Logo
×

Follow Us

বিনোদন

বলিউড তারকাদের ঈদ উদযাপন

Icon

মাহমুদ সালেহীন খান

প্রকাশ: ০২ মে ২০২২, ১৪:৪৬

বলিউড তারকাদের ঈদ উদযাপন

শাহরুখ খানের কাছে ঈদ হলো বিশেষ কিছু, মিলনের উৎসব। ছবি: সংগৃহীত

বলিউডের তিন খানকে নিয়ে মানুষের কৌতূহলের শেষ নেই। পর্দার বাইরে কেমন তাদের পারিবারিক ও ব্যক্তিজীবন? কীভাবে ঈদ উদযাপন করেন বিনোদন দুনিয়ার এই তিন তারকা শাহরুখ খান, সালমান খান আর আমির খান? 

বলিউডের তারকারা ঈদের দিন কী করেন। তাদের ছোটবেলার ঈদের স্মৃতি কেমন, এই ফিচারটি লিখেছেন মাহমুদ সালেহীন খান।

শাহরুখ খানের কাছে ঈদ হলো বিশেষ কিছু, মিলনের উৎসব

‘বলিউডের বাদশা’ শাহরুখ খানের কাছে ঈদ হলো বিশেষ কিছু, মিলনের উৎসব। ফলে ঈদের দিনটি কখনোই একা কাটাতে চান না এ তারকা। গত কয়েক বছরে এই তাঁর রেওয়াজ হলো, পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকুন না কেন, ঈদের দিন তিনি ফিরে আসেন তাঁর প্রিয়জনদের কাছে। করোনার আগের বছরগুলোতে অত্যন্ত আড়ম্বররের সঙ্গে ঈদুল ফিতর উদযাপন করছেন শাহরুখ। না, শুধু নিজের পরিবার, আত্মীয়-পরিজন ও বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে নয়, এদিন তাঁর বাড়ি ‘মান্নাত’-এ তিনি আমন্ত্রণ জানান সংবাদমাধ্যমের লোকজনদেরও। এমনকি বাড়ির বাইরে অপেক্ষারত অনুরাগীদেরও নিরাশ করেন না। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না বলে জানিয়েছেন গণমাধ্যমকে।

কিং খানের ঈদের দিন শুরু হয় ঈদের নামাজ পড়ার মধ্য দিয়ে। ঈদের দিন সকালবেলা তাঁর বাড়িতেই হয় ঈদের জামাত, নামাজ পড়াতে আসবে মৌলভি। এরপর মান্নাতের বাইরে অপেক্ষারত ভক্তদের ‘ঈদ মোবারক’ জানাবেন শাহরুখ। এ সময় তার সঙ্গে পরিবারের কেউ কেউ থাকবেন। একবার স্ত্রী গৌরী খান, পুত্র আরিয়ান ও কন্যা সুহানাকে সঙ্গে নিয়ে ভক্তদের জানাবেন ঈদ শুভেচ্ছা। 

করোনার আগের ঈদে সাদা রঙের ফুলের সমারোহে নিজের বাড়ি সাজিয়ে তুলছিলেন শাহরুখ। গেল বছরের এই ঈদটি সে সময় আরও ‘বিশেষ’ হয়ে উঠেছিল খান খান্দানের কনিষ্ঠতম সদস্য আব্রামের উপস্থিতিতে। গত বছর এই দিনে তাঁর সঙ্গী ছিলেন একরত্তি আব্রাম। খুদে পুত্রকে সঙ্গে নিয়ে বলিউড বাদশা আসেন জনসমক্ষে। আব্রামও সবাইকে হাত নেড়ে জানায় ‘ঈদ মোবারক’। এদিন পিতা-পুত্র দু’জনকেই দেখা গিয়েছিল সাদা পাঠানিতে। এ প্রসঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে শাহরুখ বলেন, ‘ছোটবেলায় ঈদের দিনে আমি কিছুতেই কুর্তা-পাজামা পরতে চাইতাম না। মা আমাকে জোর করে পরাতেন। আজ আমিও আমার ছেলেকে জোর করে পাঠানি স্যুট ও আচকান পরাই।’ শাহরুখের স্মৃতিকথা থেকে জানা যায় তাঁর কৈশোরের ঈদ সম্পর্কেও, ‘ঈদের দিনে বাবার স্কুটিতে চেপে মসজিদে যেতাম নামাজ পড়তে। মা হায়দ্রাবাদি খাবার বানাতেন। আর বাবা বানাতেন পাঠানি খাবার।’

প্রতিত ঈদেই মান্নাতে আয়োজন করা হয় সংবাদ সম্মেলন ও ভূরিভোজ অনুষ্ঠানের। তবে কিং খানের বাড়ির ইফতার মাহফিলে যে ভূরিভোজ হয়, তার নামডাকও কম নয়। সমগ্র বলিউড এ উপলক্ষে জড়ো হয় মান্নাতে।

প্রতি বছর সামাজিক মাধ্যমেও সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা জানান শাহরুখ। যেমন গত ঈদে তাঁর টুইট ছিল, ‘চাঁদ মোবারক, আল্লাহ যেন পৃথিবীর সব সুন্দর জিনিস সবাইকে উপহার হিসেবে দেন।

ঈদের দিন বন্ধু সালমান খানের বাড়ির খাবারের দিকে তাকিয়ে থাকেন শাহরুখ খান। হ্যাঁ, ঘটনা সত্য। এদিন সাধারণত বাড়ির খাবার খান না কিং খান, বরং অপেক্ষা করে থাকেন বন্ধু সালমানের বাড়ির খাবারের জন্য।

কয়েক বছর আগেও দুই বন্ধু শাহরুখ আর সালমানের মুখ দেখাদেখি প্রায় বন্ধ ছিল। বছর তিনেক আগে এক ঈদের দিনেই বাবা সিদ্দিকির ইফতার মাহফিলে বলিউডের ‘বাদশা’ আর ‘সুলতান’ একে অপরকে আলিঙ্গন করেন। এরপর থেকে সাধারণত একসঙ্গে ঈদ কাটান তাঁরা। একবার ঈদের পরের দিন দুই বন্ধু সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলেন বান্দ্রার রাস্তায়। 

ঈদের সন্ধ্যায় নিয়ম করে আতশবাজি ফোটান সালমান

সালমান খানের কাছে ঈদ মানে হলো তাঁর ছবি মুক্তির দিন। বরাবরই ছবি মুক্তির দিন হিসেবে এ তারকা বেছে নেন পবিত্র এই দিনকে। দাবাং, কিক, এক থা টাইগার, বজরঙ্গি ভাইজান, সুলতান সালমানের এসব ছবি তো মুক্তি পেয়েছে ঈদের দিনে। এ বছরও ঈদের আগে মুক্তি পাবে সালমান অভিনীত সিনেমা টিউবলাইট।

শাহরুখের মতো সালমানও এই বিশেষ দিনটি পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে কাটাতে ভালোবাসেন। জানা যায়, তিনি রোজাও রাখেন। রমজান মাসে সাধারণত অন্য সময়ের চেয়ে একটু আগেভাগে ঘুম থেকে ওঠেন সালমান। এ সময় বান্দ্রায় তাঁর বহুতল ভবনের সামনে সাহায্যের আশায় রোজই দাঁড়িয়ে থাকে কিছু মানুষ। সালমান সাধ্যমতো সাহায্য করেন তাদের। তবে চিকিৎসার জন্য কেউ এলে সাধারণত শূন্য হাতে ফেরান না এ তারকা। তাঁর বাবা লেখক সেলিম খান নিজে দাঁড়িয়ে থেকে অসহায়-দরিদ্র মানুষের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।

ঈদের নামাজ পড়ার মাধ্যমে শুরু হয় সালমান খানের ঈদ। তারপর পুরো সময়টা বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজনের সঙ্গেই কাটান। এদিন বলিউডের অনেক তারকাই নিমন্ত্রিত থাকেন সালমানের বাড়িতে। তাই এদিন সবাই অপেক্ষা করেন, সাল্লুর বাড়ির খানদানি বিরিয়ানি খাবে বলে। এটি সালমানের মায়ের নিজস্ব রেসিপি। বলিউডের প্রায় সব তারকাই কোনো না কোনো সময় এই বিরিয়ানির স্বাদ নিয়েছেন। তবে সারাবছর ডায়েটের বিধিনিষেধের ভেতরে থাকলেও ঈদের সময় খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে কোনো কিছুকেই পাত্তা দেন না সালমান, নিয়ম ভেঙে খান সবকিছুই। শির-খুরমা তাঁর ভীষণ পছন্দের। তাই মনভরে শির-খুরমা খান এদিন। পরে অবশ্য নানারকম ব্যায়াম ও কসরতের মাধ্যমে ঝরিয়ে ফেলেন বাড়তি ক্যালরি। শাহরুখ খানের মতো সালমানও প্রতি বছর ঈদে নিয়ম করে তাঁর অনুরাগীদের সঙ্গে দেখা করেন এবং হাত নেড়ে সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা জানান। তাঁর বহুতল ভবনের বারান্দায় বাবা, ভাই ও বোনদের সঙ্গে নিয়ে সপরিবার এসে দাঁড়ান। ‘নায়ক’-কে একনজর দেখার আকাঙ্ক্ষায় অগণিত মানুষ সকাল থেকে ভিড় করে থাকে সালমানের বাড়ির সামনে।

সারাদিনের ব্যস্ততার পর প্রতি বছর ঈদের সন্ধ্যায় নিয়ম করে আতশবাজি ফোটান সালমান। ঈদের মতোই ঘটা করে বাড়িতে পালন করেন গণপতি আর দীপাবলির উৎসব। একবার গণপতি ও ঈদ একই দিনে পড়েছিল। এদিন সালমান সকালে নামাজ পড়েন, আবার বিকেলে বাড়িতে ভজনের ব্যবস্থা করেন। তাঁর কথায়, ‘আমি উৎসব ভালোবাসি, এ ক্ষেত্রে ধর্ম দেখি না।’

নিজের কৈশোরের রংবেরঙের ঈদ-স্মৃতি শোনা যায় সালমানের মুখে, ‘বিশেষ এই দিনে আমরা পরিবারের সবাই এক হতাম। বাড়ির আঙিনায় ব্যবস্থা করা হতো খাবার-দাবারের। প্রচুর খাওয়া-দাওয়া হতো। আমরা ছোটরা ব্যস্ত থাকতাম ক্রিকেট, ফুটবল খেলায়। আর বড়রা নিজেদের মধ্যে আড্ডা দিতেন। এদিন আমাদের বাড়িতে প্রচুর মানুষ আমন্ত্রিত থাকতেন। কেবল মুসলিম নয়, হিন্দু, কোলি, পার্সি, ক্যাথলিকসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ ঈদের দিনে আসতেন আমাদের বাড়িতে। মনে হতো আমরা সবাই একই পরিবারের। বাড়ির বাইরেও বহু মানুষকে খাবার দেওয়া হতো।’

ঈদ নয়, ঈদির অপেক্ষায় থাকতেন আমির

বলিউডের আরেক খান আমির খানের ঈদ উদযাপন শাহরুখ ও সালমানের চেয়ে একটু আলাদা। খুবই সাদামাটা আর অনাড়ম্বরভাবে ঈদ উদযাপন করেন তিনি। সাধারণত আমিরের ঈদ শুরু হয় তাঁর ‘আম্মির’ (মায়ের) বাড়ি দিয়ে। ছোটখাটো সংবাদ সম্মেলনের পর তিনি সোজা চলে যান আম্মির বাড়িতে। এই বলিউড তারকার সঙ্গে তখন থাকেন সাবেক স্ত্রী-পুত্র কিরণ রাও ও আজাদ। খুদে আজাদকেও সে সময় দেখা যায় বাবার মতো সাদা কুর্তা-পাজামাতে। আর কিরণ এদিন সাজেন ভারতীয় পোশাকে। ঈদের দিন আমিরের আম্মির বাড়িতে আসেন সব আত্মীয়েরা। এমনকি আমিরের সাবেক পত্নী রীনা পুত্র জুনেইদ ও কন্যা ইরাকে সঙ্গে নিয়ে হাজির হয় পারিবারিক এ উদযাপনে।

ছোটবেলার ঈদ প্রসঙ্গে আমির বলেন, ‘ঈদের থেকে ছোটবেলায় আমাদের কাছে মূল আকর্ষণ ছিল ঈদি। ঈদি পাওয়ার লোভে আমরা বড়দের বারবার সালাম করতাম’।

ছেলে আজাদকে কী পরিমাণ ঈদি দেন আমির? প্রশ্নের উত্তরে তাঁর মুখে শোনা গেল, ‘আমি দুই টাকার মতো ঈদি পেতাম। আমার ছেলেকেও দুই টাকাই দিই। কারণ, প্রয়োজনের তুলনায় বেশি পেলে স্বভাব নষ্ট হবে।’ 

বলিউড তিন সুপারস্টার এর বাইরেও বলিউড তারকা সোহা আলি খান, আরবাজ খান, নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকী ও ফারাহ খান। তারাও তাদের ঈদের নানা স্মৃতি নিয়ে বিভিন্ন সময়ে কথা বলেছেন গণমাধ্যমে। 

প্রতিটি ঈদ পরিবারের সঙ্গে উদযাপন করেন আরবাজ খান

কাজ নিয়ে শত ব্যস্ততা থাকলেও প্রতিটি ঈদ পরিবারের সঙ্গে উদযাপন করেন আরবাজ খান। ঈদের স্মৃতি মনে করে এক সাক্ষাৎকারে বলিউডের এই অভিনেতা বলেছিলেন, আমি কখনো দেখিনি ঈদে আমাদের বাড়িতে কাউকে দাওয়াত দেওয়া হতো। কেননা ওইদিন সবাই নিজ থেকেই আসতো এবং আমাদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করে।

আমরা সবাই একই রকমের পোশাক পরতাম : নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকী

বলিউডের অভিনেতা নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকী। সাত ভাইকে নিয়েই কাটতো ‘মাঝি’খ্যাত এই তারকার ঈদ। ঈদের স্মৃতি মনে করে নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকী বলেন, ঈদে মা সবসময় আমাদের সাত ভাইকে একই রকমের কাপড় দিয়ে নিজে হাতে পোশাক বানিয়ে দিতেন। এরপর আমরা ভাইয়েরা মিলে নামাজ পড়তে যেতাম। সেখান থেকে ফিরে আত্মীয়দের বাড়িতে যেতাম।

নওয়াজুদ্দিন আরও বলেন, আমাদের বড় একটি পরিবার ছিল। মজার বিষয় হলো- আমরা সবাই একই রকমের পোশাক পরতাম। ছবি তোলার জন্যও একই রকম পোজ দিতাম। দেখে মনে হতো সেনা সদস্যদের একটি দল।

ভীষণ নস্টালজিয়ায় ভোগেন নির্মাতা ও নৃত্যপরিচালক ফারাহ খান 

ছোটবেলার ঈদের কথা মনে পড়লে ভীষণ নস্টালজিয়ায় ভোগেন নির্মাতা ও নৃত্যপরিচালক ফারাহ খান। ঈদের স্মৃতি নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার দাদি ঈদের আগের দিন বিরিয়ানি রান্না করতেন। সেই বিরিয়ানি তিন থেকে চারবার খেতাম। তার হাতের সেই বিরিয়ানি এখনো মিস করি, যেন তার হাতের স্বাদ, তার সেই ভালোবাসা এখনো আমাদের শরীরে মিশে আছে।’

ঈদি পেতাম রঙিন সব খামের ভেতরে : সোহা আলি খান

মুম্বাইতে থাকেন সোহা; কিন্তু খুবই কম সময় তিনি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে থাকতে পারেন। 

স্মৃতি হাতড়ে সোহা বলেন, আমি যখন ছোট ছিলাম, সে সময়ের ঈদের দিন খুব সকালে উঠে নতুন জামা-কাপড় পরে বাড়ির বড়দের সালাম করতাম। তারা আমাকে ঈদি দিতেন। সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়লে চোখে পানি চলে আসে। ঈদি পেতাম রঙিন সব খামের ভেতরে। সব খামেই থাকতো নতুন ১০ কিংবা ২০ রুপির কয়েকটি চকচকে নোট। সেমাই খেতাম, কাবাব খেতাম, আর খেতাম খাসির রেজালা দিয়ে পোলাও।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫