
বিপাশা বসু
আজ যার কথা বলব, তার গায়ের রঙ দুধে-আলতা বা চাপা ফুলের মতো না। তিনি একজন কৃষ্ণকলি। আর নিজের এই কালো বর্ণের সৌরভ দিয়েই তিনি অসংখ্য দুধে-আলতা রঙের অপ্সরাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে জয় করে নিয়েছেন গোটা বলিউড। তিনি বিপাশা বসু।
বলিউডের সবচেয়ে আবেদনময়ী নারী হিসেবে যার রয়েছে সর্বত্র খ্যাতি। তাকে নিয়ে বলতে গেলে বলতে হবে, উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ চলচ্চিত্র প্রতিষ্ঠান বলিউডে যে ক’জন বাঙালি নারী দাপটের সঙ্গে রাজত্ব করেছেন, তিনি তাদের মধ্যে অন্যতম একজন। পাশাপাশি শ্যামা সুন্দরী হিসেবে খ্যাতি তো রয়েছেই।
১৯৭৯ সালে এই কৃষ্ণকলি নয়াদিল্লিতে এক বাঙালি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তবে জন্ম নয়াদিল্লিতে হলেও তার জন্মের পর বাবা মা কলকাতায় পাড়ি জমানোয় বিপাশা বেড়ে ওঠেন কলকাতাতেই। দুই বোনের মধ্যে ছোট বিপাশা। ছোটবেলায় একজন চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন দেখলেও মডেলিংয়ের নেশায় তা আর হয়ে ওঠেনি। মাত্র ১৬ বছর বয়সে ছাত্রী অবস্থাতেই অল্প অল্প র্যাম্পে হাঁটাহাঁটি শুরু করেন। পরবর্তীতে সুপার মডেল প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হওয়াতে তার সামনে হাতছানি দিতে থাকে রঙিন দুনিয়ার এক বিশাল সুযোগ। আর তা হলো সুপার মডেল প্রতিযোগিতায় জয়লাভের ফলে নিউইয়র্কে আমন্ত্রণ।
নিউইয়র্কে পাড়ি জমানোর পর বিপাশা লক্ষ্য করেন যে কালো বর্ণের কারণে ছোটবেলায় পড়শী আত্মীয়স্বজনের কাছে কটু কথা শুনতে হতো তাকে, বিদেশের মাটিতে সেই কৃষ্ণবর্ণের কারণেই তিনি পাচ্ছেন অধিক গুরুত্ব। তবে তখনো বলিউড নিয়ে তেমন একটা মাথাব্যথা ছিল না তার; কিন্তু তার ভাবনায় বলিউড না থাকলেও যে কি-না একসময় হয়ে উঠবেন বলিউড সাম্রাজ্যের এক অপ্রতিরোধ্য শ্যামা সম্রাজ্ঞী, তাকে কি আর বলিউড না ভেবে পারে। বিপাশার ক্ষেত্রেও যেন তাই হয়!
নিউইয়র্ক থেকে দেশে ফেরার পরপরই তাকে ডেকে পাঠান বলিউডের বিখ্যাত নির্মাতা আব্বাস মুস্তানি। আব্বাস মুস্তানি তখন একটি নতুন ছবি নিয়ে ভাবছেন। ছবির নাম অজনবি। এই সিনেমায় অভিনয়ের জন্যই বিপাশাকে ডেকেছিলেন মুস্তানি। বিপাশাকে মুস্তানি তার চলচ্চিত্রের বিধবা নারীর চরিত্রটির জন্য বাছাই করেন। এটিই ছিল বিপাশার ক্যারিয়ারের প্রথম চলচ্চিত্র।
চলচ্চিত্রটিতে তাকে এক বিধবা নারীর চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায়, যে কিনা নিঃসঙ্গ বিধবা জীবনে স্বামীর এক বন্ধুর সঙ্গে প্রণয়ে জড়িয়ে পড়েন। নবাগতা হয়েও প্রথম চলচ্চিত্রেই এই বিধবা নারীর চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে বাজিমাত করে দেন বিপাশা। নিজের সহজ ও সুন্দর অভিনয় দিয়ে দর্শক ও সমালোচকদের মন জয় করে জিতে নেন ফ্লিমফেয়ার সেরা নবাগতা অভিনেত্রীর পুরস্কার। বিপাশা এই সাফল্য ধরে রাখেন তার পরবর্তী চলচ্চিত্রেও। চলচ্চিত্রটি ছিল নির্মাতা বিক্রম ভাটের চলচ্চিত্র ‘রাজ’। মুক্তির পরপরই দারুণভাবে ব্যবসা সফল হয় চলচ্চিত্রটি। আর বিপাশাও রাতারাতি পেয়ে যান তারকাখ্যাতি। পাশাপাশি এই চলচ্চিত্রে নিখুঁত অভিনয় গুণের কারণে তিনি প্রথমবারের মতো সেরা অভিনেত্রী ক্যাটাগরিতে ফিল্মফেয়ার পুরস্কারের জন্য মনোনীত হন। এরপর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি এই শ্যামা সুন্দরীকে।
ফলস্বরূপ পরের বছরই তিনি দর্শকদের উপহার দেন জিসম নামক আরও একটি ধুন্ধুমার ব্যবসাসফল চলচ্চিত্র। জিসমে তিনি অভিনয় করেন জন আব্রাহামের বিপরীতে। নিজের অভিনয় দক্ষতা ও নজরকাড়া আবেদনময়ী সৌন্দর্য ও দেহ সৌষ্ঠবের সুরভী ছড়িয়ে এভাবেই একের পর এক চলচ্চিত্রে অভিনয় করে দর্শক শ্রোতাদের মন জয়ের পাশাপাশি প্রশংসা অর্জন করতে থাকেন চলচ্চিত্র বোদ্ধাদের।
বিপাশা বসু অভিনীত চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র হলো জিসম, রেস, নো এন্ট্রি, ধুম প্রভৃতি। চলচ্চিত্রগুলোতে বিপাশা বসু অক্ষয় কুমার, সাইফ আলি খান, ববি দেওল, জন আব্রাহামের মতো নামিদামি তারকাদের সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করলেও তাদের খ্যাতি ও অভিনয় দক্ষতার দাপটে মিইয়ে না গিয়ে বরং নিজের তুখোড় অভিনয় জাদু দ্বারা সমানতালে জ্বলে উঠেছেন পাশাপাশি। আর সেই আলোতে বলিউডকে আলোকিত করে নিজের আসন করেছেন মজবুত ও দীর্ঘস্থায়ী। আর এভাবেই সবার অবহেলিত এক সামান্য ‘কালো মেয়ে’ থেকে হয়ে উঠেছেন বলিউডের কৃষ্ণকলি।