ঈদ মানেই তো চলচ্চিত্রশিল্প আর সিনেমা হলগুলোতে উৎসবের ব্যাপক আমেজ, জমজমাট অবস্থা; কিন্তু এবার তা হচ্ছে না। গত রোজার ঈদেও করোনার কারণে নতুন ছবি মুক্তি পায়নি। এবারও ঢালিউডে মুক্তি পাচ্ছে না নতুন কোনো সিনেমা। করোনাভাইরাসের দাপটে ঢালিউড থেমে আছে। অন্যান্য পেশাজীবীর মতো সিনেমা সংশ্লিষ্ট মানুষদেরও মন খারাপ। অনেক শিল্পী ইতিমধ্যে চলচ্চিত্র অঙ্গনকে বিদায় জানিয়েছেন। আবার অনেকে পেশা পরিবর্তনের কথাও ভাবছেন। এর মধ্যে এফডিসির আধিপত্য নিয়ে চলছে কাদা ছোড়াছুড়ি। সব কিছু মিলিয়ে গত কয়েক মাস ধরে খুব অস্থির সময় পার করছে ঢালিউড।
১৫ বছরে এই প্রথম দুই সিনেমাশূন্য শাকিবের ঈদ। করোনার কারণে আটকে আছে শাকিব খানের দুটি সিনেমা। একই কারণে পূজা চেরির জিন ছবিটিও আটকে আছে। মাহিয়া মাহি মনে করেন, এই সময়ে প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে সিনেমা দেখার পরিবেশ ও মানসিকতা কারোরই নেই।
পরপর দুটি ঈদে ছবি মুক্তি না পাওয়া এবং অন্যদিকে রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী হল ‘অভিসার’ ভেঙে মার্কেট গড়ার খবর দুমড়ে-মুচড়ে দিয়েছে সংস্কৃতি অনুরাগীদের মনকে। দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে সারাদেশে একটির পর একটি হল ভেঙে ফেলা হচ্ছে। কোনো কোনো শহরে একটি সিনেমা হলও অবশিষ্ট নেই। এর মধ্যেই চাউর হয়েছে ঢাকার ঐতিহ্যবাহী মধুমিতা সিনেমা হলও ভেঙে ফেলা হবে। সবকিছু মিলিয়ে টালমাটাল ঢালিউড। দীর্ঘদিন কাজ নেই বলে অনেক কলাকুশলী ঢাকা ছেড়ে যাচ্ছেন। এই অবস্থাতেও কদিন ধরে চলচ্চিত্র অঙ্গনে চলছে হইচই। বিষয়বস্তু সিনেমা নয়, এই অঙ্গনে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে। ক্ষমতার দাপট ধরে রাখা এবং অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ঘটেছে বর্জনের মতো ঘটনা।
এরই মধ্যে শিল্পী সমিতির ১৮৪ জনের সদস্যপদ হারানো নিয়ে হয়েছে মানববন্ধন, সংবাদ সম্মেলন, সভা-সমাবেশ। অভিনেতা আমিন খান একে আখ্যায়িত করেছেন ‘চলচ্চিত্রের সার্কাস’ নামে। এসব নিয়ে কথা বলতেও বিব্রত জ্যেষ্ঠ শিল্পী ও পরিচালকরা।
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর ও সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খানের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ এনেছে চলচ্চিত্রের ১৮ সংগঠন। চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব মতিন রহমান এসব ঘটনা নিয়ে বলেন, ‘যেসব ঘটছে, সবই অমঙ্গলজনক। এই ধরনের কর্মকা- বড় দুর্ঘটনা আহ্বানের সূচনা। এখন একত্রে থাকার সময়, ক্ষমতা দেখানোর নয়। যারা ক্ষমতার দাপট দেখাচ্ছেন, তারা আদৌ এই ইন্ডাস্ট্রির মঙ্গল চান কি না, সন্দেহ। এটাও ঠিক, কয়েক বছর ধরে চলচ্চিত্রে কাদা-ছোড়াছুড়ি হচ্ছে বেশি।’
ঢালিউডের এসব ঘটনাকে স্বাভাবিক মনে করছেন একসময়ের জনপ্রিয় চিত্রনায়ক আমিন খান। তিনি বলেন, ‘প্রযোজক, পরিচালক, অভিনয়শিল্পী ও কলাকুশলীদের শিক্ষার অভাব রয়েছে। তাই সবকিছু একটা জায়গায় থেমে গেছে। স্ব স্ব ক্ষেত্রে না জানা মানুষের সংখ্যা বেশি হওয়ায় তারা অকাজে দৌড়াচ্ছে বেশি। যদি কাজ জানত, কাজের প্রতি প্রেম থাকতো, তাহলে এসব হতো না। সবকিছু দেখে মনে হয়, সার্কাস চলছে।’
চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট কারও কারও মতে, এই অঙ্গনে কর্মহীন মানুষ বেড়েছে। চলচ্চিত্রের উন্নয়নে চিন্তা না করে বাইরের কর্মকা- নিয়ে অনেকে ব্যস্ত।