Logo
×

Follow Us

বিনোদন

অভিনয় ও সৌন্দর্যের রানি মনিকা বেলুচ্চি

Icon

রাফিউজ্জামান রাফি

প্রকাশ: ১২ ডিসেম্বর ২০২১, ১২:১৭

অভিনয় ও সৌন্দর্যের রানি মনিকা বেলুচ্চি

মনিকা বেলুচ্চি

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও ফুটেজ হরহামেশাই দেখা যায় এবং বোঝা যায় প্রায় নিয়মিতই ফুটেজটি ভালোবেসে কেউ না কেউ শেয়ার দিয়ে যাচ্ছে। দৃশ্যটিতে দেখা যায় বাদামি চুলের লাস্যময়ী এক নারী সিগারেট ঠোঁটে নিতেই তার সামনে অসংখ্য পুরুষের হাত লাইটার জ্বালিয়ে প্রস্তুত। নারীটি সিগারেট জ্বালাতে তার মধ্য থেকেই বেছে নেন একটি হাতকে। হাতটি যেন ধন্য হয়।

পর্দার সেই লাস্যময়ীর নাম মনিকা বেলুচ্চি। সিনেমার সেই অজস্র হাতের মতো অসংখ্য পুরুষের হৃদয় আজও নত হয়ে প্রণাম করে তাকে। যার হৃদয় তোলপাড় করা ডাগর ডাগর চোখ দেখে মনে পড়ে যায় জেমসের গাওয়া ওই গানটি। ‘এই চোখে তাকিও না, তুমি লুটপাট হয়ে যাবে’। 


ইতালিয়ান অভিনেত্রী মনিকার চোখ দুটিও যেন ঠিক সেরকম। মুহূর্তেই লুটপাট করে দিতে পারে হাজারও হৃদয়কে। মডেলিংয়ের মাধ্যমে রুপালি পর্দায় পা রাখা চাকচিক্যময় জগতের এই নারী মনিকার বাবা ছিলেন মুসলিম আর মা ছিলেন একজন ক্যাথলিক। দুই ধর্মের এই দুটি মানুষ সামাজিক প্রথা ও ধর্মীয় প্রতিবন্ধকতাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ভালোবেসে ঘর বেঁধেছিলেন ইতালির চিট্টাদি ক্যাস্টেলো নামক ছোট্ট ও ছিমছাম একটি শহরে। 

১৯৬৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর সেখানেই জন্ম হয় মনিকার। মনিকার বাবা কাজ করতেন ক্ষেতখামারে আর মা আঁকতেন ছবি। কৃষক ও চিত্রশিল্পীর টোনাটুনির সে সংসারে অভাব-অনটন লেগেই থাকত। মনিকা মূলত পরিবারকে অভাব অনটনের হাত থেকে একটু হলেও রেহাই দিতেই পা বাড়িয়েছিলেন মডেলিংয়ে। কেননা কিশোরী মনিকা বাবা মাকে সাহায্য করতে কাজ করতেন একটি রেস্তোরাঁয়।


এসময় এক বন্ধুর মারফত জানতে পেরেছিলেন এর থেকে বেশি আয় করা যায় মডেলিংয়ে। মিডিয়া সবাইকে দেয় না। এ জগতে কেউ আসে স্বপ্ন পূরণের উদ্দেশ্যে, আর কেউ আসে শখে। কিন্তু মনিকা এসেছিলেন অর্থের প্রয়োজনে। তবে মনিকাকে এই জগৎ নিরাশ করেনি। দিয়েছিল দু’হাত ভরে। 

মনিকা যখন মডেলিং শুরু করেন তখন তার বয়স মাত্র ১৩ বছর। অতটুকু বয়সেই তার সেই অসম্ভব কমনীয় রূপ মাধুর্য কারও চোখ এড়াতে পারেনি। যার ফলে মাত্র ১৬ বছর বয়সে ইতালির সব ডাকসাইটে আলোকচিত্রীর একমাত্র পছন্দের আর্টিস্ট হয়ে পড়েন বেলুচ্চি। ফলস্বরূপ তিনি হয়ে ওঠেন পুরোদস্তুর ব্যস্ত মডেল। সে সময় তার ব্যস্ততা এতটাই বেড়ে যায় যে, কাজের চাপ সামাল দিতে গিয়ে পড়ার টেবিলকে বিদায় জানান মনিকা। নিজেকে পুরোপুরি সঁপে দেন ফ্যাশন দুনিয়ার রঙিন জগতে। 


চলে আসেন মিলানে। সেখানে ‘এলিট মডেল ম্যানেজমেন্ট’ নামে একটি মডেলিং এজেন্সিতে তিনি কাজ শুরু করেন; কিন্তু অভিনয়ের প্রতি বিশেষ দুর্বলতা ছিল মনিকার। আর সে কারণেই মডেলিংয়ের গণ্ডি ভেঙে ১৯৯০ সালে ‘ভিটা কোই ফিজলি’ নামের একটি টিভি সিরিজের মাধ্যমে অভিনয় জগতে পা রাখেন মনিকা। তবে ভবিষ্যতের বড় এই অভিনেত্রীকে ছোট পর্দা খুব বেশি দিন ধরে রাখতে পারেনি। সে বছরই বড় পর্দায় অভিষেক হয় মনিকার। ব্রিগান্তি নামের একটি চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি এ জগতে যাত্রা শুরু করেন। প্রথম সিনেমাতেই বাজিমাত করে দিয়েছিলেন মনিকা। 

দুর্দান্ত অভিনয় দিয়ে মেধাবী ও লাস্যময়ী এই নারী জানান দিয়েছিলেন শুধু ইতালি নয়, তিনি এসেছেন বিশ্ব চলচ্চিত্র দুনিয়া জয় করতে। তারই প্রমাণ পাই আমরা তার ব্রাম স্টেকার নির্মিত আমেরিকান চলচ্চিত্র ড্রাকুলার মাধ্যমে। এই চলচ্চিত্রে ড্রাকুলার স্ত্রীর চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে আমেরিকান চলচ্চিত্রে নাম লেখান মনিকা। এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি বেলুচ্চিকে। একের পর এক সিনেমায় অভিয়ের মাধ্যমে জিতে নেন তিনি দর্শক ও সিনেমা কলা-কুশলীদের মন। 


তবে মনিকার ক্যারিয়ারকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যায় এল অ্যাপার্টমেন্ট নামক একটি চলচ্চিত্র। ১৯৯৬ সালে এই চলচ্চিত্রে অভিনয়ের ফলে মনিকা যেমন প্রসংশিত হন, তেমনই জিতে নেন বেশকিছু পুরস্কার। দুর্দান্ত অভিনয় প্রতিভার অধিকারী মনিকা ভালোবাসতেন ব্যতিক্রম চরিত্রে নিজেকে মেলে ধরতে। মনিকা অভিনীত আন্ডারসাসপিশন, ম্যালেনা, ইররিভার্সিবল চলচ্চিত্রগুলো যেন সে কথাই বলে। এই সিনেমাগুলোতে বিতর্কিত চরিত্রে রূপদানের কারণে মনিকা যেমন প্রশংসিত হয়েছেন, তেমনই হয়েছেন বিতর্কিতও। 

কিন্তু অভিনয় যার নেশা তার কি আর সমালোচনায় ভয় পেলে চলে? মনিকাও তাই করেছেন। সমালোচনাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে লাস্যময়ী রূপ ও অভিনয় দক্ষতাকে সাথী করে তিনি হেঁটে গিয়েছেন নিজের মতো, দু’হাতে কুড়িয়েছেন সফলতার পালক। এমনকি পঞ্চাশের কোটায় এসেও ড্যানিয়েল ক্রেগের বিপরীতে দুনিয়া কাঁপানো জেমসবন্ড সিরিজের সিনেমায় অভিনয় করে হৈচৈ ফেলে দিয়েছেন চির তরুণী এই অভিনেত্রী। 


দেখিয়ে দিয়েছেন বয়স যাই হোক না কেন মনিকা মানেই সাফল্যের নাম, মনিকা মানেই চির যৌবনার নাম, মনিকা মানেই জ্বলে ওঠার নাম। একইভাবে সৌন্দর্য ও অভিনয়ের দ্যুতি ছড়িয়ে অভিনয় দুনিয়ায় আজও রাজত্ব করে যাচ্ছেন বহাল তবিয়তে। তার ছোঁয়ায় পর্দায় জীবন্ত হয়ে উঠছে বৈপরীত্যে ঠাসা সব চরিত্র। আর মনিকাও অভিনয় ও সৌন্দর্যের রানি হিসেবে রাজত্ব বিস্তৃত করে চলেছেন আজ অবধি।


Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫