; বিশ্বকাপ ফুটবলের সময় ব্রাজিলের খেলা নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে দেখা গেছে। আবার দল হারলে হতাশ হয়েছেন ...

কিছুই তো বলার নেই। টাইব্রেকারে গিয়ে হেরেছে আমার দল। টাইব্রেকার অনেকটা ভাগ্যও বলা চলে। তাই কষ্টটা বেশি লেগেছে। খেলার সময় তো প্রেশার হাই হয়ে যাচ্ছিল। মানসিক চাপ কমানোর জন্য ওষুধ খেয়েছি। খেলা দেখেছি বন্ধুরা মিলে। ব্রাজিলের হারে কষ্ট পেয়েছি ঠিকই, পরে আর্জেন্টিনা-নেদারল্যান্ডসের ম্যাচও দেখেছি। ব্রাজিলের পরাজয় দেখা সত্যিই হৃদয়বিদারক। পুরোটা সময় বেশ চাপে ছিলাম। প্রথম গোল দেওয়ার পর ভেবেছিলাম, এই যাত্রায় বুঝি পার পেয়ে গেছি। কিন্তু শেষ হওয়ার আগে যখন ড্র হয়ে গেল, তখন খুবই মর্মাহত হয়েছি।

ছোটবেলায় খেলাধুলা করতেন?

ছোটবেলায় আমি টমবয় টাইপ ছিলাম। বাবা সরকারি চাকরি করতেন। তখন বাবার পোস্টিং ছিল দিরাই। মনে পড়ছে, দিরাইয়ে যেখানে থাকতাম, ছোটবেলায় গ্রামের ছেলেদের সঙ্গে মাঠে গিয়ে ফুটবল খেলতাম। দুপুরের খাবারের পর আম্মু ঘুমিয়ে গেলে মাঠে ছেলেদের সঙ্গে ফুটবল খেলতাম। এই ফুটবল খেলার জন্য কত মার যে খেয়েছি।

ফুটবল ছাড়া আর কোন খেলা পছন্দ করতেন?

ব্যাডমিন্টন আমার অনেক প্রিয় খেলা। যখন স্কুলে পড়তাম, তখন খেলতাম। আন্তঃস্কুল ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্টে প্রথমও হয়েছি। কদিন আগে বেসক্যাম্পে গিয়েছিলাম, সেখানেও ব্যাডমিন্টন খেলেছি। তবে ক্রিকেট কখনো ওভাবে খেলিনি। কিন্তু আমাদের দেশ যেহেতু ক্রিকেটে ভালো অবস্থানে আছে, দেখতে ভালোই লাগে।

গ্যালারিতে বসে খেলা দেখেছেন?

মাঠে বসে ক্রিকেট খেলা দেখেছি। মিরপুর স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার ম্যাচ ছিল। কিন্তু গ্যালারিতে বসে ফুটবল খেলা দেখা হয়নি। আগামী বিশ্বকাপ ফুটবল মাঠে বসে দেখার ইচ্ছা আছে। আগামীবার তো যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্বকাপ ফুটবল আয়োজিত হবে- যদি বেঁচে থাকি, সুস্থ থাকি ও সামর্থ্য থাকে, তবে অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্রে খেলা দেখতে যাব।

গেল কয়েক বছর ধরে বড়পর্দায় অভিনয়ের গুঞ্জন শুনতে পাচ্ছি। কবে সিনেমায় আসছেন?

বাংলাদেশে কেউ সিনেমায় চলে গেলে নাটকে অভিনয় তো করে না। একটা মুভির অফার পেলাম, আর চলে গেলাম, পরে আর কিছুই ভাবলাম না। ফিন্যান্সিয়াল ব্যাপারটাও তো দেখতে হবে। আমি আগে চাকরি করতাম, অভিনয়ের কারণে চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হলেই সিনেমায় কাজ শুরু করব। কারণ সিনেমা একবার শুরু করলে আর ফিরে আসব না। আপাতত সিনেমায় কাজ করছি না। যখন কাজ করব সবাই জানতে পারবে।

আপনার ঝুলিতে যুক্ত হয়েছে একাধিক পুরস্কার। পুরস্কারগুলো কতটা কাজে লাগে?

অ্যাওয়ার্ড আমাকে অনুপ্রেরণা জোগায়। একেকটি সম্মাননা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে উৎসাহ দেয়। যাতে করে অভিনয় দক্ষতা আরও বাড়াতে পারি। নিজের কাজে মনোনিবেশ করতে পারি। 

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫