প্রায় ২০ দিন ধরে ১২ পর্বের অসাধারণ একটি সিরিজ শেষ করলাম। যেটার রেশ রয়ে গেছে শেষ হওয়ার পরও। আর কোনো কিছুর রেশ রয়ে যাওয়া মানে হলো সেই ব্যাপারটা ছুঁয়ে গেছে তাকে। সত্যিই ‘বন অ্যাপেটিট : ইওর ম্যাজেস্টি’ নামে কোরীয় এই সিরিজের দারুণ মিষ্টি আবেশ যেন দুই দিন পরও আমাকে ঘিরে রেখেছে। তাই তো নিজের সেই আবেশটুকুকে শব্দে অনূদিত করে কিছুটা রিলিফ হতেই এই রিভিউ লেখা।
সিরিজটার মূল থিমটাই ভিন্নধর্মী। খাবার, খাবারের স্বাদ, রং, বর্ন, গন্ধ, টেকচার, উপকরণ, রন্ধনশৈলী, তার গুণাগুণ, প্রভাব, শারীরিক ও মানসিক অবস্থা বিবেচনায় খাবার প্রস্তুত ও পরিবেশন, খাবার আগে-পরে সেই খাবারের বর্ণনা ও অনুভূতি এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, প্রতিটি খাবার দেখার পরে সেই সময়ের মুখাবয়াব, মুখে নেওয়ার পরে খাদ্য গ্রহীতার প্রাথমিক অনুভূতি আর খেতে শুরু করার পর খাবারের সত্যিকারের স্বাদ আস্বাদনের সময়ে তার সামগ্রিক অনুভূতির বিস্তারিত প্রকাশ এই সিরিজের মূল উপজীব্য।
সেই সঙ্গে ছিল কোরীয় একটি রাজ পরিবারের সামগ্রিক রাজনীতি, পরিবেশ, শিক্ষা, সংস্কৃতি আর চর্চার ব্যবহারের পাশাপাশি পারিবারিক স্নেহ, প্রেম, ভালোবাসার গল্প। একটি রাজ পরিবার, সেই পরিবারের রাজার খাদ্যাভ্যাস, খাবারের প্রতি তার মোহ-কি যে অপূর্ব চিত্রায়ণ, এক একটা খাবারের উৎসের জন্য এক একটা জায়গা খুঁজে বের করা বর্ণিল বাগান।
এই সিরিজের কয়েকটা জায়গা বিশেষভাবে মনে দাগ কেটেছে, যেগুলোর মধ্যে অন্যতম-
১. খাবারের ব্যাপারে কোরীয়রা ভীষণ খুঁতখুঁতে ও অসম্ভব বিলাসী।
২. আমরা যেকোনো সবজির শুধু মাটির ওপরের অংশ খাই, মাটির নিচের অংশ ফেলে দেই। কিন্তু এই সিরিজেই প্রথম দেখলাম, সবজিজাতীয় গাছের মাটির নিচের অংশও পুষ্টিগুণ সম্পন্ন এবং খাওয়ার উপযুক্তও।
৩. প্রতিটি খাবারের যে আলাদা অনুভূতির ব্যাপার আছে, সেটা চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
৪. সবচেয়ে হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া যে ব্যাপারটা-ওদের প্রেম, ভালোবাসা, আবেগ অনুভূতির প্রকাশগুলো এখনো যেন আমাদের সেই ৮০ থেকে ৯০ দশকের মতো নরম, কোমল আর আবেগি রয়ে গেছে!
৫. তবে পারিবারিক কলহ, দ্বন্দ্ব, ক্ষমতার লোভ, হিংসা, হানাহানি-এসব সেই সময়ের মতো এখনো একই রয়ে গেছে। বদলায়নি আসলে তেমন কিছুই। শুধু আজকাল কিছু খোলসে আবদ্ধ হয়েছে মাত্র।
৬. আর শেষের মিষ্টি গল্পের ছুঁয়ে যাওয়াটা দিয়েছে আমার মতো নিখাদ আনন্দ খুঁজে ফেরা মানুষকে চমৎকার অনুভূতি, যে কারণেই রয়ে গেছে তার রেশ।
নেটফ্লিক্সে ১২ পর্বের এই সিরিজটি ২৩ আগস্ট মুক্তি পায়।
পার্ক গুক-জের উপন্যাস ‘সারভাইভিং অ্যাজ ইয়নসানগুন শেফ’ থেকে সিরিজটি তৈরি হয়েছে। তবে বিতর্ক এড়াতে উপন্যাসের নৃশংস রাজা ইয়নসানগুনের নাম বদলে দেওয়া হয়েছে লি হেয়ন। ইতিহাসবিদদের মতে, ১৪৯৪ থেকে ১৫০৬ সাল পর্যন্ত কোরিয়ার শাসক ইয়নসানগুন ছিলেন দেশটির অন্যতম ভয়ংকর শাসক। প্রেম, ইতিহাস আর কল্পনার মিশেলে তৈরি এ সিরিজটি ব্যাপক জনপ্রিয় হয়। গল্পে দেখা যায়, বিমানে ফ্রান্স থেকে কোরিয়া ফেরার সময় টাইম স্লিপে জেসন যুগে চলে যান আধুনিক যুগের এক শেফ ইয়ন জি-ইয়ং (ইম ইউন-আহ)। সেখানে তার সাক্ষাৎ হয় নির্মম এক রাজা লি হেয়নের (লি চে-মিন) সঙ্গে এবং সেখানে তাদের সঙ্গে এক অদ্ভুত সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
