Logo
×

Follow Us

বিনোদন

দেশের গানে শ্রোতাপ্রিয়তার আকাল

Icon

রাফিউজ্জামান রাফি

প্রকাশ: ২২ মার্চ ২০২১, ১০:০৪

দেশের গানে শ্রোতাপ্রিয়তার আকাল

দেশের গান বলতে বোঝায় যে গানের ভাঁজে ভাঁজে ছড়ানো রয়েছে দেশের প্রতি ভালোবাসা। যে গান মাতৃভূমির কথা বলে, সুসময়ে ফুলের মতো সুবাস ছড়ায় ও সংকটে অস্ত্রের মতো ঝনঝন করে ওঠে। 

উদাহরণস্বরূপ দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের মুহূর্তে রচিত গানগুলোর কথা বলা যেতে পারে। শুধু তাই নয় বাংলাদেশের জন্মের আগে থেকেই আধুনিক, ভাটিয়ালি ভাওয়াইয়াসহ সংগীতের সব শাখাতেই দেশের গানের আধিপত্য ছিল। তারই ধারাবাহিকতায় মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ও মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে দেশপ্রেমের অজস্র গান তৈরি হয়েছে এবং তা লুফেও নিয়েছে আপামর জনসাধারণ। এখনো মানুষের মুখে মুখে ফেরে সেই গানগুলো। 

তবে দেশের গানের সেই সুসময় এখন অনেকটাই ম্লান। বিগত ১০ বছরের কথা বললে বলতে হয় গণমাধ্যমে নতুন নতুন দেশের গান প্রচারিত হলেও শ্রোতাদের মুখে মুখে ফেরার ভাগ্য হয়নি গানগুলোর; কিন্তু কেন? তাহলে কি আমাদের গীতিকার, সুরকার ও শিল্পীদের দেশের প্রতি ভালোবাসা ও দায়িত্ববোধ কমে গেছে? 

এর জন্য সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সময়কে ধারণ করে জাগরণ তৈরি হয় আর এই জাগরণকে ঘিরে কালজয়ী গানের জন্ম। আবার অনেকেই বলছেন, সময় খুব যান্ত্রিক হয়ে গেছে। এখন অনেকে ফরমায়েসি ও দায়সারাভাবে গান লিখছেন, সুর করছেন ও গাইছেন। তাই হয়তো সাম্প্রতিক সময়ের গানগুলো শ্রোতাপ্রিয়তা পাচ্ছে না। 

জনপ্রিয় গীতিকার কবীর বকুল বলেন, আসলে দেশপ্রেমটা ভেতর থেকে আসতে হয়। আমরা ক’জন দেশকে ভালোবাসি? এই প্রশ্নের উত্তরের সাথে সাথেই দেশাত্মবোধক গানগুলো শ্রোতাপ্রিয়তা পাচ্ছে না কেন বোঝা যাবে। একটি গান দিয়ে পুরো সমাজকে পরিবর্তন করা সম্ভব। আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের কতজন গীতিকার রয়েছেন মুক্তিযুদ্ধের জাগরণী গানগুলো বারবার শোনেন। কতজন শিল্পী রয়েছেন তাদের মধ্যে দেশের প্রতি দরদ রয়েছে। ফরমায়েসি ও সস্তা জনপ্রিয়তার পেছনে ছুটলে কালজয়ী গান কখনো তৈরি হবে না। 

কণ্ঠশিল্পী ন্যান্সি মনে করেন শুধু দেশের গান না, অনেক গানই এখন শ্রোতাপ্রিয়তা পাচ্ছে না। তাছাড়া প্ল্যাটফর্ম যেহেতু ডিজিটাল সেহেতু ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে যারা গান শুনছেন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের বাইরে তাদের কাউন্ট করা যাচ্ছে না। আর ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে সবাই যে গান শুনছেন তাও না। কেননা বয়স্ক নাগরিকরা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে খুব একটা সক্রিয় না। সুতরাং তাদেরও শ্রোতা হিসেবে এখানে পাওয়া যাচ্ছে না। 

পাশাপাশি বিনিয়োগের বিষয়টিও উল্লেখ করেন এই সংগীতশিল্পী। একসময় দেখা যেত একটি দেশের গান তৈরির সময় লাইভ যন্ত্র ব্যবহার থাকত, কোরাস থাকত, যার ফলে গানটির উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পেত। আজকাল বিনিয়োগের অভাবে এসব উপাদান সচরাচর ব্যবহার হচ্ছে না। ফলে গানগুলো তার আপন রঙে রঙিন হয়ে উঠতে পারছে না। এটিও একটি অন্যতম কারণ হতে পারে বলে মনে করেন তিনি। 

এছাড়া পরপর বিভিন্ন পরিবর্তনের ফলে পরিবর্তন এসেছে গানের ফরম্যাটসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে। সবশেষে ন্যান্সি মনে করেন স্বাধীনতা দিবস বিজয় দিবস শহীদ দিবসসহ বিভিন্ন দিবসের প্রতি আগে সবার যে উদ্দীপনা ছিল এখন তাতেও ভাটা পড়েছে। ফলে ভিতরের তাগিদটি আগের মতো নেই। 

কণ্ঠশিল্পী বাদশা বুলবুল দায়ী করেন সমন্বয়হীনতাকে। তিনি মনে করেন, যে কোনো কিছুতে সমন্বয়ের ঘটতি থাকলে প্রত্যাশিত ফলাফল পাওয়া যায় না। গানের ক্ষেত্রে এটি আরো বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। একটা সময় ছিল, যখন একটি গান করতে হলে গীতিকার সুরকার ও সংগীতশিল্পী একসঙ্গে বসে তাদের পছন্দ, অপছন্দ ও ভাবের আদান-প্রদান করাতে একটি সমন্বয় থাকত। যার ফলে গানগুলো নিজস্ব রঙে রঙিন হতো। আজকাল সেটি খুব চোখে পড়ে না। একটি গান করার সময় দেখা যাচ্ছে কণ্ঠশিল্পীকে ট্র্যাক পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। সে তার ভয়েস পাঠিয়ে দিচ্ছে। এভাবে আসলে গান হয় না। কেননা এতে বিভিন্ন অসংগতি থেকে যায়।

তিনি আরো বলেন, তাছাড়া অতীতে রেডিও টেলিভিশন ছাড়া গান শোনার কোনো মাধ্যম ছিল না। আর এ কারণে বাধ্য হয়েই অনেককে শুনতে না চাওয়া গানও শুনতে হতো । তবে এখন তা সম্ভব না। এখন গান শোনার বিভিন্ন মাধ্যম রয়েছে। ফলে শ্রোতারা যে যার পছন্দসই গানটি শুনছেন। সে কারণে শুধু দেশের গান না, সব গানেই এর প্রভাব পড়ছে বলে তিনি মনে করেন।

নতুন প্রজন্মের সংগীতশিল্পী সিজে রেসি। দেশের গানের আকালের পেছনে তিনটি কারণ রয়েছে বলে মনে করেন। প্রথমত তিনি মনে করেন একটি গানের জন্য উপযুক্ত সংগীতায়োজনের এখন অভাব রয়েছে। যা শ্রোতাদের মনের খোরাক মেটাতে পারছে না। দ্বিতীয় কারণ হিসেবে তিনি দায়ী করেন গানের কথাকে। তার মতে, ভালো কথা ও উপযুক্ত শব্দচয়নের অভাবেই দেশের গানগুলো শ্রোতাদের আকৃষ্ট করতে অক্ষম হচ্ছে। তৃতীয় কারণ হিসেবে তিনি দায়ী করেন দেশপ্রেমের ঘাটতিকে। 

পাশাপাশি বিশ্বায়নের এই সময়ে শ্রোতাদের রুচির পরিবর্তনকেও তিনি দায়ি করেন এর জন্য। তার মতে, এখন অধিকাংশ শ্রোতারাই আইটেম গানের দিকে ঝুঁকেছেন। ফলে কথা ও সুরের চেয়ে গানের মধ্যে থাকা উত্তেজক ভাবটিই তাদের কাছে মুখ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে তারা দেশের গানেও আইটেম গানের প্রভাব চাচ্ছে। যা না পেয়ে দেশেত্মবোধক গান শোনা থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন তারা।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫