জাতীয় নাট্যশালায় মঞ্চস্থ হবে ‘উড়ন্ত তারাদের ছায়া’। ছবি: সাম্প্রতিক দেশকাল
গঙ্গা-যমুনা নাট্যোৎসবের দ্বিতীয় দিনে বিকেল ৪টা এবং সন্ধ্যা সাতটায় প্রচারিত হবে সংস্রব প্রযোজিত নাটক উড়ন্ত তারাদের ছায়া। এটি শিল্পকলা একাডেমীর জাতীয় নাট্যশালায় মঞ্চস্থ হবে। এক্সপেরিমেন্টাল হলে সন্ধ্যা সাতটায় আরণ্যক নাট্যদল প্রযোজিত নাটক নানকার পালা মঞ্চস্থ হবে। বগুড়ার সংশপ্তক থিয়েটারের প্রযোজনায় নাটক ভাগীরথীর ভাগ্যরথ প্রচারিত হবে সন্ধ্যা সাতটায়। এদিন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর মহিলা সমিতি মঞ্চে মহাকাল নাট্য সম্প্রদায়ের প্রযোজনায় শিখণ্ডী কথা মঞ্চস্থ হবে।
জাতীয় সঙ্গীত, নৃত্যকলা ও আবৃত্তি মিলনায়তনে কত্থক নৃত্য সম্প্রদায়ের প্রযোজনায় নৃত্যনাট্য জেনির কার্ল এবং সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী ৭২এর সংবিধান পুন: প্রতিষ্ঠা ও সম্প্রীতির বাংলাদেশ চাই শীর্ষক গাতিআলেখ্য পরিবেশন করবে।
উড়ন্ত তারাদের ছায়া সম্পর্কে যেটুকু জানা যায়, পারস্যের সম্রাট নাদির শাহ আফগান দুর্বৃত্তদের তাড়া করতে করতে একদিন ভোরবেলা ঢুকে পড়লেন কাবুলে। দিল্লীর মসনদে তখন দ্বাদশ মুঘল বাদশাহ মুহম্মদ শাহ। “সদা রঙ্গিলা” হিন্দুস্তান মালিকের কাছে সীমান্ত পেরিয়ে পারস্যের শত্রুদের শায়েস্তা করার অনুমতি চেয়ে চিঠি লিখলেন নাদির। সেই বন্ধুতার বার্তা নিয়ে আসা পারস্যের দূত দিল্লি থেকে আর ফিরলো না। কাবুল লণ্ডভণ্ড করে, আগুনে পুড়িয়ে, লুটপাট করে নাদির এগিয়ে চললেন লাহোরের দিকে। বাদশাহ মুহম্মদ আর তার ওমরাহরা তখনও আলস্য কাটিয়ে উঠতে পারেননি।
তারপর একদিন কার্নালের যুদ্ধে অপ্রস্তুত হতভম্ব বাদশাহ মুহম্মদ হেরে গেলেন সম্রাট নাদিরের উদ্যম আর জাম্বুরাক কামানের অবিরাম গোলাবর্ষণের সামনে পরে। বন্দি বাদশাহ মুহম্মদকে নিয়ে দিল্লি লুঠ করতে চলে এলেন নাদির শাহ আর মুখোমুখি হলেন বাদশাহ মুহম্মদের এক অভাবনীয় দার্শনিক সত্ত্বার সাথে। পরাজয়ের গ্লানি পেরিয়ে শিল্পী, কিতাবপ্রিয় মুহম্মদ তাকে বললেন, জীবনের এক মহৎ অনুভবের কথা, ক্ষমা, ভালোবাসা, বিশ্বাস আর ত্যাগের ঐশ্বর্যের কথা, যা এই হিন্দুস্তানের মাটি তাকে দিয়েছে।
ময়ূর সিংহাসন আর দিল্লির প্রায় সমস্ত সম্পদ লুটে নিয়ে, পারস্যে ফিরে যাওয়া নাদিরের স্বপ্নে এরপর বারবার ফিরে আসতে থাকলেন সেই বুজুর্গ মুহম্মদ। এমনকি নাদির যখন খুন হচ্ছেন তারই প্রিয়জনদের হাতে, তখনও তার মনে পড়ে গেলো মুহম্মদের সেই শান্ত চোখ, যা পরাজয়ের ভারেও তার রোশনাই হারিয়ে ফেলেনি।
উড়ন্ত তারাদের ছায়া এই নাটকটি মঞ্চ, আলো, আবহ ও নির্দেশনা দিয়েছেন দেবাশিস রায়। তিনি নিজের নাটক সম্পর্কে বলেন, ইতিহাসের পাতায় পাতায় উত্থান-পতনের ঘনঘটায় জড়িয়ে থাকেন হারিয়ে যাওয়া মানুষেরা। প্রেম, যুদ্ধ, বিশ্বাসঘাতকতা, রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, সৌধ বা প্রাসাদ নির্মাণ, জয়, পরাজয়ের মধ্যেই ভেসে ওঠে তাদের কল্পিত অবয়ব। গবেষকেরা হয়তো আরো কিছুটা এগিয়ে খনন করে তুলে আনেন তাদের বেশ কিছু স্বভাব, বৈশিষ্ট্য। কিন্তু প্রাচীন চিত্রকরের আঁকা সেইসব চরিত্রের মুখের আড়ালে চাপা পড়ে থাকে যে মহাজীবন তার খবর কে আর পায়?
তিনি বলেন, তাঁদের প্রতিদিনের সুখ, দুঃখ, মান, অভিমান আর হাসিকান্নার হিসাব লেখা থাকে না কোনও বইয়ের পাতায়। থাকে না এই দীর্ঘ মানবজীবনের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম অনুভব, আশা আর হতাশার দার্শনিক বয়ান।
‘উড়ন্ত তারাদের ছায়া’ আসলে পারস্যের শাসক নাদির শাহ আর দ্বাদশ মোগল সম্রাট মুহাম্মদ শাহের এক কল্পিত মনস্তাত্ত্বিক বোঝাপড়ার আখ্যান। জীবন আর মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে একজন সফল লুটেরা আর একজন ব্যর্থ শাসক হয়ে ওঠেন দুই মহাজাগতিক শায়র। এই ঐশ্বর্যমণ্ডিত প্রেক্ষাপট, বৈভব আর রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের চালচিত্রকে, আমরা সাধারণ থিয়েটারি আয়োজনে অনুবাদ করে তোলার চেষ্টা করেছি।
‘সংস্রব’ নাট্যদলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, তারা আমাকে এই কাজটির জন্য আহবান জানিয়েছেন। এবং এই কাজে জড়িত সমস্ত শিল্পীদের আমার ভালোবাসা। তাদের আন্তরিক অংশগ্রহণে এবং নিবিড় শ্রমে এই নাট্যটির অভিনয় সম্ভব হয়েছে।
নাট্যনির্মাণ
নাদির শাহ সঞ্জীব সরকার
মহম্মদ শাহ তথাগত চৌধুরী
রাব্দা অমৃতা মুখোপাধ্যায়
উবাইদুল্লাহ সায়ন্তন মৈত্র
পরভীন কঙ্কাবতী বন্দ্যোপাধ্যায়
রেজাকোলি সুস্নাত ভট্টাচার্য
মুর্তাজা সফিউর রহমান
নাসির খাঁ
সালাহ খাঁ পার্থসারথী চন্দ্র
আদিল খাঁ
সাকী সৌরভ বারিক
মহম্মদ কুলি খাঁ
মুর্দাফরাস ১ রাজু মণ্ডল
মুর্দাফরাস ২ সঞ্জয় দাস
ফালাদ খাঁ
তহসিলদার
আবদুল বাঁকি খাঁ
কাশেম বেগ খাঁ অভ্যুদয় দে
অন্যান্য চরিত্রে - বিদিশা চক্রবর্তী, বনানী মিত্র, বৈশাখী মিত্র, অ্যাফ্রোদিতে রায়
নেপথ্যে - সঙ্গীত : জয়দীপ সিনহা, মঞ্জিমা চট্টোপাধ্যায়
বাদ্য : অভ্যুদয় দে
সরোদ : অনীক সেনগুপ্ত
ব্যাঞ্জো ও ম্যান্ডোলিন : শুভ্রজিত সেনগুপ্ত
পোশাক ও কোরিওগ্রাফি : ভাস্কর মুখোপাধ্যায়
পোশাক নির্মাণ : গৌতম মজুমদার
মঞ্চ ও মঞ্চ সামগ্রী নির্মাণ : সৌম্যজিত দাস
রূপসজ্জা : সঞ্জয় পাল
আলোক প্রক্ষেপণ : শুভঙ্কর দে
প্রচার চিত্রণ : অনুপম দাশগুপ্ত
প্রযোজনা নিয়ন্ত্রণ : শেখর চক্রবর্তী