Logo
×

Follow Us

বিনোদন

সুদিনের অপেক্ষায় বাংলা সিনেমা

Icon

মাহমুদ সালেহীন খান

প্রকাশ: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৭:৪১

সুদিনের অপেক্ষায় বাংলা সিনেমা

বাংলা চলচ্চিত্রে দীর্ঘদিন ধরেই চলছে নানা সংকট। সারাদেশ জুড়ে ১২শ’র ওপরে সিনেমা হল বন্ধ হয়ে গেছে। করোনার কারণে এই সংকট আরো নতুন মাত্রা পেয়েছে। এ বছর নতুন কোনো ছবি নির্মাণের ঘোষণা দেন নি কোনো প্রযোজক।

ব্যবসার মুখ না দেখতে পেরে বড় বড় প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সক্রিয় আছে আট থেকে দশটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান। আর্থিক ক্ষতির ভয়ে তারাও ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছে। আটকে আছে বছর জুড়ে মুক্তি পাওয়া হাফ ডজনেরও বেশি সিনেমা। এফডিসির প্রাধান্যকে ঘিরে কাদাছোড়াছুড়িও কম হয় নি এই সময়টিতে। যদিও ইন্ডাস্ট্রিকে চাঙ্গা রাখতে প্রযোজকদের পাশে দাঁড়িয়েছেন শিল্পীরা। ছবির পারিশ্রমিক কমিয়ে দেয়ার কথাও বলেছেন। তারপরও সংকট যেন কাটছে না।

এর মধ্যে ইন্ডাস্ট্রিতে নতুন যারা আসছে বেশিরভাগই হতাশায় পড়ছেন। নিজেদের মেলে ধরার মতো সুযোগ পাচ্ছেন না তারা। এই সব শিল্পীদের ধরে রাখা বা নতুন শিল্পী তৈরিতে কোনো পরিকল্পনা বা পদক্ষেপ নেই। পুরনো যারা ইতিমধ্যেই নিজেদের প্রমাণ করেছেন বর্তমান পরিস্থিতিতে তারাও হিমশিম খাচ্ছে। তাদের অনেকেই ব্যবসা বা অন্য মাধ্যমে ঝুঁকছেন। চলচ্চিত্রে তাদের কালেভদ্রে দেখা মেলে।

অভিনেত্রী অরুণা বিশ্বাস জানান, বর্তমানে ভালো ভালো ছেলেমেয়েরা সিনেমায় আসছে। নতুন শিল্পীদের মধ্যে কাজের অনেক আগ্রহও আছে। কিন্তু তাদের সঠিকভাবে পরিচর্যা করা হচ্ছে না। আর আমরা যারা সিনিয়র আছি তাদেরকেও খুব কম সিনেমায় কাস্ট করা হচ্ছে। ইন্ডাস্ট্রিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে হলে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। তাহলেই সিনেমার উন্নতি হবে বলে আমি মনে করি।

এসব সংকটের মধ্যে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা কিছুটা হলেও আশার সঞ্চার করেছে চলচ্চিত্র প্রেমিদের। সিনেমা হল বাঁচাতে প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক সহযোগিতার প্রস্তাবে নড়েচড়ে বসেছে চলচ্চিত্রাঙ্গন। সম্প্রতি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, সিনেমা হল মালিকরা কেউ আসে না, কেউ ভাড়া দিয়ে গেছে। কেউ বিক্রি করে দিয়েছে। কেউ সিনেমা হল ভেঙ্গে বহুতল ভবন নির্মাণ করছে। সিনেমা হল মালিকরা সবাই মিলে যদি ঋণ চায়, তাহলে তা দেয়া হবে। হল মালিকরা যদি সমঝোতা করতে চায়, চালাতে চায়, তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বলেছেন, তাহলে একটা বিশেষ তহবিল করে যদি তাদের সহযোগিতা করা যায়। আমাদের আগ্রহ আছে। সিনেমা হলগুলো এভাবে পড়ে আছে, তারা যদি এগিয়ে আসে, তাহলে তাদেরকে আমরা সহযোগিতা করব।

পরিকল্পনামন্ত্রী আরো বলেন, সিনেমা হল মালিকরা যদি এই ব্যবসাকে পুনরায় বাঁচাতে চান বা পারেন, তাহলে সরকার তাদের আর্থিক ঋণ সহায়তা দেবে। এজন্য বিশেষ তহবিল গঠনের কথা তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বলেছেন।

শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর এ প্রসঙ্গে বলেন, অনেকদিন ধরেই চলচ্চিত্রের অবস্থা ভালো যাচ্ছে না। দিন দিন সিনেমা হল কমছে। এমতাবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর এই উদ্যোগ খুব ভালো। এজন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ। তবে এটা আরো আগে হলে ভালো হতো।

পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছি সিনেমা হলের পরিবর্তন না হলে দর্শক ছবি দেখতে আসবে না। প্রধানমন্ত্রী আশার আলো দেখিয়েছেন। দেশের সিনেমা হলের জন্য তিনি সুন্দর একটি উদ্যোগের কথা বলেছেন। আশা করি এর সঠিক বাস্তবায়ন হবে। এটাও বলতে চাই, সরকার যেন অনুদানের ছবি নির্মাণে বাজেট বাড়িয়ে দেয়। এছাড়া বাণিজ্যিক ছবি নির্মাণের জন্য ঋণ দেওয়া হোক। আরও একটি বিষয় হলো, এফডিসির উদ্যোগে বছরে ২০ থেকে ২৫টি সিনেমা নির্মাণের উদ্যোগ প্রয়োজন। এটা মনে রাখতে হবে সিনেমা নির্মাণ না হলে সিনেমা হল চলবে না। সিনেমা হল সচল রাখতেই সিনেমা নির্মাণে গুরুত্ব দিতে হবে।

চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির উপদেষ্টা মিয়া আলাউদ্দিন বলেন, ২০১০ সালে আমরা এই বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে গিয়েছিলাম। তিনি আমাদের আশ্বস্ত করেছিলেন। এতদিন পর আমরা বুকে আশা বাধলাম। এতে মালিকরা সিনেমা হল ভেঙে মার্কেট করার চিন্তা করবে না। সবাই না হলেও অনেকেই সিনেমা হল সচল করতে চাইবে। আমরাও প্রস্তুত। তবে আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় যেন এ প্রকল্প আটকে না থাকে।

গত এক দশক ধরে আমাদের চলচ্চিত্রাঙ্গনে যে সংকট রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণার সঠিক বাস্তবায়ন চান চলচ্চিত্রপ্রেমিরা। তারা মনে করেন, খুব শীঘ্রই নিশ্চয়ই অন্ধকারের মেঘ কেটে আলোর মুখ দেখবে বাংলা চলচ্চিত্র। 

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫