
‘নিত্যপুরাণ’ নাটকের শো চলার মাঝপথে। ছবি: সংগৃহীত
মন ও মননের বিকাশে শিল্প-সংস্কৃতির বিকল্প নেই। তবে সম্প্রতি শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে ‘নিত্যপুরাণ’ নাটকের শো চলার মাঝপথেই তা বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনা দেশে বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। নাটক বন্ধের কারণ হিসেবে ধরা হচ্ছে মিলনায়তনের বাইরে বিক্ষোভ। কিন্তু সেই দিন নাটক বন্ধের কোনো দাবি বিক্ষোভকারীদের ছিল না।
নাটকের শো শুরুর আগে শিল্পকলার গেটে বিক্ষোভকারীরা একটি ব্যানার ঝুলিয়ে দেন। এরপর তারা দেশ নাটকের দলনেতা এহসানুল এজাজ বাবুকে তাদের হাতে তুলে দেওয়ার দাবি জানান। কিন্তু গত শনিবার (২ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৭টা থেকে নাটকটি চলা অবস্থায় শিল্পকলার প্রধান সৈয়দ জামিল আহমেদ সেখানে গিয়ে বন্ধ করে দেন। যদিও তিনি তখন বিক্ষোভকারীদের শান্ত করতে না পারার বিষয়টি উল্লেখ করেন। নাটকটি রচনা ও পরিচালনা করছিলেন মাসুম রেজা।
জানা যায়, গত ১৭ অক্টোবর দেশ নাটকের দলনেতা এহসানুল এজাজ বাবু তার ফেসবুক পেজে একটি স্ট্যাটাস দেন। সেখানে তিনি লেখেন, ‘আসুন আমরা সবাই এই দেশকে বাঁচাই, জয় বাংলা বলে এই বাংলাদেশবিরোধী, স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকারদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই।’
সেই স্ট্যাটাসের সঙ্গে নিত্যপুরাণ নাটকের দলনেতা বাবু অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ, সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ, সারজিস আলম ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলমের ছবি ব্যবহার করে একটি কোলাজ যুক্ত করেন।
কোলাজটিতে তিনি ‘এরা বাংলাদেশবিরোধী, এরা স্বাধীনতাবিরোধী, রাজাকারদের রুখে দাঁড়ান’ লেখেন। এছাড়াও কোলাজের ব্যকগ্রাউন্ডে তিনি, ‘তুই রাজাকার, তুই রাজাকার’ যুক্ত করে দেন। পরে সেটি নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়।
তাই বিক্ষোভকারীরা নাটকের সিনিয়র সংগঠক এহসানুল আজিজ বাবুকে ‘ফ্যাসিবাদের’ দোসর বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তবে নিত্যপুরাণ নাটকটি নিয়ে তাদের কোনো প্রকার ক্ষোভ ছিল না। নাটক বন্ধ করার কোনো দাবিও তারা উত্থাপন করেনি। তারা চেয়েছিলেন এহসানুল আজিজ বাবুর বিচার।

আর এর সত্যতা পাওয়া যায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ‘দেশ নাটক’ নাট্যদলের সদস্য ব্রততী বিথুর দেওয়া পোস্টে। সেখানে তিনি লেখেন, ‘আজকে আমার দল দেশ নাটকের নিত্যপুরাণ নাটকটি মঞ্চস্থ হওয়ার মাঝখানেই এই ঘটনা ঘটে। সে সময় আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম। তবে নাটক বন্ধ করুন- এমন ধরনের কোনো স্লোগান সেখানে কেউ দিয়েছে বলে আমাদের কানে আসেনি।’
তিনি বলেন, ‘মূলত একজন ব্যক্তিকে মূল হল থেকে বের করে দেওয়ার জন্য কিছু মানুষ শিল্পকলার ১ নম্বর গেটে জটলা বাঁধিয়েছিল। সেই ব্যক্তিবিশেষকে ধরার এতটাই আগ্রহ ছিল তাদের, যার কারণে পরিস্থিতি কিছুটা খারাপের দিকে মোড় নেয়। আর শো মাঝপথে স্থগিত করে দেওয়া হয়। কোনো নাটক বন্ধ কর, নাটক করা যাবে না- এমন ধরনের স্লোগান সেখানে দেওয়া হয়নি।’
সেখানে থাকা নাটকটির রচয়িতা ও নির্দেশক মাসুম রেজা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আসলে পরিস্থিতি এমন হয়েছিল এবং জামিল ভাই এসে বললেন, বন্ধ করতে হবে, কারণ তিনি ওদের বোঝাতে পারছিলেন না। তখন নাটকটা বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া আমরা আর কিছু ভাবতে পারিনি।’
এদিকে ঘটনার পর একাডেমির মহাপরিচালক ড. সৈয়দ জামিল আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেছেন, এটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। নাট্য বা সংস্কৃতি চর্চায় এর কোন প্রভাব পড়বে না।