Logo
×

Follow Us

বিনোদন

হাইফা আল মনসুর: মরুর বুকে নতুন অধ্যায়

Icon

রাফিউজ্জামান রাফি

প্রকাশ: ২৪ আগস্ট ২০২০, ১০:৫১

হাইফা আল মনসুর: মরুর বুকে নতুন অধ্যায়

যেখানে নারী মানেই আপাদমস্তক বোরখায় আবৃত জীবন, এটা করা যাবে না, ওটা নিষেধ, সেখানে তিনি নারী হয়েও হয়ে উঠেছেন একজন সিনেমা নির্মাতা, তিনি হলেন হাইফা আল মনসুর। 

তিনি শুধু সৌদি আরবের প্রথম নারী চলচ্চিত্র নির্মাতা নন, যিনি এখন সারাবিশ্বের উল্লেখযোগ্য নারী নির্মাতাদেরও একজন। 

১৯৭৪ সালে সৌদি আরবের একটি সংস্কৃতিমনা পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন হাইফা আল মনসুর। তার বাবা আব্দুল রাহমান ছিলেন একজন কবি। বাবা চেয়েছিলেন হাইফা নিজের মতো করে বেড়ে উঠুক, নিজের মতো করে তার ক্যারিয়ার সাজাক। সেজন্য মেয়েকে তিনি যথেষ্ট স্বাধীনতাও দিয়েছিলেন। তবে মেয়েকে ঘিরে একটি স্বপ্ন ছিল তার। আর তা হলো- মেয়ে সাহিত্য নিয়ে পড়বে। এমন উদ্দেশ্য নিয়েই মেয়েকে পড়তে পাঠিয়েছিলেন কায়রোর দ্য আমেরিকান ইউনিভার্সিটিতে।

কিন্তু মেয়ের ইচ্ছে ছিল অন্য। তিনি চেয়েছিলেন চলচ্চিত্র নিয়ে পড়বেন; কিন্তু তাই বলে বাবাকেও নিরাশ করেননি। সাহিত্যে স্নাতক সম্পন্ন করে তিনি চলে যান অস্ট্রেলিয়ায়। সেখানে ইউনিভার্সিটি অব সিডনি থেকে চলচ্চিত্র শিক্ষার ওপর মাস্টার্স সম্পন্ন করেন তিনি।

চলচ্চিত্রে হাইফার ক্যারিয়ারের শুরুটা মোটেও সুগম ছিল না। কেননা সেসময় আরবে সিনেমা হল, চলচ্চিত্র প্রদর্শনী এসবই ছিল নিষিদ্ধ। তার ওপরে হাইফা একজন নারী।  সৌদি আরবে নারী-পুরুষ সম্মিলিতভাবে কাজ করা নিষিদ্ধ বলে শুটিংয়ে হাইফাকে পোহাতে হয়েছে বেশ ঝক্কি-ঝামেলা। তিনি নির্দেশনা দিয়েছেন দূরে একটি ভ্যানে বসে। আর এ সময় অভিনেতা-অভিনেত্রী ক্যামেরাম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেছেন ওয়াকিটকির মাধ্যমে। তবে এভাবে এগিয়ে যাওয়া হাইফার এই পরিশ্রম কিন্তু একটুও বিফলে যায়নি।

ক্যারিয়ারের শুরুতে তিনি যে তিনটি শর্টফ্লিম বানিয়েছিলেন সেগুলো হলো- ‘হু’, ‘দ্য বিটার জার্নি’ ও ‘দ্য অনলি ওয়ে আউট’। এর মধ্যে দ্য অনলি ওয়ে আউট সংযুক্ত আরব আমিরাত ও নেদারল্যান্ডস থেকে দুটি পুরস্কার জিতে নেয়। 

আর এই সাফল্য ও স্বীকৃতির ওপর ভর করেই শর্টফিল্ম তিনটি থেকে হাইফা বানান তার পরবর্তী চলচ্চিত্র ‘উইমেন উইদাউট শ্যাডোস’। তথ্যভিত্তিক এই চলচ্চিত্রে হাইফা তুলে ধরেছেন সৌদি নারীদের দৈনন্দিন জীবনচিত্র। রাস্তায়, বাড়িতে- প্রায় সব জায়গাতেই সৌদি নারীদের সামনে-পেছনে সবসময় রয়েছে বাধা আর এক অদৃশ্য দেয়াল। ডকুমেন্টারিটিতে হাইফা সেটাই তুলে ধরেছেন। 

এই চলচ্চিত্রটি ১৭টি আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে প্রদর্শিত হয়। সেই সাথে এটি মাস্কাট ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের গোল্ডেন ফর ডেগার ইন দ্য ডকুমেন্টারি ও চৌদ্দতম আরব ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে বিশেষ জুরি পুরস্কার অর্জন করে। 

এই সাফল্য তাকে যেন আরো সাহসী ও ক্ষুরধার করে তোলে। আর তার প্রমাণ পরবর্তী চলচ্চিত্র ওয়াজদা। ১০ বছরের একটি সৌদি বালিকাকে ঘিরে নির্মিত এই চলচ্চিত্রটির কাহিনী ও চিত্রনাট্য হাইফা নিজেই লিখেছেন। আর এটিই ছিল কোনো সৌদি নারী নির্মাতার তৈরি প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র।  কেননা এই চলচ্চিত্রটিই ছিল চলচ্চিত্রের নোবেল হিসেবে খ্যাত অস্কার পুরস্কারের জন্য জমা দেয়া প্রথম কোনো সৌদি অ্যারাবিয়ান সিনেমা। 

এরপর আর থেমে থাকেননি হাইফা আল মনসুর। নির্মাণের নেশায় পেয়ে বসেছিল তাকে। তৈরি করেছেন একের পর এক চলচ্চিত্র। বানিয়েছেন দ্য লাস্ট ক্যান্ডিডেট, ম্যারি শেলির মতো চলচ্চিত্র। আশাতীত সাফল্যও বন্ধুর মতো এসে টোকা দিয়েছে তার দরজায়। তার দ্য লাস্ট ক্যান্ডিডেট চলচ্চিত্রটি ২৮তম ভেনিস ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে প্রদর্শিত হয়েছে। লিঙ্গ রাজনীতি নিয়ে তৈরি এই চলচ্চিত্রটি প্রশংসিত হয়। 

আর সেই বিশ্বও জেনে যায় পৃথিবীতে দাপিয়ে বেড়ানো চলচ্চিত্রকারদের মিছিলে যোগ হলেন আরও একজন মেধাবী নির্মাতা, যিনি একজন নারী, যার নাম হাইফা আল মনসুর।  

হাইফা এখন কাজ করছেন নেটফ্লিক্সের সাথে। ২০২০-এর এপ্রিলে তিনি ঘোষণা দিয়েছেন পরবর্তী সিনেমা ‘দ্য সিলেকশন’ পরিচালনা করবেন। হাইফা হয়তো এখন দ্য সিলেকশন নিয়ে ভাবনায় ডুবে আছেন কিংবা ভাবছেন তার পরবর্তী চলচ্চিত্র নিয়ে। মাথায় ঘুরছে নতুন কোনো গল্প, মনে মনে সাজাচ্ছেন নতুন কোনো চিত্রনাট্য।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫