গত এক দশকের বেশি সিনেমা শাকিব খান নির্ভর হয়ে আছে। করোনার আগ পর্যন্ত ঈদ ও ঈদের বাইরে দুই সময়েই সিনেমা ছিল কিং খানের। এর বাইরে বছরে অন্যদের দু-একটা সিনেমা আলোচনায় আসত। এদিকে গত দুই বছর শাকিব খান এখন শুধু ঈদেই সিনেমা মুক্তি দিচ্ছেন। করোনাপরবর্তী সম্প্রতি ‘দরদ’ ছাড়া ঈদের বাইরে আর কোনো সিনেমা মুক্তি পায়নি এ নায়কের।

শাকিব খান

শাকিবের বাইরে বর্তমানে এক ডজনের মতো নায়ক আছেন ইন্ডাস্ট্রিতে। কিন্তু তারা দর্শকের আস্থা তৈরি করতে পারছেন না। এদের মধ্যে কেউ কেউ আবার আলো ছড়িয়ে অন্ধকারে ডুবে গেছেন। কেউ কেউ সিনেমা করছেন ঠিকই, তবে সফল হতে পারছেন না। যার কারণে সিনেমা এক নায়ক থেকে বের হতে পারছে না বলে অনেকের মন্তব্য। প্রযোজক ও পরিচালকরা তাই বিগ বাজেটের সিনেমা মানেই শাকিব খানকেই ভাবেন। গত দুই বছরের সিনেমার দিকে চোখ রাখলেই সেটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

বাপ্পি চৌধুরী

সফলতার দ্বারপ্রান্তে এসেও তরী ভীড়াতে না পারা নায়কদের মধ্যে রয়েছেন বাপ্পি চৌধুরী, সাইমন সাদিক, জয় চৌধুরী, জায়েদ খান, জিয়াউল রোশান, মামনুন ইমন, নীরব,  সাইফ খান, কায়েস আরজু, ডি এ তায়েব, শিপন মিত্র, সাঞ্জুজন, আমান রেজাসহ অনেকেই। যাদের নিয়ে কোনো প্রযোজক বাজি ধরতে সাহস পান না। অধিকাংশের হাতেই এখন নেই নতুন কোনো কাজ। সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে অনেক নায়কই এটি জানান দিয়েছেন। চলতি সময়ের নায়কদের মধ্যে বেশ সম্ভাবনাময়ী ছিলেন বাপ্পি চৌধুরী ও সাইমন। দুজনেই প্রথম দিকে কয়েকটি ভালো সিনেমাও উপহার দিয়েছেন। এক যুগের বেশি ক্যারিয়ারে ত্রিশের অধিক সিনেমা করেছেন বাপ্পি। সাইমনও প্রায় বিশটির মতো সিনেমা করেছেন। কিন্তু ক্য়ারিয়ারে ভুল অঙ্ক কষে তারা দুজনই এখন অনেকটাই বেকার।

আরিফিন শুভ

তবে শাকিবের বাইরে সবাইকে ছাড়িয়ে আরিফিন শুভ কিছুটা নির্মাতা ও দর্শকের আস্থা তৈরি করেন। কিন্তু তার গায়ে স্বৈরাচার সরকারের ট্যাগ থাকায় এখন বিতর্কিত তালিকায় আছেন। এ ছাড়া শরীফুল রাজ ‘পরান’ সিনেমা দিয়ে আলোচনায় এসেও পরবর্তী সময়ে তেমন সম্ভাবনা দেখাতে পারেননি। যদিও এর মধ্যে তার কয়েকটি সিনেমা আলোচনায় এসেছে। রাজের মতো একই পথে সিয়ামও। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজের বাইরে সফলতা দেখাতে পারেননি এ নায়ক। ঠিক যে সময়ে বিশ্বের অন্য দেশের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে একের পর এক তারকা এসেছে সেখানে ঢালিউড পিছিয়েছে। তবে এ পেছানোর অনেক কারণ আছে বলে মনে করেন সিনেমা সংশ্লিষ্টরা।

কাজী হায়াৎ

বর্ষীয়ান নির্মাতা ও অভিনেতা কাজী হায়াৎ বলেন, ‘গত কয়েক বছরে আমাদের সিনেমায় অনেক নায়ক এসেছে। কিš‘ এরা কেউ সেই অর্থে ভালো সিনেমা দিতে পারেনি। ভালো সিনেমা না দিলে দর্শকও তাদের নামের ওপর সিনেমা দেখবে না। এ জন্য নতুনদের অবশ্যই অনেক কিছু দেখে-শুনেই পা ফেলতে হয়। শুধু সংখ্যা বাড়ানোর জন্য কাজ করলে সংখ্যাই বাড়বে, কিš‘ দর্শক মনে রাখবে না। আমাদের সম্ভাবনাময়ী কয়েকজন নায়ক আছে। কিš‘ তাদের নিজেদেরই ঠিক করতে হবে কোন সিনেমায় তাকে দর্শক নায়ক হিসেবে গ্রহণ করবে।’

শাকিব ও প্রয়াত মান্না

নব্বই ও শূন্য দশকে দাপটের সঙ্গে ঢাকার সিনেমায় অভিনয় করেছেন মান্না, রুবেল, নাঈম, ওমর সানী, সালমান শাহ, রিয়াজ, ফেরদৌস, বাপ্পারাজ, আমিন খান, শাকিল খান, অমিত হাসানসহ অনেক নায়ক। তার আগের সময়েও একসঙ্গে অনেক নায়ক সিনেমায় নিয়মিত অভিনয় করেছেন। এদের মধ্যে আছেন রাজ্জাক, ফারুক, ওয়াসিম, জাভেদ, সোহেল রানা, জসিম, আলমগীর, ইলিয়াস কাঞ্চনসহ আরো অনেকে। সিনেমার বর্তমান নায়ক খরায় অনেকে ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে শঙ্কিত। সবার একটাই প্রশ্ন, শাকিব-পরবর্তী ঢাকার সিনেমায় হাল ধরবে কে?