
নাজিয়া হক অর্ষা
‘টিআরপি, ভিউ, রেটিং শব্দগুলোর মধ্যে ফাঁকফোকর আছে। চাইলেই এগুলো নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তাই আমি বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিয়ে দেখি না,’ এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে গেলেন অভিনেত্রী নাজিয়া হক অর্ষা।
তার সাথে কথা হচ্ছিল চলতি সময়ের অন্যতম আলোচিত বিষয় ইউটিউব ভিউ নিয়ে। হালকা কাজের ভিউ মিলিয়ন ছাড়ালেও দর্শক আলোচনা করছে জীবনঘনিষ্ঠ কাজ সম্বন্ধে।
অর্ষা নিজের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরে বলেন, ‘এখানে জুরি কারা দেখতে হবে। ফেসবুকের কিছু গ্রুপ আর আমাদের মিডিয়ার মানুষজন আলোচনা করছে জীবনঘনিষ্ঠ কাজ নিয়ে। যারা রুচিসম্পন্ন তারা; কিন্তু আপনি কোনো অজপাড়া গাঁয়ে জিজ্ঞেস করুন কাউকে সে এসব কাজ দেখেছে কি-না। সে হালকা কাজগুলোই দেখে, তার কাছে সেটাই সহজ।’
তিনি যোগ করে বলেন, ‘হবে না কেন? আমরা সংস্কৃতি তৈরিই করিনি যে, ওখানে আহমদ ছফা সম্বন্ধে জানবে কোনো নতুন প্রজন্ম; কিন্তু আপনি পার্শ্ববর্তী দেশের কোনো গ্রামে গেলে দেখবেন সেখানকার বাচ্চারা সত্যজিৎ রায়, ঋত্বিক ঘটক, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় সম্বন্ধে জানে। আবার বর্তমান যুগের খ্যাতিমান মানুষদের সম্পর্কেও জানে। আর আমাদের গ্রামের কোনো মানুষ তাদের না চিনলেও নীল ছবির তারকাকে চেনে। রুচির বিকৃতি এখানেই। তাই এসব নিয়ে আলোচনা মূল্যহীন।’
আমাদের জীবনযাত্রার ধরনেও এর পেছনে দায়ী মত দিলেন অর্ষা। তার মতে, ‘মানুষকে দুটি জিনিস খুব আকৃষ্ট করে। সেগুলো হলো ইমোশন ও কমেডি। এ দুটি জিনিসকে নিজের জীবনের সাথে মিলিয়ে সুখে সুখী হয় দুঃখে দুঃখী হয়। আমাদের জীবনের কাঠামোটাই তো এরকম।’
প্রসঙ্গক্রমে অর্ষার কাছে জানতে চাইলাম সাইবার বুলিং নিয়ে। করোনাকালে মানুষের বাজে মন্তব্যে সয়লাব হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়া। অর্ষা মনে করেন, এসব আগেও ছিল।
তার ভাষ্যে, ‘সাইবার বুলিং সবসময় ছিল। মানুষের অন্ধকার দিকটাই সামনে আসে। আমরা সারাদিনের রাগ ক্ষোভ কোথায় উগড়ে দেই? এমন একটা জায়গায় যেখানে কেউ সহজে আমাকে পাবে না। দেখা গেল একজন লোক বৌয়ের সাথে রাগ করে কোনো সেলিব্রিটিকে গালি দিয়ে বসল। মানুষ সেলিব্রিটিকে ব্যক্তিগত সম্পত্তি মনে করে। এটা জটিল একটা ব্যাপার। মার্জিন লাইন আর নেই। সেলিব্রিটিকে গালি দেয়া সহজ। একজনের দেখাদেখি আরো ১০ জন দিচ্ছে। এতে তার কিছু যায় আসে না। আমরা কিন্তু বক্তব্যগুলোকে গুরুত্ব দিচ্ছি না। কেন দেব? আমরা তাকে চিনি? এদের এত গুরুত্ব দেয়ার কিছু নেই। আগেও এসব ছিল। বরং আমাদের কাজের ব্যস্ততার জন্য এসব চোখে পড়ত না। এখন সারাক্ষণ মোবাইল ফোন সাথে থাকায় সাইবার বুলিং চোখে পড়ছে। কাল থেকে ব্যস্ততা বাড়লে মনে হবে এসব কমে গেছে।’
সেসব কীভাবে বন্ধ করা যায়, জানতে চাইলে অর্ষা বলেন, ‘গত ত্রিশ-চল্লিশ বছর ধরে আস্তে আস্তে এমনটি হয়েছে। এই প্রজন্মকে কোনো আন্দোলন করে, নিয়ম দিয়ে আটকে রাখা যাবে না। তবে এর প্রতিবাদ করতে থাকলে আরও বেশ কিছু বছর পর হয়তো বন্ধ হবে।’
করোনাকালে নিজেকে জানার সময় পেয়েছেন অর্ষা। দেখেছেন মানুষের কষ্ট। তার ভাষ্যে, ‘করোনাকাল ভালো যায়নি। হাসপাতালে ঘুরেছি। অনেক বাস্তবতা চোখের সামনে এসেছে। মানুষ কেমন তা জানতে পেরেছি। মানুষের কৃত্রিমতা চোখে পড়েছে। স্বাস্থ্যব্যবস্থার নানা দিক আমার সামনে উন্মোচিত হয়েছে। বেঁচে থাকাটাই মনে হয় খুবই বিস্ময়কর। নিজেকে বোঝার সময় পেয়েছি।’
তবে এবার প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করেছেন তিনি, ‘এবার বৃষ্টি উপভোগ করেছি। শরৎ দেখছি। ঋতুবৈচিত্র্য অনুভব করতে পারছি এ সময়ে।’