
বাংলা সিনেমার কিংবদন্তি অভিনেত্রী ববিতা। রুপালি পর্দায় দীর্ঘসময় রাজত্ব করেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এই অভিনেত্রী। ২৫০টির মতো সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি। রাজ্জাক, ফারুক, সোহেল রানা, আলমগীর, জসিম ও ইলিয়াস কাঞ্চনসহ আরো অনেক জনপ্রিয় অভিনেতার সঙ্গে জুটি বাঁধেন তিনি। চার দশকেরও বেশি সময়ে তিনি উপহার দিয়েছেন একের পর এক সিনেমা। তবে গত এক দশকে নতুন কোনো সিনেমায় তিনি অভিনয় করেননি। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে ‘অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী’, ‘নতুন সুর’, ‘তিতাস একটি নদীর নাম’, ‘শঙ্খনীল কারাগার’, ‘রামের সুমতি’, ‘স্বরলিপি’, ‘পিচঢালা পথ’, ‘টাকা আনা পাই’, ‘অমানুষ, ‘অনন্ত প্রেম’ ও ‘অলাতচক্র’সহ অসংখ্য জনপ্রিয় সিনেমা উপহার দেন তিনি।
নব্বই দশকেও সিনেমায় ছিল দারুণ দাপট ববিতার। ‘অবুঝ হৃদয়’, ‘প্রফেসর’, ‘অনেক দিনের আশা’, ‘মায়ের অধিকার’, ‘মহামিলন’, ‘জালিমের দুশমন’সহ আরো অনেক জনপ্রিয় সিনেমায় দেখা যায় তাকে। এক দশকের মতো সময় সিনেমা না করলেও এখনো নতুন প্রজন্মের কাছে অনুকরণীয় হয়ে আছেন ববিতা। নতুন প্রজন্মের অনেক অভিনেত্রীই হতে চান ববিতার মতো। দর্শকের মনেও ববিতা দাগ কেটে আছেন।
ববিতা অভিনয়কে বিদায় না জানালেও দূরে আছেন। শুধু ভালো গল্প ও চরিত্র না পাওয়ার কারণেই দীর্ঘ সময় ধরে নতুন কোনো সিনেমায় তিনি অভিনয় করছেন না বলে জানিয়েছেন। তার ভাষ্য, ‘শুধু মায়ের চরিত্রে অভিনয় করতে আমি চাই না। কেউ যদি আমাকে কেন্দ্র করে গল্প তৈরি করে তাহলে অবশ্যই অভিনয় করব।’
বর্তমানে ঢাকা ও কানাডা দুই জায়গাতেই ববিতার সময় কাটে। তার একমাত্র ছেলে অনিক দীর্ঘদিন ধরে কানাডাবাসী। সম্প্রতি প্রায় ছয় মাসের জন্য ঢাকা ছেড়েছেন ববিতা। তার অভিনীত সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা হলো ‘পুত্র এখন পয়সাওয়ালা’। সিনেমাটি পরিচালনা করেন নারগিস আক্তার।
১৯৬৮ সালে জহির রায়হানের হাত ধরেই চলচ্চিত্রে অভিষেক ববিতার। তার অভিনীত প্রথম সিনেমা ‘সংসার’। এ সিনেমায় তিনি শিশুশিল্পীর চরিত্রে অভিনয় করেন। এ ছবিতে তিনি রাজ্জাক-সুচন্দার মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করেন। ববিতা তখন ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়তেন। নায়িকা হিসেবে ববিতার প্রথম সিনেমা ‘শেষ পর্যন্ত’। ১৯৬৯ সালের ১৪ আগস্ট এটি মুক্তি পায়। এ সিনেমায় ববিতার নায়ক ছিলেন রাজ্জাক।
ববিতা আটবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ঘরে তুলে নেন। ১৯৭৫ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রবর্তনের পর টানা তিনবার শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার পান তিনি। এ ছাড়া ১৯৮৫ সালে আরেকবার শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী, ১৯৯৬ সালে শ্রেষ্ঠ প্রযোজক, ২০০২ ও ২০১১ সালে পার্শ্বচরিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন অভিনেত্রী। ২০১৬ সালে ববিতাকে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের আজীবন সম্মাননা প্রদান করা হয়।