Logo
×

Follow Us

বিনোদন

জুলাই অভ্যুত্থানের প্রেরণাদীপ্ত গান

Icon

সালাহ উদ্দিন মাহমুদ

প্রকাশ: ০৯ আগস্ট ২০২৫, ১৩:১১

জুলাই অভ্যুত্থানের প্রেরণাদীপ্ত গান

বিদ্রোহ-বিপ্লবে কবিতা বা গানের ভূমিকা অনস্বীকার্য। যুগ যুগ ধরে যেসব কথামালা শিল্পীর কণ্ঠে গীত হতে থাকে, তার পেছনে বিশাল অবদান রাখেন গীতিকার কিংবা কবিরা। তবে তারা অনেকটা থেকে যান আড়ালে। ইতিহাসে তাদের নামটি লেখা হয় স্বর্ণাক্ষরে। আমাদের ভাষা আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রেরণা দিয়েছিল বহু গান। স্বাধীন বাংলা বেতারে প্রচারিত সেসব গান আজ ইতিহাসের অংশ। কালজয়ী সেসব গানের স্রষ্টারাও অমর হয়ে আছেন। মুক্তিযুদ্ধের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনেও আলোচিত হয়েছে কিছু গান। তার মধ্যে দ্বিজেন্দ্র্রলাল রায়, মোহিনী চৌধুরী, কাজী নজরুল ইসলাম, প্রিন্স মাহমুদ, হায়দার হোসেন, ইথুন বাবু ও ফারজানা ওয়াহিদ সায়ানদের গান আলোচিত হয়েছে।

আন্দোলনকারীরা সমবেত কণ্ঠে গেয়েছেন দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ‘ধন ধান্য পুষ্প ভরা’ গানটি। কেননা দেশপ্রেমে উজ্জীবিত করে তার গানটি। তার বিখ্যাত গান ‘ধন ধান্য পুষ্প ভরা আমাদের এই বসুন্ধরা’, ‘বঙ্গ আমার! জননী আমার! ধাত্রী আমার! আমার দেশ’ ইত্যাদি আজও জনপ্রিয়। কাজী নজরুল ইসলামের ‘কারার ঐ লৌহ-কপাট’ গানটিও ছাত্র আন্দোলনে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে। এ গান ছাড়াও ছাত্র আন্দোলনে কাজী নজরুল ইসলামের ‘এই শিকল পরা ছল’ গেয়েছেন শেখ ইশতিয়াক, শাকিব চৌধুরী, রায়েফ আল হাসান রাফা, প্রবর রিপন ও জামশেদ চৌধুরী। গানগুলোর মাধ্যমে শিল্পীরা কনসার্টের আয়োজন করে আন্দোলনে উৎসাহ জুগিয়েছেন।

গীতিকার মোহিনী চৌধুরীর লেখা ‘মুক্তির মন্দির সোপানতলে’ গানটি সমবেত কণ্ঠে গাওয়া হয়েছে। শাহবাগ চত্বর, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এসব গান শিল্পীর কণ্ঠে বারুদ হয়ে জ্বলে উঠেছে। একই সঙ্গে প্রিন্স মাহমুদের কথায় নগর বাউল খ্যাত জেমসের গাওয়া ‘বাংলাদেশ’ গানটি আগুনের ফুলকি হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রেরণার আরেক গান ওয়ারফেজের ‘জনস্রোত’। গানটি রচনা ও সুর করেছেন শামস। গানের কথা এ রকম, ‘সবাই বলে, আর তুমি বলো/ আর তুমি বলো, আর তুমি বলো, বলো?/ সে পথ জনস্রোত করেছে অবরোধ/ সেই পথ এখনও কি লাগছে ভালো?/ কি লাগছে ভালো, বলো?’

অন্যদিকে ভিজ্যুয়াল মাধ্যমে বিভিন্ন ভিডিওর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে শিল্পী হায়দার হোসেনের ‘স্বাধীনতা’ গানটি। এ শিল্পীর গাওয়া ‘তিরিশ বছর পরও আমি স্বাধীনতাটাকে খুঁজছি’ গানটি আবহ সংগীত হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। তার ‘চিৎকার করে কাঁদিতে চাহিয়াও করিতে পারিনি চিৎকার’ গানটিও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল।

বিপ্লবের গানের জন্য ব্যান্ডের কোনো বিকল্প নেই। তাই তো ব্যান্ডশিল্পী মাকসুদের ‘আবার যুদ্ধে যেতে হবে’ গানটিও উদ্বুদ্ধ করেছে ছাত্র-জনতাকে। গানটির কথা লিখেছেন মাকসুদুল হক। ব্যান্ডদলের নাম মাকসুদ ও ঢাকা। গানটি ‘প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য নিষিদ্ধ’ অ্যালবামে প্রথম প্রকাশিত হয়। গানের কথা হলো, ‘পৃথিবীতে বেড়াতে আসিনি এসেছি অনেক কাজ নিয়ে/ শঙ্কাহীন মনের অধিকার দিয়েছেন সৃষ্টিকর্তা নিজে।/ মতালোভী আর মতাভোগীদের যুক্তিতে লড়তে হবে/ লক্ষ লক্ষ লোক শহীদ হয়নি এই ঠকবাজি মেনে নিতে।/ এই ইন্টারনেটের যুগে মরণ মানসিকতা এখনি রুখতে হবে/ বাকস্বাধীনতা মুক্ত চিন্তা সংস্কৃতি গড়তে হবে।’

ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে রচিত হয়েছে আরো কিছু গান। অনি হাসান প্রকাশ করেছেন ‘আমরা বীর’। শহরতলী ব্যান্ডের ভোকালিস্ট সোহাগ গেয়েছেন ‘ও প্রধান’। তরুণ গায়িকা পারশা মাহজাবীনের ‘চলো ভুলে যাই’ গানটিও ছড়িয়ে পড়েছিল। র‌্যাপার সেজানের ‘কথা ক’ এবং হান্নান হোসাইনের ‘আওয়াজ উডা’ গানটিও সাহস জুগিয়েছে। তাদের লেখা ও কণ্ঠ দেওয়া এ গানের জন্য আটক হয়েছেন। একই সঙ্গে আন্দোলনকে উজ্জীবিত করেছে ‘বাংলা মা’, ‘বায়ান্ন’, ‘দেশ সংস্কার’, ‘স্বাধীনতার গন্ধ’, ‘ছাত্র’, ‘স্লোগান’, ‘অধিকার’, ‘দেশ কার’, ‘আবু সাঈদ’, ‘রক্ত’, ‘দেশ কারও বাপের না’, ‘জবাব দে’, ‘জয় বাংলা’, ‘কত খাবি’, ‘শকুনের চোখ’ গানগুলো। 

ফলে বোঝাই যায়, যুগে যুগে আন্দোলন-সংগ্রামে গানের ভূমিকা অপরিসীম। তাই ইতিহাসে স্থান করে নেয় গানগুলো। অমর এই গানের গীতিকাররা বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন যুগের পর যুগ।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫