Logo
×

Follow Us

বিনোদন

যুদ্ধ দিনের সিনেমা

Icon

মোহাম্মদ তারেক

প্রকাশ: ১৬ ডিসেম্বর ২০২০, ১১:৫৯

যুদ্ধ দিনের সিনেমা

দীর্ঘ নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধের চিত্র বিভিন্নভাবে সিনেমার পর্দায় উঠে এসেছে আমাদের সময়ে। মুক্তিযুদ্ধের পর এ পর্যন্ত বেশ কিছু সিনেমা নির্মিত হয়েছে, যার শুরু হয়েছিল যুদ্ধের আগেই। বরেণ্য নির্মাতা জহির রায়হানকে বলা যেতে পারে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সিনেমার অগ্রদূত। মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনে ধারণ করা দৃশ্য সাজিয়ে তিনি তার অনুসারীদের নিয়ে নির্মাণ করেন চারটি প্রামাণ্যচিত্র।

যদিও এর আগের বছর, ১৯৭০ সালে মুক্তি পায় তার অনবদ্য সৃষ্টি ‘জীবন থেকে নেওয়া’। এ সিনেমায় উঠে এসেছে স্বাধীনতার জন্য ব্যাকুল বাঙালির জীবনচিত্র। ১৯৭১ সালেই ‘লেট দেয়ার বি লাইট’ শীর্ষক আরেকটি সিনেমার কাজ শুরু করেন জহির রায়হান। বছরের শুরুতে কাজ শুরু করলেও মার্চে অসহযোগ আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের কারণে তা বন্ধ হয়ে যায়। সে সিনেমার কাজ আর শেষ হয়নি। 

চারটি প্রামাণ্যচিত্রের মাধ্যমে মহান মুক্তিযুদ্ধকে ক্যামেরার ফ্রেমে বন্দি করেন জহির রায়হান। বিশ্ববাসীকে জানিয়ে দেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের কথা। উদ্বুদ্ধ করেন মুক্তিযোদ্ধাদের। যার প্রথমটির নাম ‘স্টপ জেনোসাইড’। এ প্রামাণ্যচিত্রে যুদ্ধের বর্বরতা, শরণার্থী শিবিরে মানুষের অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্ট দেখানো হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রস্তুতির চিত্রও উঠে আসে জহির রায়হানের ক্যামেরায়। সিনেমাটি সিডালক ও তাসখন্দ চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কৃত হয়। আলমগীর কবির এ সিনেমায় ধারাবিবরণী দেন। এছাড়াও জহির রায়হান নির্মাণ করেন আরেকটি প্রামাণ্যচিত্র। যার নাম ‘অ্যা স্টেট ইজ বর্ন’। পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশের জন্মের দৃশ্যপটগুলো এ প্রামাণ্যচিত্রের মাধ্যমে তুলে ধরেন তিনি। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের জন্ম, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ৬ দফা, ১৯৭০ সালের নির্বাচন ও ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের কথা উঠে আসে এ প্রামাণ্যচিত্রে। পাশাপাশি ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত ঘটে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ঘটনাগুলো উঠে এসেছে এখানে। 

অন্য দুটি প্রামাণ্যচিত্র হচ্ছে আলমগীর কবিরের ‘লিবারেশন ফাইটার্স’ ও বাবুল চৌধুরীর ‘ইনোসেন্ট মিলিয়নস’। পরের দুটি প্রামাণ্যচিত্র প্রযোজনা করেন জহির রায়হান। তিনি চারটি প্রামাণ্যচিত্রের নাম দিয়েছিলেন ‘জাতীয় মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র’। ‘লিবারেশন ফাইটার্স’ সিনেমাটি মূলত মুক্তিযোদ্ধাদের কর্মকা-ের ওপর ভিত্তি করে নির্মাণ করা হয়। আলমগীর কবির এ প্রামাণ্যচিত্রে মুক্তিসেনাদের প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন যুদ্ধে অংশগ্রহণ দেখিয়েছেন। অন্যদিকে বাবুল চৌধুরীর ‘ইনোসেন্ট মিলিয়ন’ প্রামাণ্যচিত্রে তুলে ধরা হয়েছে যুদ্ধকালীন মানুষের দুরবস্থার চিত্র।

১৯৯৫ সালে মুক্তি পায় তারেক মাসুদের ‘মুক্তির গান’। এ প্রামাণ্যচিত্রে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে একটি ভ্রাম্যমাণ গানের দলের কার্যক্রম তুলে ধরা হয়েছে। একটি ট্রাকে করে একদল তরুণ সংস্কৃতিকর্মী শরণার্থী শিবিরে ঘুরতেন। গান গেয়ে সংশ্লিষ্টদের অনুপ্রেরণা জোগাতেন। মার্কিন বিজ্ঞাপন নির্মাতা লিয়ার লেভিন দৃশ্যগুলো ধারণ করেন। শিল্পীদের সঙ্গে ট্রাকে করে ঘুরতেন। ডিসেম্বরের শুরুতে তাকে ফিরতে হয় নিজ দেশে। পরবর্তীতে দৃশ্যগুলো সম্পাদনা শেষ করতে করতেই যুদ্ধ শেষ হয়ে যায়। সঙ্গত কারণে আর সিনেমা বানানো হয়নি তার। ফুটেজগুলো সযতেœ রেখে দেন তিনি। পরবর্তীতে ১৯৯০ সালে তারেক মাসুদ ও ক্যাথরিন মাসুদ সে ফুটেজ সংগ্রহ করেন। আবারও সম্পাদনা করেন তারা। মূল শিল্পীদের দিয়ে নতুন করে ১১টি গান রেকর্ড করান। সবশেষে তারা নির্মাণ করেন ‘মুক্তির গান’। এ সিনেমাতেও উঠে এসেছে যুদ্ধ দিনের সত্যিকারের দৃশ্য। 

জহির রায়হানের চারটি প্রামাণ্যচিত্র ও তারেক মাসুদের ‘মুক্তির গান’ স্বাধীনতা সংগ্রামের বাস্তবতা তুলে ধরে। নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের ভয়াবহতা তুলে ধরতে এ প্রামাণ্যচিত্রগুলোর নিয়মিত প্রদর্শন প্রয়োজন।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫