
নাজিয়া হক অর্ষা
নাজিয়া হক অর্ষা, ছোটপর্দায় নিয়মিত কাজ করছেন। সম্প্রতি বড়পর্দায় সরব হয়েছেন। যুক্ত হয়েছেন কয়েকটি ভিন্নধর্মী ছবির সঙ্গে। নিজের ক্যারিয়ার ও সমসাময়িক বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মোহাম্মদ তারেক।
আপনাকে নাটকে কম দেখা যাচ্ছে কেন?
আমি সমসাময়িক অনেকের মতো মাসের ত্রিশ দিনই শুটিং করি না। বেছে বেছে কাজ করি। শুধু নাটকের গল্প নিয়ে নয়, আমাকে চরিত্রের প্রতি অনেক যত্নবান হতে হয়। পাশাপাশি যে চরিত্রে অভিনয় করছি তার সঙ্গে কী পোশাক হবে, চরিত্রটি দেখতে কেমন হবে, এসব নিয়ে কাজ করতে হয়। তাই আমি খুব কম নাটকে অভিনয় করছি। সংখ্যার চেয়ে ভালো কাজের প্রতি এখন আমার লক্ষ্য বেশি। আর একটা কারণ হচ্ছে, নিয়মিত হবার ইচ্ছে আছে।
তাহলে সিনেমায় আবার নিয়মিত হচ্ছেন?
হ্যাঁ, দীর্ঘদিন বিরতির পর সিনেমায় নতুন করে ভাবছি। সিনেমায় নিয়মিত হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সিনেমা মানেই বড় ক্যানভাস, বড় আয়োজন। এখন মনে হচ্ছে চিন্তার জগৎটা আরও বড় করার সময় এসে গেছে। সিনেমায় কাজ করার জন্য এখন নিজেকে প্রস্তুত ও ফিট মনে হচ্ছে। তাই বড় পর্দাতেই মনোযোগটা দিতে চাচ্ছি। আরও কিছু সিনেমার কথা চলছে। সেগুলো করব আশা করি। তবে গড়পরতা নয়, গল্পনির্ভর ও মানসম্মত সিনেমায় কাজ করতে চাই।
কী কী ছবিতে কাজ করছেন এখন?
সাজ্জাদ খানের ‘সাহস’ ছবির কাজ শেষ হয়েছে। ছবিটি মুক্তির প্রক্রিয়া চলছে। এর আগে নূর ইমরান মিঠুর ‘পাতালঘর’ ছবির কাজ করেছি। হৃদি হকের ‘১৯৭১ এর সেই সব দিন’ ছবির কাজ চলছে।
ওয়েব প্ল্যাটফর্মে নাটক-সিনেমা মুক্তি পাচ্ছে, এ প্রসঙ্গে আপনার অভিমত কী?
আমি এটিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছি। নাটক-সিনেমা সবকিছুই এখন ওয়েবমুখী। এটা ভালো দিক। কারণ মানুষ এখন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে সিনেমা-নাটক দেখতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। তাই এসব প্ল্যাটফর্ম এর সংখ্যা যেমন বাড়া উচিত, তেমনি ভালো মানের কাজের সংখ্যাটাও বাড়ানো উচিত।
ওটিটি প্ল্যাটফর্মে আপনিও কয়েকটি কাজ করেছেন। এ মাধ্যমটি নিয়ে কী বলবেন?
বিদেশি ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলোর দর্শক তৈরি হয়েছে; কিন্তু বাংলাদেশের যে ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলো আছে আমার মনে হয় মিডিয়ার বাইরে খুব অল্পসংখ্যক মানুষ সেগুলো দেখছে। বাংলাদেশের ওটিটি প্ল্যাটফর্মের দর্শক সে অর্থে তৈরি হয়নি। তবে অভ্যাস তৈরি হচ্ছে। তারা বিভিন্ন রেটিংয়ের কনটেন্ট দেখছেন। তবে বাংলাদেশের দর্শক এখনো দেশীয় ওটিটির জন্য প্রস্তুত বলে মনে হয় না। যদিও ওটিটির কারণে সিরিজের মজা ফিরে এসেছে। বাজেট, মার্কেটিং এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা আরও উদার হলে ভালো কিছু কনটেন্ট চলে আসতে পারে।
‘সাহস’ ছবিতে কাজের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
এ ছবির গল্প শুনে মনে হয়েছে কাজটি আমার করা উচিত। এ ছবি দেখে একজন দর্শকও যদি মনে করেন মেয়েদের নির্যাতন করা অপরাধ, তাদের সম্মানের জায়গায় রাখতে হবে; তাহলেই আমাদের কষ্ট সার্থক। টিমটি বয়সে তরুণ হলেও তাদের কাজের উদ্দীপনা আমাকে মুগ্ধ করেছে।
ছোট ও বড়পর্দা দুই মাধ্যমেই কাজ করছেন। কী পার্থক্য চোখে পড়ল?
দুই মাধ্যমের মজা দুই রকম। দুটি মাধ্যমেই কাজের সুযোগ আসছে। আগের চেয়ে জেনে বুঝে কাজ করছি। প্রস্তাব পেলেই রাজি হচ্ছি না। সময় নিয়ে স্ক্রিপ্ট পড়ছি। তারপর সিদ্ধান্ত নিচ্ছি। এভাবেই কাজ করছি। গল্পনির্ভর ও মানসম্মত কাজে যুক্ত হয়ে দর্শকের মনে জায়গা নেওয়াটাই এখন অন্যতম লক্ষ্য।
করোনাকালে নাটক নির্মাণে কী পরিবর্তন চোখে পড়ল?
পরিবেশের চেয়েও মানসিক অবস্থাটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। শুরুতে সব হাউসেই স্যানিটাইজেশন মানা হচ্ছিল। আমরা নিজেরাই নিজেদের জিনিসপত্র নিয়ে যাচ্ছি। অতিরিক্ত গরমে অনেকেই মাস্ক পরে থাকতে পারে না। এসবের দিকে মনোযোগ দিতে গিয়ে অভিনয়ের প্রস্তুতিটাই হচ্ছে না। নিজের কাজ নিজে করতে গিয়ে ওখানে সংসার করা হচ্ছে, শুটিং না। আমার কাছে ব্যাপারটি আরামদায়ক লাগেনি। কম কাজ করার এটা আরেকটি কারণ। তা ছাড়া আম্মুর শরীর খারাপ হয়ে গেল। ইউনিটের এতজন মানুষের পক্ষে সব স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ করা সম্ভব না। একটা কাজ করলে তাই এখন পাঁচ-সাত দিন বিরতি দিচ্ছি। নিজের মধ্যে কোনো উপসর্গ আছে কিনা দেখছি। আসলে সবমিলিয়ে পরিবেশ পরিস্থিতি একইরকম।
গল্পের ডাইমেনশান কমে গেছে। ইনডোরে কাজ হচ্ছে। শুটিং হাউসের সবকিছুই দর্শকের মুখস্ত। ঘুরে ফিরে বাড়িগুলোই বদল হচ্ছে। কোনো বৈচিত্র্য আনতে পারছি না আমরা। চার দেয়ালের মধ্যে গল্প বন্দি হয়ে গেছে। আউটডোরে ভিড় এড়িয়ে কাজ করা যাচ্ছে না। আগে ত্রিশ জন কাজ করত। এখন লোকবল কমে গেছে। যারা করতে পারছে না তারা সংকটে পড়েছে। বাজেট আরও কমে গেছে। আমরা অনেকটা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে গেছি। অভিনয় করতে গিয়ে অভিনয়ের চেয়ে স্যানিটাইজেশনের দিকে নজর দিতে হচ্ছে। অভিনয়টা আর হচ্ছে না। সবকিছু মিলিয়ে ভীষণ প্রভাব পড়েছে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় কনটেন্টের ভিউ নিয়ে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি কী?
টিআরপি, ভিউ, রেটিং শব্দগুলোর মধ্যে ফাঁকফোঁকর আছে। চাইলেই এগুলো নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তাই আমি বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিয়ে দেখি না।
মাঝে মাঝেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিডিয়ার বিভিন্ন কাজ নিয়ে সমালোচনামুখর হতে দেখা যায়। বিষয়টি নিয়ে কী বলবেন?
ফেসবুকের কিছু গ্রুপ আর আমাদের মিডিয়ার মানুষজন আলোচনা করছে জীবনঘনিষ্ঠ কাজ নিয়ে; কিন্তু আপনি কোনো অজ পাড়াগাঁয়ে জিজ্ঞেস করুন কাউকে সে এসব কাজ দেখেছে কিনা। জানবেন, দেখেনি। তারা সেই কাজগুলোই দেখে, যেসব তাদের কাছে সহজ। আমরা সংস্কৃতি তৈরিই করিনি যে ওখানে আহমদ ছফা সম্বন্ধে জানবে কোনো বাচ্চা; কিন্তু আপনি পার্শ্ববর্তী দেশের কোনো গ্রামে গেলে দেখবেন সেখানকার বাচ্চারা সত্যজিৎ রায়, হৃত্বিক ঘটক, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় সম্বন্ধে জানে। আবার বর্তমান যুগের খ্যাতিমান মানুষদের সম্পর্কেও জানে। অথচ আমাদের গ্রামের অনেক মানুষ দেখবেন, তারা আমাদের না চিনলেও নীল ছবির তারকাকে চেনে। রুচির বিকৃতি এখানেই। তাই এসব নিয়ে আলোচনা মূল্যহীন।
এ সময় সাইবার বুলিংয়ের শিকার হচ্ছে অনেকে ...
সাইবার বুলিং সবসময় ছিল। মানুষের অন্ধকার দিকটাই সামনে আসে। আমরা সারা দিনের রাগ ক্ষোভ কোথায় উগড়ে দেই? এমন একটা জায়গায় যেখানে কেউ সহজে আমাকে পাবে না। দেখা গেল একজন লোক বৌয়ের সঙ্গে রাগ করে কোনো সেলিব্রেটিকে গালি দিয়ে বসল। মানুষ সেলিব্রেটিকে ব্যক্তিগত সম্পত্তি মনে করে। এটি জটিল একটি ব্যাপার। মার্জিন লাইন আর নেই। সেলিব্রেটিকে গালি দেওয়া সহজ। একজনের দেখাদেখি আরও দশজন দিচ্ছে। এতে সেলিব্রেটির কিছু যায় আসে না। আমরা কিন্তু বক্তব্যগুলোকে গুরুত্ব দিচ্ছি। কেন দেব? আমরা তাকে চিনি? এদের এত গুরুত্ব দেওয়ার কিছু নেই। আগেও এসব ছিল। বরং আমাদের কাজের ব্যস্ততার জন্য এসব চোখে পড়ত না। এখন সারাক্ষণ মোবাইল ফোন সঙ্গে থাকায় সাইবার বুলিং চোখে পড়ছে। কাল থেকে ব্যস্ততা বাড়লে মনে হবে এসব কমে গেছে। গত ত্রিশ-চল্লিশ বছর ধরে আস্তে আস্তে এমনটি হয়েছে। এই প্রজন্মকে কোনো আন্দোলন করে, নিয়ম দিয়ে আটকে রাখা যাবে না। তবে এর প্রতিবাদ করতে থাকলে আরও বেশ কিছু বছর পর হয়তো বন্ধ হবে।
ক্যারিয়ারের প্রায় দশ বছর পেরিয়েছেন। আপনার চোখে নিজের কী পরিবর্তন ধরা পড়েছে?
অবশ্যই পরিবর্তন এসেছে। এখন আগের চেয়ে বেশি মানুষ চিনছে আমাকে। বেসিক পরিবর্তন তো বোঝাই যায়। আমি কখনোই লক্ষ্য নিয়ে এগোইনি। আমি মুহূর্তে বিশ্বাসী। বড় চিন্তা করে কাজ করি না। প্রতিটি মুহূর্ত, প্রতিটি দিন উদযাপনে বিশ্বাসী একজন মানুষ। এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর কী দেব আমি জানি না। তবে এই দশ বছরে অনেক ধৈর্য্যবান হওয়ার চেষ্টা করেছি। যে ব্যাপারগুলো আমার কাছে যুক্তিহীন মনে হয় সেগুলো মুখের ওপর বলতে শিখেছি। সত্য সরাসরি বলে দেওয়াই উচিত।
এ সময়ে এসে কেমন গল্পে কাজ করতে পছন্দ করছেন?
গল্প তো সময়ের ওপর নির্ভর করে না। প্রতিটি মানুষের পছন্দের কিছু চরিত্র থাকে। কমফোর্ট জোন থাকে। যে গল্পগুলো জীবনবোধের ও বাস্তবতা তুলে ধরে, তেমন গল্পে কাজ করতে আরাম লেগেছে। আমি ফ্যান্টাসিতে বিশ্বাস করি না। সারাবিশ্বের সঙ্গে তুলনা করলে বাংলাদেশের ফ্যান্টাসি আসলে ফ্যান্টাসি হয় না। সে কারণে জীবনমুখী গল্পে কাজ করতে পছন্দ করি।
এখন আমাদের তিনটি প্ল্যাটফর্ম। সিনেমা, টেলিভিশন ও ওয়েব। আপনি তিনটি প্ল্যাটফর্মে কাজ করেছেন। কী অভিজ্ঞতা হলো?
তিনটি প্ল্যাটফর্মেরই প্রজেকশন আলাদা। সিনেমার প্রজেকশন অনেক বিশদ। অভিনয়ের জন্য প্রস্তুতি নিতে হয়। নিখুঁতভাবে অভিনয় করতে হয়। ওটিটির ক্ষেত্রে ক্লাস রেটিং আছে। পছন্দমতো কনটেন্ট বেছে নিয়ে দেখতে পারেন। কোনো জটিলতা নেই। গল্প বলার স্বাধীনতা আছে। টেলিভিশন সাধারণ দর্শকের জন্য। আমাদের অনেককিছু বুঝে কাজ করতে হয়। বাজেট স্বল্পতার জন্য সবকিছু করতে পারি না। পারফরম্যান্সও তাই আলাদা হয় তিনটি প্ল্যাটফর্মে।
দর্শকের সমালোচনাকে কীভাবে দেখেন? কাজের ক্ষেত্রে কোনো প্রভাব ফেলে?
সমালোচনাকে সবারই আমলে নেওয়া প্রয়োজন। আমিও নেই। আপনি কাজ করছেন মানুষের জন্য, গাছপালার জন্য তো নয়। মানুষ সমালোচনা করবেই। আপনি কোন পয়েন্ট পিক করবেন তা নিজের বিবেক ও বোধশক্তির ওপর নির্ভরশীল। অনেক সমালোচনা ইতিবাচক থাকে। হয়তো প্রথমে নেতিবাচক মনে হলেও পরের সেকেন্ডে মনে হয় সমালোচনা ঠিক আছে। হয়তো আমার হাসিটা ঠিক ছিল না, বিভিন্ন দৃশ্যে একইরকম অভিনয় হয়ে যাচ্ছে। কিছু কিছু কমেন্ট থেকে আসলে আমি শিখি। বাংলাদেশে আউটডোরে শুটিং করা সবসময় সহজ হয় না। অনেক মানুষ থাকে। মনোযোগ দিয়ে কাজ করা কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। নির্মাতাও ভুল ধরিয়ে দিতে পারে না। এখনকার দর্শক অনেক স্মার্ট। তারা ছোট ছোট বিষয়গুলো তুলে ধরে। তাই আমি চেষ্টা করি সে ভুল শুধরে নেওয়ার। সমালোচনা অনেক বড় একটি উপদেশ। তা নেওয়া উচিত।
নির্দিষ্ট কোনো শিল্পী নন, প্রায় সবার সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করেন। বিষয়টি নিয়ে কী বলবেন?
আমি যদি একজনের সঙ্গে কাজ করি তাহলে অন্যজনের কাছে শিখতে পারব না। আমি ঘুরে ঘুরে কাজ করতে পছন্দ করি। তবে যদি কোনো জুটি দাঁড়িয়ে যায় তাহলে সে জুটিকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। তা ছাড়া একেক সময়ে দর্শক একেক জুটিকে পছন্দ করে। টেলিভিশন ও সিনেমার দিকে তাকালে তাই দেখা যায়। নির্মাতারা একই মুখ নিয়ে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। তারা চরিত্র অনুযায়ী শিল্পী বাছাই করতে পারেন না। তাই দর্শকও বৈচিত্র্য খুঁজে পায় না।
আপনাকে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রায়ই নিজের তোলা ছবি পোস্ট করতে দেখা যায় ...
আমি একদমই প্রফেশনাল না। আমার হাতে ফোন থাকে। যে কোনো জায়গায় গেলে ছবি তুলতে ভালো লাগে। আমার মনে হয় এটা আমার শখের অংশ। বিভিন্ন মুহূর্তের ছবি তুলতে পছন্দ করি। এর মাধ্যমে আমার ভিশনের পরিবর্তন হয়। অন্যদের চেয়ে আমার পয়েন্ট অব ভিউ আলাদা তা বোঝানো সহজ হয়। মেমরি হিসেবে থাকে। দেখা যায় দুই তিন বছর পর জায়গাগুলো বদলে যায়। হয়তো কনস্ট্রাকশনের জন্য ভেঙে ফেলছে। আসলে ফটোগ্রাফি আমাকে আনন্দ দেয়।
আপনার ছেলেবেলার কথা কিছু বলুন।
আমার জন্ম ২১ মে, ঢাকাতেই। বাবা এনামুল হক ও মা মাসুদা হক। ছোটবেলায় বানান না করে বই পড়তে পারতাম না। একবার টিউশনি করে দুই হাজার টাকা আয় করি। তখন সম্ভবত ক্লাস এইট বা সেভেনে পড়ি। তিনজন স্টুডেন্ট ছিল। সে টাকা দিয়ে বাবার জন্য উপহার কিনি। বাকি টাকা মাকে দেই। ক্লাস এইটে থাকতে একবার প্রেমেও পড়েছিলাম। ছেলেটা আমার এক বছরের সিনিয়র ছিল। আমাকে পাত্তা দিত না। তাই প্রেমটাও আর হয়নি। এরপর হোম ইকোনমিকস কলেজ থেকে পড়াশোনা শেষ করেছি।
মিডিয়ায় আপনার যাত্রা শুরু হয় কীভাবে?
মিডিয়াতে আমার যাত্রা শুরু আফজাল হোসেনের হাত ধরে। তার একটি বিজ্ঞাপনে কাজ করি ২০০৮ সালে। এরপর ২০০৯ সালে লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টারের মাধ্যমে মিডিয়ায় আসা। পরের বছর প্রথম নাটক করি। শাহেদ শরীফ খান ও ডলি জহুর অভিনয় করেছিলেন। নাম ‘দ্বন্দ্ব’। পরিচালনা করেন রাফী ভাইয়া। চ্যানেল আইতে নাটকটি প্রচার হয়। শুরুতে ক্যামেরার ভাষা বুঝতে আমার খুব কষ্ট হয়েছিল। টেকনিক্যাল বিষয়ে একেবারে অদক্ষ ছিলাম। এ বিষয়ে মা (ডলি জহুর) আমাকে সাহায্য করেছিলেন। আমি মনে মনে ভাবছিলাম, কবে আমি তাদের মতো অভিনয় করতে পারব। এ ছাড়া সমাজ-সচেতনতামূলক একটি বিজ্ঞাপনের মডেল হয়েছিলাম। বিজ্ঞাপনের ট্যাগ লাইন ছিল ‘নেশাকে না বলা’।
অবসর সময় কীভাবে কাটে?
পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটাতে ভালোবাসি। ছবি আঁকি। ভ্যানগগের কাজ আমাকে খুব টানে। সময় পেলে ছবি তুলি।
আমাদের এখনকার মিডিয়ায় সবচেয়ে ভালো এবং মন্দ দিক কী বলে আপনি মনে করেন।
এখন ভালো কাজ হচ্ছে। ওয়েব প্ল্যাটফর্মে স্বাধীনভাবে কাজের সুযোগ এসেছে। তরুণ নির্মাতারা ভিন্নধর্মী কাজ করার চেষ্টা করছেন, এগুলো ভালো দিক।
অন্যদিকে নাটকের বাজেট কমছে। একই ধরনের কাজ হচ্ছে। দর্শক নতুন মুখ দেখতে চাইলেও নতুনদের নিয়ে পর্যাপ্ত কাজ করা হচ্ছে না। কিংবা বলা চলে নির্মাতারা ভিন্নভাবে নির্মাণ করতে পারেন না- এগুলোকেই মন্দ দিক বলা যেতে পারে।
আমাদের মিডিয়ায় এমন কিছু কি আছে, যা আপনি বদলে দিতে চান?
আমি একা চাইলেই তো আর কিছু বদলাতে পারব না। আমাদের রুচিবোধের পরিবর্তন জরুরি। আর তার পরিবর্তন করতে হলে দেশ-বিদেশের খ্যাতিমান নির্মাতাদের কাজ দেখতে হবে। পড়তে হবে রুচিশীল উপন্যাস। দর্শকের রুচির পরিবর্তন হলে যারা সিনেমা বা নাটক নির্মাণ করেন তাদের রুচিও বদলাবে। একদিন দু’দিনে হয়তো তা হবে না। সময় লাগবে।