Logo
×

Follow Us

বিনোদন

মুক্তিযুদ্ধের ওপর নির্মিত ভিনদেশি চলচ্চিত্র

Icon

রাফিউজ্জামান রাফি

প্রকাশ: ১৬ ডিসেম্বর ২০২১, ১১:০৮

মুক্তিযুদ্ধের ওপর নির্মিত ভিনদেশি চলচ্চিত্র

ছবি: সংগৃহীত

বাঙালি জাতির ইতিহাসের সবচেয়ে মহত্তম অধ্যায় হচ্ছে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ। দীর্ঘ ৯ মাসের এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমেই আমরা অর্জন করেছি স্বাধীনতা, আমাদের স্বাধিকার।

পৃথিবীর অনেক দেশের তুলনায় এই ৯ মাসের যুদ্ধ কম সময়ের হলেও, বাঙালিদের ওপর পাক হায়নাদের চালানো বর্বরতা ও নৃশংসতা হার মানায় পৃথিবীর ইতিহাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের সব বর্বরতাকে, যা নাড়া দিয়েছিল বিশ্ববাসীর বিবেককে। যা ভাবিয়েছে ভিনদেশি চলচ্চিত্র নির্মাতাদেরও। আর তাই স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে মুক্তিযুদ্ধের ওপর বাংলাদেশে নির্মিত ওরা ১১ জন, আবার তোরা মানুষ হ, হাঙ্গর নদী গ্রেনেড, আগুনের পরশমণির মতো চলচ্চিত্রের পাশাপাশি ভীনদেশের নির্মাতারাও নির্মাণ করেছেন আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ওপর চলচ্চিত্র। এমন কিছু চলচ্চিত্র নিয়েই আজকের আয়োজন-

‘যুদ্ধশিশু-চিলড্রেন অব ওয়ার’

মুক্তিযুদ্ধের ওপর ভিনদেশিদের নির্মিত চলচ্চিত্রের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- চিল্ড্রেন অব ওয়ার। ১৯৭১ সালে এদেশের নারীদের ওপর পাকিস্তানি সেনাদের চালানো জঘন্য বর্বরতা এবং যুদ্ধশিশুর ওপর নির্মিত হয়েছিল বলিউডের এই চলচ্চিত্রটি। এটি গড়ে উঠেছে মূলত তিনটি গল্পের ওপর ভিত্তি করে। যার একটিতে রয়েছে গ্রাম থেকে পালিয়ে আসা দুই ভাই বোনের গল্প, আরেকটিতে দেখা যায় একজন সাংবাদিক ও তার স্ত্রীর দাম্পত্যজীবনের টানপোড়নের গল্প এবং আরেকটি গল্প গড়ে উঠেছে মুক্তিবাহিনীর কয়েকজন গেরিলা যোদ্ধাকে নিয়ে। চলচ্চিত্রটির শিরোনাম যুদ্ধশিশুকে নিয়ে হলেও, নারীদের প্রতি পাশবিক নির্যাতনের পাশাপাশি টানা ৯ মাসের যুদ্ধের সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরে চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেছেন তরুণ নির্মাতা মৃত্যুঞ্জয় দেবব্রত। শুরুতে তিনি নাম রেখেছিলেন- দ্য বাস্টার্ড চাইল্ড; কিন্তু বলিউড সেন্সর বাস্টার্ড শব্দটি নিয়ে আপত্তি করায় মৃত্যুঞ্জয় চলচ্চিত্রটির নাম পালটে রাখেন চিলড্রেন অব ওয়ার। হিন্দি ভাষায় নির্মিত এই চলচ্চিত্রটিতে অভিনয় করেছেন- ঋদ্ধি সেন, রুচা ইনামদার, রুদ্রনীল, রাইমা সেন, পবন মালহোত্রা ও ভিক্টর ব্যানার্জী প্রমুখ। 

গয়নার বাক্স

অপর্ণা সেন নির্মিত গয়নার বাক্স চলচ্চিত্রটি একটি ভৌতিক চলচ্চিত্র হলেও, নির্মাতা এখানে ঘটনাক্রমে টেনে এনেছেন মুক্তিযুদ্ধকে। গল্পটি গড়ে উঠেছে ৪৭ সালে দেশ ভাগের সময় এপার বাংলা থেকে ওপার বাংলা পাড়ি দেওয়া এক মৃত বিধবা রাশমনির একটি গয়নার বাক্সকে ঘিরে, যা তার মৃত্যুর পর প্রথমে তার ভাইয়ের পুত্রবধূ সোমলতা এবং পরে সোমলতার মেয়ে চৈতালির হাতে গিয়ে পড়ে। চৈতালির হাতে যখন গয়নার বাক্সের কর্তৃত্ব পায়, তত দিনে এপার বাংলায় শুরু হয়ে গিয়েছে মুক্তিযুদ্ধ। সে সময় ২৫ মার্চ গণহত্যার পর বাংলাদেশ থেকে ভারতে পালিয়ে যায় অসংখ্য শরণার্থী। পাশাপাশি পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে প্রতিহত করতে শুরু হয় মুক্তিকামী বাঙালিদের নিয়ে মুক্তিবাহিনী গঠনের প্রস্তুতি। পূর্ববঙ্গের এই সংকটকালে মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তার উদ্দেশ্যে চৈতালি তার সমস্ত গয়না দান করে দেয় মুক্তিযোদ্ধাদের। টলিউডের এই চলচ্চিত্রটিতে অভিনয় করেছেন- মৌসুমি চট্টোপধ্যায়, কংকনা সেন প্রমুখ। 

গাজী অ্যাটাক

এই সিনেমাটি নির্মিত হয়েছে ১৯৭১ সালে পাক বাহিনীর একটি হারিয়ে যাওয়া সাবমেরিন নিয়ে, যার নাম ছিল সাবমেরিন পিএনএস গাজী। ১৯৭১ সালের ৪ ডিসেম্বর ভারতীয় নৌ বাহিনীর সঙ্গে পাক বাহিনীর যুদ্ধ চলাকালে জাহাজটি বঙ্গোপসাগরে ডুবে যায়। তুমুল সেই যুদ্ধে এই জাহাজটি ডুবিয়ে দিয়েছিল গাজীর চেয়ে কম শক্তিশালী ভারতীয় সাবমেরিন আইএনএস রাজপুত। পিএনএস গাজী ডুবিয়ে দেওয়ার কৃতিত্ব তুলে ধরতেই নির্মিত হয়েছিল এই চলচ্চিত্রটি। ছবিটি প্রযোজনা করেছেন বলিউড পরিচালক করন জোহরের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ধর্ম প্রোডাকশন। এতে অভিনয় করেছেন- রানা দঙ্গুবতী, অতুল কুলকার্নি, তাপসী পান্নু, কে কে মেনন প্রমুখ।

মুক্তি- বার্থ অব আ নেশন (২০১৭)

মুক্তি বার্থ অব আ নেশন মূলত মাত্র ২২ মিনিট দৈর্ঘ্যরে একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য তথ্যসমৃদ্ধ চলচ্চিত্র। সিনেমাটি নির্মিত হয়েছে একজন ভারতী লেফটেন্যান্ট জেনারেলকে নিয়ে, যিনি ১৯৭১ সালে বাঙালিদের স্বাধীনতা সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। ইহুদি ধর্মের অনুসারী সেই জেনারেলের নাম জেনারেল জে এফ জ্যাকব। বাংলাদেশ পাকিস্তানের যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে জেনারেল নিয়াজীর সঙ্গে জ্যাকবের বুদ্ধিদীপ্ত আলোচনায় এই যুদ্ধের গতিপ্রবাহ অন্যদিকে মোড় নেয়, যা বাংলাদেশের বিজয় অর্জনে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। মনু চেরে পরিচিত হিন্দি ভাষায় নির্মিত স্বল্পদৈর্ঘ্যরে এই চলচ্চিত্রটিতে সেই ঘটনাগুলোই দেখানো হয়েছে। মিলিন্দ সোমান ও যশপাল শর্মা অভিনীত এই চলচ্চিত্রটিকে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক তথ্যসমৃদ্ধ প্রামাণ্যচিত্রগুলোর মধ্যে অন্যতম বলে বিবেচনা করা হয়। 

বিশ্ব সিনেমার তালিকা ঘাটলে দেখা যায়, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ওপর পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র যা তৈরি হয়েছে, তার বেশিরভাগই হয়েছে বলিউডে। তবে এসব চলচ্চিত্রগুলোতে বেশিরভাগই ক্ষেত্রেই জমকালোভাবে উঠে এসেছে ১৯৭১ সালে সংগঠিত মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয়দের অবদানের গল্পগুলো। এ ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নির্মাতারা এদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের অসংখ্য প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করেছেন। এদের মধ্যে মেজর খালেদস ওয়ার, জয় বাংলা, ওয়ার বেবিজ উল্লেখযোগ্য।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫