
জাকিয়া বারী মম। ছবি: সংগৃহীত
অভিনেত্রী লাক্স তারকা জাকিয়া বারী মম। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সশরীরে উপস্থিত ছিলেন রাজপথে তিনি। ছাত্রদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেন অভিনেত্রী। তিনি রাজপথ ও সোশ্যাল মিডিয়া-সরব ছিলেন উভয় জায়গায়। সে অভিজ্ঞতা ও অন্যান্য প্রসঙ্গে কথা বলেছেন দুই পর্দার নায়িকা। তার সঙ্গে আলাপচারিতায় ছিলেন মোহাম্মদ তারেক।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের শুরু থেকেই তাদের পাশে ছিলেন। কেমন ছিল সে অভিজ্ঞতা?
শুরুতে জানতাম না এ আন্দোলন কেমন হতে যাচ্ছে। ছাত্রদের সাহস আমাকে সাহসী করেছে। দেশের মানুষের সঙ্গে থাকতে পারার সাহস পেয়েছি। নিজের মতো করে কথা বলার সাহস হয়েছে। বেঁচে থাকার সাহসও জুগিয়েছে এ আন্দোলন।
রাজপথে যাওয়ার জন্য কোনো প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়েছিলেন?
পরিবার থেকে সহযোগিতা পেয়েছি। আমার নানা যখন মুক্তিযুদ্ধে যান তখন মা স্কুলে পড়েন। তাই আমি যখন রাজপথে যাই পরিবার থেকে বাধা পাইনি। আমি বিশ্বাস করি, সুবিধা না নিলে সুবিধা দিতে হয় না। নিজের মতো করে কাজ করেছি। আমার আদর্শের কাছে এ আন্দোলন সঠিক বলে মনে হয়েছে। তাই যোগ দিয়েছি। সত্যি বলতে, এ পরিবর্তন হওয়ারই ছিল। দুর্নীতি প্রতিটি সেক্টরে হয়েছে। দেশের মানুষের টাকা বিদেশে চলে গেছে। বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে। দেশের গ্যাস বাইরে চলে গেছে। মানুষ নিষ্পেষিত হয়েছে। কথা বলার স্বাধীনতা হারিয়েছে। মানুষ পরিবর্তন-সংস্কার চেয়েছে বলে এ অভ্যুত্থান সফল হয়েছে।
তরুণ প্রজন্মের এ আন্দোলনকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
নবীন এ প্রজন্মের সাহসকে লাল সালাম জানাই। আমার ছেলে বলে, ‘মা, তুমি কেন আমাদের সঙ্গে থাকবে না?’ আমরা যারা অনেক বছর কথা বলতে পারিনি-তাদের ওরা কথা বলতে শিখিয়েছে। তাদের কাছে আমি লজ্জিত। আমরা এখন ট্রাফিকে লাইন ধরে দাঁড়াচ্ছি। সিএনজি চালক ভাড়া কম নিচ্ছেন। কারণ তাকে এখন চাঁদা দিতে হয় না। এখন পারলে তারা অন্য সময় কেন এভাবে চলতে পারে না? আমরা সরকারকে ট্যাক্স দিই। তারা আমাদের দাস হিসেবে গণ্য করতে পারে না। নিজেদের এমন অবস্থা আর দেখতে চাই না। সারাজীবন সন্তানের সামনে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চাই।
সংস্কৃতি অঙ্গনের মানুষ হিসেবে এ সরকারের কাছে কী কী সংস্কার প্রত্যাশা করছেন?
আমি প্রত্যাশা করি বিটিভি, বিএফডিসির মতো প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন সংগঠন দলীয়করণে ভুগবে না। তারা সঠিক কাজ করতে পারবে। তাদের ভেতরের দুর্নীতি বন্ধ হবে। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ অন্যান্য পুরস্কার প্রদানে স্বচ্ছতা থাকবে। নির্মাতারা তার গল্প স্বাধীনভাবে বলতে পারবে। নিজের কথা বলতে না পারার চাপ থাকবে না। আমি গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি। প্রত্যেকের একই কথা হতে পারে না। ভিউ কালচার নিয়েও আমি বিরক্ত। সঠিক মানুষকে তুলে ধরতে হবে। দেশের স্বার্থ বাদে ব্যক্তিস্বার্থ কখনোই বড় হতে পারে না।
আপনি অভিনয় শিল্পী সংঘ থেকে পদত্যাগ করেছেন। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাই...
গত ১৫ জুলাই অভিনয় শিল্পী সংঘ একটি বিবৃতি দেয়। তারা কয়েকজন মিলে বিবৃতি দিতে পারেন কিনা আমার সন্দেহ আছে। কিছু মানুষের ইচ্ছায় সংগঠন চলতে পারে না। দেশের প্রশাসন ছাত্রদের গুলি করছে। সে জায়গায় তাদের অবস্থান দেখে মনে হয়েছে তারা রাজনৈতিক সংগঠন। আমি তো এখানে রাজনীতি করতে আসিনি। তাই শিল্পী সংঘ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছি।
এতে ভবিষ্যতে কারও কারও সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কের অবনতি হতে পারে?
পরিস্থিতির কারণে আমার আদর্শের জায়গা থেকে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আশা রাখব, এতে ব্যক্তিগত সম্পর্ক নষ্ট হবে না। আমার প্রায় কুড়ি বছরের ক্যারিয়ার। সবার সঙ্গে এত বছরের সম্পর্ক। সবাইকে শ্রদ্ধায় রেখে কাজ করতে চাই। আবার অনেকে কিছু বলেননি। নিশ্চয়ই তার কারণ আছে। এসব কারণে শিল্পীদের মাঝে বিভেদ হোক চাই না।
শিল্পীরা রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি কীভাবে দেখেন?
আমি শিল্পী। ন্যায়কে ন্যায়, অন্যায়কে অন্যায় বলব। শিল্পী তার অবস্থানে থাকবে। কে কীভাবে বেছে নেবে এটা তার ব্যাপার। আমি মনে করি, একজন শিল্পীর কাছে শিল্পের গুরুত্ব বেশি হওয়া উচিত।
অভিনয়ে ব্যস্ততা কেমন যাচ্ছে?
এখন হাতে স্ক্রিপ্ট পাচ্ছি। রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিতের ‘মাস্টার’ সিনেমার কাজ শেষ হয়েছে। মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ভাইয়ের একটি ওয়েব সিরিজের কাজ শেষ হয়েছে। এর মাঝে একটি স্বল্পদৈর্ঘ্যরে কাজও শেষ করেছি। পর্যায়ক্রমে কাজগুলো মুক্তি পাবে। আমি কাজে ফিরতে চাই। দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হোক। দেশ সুস্থ হোক। কাজের পরিবেশ ফিরে আসুক, এ প্রত্যাশা করছি।