Logo
×

Follow Us

বিনোদন

‘মেলোডির অভাবেই গান টেকে না’

Icon

এন আই বুলবুল

প্রকাশ: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৭:৩৮

‘মেলোডির অভাবেই গান টেকে না’

নকীব খান

ব্যান্ডশিল্পী,গীতিকার ও সুরকার নকীব খান। গান ও সুরের সঙ্গে তার কেটেছে ৫০ বছরের বেশি। জন্মস্থান চট্টগ্রাম থেকে শুরু হয়েছিলো এই ব্যান্ড তারকার সঙ্গীত যাত্রা। বালার্ক ব্যান্ডে গায়ক, পিয়ানিস্ট ও শিল্পী হিসেবে তার আত্মপ্রকাশ হয়। ১৯৭৪ সালে তিনি যোগ দেন সোলস ব্যান্ডে। এই ব্যান্ডে প্রায় ১০ বছর ছিলেন তিনি। তারপর ঢাকায় এসে ১৯৮৫ সালে গড়ে তোলেন নিজের ব্যান্ড রেনেসাঁ। সেই থেকে রেনেসাঁ নিয়েই  শ্রোতাদের ভালোবাসা কুড়িয়ে যাচ্ছেন তিনি। ক্যারিয়ার, সঙ্গীতি ইত্যাদি বিষয়ে সাম্প্রতিক দেশকালের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এন আই বুলবুল। 

ক্যারিয়ারের ৫০ বছর উদযাপন করলেন। এই সময় কতটা মসৃণ ছিল?

মানুষের অন্তরে জায়গা করে নেওয়া সহজ কাজ না। ৫০ বছর ধরে আমি সেই মানুষের হৃদয়ে স্থান নিয়ে আছি, এটা অনেক বড় বিষয়। গান দিয়ে আমি সেই জায়গা পেয়েছি। এই সময়ে মানুষের ভালোবাসা ও শ্রদ্ধাই আমার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। দীর্ঘ সময় টিকে থাকা অনেক বড় ব্যাপার। স্রষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞতা। আমি এখনো শিখছি, শেখার চেষ্টা করছি।

এতদূর পৌঁছানোর পেছনে কার অবদান বেশি?

আজকে এতদূর পৌঁছানোর পেছনে একমাত্র কৃতিত্ব আমার ভাই জিলু খানের। উনি অনেক বড় মাপের সুরকার ছিলেন। ‘মন শুধু মন ছুঁয়েছে’ গানটি লিখেছি আমি; সুর করেছেন আমার ভাই। উনি আমার থেকে ১০ বছরের বড়। আমার বাবা হঠাৎ করেই ইন্তেকাল করেন। সংসারের, আমাদের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য আমার ভাইকে সংগীত জীবন থেকে বিদায় নিতে হয়েছে।

নব্বই দশক কিংবা তার আগে-পরে অনেক ব্যান্ড সব শ্রেণির শ্রোতার মধ্যে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। কিন্তু এ সময়ের ব্যান্ডগুলো অডিয়েন্স টার্গেট করেই গড়ে উঠছে। এটিকে কিভাবে দেখছেন?

সত্যি বলতে, গান করতে হয় সবার জন্য। নির্দিষ্ট গোষ্ঠী বা শ্রেণির জন্য গান করার অর্থ কী, সেটা জানা নেই। তবে আমি মনে করি যে গানের কথায় মেলোডি থাকে, সুর হৃদয় ছুঁতে পারে, সেটি সবার কাছে পৌঁছে যায়। আবার এমন হতে পারে, একটি ব্যান্ডের সব গানই সব শ্রেণির শ্রোতার ভালো নাও লাগতে পারে। তবে ব্যান্ডটি তো বিভিন্ন ধরনের গান দিয়ে সব শ্রেণির হতে পারে। আগের ব্যান্ডগুলোর দিকে তাকালে সেটি স্পষ্ট দেখা যায়, তারা কিভাবে শ্রোতাদের মনে জায়গা করে নিয়েছে। 

নতুন ব্যান্ডের গান প্রকাশে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলোর অনীহা দেখা যায়। এর কারণ কী মনে করেন?

প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলো আগের মতো গানে পৃষ্ঠপোষকতা করছে না, এটি সত্যি। এর মধ্যে নতুন ব্যান্ডের বিষয়ে তারা আরো অনাগ্রহী। এর কয়েকটি কারণ আছে, যেমন-নতুন অনেক ব্যান্ড নিজেদের সেভাবে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে পারছে না। অর্থাৎ একটা ব্যান্ড যদি নিজেদের আস্থা অর্জন করতে না পারে, সে ক্ষেত্রে তারা পিছিয়েই থাকবে। এ ছাড়া প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলোও অর্থলগ্নিতে এখন আগের মতো ঝুঁকি নেয় না। যেখান থেকে তারা সরাসরি লাভবান হবেন, সেখানেই তারা শুধু পৃষ্ঠপোষকতা করছেন।

প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলো যদি পৃষ্ঠপোষকতায় আগ্রহী না হয়, তাহলে শিল্পীদের ভবিষ্যৎ কী?

একজন শিল্পী নিজের টাকা দিয়ে শিল্পী হয়ে উঠতে পারে না। তবে যদি কপিরাইট ও রয়্যালিটির সঠিক ব্যবহার হতো তাহলে বিষয়টি আবার ভিন্নভাবে আসত। সে ক্ষেত্রে কোনো প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান পৃষ্ঠপোষকতা না করলেও একজন শিল্পী তার গানের প্রাপ্য সম্মানি দিয়ে এগিয়ে যেতে পারতেন। 

‘মন শুধু মন ছুঁয়েছে’ গানটি নতুন প্রজন্মের মধ্যেও জনপ্রিয়। কিন্তু এখনকার গানগুলো কেন দীর্ঘ সময় শ্রোতাদের মনে থাকছে না?

এখন ভালো গান হচ্ছে না, এটি ঠিক না। তবে এখন গান প্রকাশের অনেক মাধ্যম হয়ে যাওয়ায় হয়তো ভালো গানগুলো ঠিক সময়ে আমাদের সামনে আসছে না। এ ছাড়া আমার মনে হয়, গানে এখন মেলোডির অভাব আছে। বাংলা গান মানেই তাল আর সুরের বন্ধন। গানের কথার মধ্যে গভীরতা আর মেলোডি না থাকলে সে গান বেশিদিন টিকে থাকে না।

নতুন প্রজন্মে যারা গান করছে তাদের জন্য কী বলবেন?

সুস্থ গান দিয়ে তারা এগিয়ে যাবে, এটাই প্রত্যাশা করি। দীর্ঘ সময় টিকে থাকার জন্য ভালো গানের বিকল্প নেই। কারণ বিভিন্নভাবে রাতারাতি তারকা হওয়া যায়, শিল্পী হওয়া যায় না। শিল্পী হতে হলে দীর্ঘ সাধনা করতে হয়। অনেক বেশি ফলোয়ার থাকলেই কেউ ভালো শিল্পীÑএ চিন্তা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। 


Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫