
অভিনেতা গোহের মুমতাজ ও পাকিস্তানি-ব্রিটিশ অভিনেত্রী কুব্রা খান। ছবি- সংগৃহীত
টেলিভিশন ও ওয়েব সিরিজ নির্মাণে পাকিস্তান অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেও এত দিন দেশটির সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি তেমনটা সুবিধা করে উঠতে পারেনি। মাঝে মাঝে কিছু সিনেমা দর্শকপ্রিয়তা পেলেও বেশিরভাগই বক্স-অফিসে মুখ থুবড়ে পড়েছে। কিন্তু এবার ঈদুল আজহায় মুক্তি পাওয়া ‘আভি’ (এই মুহূর্ত) ছিল তার ব্যতিক্রম। ইন্টারনেট মুভি ডেটাবেজ (আইএমডিবি) রেটিংয়ে ১০-এর মধ্যে ৭.৯ পয়েন্ট পাওয়া ‘আভি’কে পাকিস্তানি সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির ঘুরে দাঁড়ানোর একটি সাহসী প্রচেষ্টা বলে মনে করছেন অধিকাংশ ফিল্ম ক্রিটিক।
শক্তিশালী অভিনয়
‘আভি’ সিনেমার মূল ভূমিকায় অভিনয় করেছেন দশর্কনন্দিত অভিনেতা গোহের মুমতাজ ও পাকিস্তানি-ব্রিটিশ অভিনেত্রী কুব্রা খান। সিনেমাটিতে মুমতাজ এবং কুব্রা এমন পারফরম্যান্স করেছেন যা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। মুমতাজ তার অভিনয় বহুমুখিতা এবং সংগীত প্রতিভার জন্য বিখ্যাত। ছবিতে তিনি ছোট ছোট অভিব্যক্তি এমনভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন যা দর্শকদের মনকে গভীরভাবে অনুরণিত করেছে। অন্যদিকে পর্দায় কুব্রা খানের শক্তিশালী উপস্থিতি এবং আবেগময় দৃশ্যে মাপা অভিনয় নিঃসন্দেহে তাকে পাকিস্তানি সিনেমার অন্যতম প্রধান অভিনেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
কাহিনির মৌলিকতা
ডিরেক্টর আসাদ মুমতাজ মালিক পরিচালিত এ সিনেমার চিত্রনাট্য লিখেছেন শোয়েব রব্বানি। ক্রিটিকদের মতে, “আসাদ মুমতাজের পরিচালনা ও শোয়েব রব্বানির লেখনীতে ‘আভি’ গতানুগতিক বর্ণনার বাইরে একটি নতুন এবং আকর্ষক আখ্যান প্রদান করতে সক্ষম হয়, যা বর্তমানের গতানুগতিক সিনেম্যাটিক ল্যান্ডস্কেপ থেকে আলাদা।” সিনেমাটির কাহিনি, কাহিনির মৌলিকতা এবং গভীরতার জন্য প্রশংসিত হয়েছে দেশ-বিদেশের সর্বমহলে। রোমান্স, থ্রিলার এবং সংগীত-এই তিন মিলে সিনেমাটি এমন একটি সমৃদ্ধ টেপেস্ট্রি বা চিত্রবয়ন করতে সমর্থ হয়েছে, যা দর্শকদের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পর্দার সঙ্গে চুম্বকের মতো আটকে রাখে।
চোখের প্রশান্তি
‘আভি’ সিনেমার সবচেয়ে শক্তিশালী দিক হচ্ছে সিনেমাটির ভিজ্যুয়াল, এমনটি মনে করছেন ফিল্ম ক্রিটিকরা। তারা বলছেন, ‘আভি’ শুধু একটি সিনেমার চেয়েও বেশি কিছু; এটি এমন একটি অভিজ্ঞতা যা স্থানীয় এবং বিশ্বব্যাপী দর্শকদেরকে মুগ্ধ করেছে। ফিল্মটি একটি ভিজ্যুয়াল ট্রিট, যেখানে কাশ্মীরের মনোরম ল্যান্ডস্কেপ একটি অত্যাশ্চর্য প্রেক্ষাপট হিসেবে কাজ করে। সিনেমাটোগ্রাফি এই অঞ্চলের সৌন্দর্যকে শ্বাসরুদ্ধকর বিশদে ক্যাপচার করতে সমর্থ হয়। চিত্রগ্রহণ ও কালার গ্রেডিং এমনভাবে করা হয়েছে যা চোখকে প্রশান্তি দেয় ও কাহিনিকে সমৃদ্ধ করে।
সাউন্ডট্র্যাকে বাজিমাত
সাউন্ডট্র্যাককে দক্ষিণ এশিয়ার ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির একটি শক্তিশালী অনুঘটক বলে মনে করা হয়। এটি দর্শকদের ইমোশনাল আন্ডারটোন বাড়ায় এবং সিনেম্যাটিক অভিজ্ঞতাকে অন্যস্তরে পৌঁছে দেয়। তাই এ উপমহাদেশে সিনেমা হিট হওয়া-না হওয়া অনেকাংশে নির্ভর করে সাউন্ডট্র্যাকের ওপর। ‘আভি’ সিনেমাটি এই অংশে ভালোভাবেই উতরে যায়। ফ্রিবার্ড মিউজিক এন্টারটেইনমেন্ট পরিচালিত সাউন্ডট্র্যাকের সবগুলো ছিল মনোমুগ্ধকর।
স্ট্যান্ডআউট রিলিজ
‘আভি’ ফিল্ম নির্মাণে পাকিস্তানি সিনেমার অন্যতম প্রযোজনা সংস্থা এইভইউএম ফিল্মসের সঙ্গে একত্রে কাজ করেছে যুক্তরাজ্যের পেনাইন কেনেডি ফিল্মস এবং জিএম প্রোডাকশন। এই ফিল্মের শট নেওয়া থেকে শুরু করে সম্পাদনা, প্রতিটি ফ্রেমই অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে করা হয়েছে। যেখানে পুরো বিষয়টা শেষ করতে দুই বছরেরও বেশি সময় লেগেছে। এটাই সংশ্লিষ্টদের আন্তরিক প্রচেষ্টাকে প্রতিফলিত করে। ছবিটি শুধু পাকিস্তান জুড়ে সিনেমা হলে দর্শকদের মন জয় করেনি বরং বিশ্বব্যাপী সমালোচকদের প্রশংসাও অর্জন করেছে। এর আধুনিক প্রেমের উপস্থাপনা এবং কোমল গল্প বলার সংমিশ্রণ দর্শক এবং সমালোচকদের উভয় মহলে প্রশংসা কুড়িয়েছে এবং এটিকে বিনোদন লাইনআপে একটি ‘স্ট্যান্ডআউট রিলিজ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
সবশেষে বলা চলে, ‘আভি’ পাকিস্তানি সিনেমার একটি বিজয়, যা দেশটির চলচ্চিত্র শিল্পের ঘুরে দাঁড়ানো এবং বিশ্বমানের চলচ্চিত্র নির্মাণের ক্ষমতাকে প্রদর্শন করে। এর আকর্ষক কাহিনি, ব্যতিক্রমী পারফর্ম্যান্স এবং মনোমুগ্ধকর ভিজ্যুয়াল চলচ্চিত্র উৎসাহীদের জন্য একটি ট্রিটের চেয়ে কম নয়।