
ছবি: সংগৃহীত
দেশ থেকে গানের ক্যাসেট হারিয়েই গেছে। সিডির বিলুপ্তিও প্রায় এক দশক আগে। গান মূলত এখন ইউটিউব-স্পটিফাইয়ের মতো ডিজিটাল মাধ্যমনির্ভর। তবে গান এখন এর চেয়েও সহজে শ্রোতাদের কাছে পৌঁছায় টিকটকের মাধ্যমে। টিকটকে ভাইরাল হলে ইউটিউবেও ভিউ বাড়তে থাকে ওই গানের।
২০১৬ সালে ছোট ভিডিও শেয়ারের মাধ্যম টিকটক যাত্রা শুরু করে। ২০১৮ সাল থেকে বাংলাদেশেও ব্যাপক জনপ্রিয় এই মাধ্যমটি। দেশে এখন টিকটক তারকারও কমতি নেই। ফেসবুক রিলস ও ইউটিউব শর্টসেও তাদের বহুল আনাগোনা। বিভিনড়ব বাণিজ্যিক প্রচার-প্রচারণায় নিয়মিত দেখা যাচ্ছে টিকটকারদের। পিছিয়ে নেই মূলধারার তারকাও। মাধ্যমটিতে এখন নিয়মিত তারাও।
সংগীতশিল্পী ও পৃষ্ঠপোষকরা এখন নতুন গান প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে টিকটক তারকাদের কাছে ধরনা দিচ্ছেন। অর্থের বিনিময়ে তাদের গানে টিকটক ভিডিও করাচ্ছেন। মিউজিক ভিডিওর ক্ষেত্রে টিকটক তারকাদের প্রাধান্য দিচ্ছেন। এ কারণে মিউজিক ভিডিওতেও টিকটক তারকাদের এখন সরব উপস্থিতি।
এই টিকটক তারকারা আবার সব গান যে প্রমোট করছেন, এমন নয়। চটুল ও মসলাদার কথা ও সুরের গানকেই তারা প্রাধান্য দিচ্ছেন। যে কারণে ভালো কথা ও সুরের অনেক গান আড়ালে চলে যাচ্ছে।
টিকটকারের এই ‘দৌরাত্ম্য’ নিয়ে সুরকার ও শিল্পী নকীব খান বলেন, ‘আমি মনে করি, টিকটক গানের আবেদন নষ্ট করে। টিকটকের সঙ্গে গানের কোনো সম্পৃক্ততা থাকতে পারে না। যারা টিকটকের মাধ্যমে গানকে প্রমোট করে, সেটি তাদের ব্যাপার। আরো সুন্দর ও সঠিক মাধ্যমেও গানকে শ্রোতাদের কাছে পৌঁছানো সম্ভব।
গীতিকার, সুরকার ও সংগীতশিল্পী জয় শাহরিয়ার বলেন, ‘সময়ের কোনো কিছুকে অস্বীকার করার সুযোগ নেই। যে গান সোশ্যাল মিডিয়ায় জায়গা করে নেয়, সেটি সহজে শ্রোতাদের কাছে পৌঁছায়।
এ ক্ষেত্রে বেশি ভূমিকা রাখছে টিকটক। ফেসবুক রিলসও এখন গানকে সহজে শ্রোতাদের কাছে নিয়ে যায়। এটিকে আমি নেতিবাচকভাবে দেখি না। তবে এখন যারা টিকটক তারকা তারা যদি একটু সুষ্ঠু ও সংস্কৃতিবান্ধব হন তাহলে সংগীত আরো এগিয়ে যাবে। আমি আশা করব, তারা ভালো গানগুলোকেও প্রমোট করবেন।’
গীতিকার জাহিদ আকবর বলেন, ‘সময়ের সঙ্গে নতুন নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে এগিয়ে যেতে হবে। মানুষ এখন নানা মাধ্যমে বিনোদন খোঁজে। তার মধ্যে টিকটকও আছে। তাই এটা বাদ দেওয়া যাবে না।
এখন প্রশড়ব টিকটক মাধ্যমে কোন গানকে প্রমোট করব বা এগিয়ে রাখব? এটি আমরা যারা গানের মানুষ তাদেরই ঠিক করতে হবে। আমি মনে করি, টিকটকে যারা নিয়মিত কাজ করছেন তাদের দিয়ে মানসম্মত গান প্রমোট করলে ভালো হবে।’
সংগীত-বোদ্ধাদের অনেকে মনে করেন, বিভিনড়ব দেশে টিকটক অনেক ভালো কাজে ব্যবহার হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশে ব্যাতিক্রম। এখানে টিকটকে যতটা ভালো কিছু দেখা যায়, তারও বেশি খারাপ চোখে পড়ে।
কিছু নিয়মনীতি করলে এ মাধ্যমটির মধ্য দিয়ে বাংলা গানকে অনেক দূর নিয়ে যাওয়া সম্ভব বলেই তারা মনে করেন।