
‘প্রিন্স অব ডার্কনেস’ খ্যাত হেভি মেটাল মিউজিক কিংবদন্তি ওজি অসবোর্ন (৭৬) আর নেই। ২২ জুলাই রাতে যুক্তরাজ্যের বার্মিংহামে তার মৃত্যু হয়। বিখ্যাত ব্যান্ড ‘ব্ল্যাক সাবাথে’র প্রধান কণ্ঠশিল্পী হিসেবে অসবোর্ন জন্ম দেন হেভি মেটাল ঘরানার ‘আয়রন ম্যান’ ও ‘প্যারানয়েড’-এর মতো গান।
তার পরিবারের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ভাষায় প্রকাশ করার চেয়েও গভীর দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, প্রিয় ওজি অসবোর্ন আজ সকালে আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। তিনি তার পরিবারের সদস্যদের ভালোবাসায় পরিবেষ্টিত ছিলেন। এই কঠিন সময়ে সবার কাছে আমাদের পরিবারের গোপনীয়তাকে সম্মান জানানোর অনুরোধ করছি।’
কিংবদন্তি এই গায়ক দীর্ঘদিন ধরে পারকিনসন রোগে ভুগছিলেন। কয়েক সপ্তাহ আগেই, গত ৫ জুলাই ইংল্যান্ডের বার্মিংহামে নিজের শহরের ভিলা পার্কে একটি সিংহাসনে বসে জীবনের শেষ পারফরম্যান্স করেন তিনি। ব্ল্যাক সাবাথ ব্যান্ডের সঙ্গে প্রায় ২০ বছর পর সেটিই ছিল তার শেষ পুনর্মিলনী কনসার্ট।
জন মাইকেল অসবোর্ন, যিনি বিশ্বজুড়ে ওজি অসবোর্ন নামে পরিচিত, ১৯৬৮ সালে হেভি মেটাল ব্যান্ড ‘ব্ল্যাক সাবাথ’-এর সহপ্রতিষ্ঠাতা হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। ভয়ংকর দর্শন আর শক্তিশালী গায়কী দিয়ে তিনি জয় করে নেন কোটি ভক্তের হৃদয়, খেতাব পান ‘প্রিন্স অফ ডার্কনেস’ বা ‘অন্ধকারের রাজপুত্র’ হিসেবে।
মাদকাসক্তির কারণে ১৯৭৯ সালে ব্যান্ড থেকে বিদায় নিলেও তার একক ক্যারিয়ারও ছিল ব্যাপক সফল। ১৯৮০ সালে তার প্রথম একক অ্যালবাম ‘ব্লিজার্ড অব অজ’ মুক্তি পায়, যার ‘ক্রেজি ট্রেন’ গানটি তাকে জনপ্রিয়তার নতুন শিখরে পৌঁছে দেয়। মঞ্চে তার বন্য ও খামখেয়ালি আচরণের জন্য তিনি পরিচিত ছিলেন, যার মধ্যে ১৯৮২ সালের একটি কনসার্টে একটি বাদুড়ের মাথা কামড়ে ছিঁড়ে ফেলার ঘটনাটি তাকে কুখ্যাতির শীর্ষে নিয়ে যায়।
অসবোর্ন তার ক্যারিয়ারে ১৩টি স্টুডিও অ্যালবাম প্রকাশ করেন এবং রক অ্যান্ড রোল হল অব ফেমে দুইবার জায়গা করে নেন-২০০৬ সালে ব্ল্যাক সাবাথের সঙ্গে এবং ২০২৪ সালে একক শিল্পী হিসেবে। সংগীতের পাশাপাশি পপ
সংস্কৃতিতেও অসবোর্নের ছিল শক্তিশালী অবস্থান। এমটিভির জনপ্রিয় রিয়্যালিটি শো ‘দ্য অসবোর্নস’-এর মাধ্যমে তিনি ও তার পরিবার টেলিভিশন তারকা হয়ে ওঠেন। ২০০২ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত চলা এই শোতে তার স্ত্রী শ্যারন এবং সন্তান কেলি ও জ্যাকের সঙ্গে তার বিশৃঙ্খল, কিন্তু মজাদার পারিবারিক জীবন তুলে ধরা হয়।
২০২০ সালের জানুয়ারিতে অসবোর্ন জানান, তিনি পারকিনসন রোগে আক্রান্ত। যদিও পরে তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ২০০৩ সাল থেকেই তিনি এই রোগ নিয়ে বেঁচে আছেন। ২০১৮ সালে একটি গুরুতর সংক্রমণ এবং ২০১৯ সালে পড়ে গিয়ে মেরুদণ্ডে একাধিক অস্ত্রোপচার করতে হয়।
তার মৃত্যুতে সংগীত জগতে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। ব্ল্যাক সাবাথের সদস্যরা তাদের প্রিয় সতীর্থকে হারিয়ে শোকস্তব্ধ। গিটারিস্ট টনি আইওমি তাকে ‘প্রিয় বন্ধু’ আখ্যা দিয়ে বলেছেন, ‘তার মতো আর কেউ কখনো হবে না।’ বেসিস্ট গিজার বাটলার এবং ড্রামার বিল ওয়ার্ডও সামাজিক মাধ্যমে আবেগঘন বার্তা দিয়েছেন। এলটন জন, রনি উড, মেটালিকা, প্যানটেরাসহ বিশ্বের নামকরা সব শিল্পী ও ব্যান্ড তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছে।