
বাপ্পা মজুমদার
বাপ্পা মজুমদার। এই নামটি দেশের সংগীতাঙ্গনে খুব পরিচিত। তিনি দীর্ঘ সময় ধরে সংগীতপিপাসুদের মাতিয়ে রাখছেন। তার সফলতার সব কিছুই যেন একটি খোলা বই।
প্রিয় শিল্পীকে নিয়ে শ্রোতাদেরও আগ্রহের কোনো কমতি নেই। গত ৫ ফেব্রুয়ারি ছিল গুণী এ গায়কের জন্মদিন। অসংখ্য ভক্তের শুভেচ্ছায় সিক্ত হয়েছেন। তার বাবা পণ্ডিত বারীন মজুমদার ও মা ইলা মজুমদার।
বাবা সম্পর্কে তিনি বললেন, তার পাণ্ডিত্য, তার গানের ক্ষেত্র নিয়ে কথা বলার মতো দুঃসাহস আমার নেই। সুতরাং তাকে নিয়ে আমি কথা বলতে পারব না। তিনি আকাশসম একজন মানুষ। আমি মনে করি, যে কোনো সন্তান, সে যদি চূড়ান্ত পর্যায়ের আশীর্বাদপ্রাপ্ত হয়, তাহলেই সে এমন একজন পিতার সন্তান হতে পারে। বাবা হিসেবে তিনি যে কতটা অসাধারণ, সেটা আমরা জানি। আমাদের একটু ভালো রাখতে সারাজীবন যুদ্ধ করেছেন; কিন্তু কখনোই আমাদের সেটা বুঝতে দেননি। আমার মনে পড়ে না যে, আমরা ভাইয়েরা কখনোই একবেলা না খেয়ে ছিলাম। মা-বাবা হয়তো না খেয়ে ছিলেন; কিন্তু আমাদের উপোষ রাখেননি। কতটা ভালোবাসা, কতখানি যত্ন থাকলে মা-বাবা তাদের সন্তানকে এভাবে লালন করতে পারেন!
তিনি বাবা সম্পর্কে আরো বলেন, বাবার কাছ থেকে সংগীতের কিছুই শিখতে পারিনি। আসলে চেষ্টাই করিনি। তখন এড়িয়ে চলতাম। আর এখন কপাল চাপরাই। আসলে যতদিন বাবা বেঁচে ছিলেন, ততদিন বুঝতেই পারিনি যে আমার মাথার ওপর এত বড় একটা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। চলে যাওয়ার পর হায় হায় করছি কী হারালাম আমরা! এখন প্রতিনিয়ত আক্ষেপ করি কেন তার কাছ থেকে কিছু শিখলাম না, কিছু জানতে চাইলাম না! কেন তাকে প্রশ্ন করিনি এই ভাবনাটাই ভীষণ পীড়া দেয় আমাকে।
মা প্রসঙ্গে বাপ্পা বলেন, মায়ের কথাও একই। তিনি সাধারণ একজন মা ছিলেন না, ছিলেন দেবীতুল্য একজন মানবী। তার মতো মানুষ পৃথিবীতে বিরল। তাই সবসময় মনে করি, আমাদের ওপর হয়তো অনেক আশীর্বাদ ছিল, যে কারণে আমরা এ রকম মা-বাবা পেয়েছি। তারাই আমার জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি।
সমসাময়িক কাদের কাজ ভালো লাগে এই প্রশ্ন করতেই বাপ্পা বলেন, আমি যখন কাজ শুরু করেছিলাম, তখন অনেকেই ছিলেন। তাদের কথা এখন সেভাবে বলতে পারবো না। আমার পরে যারা কাজ শুরু করেছিল, তাদের অনেকের কাজই ভালো লেগেছে। হাবিব, ফুয়াদ, অর্ণবের কাজ প্রচণ্ড রকম ভালো লাগে। হৃদয়, অদিতের কাজ বেশ ভালো। ব্যান্ডের মধ্যে চিরকুট অসাধারণ। আরবোভাইরাস, নেমেসিস, শূন্য এদের কাজও আমার ভীষণরকম ভালো লাগে। এরা প্রত্যেকেই প্রত্যেকের জায়গা থেকে বেশ ভালো করছে।
তিনি আরো বলেন, আর নতুনদের নিয়ে বলব, তাদের কাজ নিয়ে আমি আশাবাদী। তবে নতুনদের আমি বরাবরই বলব গানের কথা নিয়ে তাদের আরো আন্তরিক হতে হবে। গান যতই ভালো হোক, কথা যদি ভালো না হয়, সে গান বেশি দিন টিকবে না। আমি মনে করি, আমার মৃত্যুর পরও আমার গানটা টিকে থাকতে হবে। তাই গানের কথা, সুর ও আয়োজনে অনেক বেশি সিরিয়াস হতে হবে।
শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে বাপ্পা বলেন, শ্রোতাদের প্রত্যাশা কতটুকু পূরণ করতে পেরেছি, জানি না। তবে নিজের প্রাপ্তি অনেক। মানুষের যে ভালোবাসা-সমাদর পেয়েছি, এর চেয়ে বড় কোনো প্রাপ্তি হতেই পারে না। এখন যদি লাভ-লোকসানের হিসাব করতে চাই, কী পেলাম, কী হারালাম তাহলে বলবো আমার হারানোর কিছু নেই, শুধু পেয়েছি। শ্রোতাদের যে ভালোবাসা, একজন মানুষের জীবনে এর চেয়ে বেশি কিছু চাওয়ার থাকতে পারে না। অনেক, অনেক পেয়েছি।
বাপ্পার এই ছুটে চলা থামবে কীভাবে? ‘অবসর নিয়ে ভাবতে চাই না। অবসরে যাব, ভাবতেই পারি না।’
তিনি অকপটে জানালেন, আমার খুব একান্ত একটা চাওয়া আছে, সেটা হলো আমি যেন কাজ করতে করতেই দেহত্যাগ করতে পারি। অথর্ব, অসুস্থ হয়ে থাকা, এটা চাই না। কর্মক্ষম থাকতে থাকতেই যেন পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে পারি। এমন যেন কখনোই না হয়, আমি কারও জীবনের বোঝা হয়ে গেলাম। ইম্পসিবল, আমি এটা কখনোই মেনে নিতে পারব না।