নারী মুক্তির মূল বাধা পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা : বাঁধন

মোহাম্মদ তারেক
প্রকাশ: ০৬ ডিসেম্বর ২০২০, ০৯:৪৯

আজমেরী হক বাঁধন
অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন দীর্ঘদিন পর্দায় নেই। অনেক দিন বাদে তাকে দেখা যাবে বিজ্ঞাপনচিত্রে। এ নিয়ে আলোচনা সর্বত্র।
বাঁধনের ভাষ্যে, ‘প্রায় সাড়ে চার বছর পর বিজ্ঞাপনের কাজ করলাম। এর আগে ফেরদৌস ভাইয়ের সাথে একটি বিজ্ঞাপনচিত্র করেছিলাম।’
কাজ নিয়ে সচেতন বাঁধন এ বিজ্ঞাপনচিত্রে কাজের কারণ জানিয়ে বলেন, ‘পিপলু খানের ‘হাসিনা : অ্যা ডটারস টেল’ দেখার পর তার সাথে কাজের আগ্রহ বেড়েছে। নানা ধরনের কাজের চিত্রনাট্য আমার হাতে আসে, কিন্তু পছন্দের চিত্রনাট্য পাচ্ছিলাম না। এ কাজটি করতে গিয়ে চিত্রনাট্যের পাশাপাশি ইউনিটটাকে ভালো লেগেছে। তারা বেশ গুছিয়ে কাজ করেছে। আশা করি দর্শকেরও কাজটি ভালো লাগবে।’ বিজ্ঞাপনচিত্রের কাজ নিয়ে আরেকটি তথ্য জানালেন বাঁধন, ‘গত দুই আড়াই বছরে যত বিজ্ঞাপনচিত্রের প্রস্তাব পেয়েছি তা আগে কখনো পাইনি।’
ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে মোস্তফা সরওয়ার ফারুকীর বিজ্ঞাপনচিত্রে কাজ করেন বাঁধন। সাবানের সে বিজ্ঞাপনে পড়ে যায় শোরগোল। সে প্রসঙ্গ তুলতেই অতীতে ফিরে গেলেন তিনি, ‘ফারুকী ভাইয়ের বিজ্ঞাপনটি আমার প্রিয়। তবে কিছুদিন চালানোর পর সেটির প্রচার বন্ধ হয়ে যায়। আমি ক্যামেরার দিকে শার্ট ছুড়ে মেরেছি এই অজুহাতে সমালোচনা হয়েছিল। আমার ওপর চাপও সৃষ্টি করা হয়।’
সেসময় কাজ নিয়ে এত ভাবতেন না তিনি। তার মতে, ‘ওয়ারিদের একটি বিজ্ঞাপন করেছিলাম যেটিও আমার প্রিয়। সে সময় যত কাজ করেছি সবই জীবনের প্রয়োজনে। মন দিয়ে কাজ করতে পারিনি। কারণ ব্যক্তিজীবনে ফোকাস ছিল বেশি। তবুও আমাকে যারা কাজে নিয়েছিলেন, তাদের কথা কখনো ভোলার নয়।’
এখন নিজেকে বদলে ফেলেছেন বাঁধন। কাজ নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গিতে এসেছে পরিবর্তন, ‘এখন আমি কাজের পদ্ধতি বদলে ফেলেছি। মানসিক ও শারীরিক পরিবর্তনের পর মানসম্মত কাজের প্রস্তাব বেশি আসছে।’
নির্মাতাদের প্রতি বাঁধন কৃতজ্ঞ। তিনি জানান, ‘যারা নতুন করে আমাকে নিয়ে ভাবছে, তাদের প্রত্যেকের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। এতে করে যারা প্রমাণিত শিল্পী নন তারা বিশ্বাস করতে পারবেন পরিশ্রম করলে ও নিজের লক্ষ্যে স্থির থাকলে সুযোগ আসবে।’
বাঁধনের এ পরিবর্তনের শুরু আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদের একটি সিনেমায় অভিনয়ের মাধ্যমে। যদিও সে সিনেমা এখনো মুক্তি পায়নি, কিছু বলতেও মানা। বাঁধন নিজের পরিবর্তন নিয়ে বলেন, ‘আমি যে সিনেমা করেছি সেটি আমার জীবনবোধে পরিবর্তন এনেছে। মনে হয়েছে নিজেকে ফোকাস করা প্রয়োজন, যা করতে চাই তাই করতে হবে।’
বাঁধন বলে চলেন, ‘আমি ৩৪ বছর পর্যন্ত অন্যসব মানুষের মতো পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার ধারক ও বাহক হিসেবে কাজ করেছি। নারী মুক্তির মূল বাধা এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা। আমাকে আমার মতো করে বলতে দেয়া হোক ও লেখা হোক। এটাতেই আমি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি।’
তিনি যোগ করে বলেন, ‘মানুষ সমাজ পরিবর্তনের বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলতে চায় না। মানুষ সমাজে প্রচলিত অন্যায়গুলোর প্রতিবাদ করতেও অনিচ্ছুক। সবাই কমফোর্ট জোনে থাকতে চায়। যারা অন্যায়ের শিকার তারাও বলতে চায় না। আরেক দল আছে, যারা সুবিধাভোগী।’
তিনি মনে করেন চুপ না থেকে নারী মুক্তির কথা বলা প্রয়োজন। বাঁধনের ভাষ্যে, ‘সমাজে একজন মানুষ হিসেবে আমার অধিকার ও স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে, এটা দেখতে চাই।’
বাঁধন মনে করেন একজন মানুষ কিংবা শিল্পীর স্বাধীনভাবে কাজ করার অধিকার আছে। তিনি বলেন, ‘আমি কী কাজ করব, তা কেউই নির্ধারণ করে দিতে পারে না। কাজ করার সিদ্ধান্ত একান্ত আমার। মানুষ আমার কাজের ভালো-মন্দ নিয়ে গঠনমূলক আলোচনা-সমালোচনা করতে পারে। কাজ করার সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করতে পারে না। প্রত্যেক মানুষের স্বাধীনভাবে কাজের অধিকার নিশ্চিত করা প্রয়োজন।’
নিজের পরিকল্পনা নিয়ে বাঁধন বলেন, ‘এ সময়ে এসে আমি চিত্রনাট্য এবং নির্মাতার ব্যাপারে গুরুত্ব দিচ্ছি। নারীপ্রধান গল্পে কাজ করার ইচ্ছে। অধিকাংশ গল্পের নায়ক একজন পুরুষ। নারীদের প্রতিবাদ এ ধারা বদলাতে পারে। যদিও এখন গল্পপ্রধান কাজ হচ্ছে। আমি পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি। এ জন্যই কাজ করতে উৎসাহ খুঁজে পাচ্ছি।’
কাজের ক্ষেত্রে সময়ের গুরুত্ব তুলে ধরে বাঁধন বলেন, ‘যে কোনো কাজের প্রস্তুতির জন্য প্রচুর সময় দিতে হয়। সময় নেওয়ার সময়ে মানুষ এক ধরনের চাপ সৃষ্টি করে। একেকজনের চিন্তার কৌশল একেক রকম। এটা মেনে নিতে হবে।’