Logo
×

Follow Us

বিনোদন

প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠেই দুঃসংবাদ পাই : শর্মিলী আহমেদ

Icon

মাহমুদ সালেহীন খান

প্রকাশ: ১৫ জুন ২০২১, ১০:৫৬

প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠেই দুঃসংবাদ পাই : শর্মিলী আহমেদ

শর্মিলী আহমেদ

গুণী অভিনেত্রী শর্মিলী আহমেদ। ছয় দশক ধরে টানা অভিনয় করছেন। বিরামহীন পথচলা তার। ছিলেন ষাটের দশকের অন্যতম নায়িকা। তখন থেকে নিরন্তর অভিনয় করে চলেছেন। বয়সকে তুড়ি মেরে প্রায় পাঁচ দশক ধরে বিরতিহীন অভিনয় করে চলছেন।

তিনি কথা বলেছেন সাম্প্রতিক  দেশকালের সাথে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মাহমুদ সালেহীন খান...

করোনার সময়ে কেমন আছেন আপনি?

বয়সের ভারে কখনো বসে থাকিনি ঘরে, অথচ এখন চার দেয়ালে বসিয়ে রেখেছে করোনা পরিস্থিতি। আমি আপাতত তেমন কাজ করছি না। বাসাতেই সময় কাটে। গত ১০০ বছরে এ রকম অবস্থা দেখেনি কেউ। যুদ্ধের সময়টাও এখনকার সময়ের চেয়ে ভিন্ন ছিল। এ কিসের মধ্যে পড়লাম বুঝতে পারছি না। সব দুর্যোগেই অভিনয় করেছি। বন্যা, হরতাল, বাজে আবহাওয়া, কোনো কিছুতেই অভিনয়ে ছেদ পড়েনি। কিন্তু গত দেড় বছর ধরে পরিস্থিতি ভিন্ন। ঈদের অনেক নাটকের প্রস্তাব এসেছিল; বাদ দিয়েছি। কারণ এই বয়সে রিস্ক নেয়া ঠিক না। আর এ অবস্থায় শুটিং কোনোভাবেই সম্ভব না। এখন আমি ঘরে থাকি বেশি সময়। সত্যি বলতে কিছুই ভালো লাগে না। ঘরেই সময় কাটছে। পরিচিতজনরা চলে যাচ্ছেন, তাই মনটা খারাপ থাকে। প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠেই একটা করে দুঃসংবাদ পাই। ভীষণ খারাপ লাগে। 

অভিনয়ের শুরু কীভাবে? 

আমি যখন কাজ করা শুরু করি, তখন তো অভিনয়ের এতো সুযোগ-সুবিধা ছিলো না। আমার বাবা মোহাম্মদ তোফাজ্জল হোসেন মল্লিক বছরে দুতিনটি নাটক নামাতেন। তিনি উত্তরবঙ্গের নামকরা নাট্যাভিনেতা, নাট্যশিক্ষক, নাট্য পরিচালক ছিলেন। সেই সময়ই তাদের নাটকের দল ছিল ‘ঘোড়ামারা ড্রামাটিক ক্লাব।’ রাজশাহীর অলকা সিনেমা হলে দু-তিন দিন সিনেমা চালানো বন্ধ রেখে সে মঞ্চে খুব জাঁকজমক করে নাটক করতেন। আমাদের বৈঠকখানায় সেই নাটকের রিহার্সাল হতো। বিকেল থেকে তাঁরা মহড়া শুরু করতেন। বাইরে  খেলে এসে রিহার্সালের আওয়াজ পেলেই ঢুকে এককোণে চুপচাপ বসে মহড়া দেখতাম, খুব ভালো লাগত।

প্রথম মঞ্চে উঠলেন কত বছর বয়সে ?

চার বছর। তখনো রাজশাহীতে কোনো মেয়ে অভিনয় শুরু করেনি। ছেলেরাই মেয়ে সাজত। মেয়ে শিশুশিল্পী কোথায় পাবে? বাবার বন্ধুরা বললেন,‘ওই তো লিলি, ও করুক।’ আব্বা বললেন, ‘ও কি পারবে? এত ছোট?’ মঞ্চাভিনয় কী, কিভাবে করতে হয়, কোনো কিছু না বুঝে খুশির চোটে বলে দিলাম ‘পারব’। এরপর দৃশ্যটি আব্বা বোঝালেন, ‘তিন ভাই-বোনের তুমি সবার ছোট। মা-বাবার এত অভাব যে ঠিকমতো খেতে দিতে পারে না। খেতে চাইলে মা খুব রাগ করে, ‘একবেলা খেয়ে থাকতে হবে।’ ক্ষুধায় চিৎকার করছ। ‘এত খাওয়া, খাওয়া করলে কোত্থেকে খাওয়া দেব’ বলে সে তোমাকে থাপ্পড় দেবে। আর তুমি ভ্যাঁ করে কেঁদে দেবে। সঙ্গে সঙ্গে কোল থেকে নামিয়ে দেবে। ভয় নেই, ডায়ালগ বলতে হবে না।’ এই হলো অভিনয়। তবে মঞ্চে থাপ্পড় খেয়ে, এত মানুষের চিৎকার দেখে সত্যি সত্যি কেঁদে দিয়েছিলাম। দর্শকরা খুব হাততালি দিচ্ছিল। মঞ্চে অভিনয় করলে মানুষ হাততালি দেয়! তখন থেকেই নেশা হয়ে গেল, অভিনয় করব।

শর্মিলী আহমেদ নামটি কিভাবে হলো?

রেডিওতে মাজেদা মল্লিক নামেই অভিনয় করতাম। এটিই আমার আসল নাম। তখন সিনেমাতে সব নায়িকার নাম ‘এস’ দিয়ে হতো।  যেমন শাবানা, শবনম ইত্যাদি। ফলে আমার নামও তেমনটি রাখার কথা ভাবলেন ‘ঠিকানা’র পরিচালক বজলুর রহমান। আমি ডাকনাম মিলিয়ে লিলি মল্লিক রাখার কথা বললাম। তবে ছবিটির প্রধান সহকারী পরিচালক ও চিত্রনাট্যকার আমজাদ হোসেন অনেকগুলো নাম লিখে বললেন,‘ কোন নামটি আপনার পছন্দ?’ আমি শর্মিলী বেছে নিলাম। বিয়ের পর থেকে আমার নামের সঙ্গে স্বামীর নাম মিলিয়ে ‘শর্মিলী আহমেদ’ নামে অভিনয় করছি।

যখন অবসরের সময় তখনো আপনি অভিনয়ের সংগে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছেন?

যদিও নাটক এখন আমার পেশা, কিন্তু নাটক আমার নেশা, আমার ভালোবাসা। নাটক ছাড়া আমি আমার অস্তিত্বই কল্পনা করতে পারি না। বয়স হয়ে গেছে, মাঝেমধ্যেই শরীর অসুস্থ থাকে। চার-পাঁচ দিন বাসায় থাকতে হয়। তখন অস্থির লাগে সহশিল্পীদের দেখছি না, কথা বলতে পারছি না, অভিনয় করতে পারছি না। আবার সেই পরিবেশে গেলে সুস্থ বোধ করি। জানি না ভালো অভিনেত্রী কি না, দর্শক ভালো জানেন; কিন্তু ভালোবেসে, অন্তর দিয়ে আমি অভিনয়ের  চেষ্টা করি। যখন নায়িকা ছিলাম, তখন বোরকা পরিনি, সবার সঙ্গে মিশতাম। এখনো শপিং করি, বাইরে যাই, অচেনা মানুষ রাস্তা পার হচ্ছেন, বলেন, আসসালামু আলাইকুম, ভালো আছেন? শরীরটা ভালো? জ্যামে গাড়ি থামলে ড্রাইভার বলেন, আন্টি, ভালো আছেন?  মোটরসাইকেল আরোহী ভদ্রলোকও সালাম দেন। আমি জীবনে অনেক সামাজিক, বিভিন্ন সংগঠন, বাচসাস পুরস্কার পেয়েছি; কিন্তু জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাইনি। অনেকে বলেন, কেন একুশে পদক পাওনি? তোমার পাওয়া উচিত ছিল। আমি মনে করি না, উচিত ছিল। হয়তো আমি একুশে পদক পাওয়ার যোগ্য নই, সে কারণে পাইনি। এ নিয়ে আমার কোনো আক্ষেপই  নেই। মানুষের ভালোবাসাই আমার কাছে সবচেয়ে বড় পুরস্কার। 

অভিনয় জীবনে কোনো অতৃপ্তী আছে কিনা?

দীর্ঘ ক্যারিয়ারে একটি অতৃপ্তি আছে আমার। পছন্দের ভালো চরিত্রে এখনো অভিনয় করা হয়ে ওঠেনি। আরও অনেক বৈচিত্র্যময় চরিত্রে অভিনয় করতে পারতাম। অভিনয় নিয়ে একটা অতৃপ্তি আছে। 

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫