
সুষমা সরকার। ছবি: সংগৃহীত
অভিনয়শিল্পী সুষমা সরকার কাজ করছেন মঞ্চ, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রে। নিজের কাজ ও সমসাময়িক বিষয় নিয়ে সাম্প্রতিক দেশকালের সাথে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মোহাম্মদ তারেক।
বর্তমানে ব্যস্ততা কী নিয়ে?
রাফাত মজুমদারের ‘জয়েন্ট ফ্যামিলি’ ধারাবাহিকে কাজ করছি। প্রতি মাসে বড় একটি লট থাকে। দর্শক ভাগ হয়ে গেছে। তারা তাদের পছন্দ মতো মাধ্যমে নাটক দেখেন। অনেক সময় জানেও না, কোন নাটক কোথায় চলছে? তারপরও বলব, ভালো সাড়া পাচ্ছি ধারাবাহিকটির জন্য। জি ফাইভের জন্য নজরুল ইসলাম রাজুর ‘এ এমন পরিচয়’, বিটিভির জন্য মুক্তিযুদ্ধের ‘দশে দশ’ ধারাবাহিকে কাজ করেছি। নূরুল আলম আতিকের একটি অ্যান্থলজি সিরিজে কাজ করব। সকাল আহমেদের ‘সাধাসিধে ছোট ভাই’ ধারাবাহিকে কাজ করেছি।
এ সময়ে নাটকের দর্শক ধরে রাখা কতটা চ্যালেঞ্জিং?
আগে ছিল টেলিভিশন। রিমোট চেপে অন্য চ্যানেলে চলে যাওয়ার সুযোগ ছিল। এখন হাতে হাতে স্মার্ট ফোন। দর্শক শুধু নাটক নয়, আরো অনেক কিছুতে সময় কাটান। তাই দর্শক ধরে রাখার জন্য সিরিয়াস গল্পের নাটক থেকে সরে আসতে হয়েছে। হালকা গল্পের নাটক হচ্ছে। শিল্পের জায়গাটা হারিয়ে গেছে।
কোনো পরিবর্তন কি আশা করা যায়?
দর্শককে কি দেওয়া হচ্ছে, সেটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বাজারে একই মানের পণ্য রাখলে ক্রেতা বাধ্য হয়ে মানহীন পণ্য কিনবে; কিন্তু সব ধরনের পণ্য থাকলে, তার ভালো পণ্য বেছে নেওয়ার সুযোগ থাকে। নাটকও সে রকম বিষয়। দর্শক তৈরি করার দায়িত্ব পরিচালক ও প্রযোজকের। তারা শিল্পসম্মত নাটক নির্মাণ করলে, দর্শক তা দেখে অভ্যস্ত হবে। আমি আশাবাদী যে, এক দিন পরিবর্তন আসবে।
সিনেমার ব্যস্ততা কেমন?
সাদিক খানের ‘অ্যা ব্লেসড ম্যান’ ছবির কাজ ঈদের পরে হতে পারে। নূরুল আলম আতিকের ‘পেয়ারার সুবাস’, রাজীব আহমেদের ‘উড়াল’ ও ফজলুল তুহিনের ‘গাঙকুমারী’ মুক্তির অপেক্ষায় আছে। এছাড়া বিভিন্ন ছবির কথাবার্তা চলছে।
প্রায় দুই দশকের ক্যারিয়ারে পছন্দের চরিত্র কি পেয়েছেন?
একজন শিল্পীর আকাঙ্ক্ষা শেষ দিন পর্যন্ত পূরণ হয় না। মানুষ যখন পাহাড়ের চূড়ায় উঠে যায়, তখন আর ওপরে ওঠার জায়গা থাকে না। নিচে নামতে হয়। একজন শিল্পীর কাছে পছন্দের চরিত্রও সে রকম। আমি সে অর্থে পছন্দের চরিত্র করিনি। যে কাজগুলো করেছি, তার মধ্যে পছন্দের কাজ আছে কম বেশি।
নাটকের মানের কী পরিবর্তন চোখে পড়ছে?
এক সময় চার দিন এমনকি ছয় দিন ধরে একটি নাটকের শুটিং করেছি। দিনে একটা দৃশ্যের কাজও করেছি। সে নাটকগুলোর জন্য অনেক বৈঠক হতো সংশ্লিষ্টদের সাথে। প্রি প্রোডাকশনে গুরুত্ব দেওয়া হতো। এখনকার নাটকে সে সময় পাওয়া যায় না। চরিত্র নিয়ে ভাবার অবকাশ পাচ্ছি না। চিত্রনাট্যও পাচ্ছি না কিছু ক্ষেত্রে। তাছাড়া এখনকার কাজের অ্যাপ্রোচে আমার আপত্তি আছে। হুট করে কল করে বলে, ‘আপু ওমুক ওমুক দিন আপনার ডেট খালি আছে?’ অথচ বলা উচিত এভাবে, ‘আপু একটা গল্প আছে। গল্পের এই চরিত্রে আপনাকে ভেবেছি। আপনি একটু পড়ে দেখবেন?’ গল্প ও চরিত্র পছন্দ হওয়ার পর আসবে ডেট ও রেমুনারেশনের কথা। এই যে অ্যাপ্রোচ, এটির পরিবর্তন হওয়া দরকার।
করোনার তীব্র প্রকোপের সময় মঞ্চের দর্শক নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। এখন মঞ্চে নাটক হচ্ছে। দর্শক কি ফিরছেন?
মঞ্চে আগের মতো দর্শক নেই। আমরা যখন কাজ শুরু করেছিলাম, তখন দর্শক ও মঞ্চকর্মী ছিল। এখন ছেলে মেয়েরা মঞ্চে কাজ করতে আসে না। নতুন দর্শক তৈরি হচ্ছে না। একজন দর্শক একই নাটক কয়বার দেখবে? তাই দর্শক তৈরি হওয়া প্রয়োজন। সময়ের সাথে মানুষের চিন্তা ভাবনা, প্রযুক্তির পরিবর্তন হয়েছে। মঞ্চের কাজে এ পরিবর্তন চোখে পড়ছে না। এখন জামিল আহমেদ স্যার ছাড়া মঞ্চে কারও কাজে নতুনত্ব দেখছি না। আমরা (দেশ নাটক) সম্প্রতি ‘জলবাসর’ এর শো করেছি। সামনে ‘নিত্য পুরাণ’ এর শো আছে।
আপনার রেস্টুরেন্ট কেমন চলছে?
বেশ ভালো চলছে। যে উদ্দেশ্য নিয়ে রেস্টুরেন্ট (উইন্ড ব্লোজ) দিয়েছিলাম, তা এখন পূর্ণতা পাচ্ছে। খাওয়ার রেস্টুরেন্ট শুধু নয়, আমরা একটি কফি শপ দিতে চেয়েছিলাম। যেখান থেকে সৃজনশীল মানুষজন সৃষ্টির আনন্দে ভাসবেন। আমরা সামনে জামদানি শো, মাইম শো করব। আরো অনেককিছু হবে।
সম্প্রতি আপনার কিছু ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাসছে। যেখানে আপনাকে পৌরাণিক সাজে দেখা গেছে। এ নিয়ে কিছু বলেন?
অনেক দিন ধরে নূর আলম ছবি তোলার কথা বলছিল। আমি ছবি তুলতে ভালোবাসি। পৌরাণিক চরিত্র করার শখ। তাই এ সাজে ছবিগুলো তোলা হয়েছিল।