
প্রখ্যাত অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামানের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। শনিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) আসরের পর পুরান ঢাকার জুরাইন কবরস্থানে তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়।
এর আগে সূত্রাপুর জামে মসজিদে এই কিংবদন্তির দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজার আগে সূত্রাপুর কমিউনিটি সেন্টারে তার মরদেহ রাখা হয়।
শনিবার সকালে এটিএম শামসুজ্জামানের পরিবার জানায়, সূত্রাপুরে নিজ বাসায় তিনি ঘুমের মধ্যে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছেন।
এটিএম শামসুজ্জামান এর প্রথম জানাজা সম্পন্ন হয়েছে বাদ জোহর নারিন্দার পীর সাহেব বাড়ি মসজিদে।
এর আগে এটিএম শামসুজ্জামানের শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী নারিন্দার পীর সাহেব তার গোসলের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন। এফডিসি বা অন্য কোথাও মরদেহ না নিতে জীবিত অবস্থায় বলে গেছেন তিনি।
এর আগে গত বুধবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) আজগর আলী হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। শুক্রবার তিনি বাসায় ফেরেন।
এটিএম শামসুজ্জামান পরিপাকতন্ত্রের জটিলতায় ২০১৯ সালে চার মাস একই হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করেন।
বরেণ্য এ অভিনেতা ১৯৪১ সালের ১০ সেপ্টেম্বর নোয়াখালীতে নানাবাড়ি দৌলতপুরে জন্মগ্রহণ করেন। চলচ্চিত্রে তার পথচলা শুরু হয় ১৯৬১ সালে। উদয়ন চৌধুরীর ‘বিষকন্যা’ ছবিতে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেন। ১৯৬৫ সাল থেকে অভিনয়ে নিয়মিত হন তিনি। ১৯৭৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত আমজাদ হোসেনের ‘নয়নমনি’ তাঁকে খল চরিত্রে এনে দেয় অসামান্য খ্যাতি। তিনি অভিনয়ের পাশাপাশি লিখেছেন চিত্রনাট্যও। নারায়ণ ঘোষ মিতার ‘জলছবি’ ছবির কাহিনি ও চিত্রনাট্য লেখার মাধ্যমে কাহিনিকার হিসেবে আবির্ভাব ঘটে তার। এরপর শতাধিক ছবির কাহিনি ও চিত্রনাট্য লিখেছেন তিনি।
এটিএম শামসুজ্জামান প্রথমবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন ১৯৮৭ সালে। কাজী হায়াতের ‘দায়ী কে’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার লাভ করেন তিনি। ২০১২ সালে রেদওয়ান রনি পরিচালিত ‘চোরাবালি’ ছবিতে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয়ের জন্যে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান এ নন্দিত অভিনেতা। ৪২তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের আজীবন সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন এই অভিনেতা।
শিল্পকলায় অসামান্য অবদানের জন্য ২০১৫ সালে তাকে একুশে পদকে ভূষিত করা হয়। ২০০৯ সালে ‘এবাদত’ নামের প্রথম ছবি পরিচালনা করেন তিনি।
এটিএম শামসুজ্জামানের উল্লেখযোগ্য ছবির মধ্যে রয়েছে- ওরা এগারোজন, সূর্য দীঘল বাড়ি, লাঠিয়াল, অনন্ত প্রেম, যাদুর বাশি, রামের সুমতি, অশিক্ষিত, গোলাপি এখন ট্রেনে, ছুটির ঘন্টা, পুরস্কার, চাপা ডাঙ্গার বউ, দায়ী কে, ম্যাডাম ফুলি, দোলনা, ভণ্ড, চোরাবালি, মোল্লা বাড়ির বউ, শ্বশুর বাড়ি জিন্দাবাদ, খায়রুন সুন্দরী, নাচনেওয়ালি, বাংলার বউ, হাজার বছর ধরে, গেরিলা, ডাক্তার বাড়ি, দাদীমা ইত্যাদি।
এটিএম শামসুজ্জামানের গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলার ভোলাকোটের বড়বাড়ি এলাকায়। ঢাকার দেবেন্দ্র নাথ দাস লেনের বাসিন্দা শামসুজ্জামান পাঁচ ভাই ও তিন বোনের মধ্যে সবার বড় ছিলেন। তাঁর বাবা নুরুজ্জামান আইন পেশায় নিয়োজিত ছিলেন।