
পদ্মা সেতু
স্বপ্ন সত্যি হয়েছে। উদ্বোধন হয়ে গেছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। সব পেশাজীবী মানুষের মতোই বাংলাদেশের নাটক, চলচ্চিত্র, সংগীত ও খেলাধুলার অঙ্গনের অনেকেই বড় আশা নিয়ে সেতুর উদ্বোধনের অপেক্ষায় ছিলো।
নাটক কিংবা চলচ্চিত্রের শুটিং স্পট এক অর্থে পুরোপুরি ঢাকাকেন্দ্রিক। সবই হয়ে থাকে ঢাকার আশেপাশে কিংবা ঢাকার ভেতরে উত্তরার বিভিন্ন বাড়িতে। ঢাকার আশেপাশে বলতে ঘুরেফিরে মানিকগঞ্জ কিংবা পূবাইল। ঢাকার বাইরের স্পটের ক্ষেত্রে সাধারণত বেছে নেওয়া হয় কক্সবাজার।
পদ্মা সেতু হওয়ায় শুটিং লোকেশনে বড়সড় পরিবর্তন আসতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

অভিনেতা-নির্মাতা মীর সাব্বির পদ্মা সেতুকে বাংলাদেশের আরো একটি বিজয় উল্লেখ করে মুঠোফোনে বলেন,‘সবাই কৃষি ও অর্থনীতির বড় পরিবর্তনের কথা বলছেন। আমিও যেহেতু নাটক করি তাই আমার ভাবনা নাটককেন্দ্রিক। পদ্মা সেতুর সুবাদে বাংলাদেশের নাটক-চলচ্চিত্র আর এত বেশি ঢাকাকেন্দ্রিক থাকবে না। দুটি শিল্পেরই পরিসর আরো বড় হবে। তাতে আমরা যেমন উপকৃত হবো, তেমনি যারা আমাদের কাজ দেখেন সেই দর্শকদের মধ্যেও এটি চমৎকারভাবে ছড়িয়ে যাবে।’
নাটক-চলচ্চিত্রে দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন মনোরম জায়গা তুলে ধরা হলে পর্যটনেও এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন মীর সাব্বির। তার কথায়, ‘কৈশোরে বড় পর্দায় কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত দেখে মনে হতো, যদি সেখানে যেতে পারতাম! আমি মনে করি, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যদি আমরা নাটক ও চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তুলে ধরতে পারি, তাহলে সাধারণ মানুষ সেসব জায়গায় যেতে উদ্বুদ্ধ হবে। আমার ‘রাত জাগা ফুল’ ছবির সম্পূর্ণ শুটিং বরিশালে করেছি। ছবিটিতে এসব সুন্দর লোকেশন দেখে অনেকে বিস্মিত হয়েছেন। দক্ষিণবঙ্গে এমন আরো অনেক দারুণ জায়গা আছে। সেসব স্পটে শুটিং করতে পদ্মা সেতু অনুপ্রেরণা জোগাতে পারে।’

পদ্মা সেতুর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পেয়েছেন ছয়বারের অধিক জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত গীতিকার কবীর বকুল অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, দারুণ একটি রোমাঞ্চকর অনুভূতি। আমরা পারি। আমরা পেরেছি। বিশ্ববাসীকে আমরা আবার দেখিয়ে দিয়েছি। এর চেয়ে বেশি আমার বলতে পারছি না। আমি খুব উত্তেজিত।
নাট্যকার জিনাত হাকিম তার ফেসবুকে পেজে লিখেছেন, এখনো মনে হয় দৃশ্যটি ছিল ঘুমের মাঝে দেখা কোন স্বপ্ন। মা কাঁদছেন। কারণ আমাদের নানা মারা গেছেন। গভীর রাতে অনন্যোপায় হয়ে মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে মা ও তার ভাইবোনদের মৃত বাবাকে শেষ দেখার আশায় নৌকায় পদ্মাপাড়ি দেয়া। আমি এতই ছোট ছিলাম যে স্মৃতিতে রাতের গভীর অন্ধকার ও নৌকায় আছড়ে পড়া ঢেউয়ের পানি আর মায়ের কান্না, এছাড়া কিছুই মনে করতে পারি না। তাই নিজের কাছেই মনে হয় ওটা কি ঘুমে দেখা কোনো দুঃস্বপ্ন! আজও সেই রাতে প্রমত্ত পদ্মার ভয়াবহ রূপ স্মৃতি হয়ে আছে।

তিনি আরো লিখেছেন, বার্ষিক পরীক্ষা শেষে প্রতি বছর আব্বা আমাদের নিয়ে যেতেন নাড়ির টানে প্রিয় ফরিদপুর। চাচাতো বোন জেসমিন নদীর ঢেউ আতঙ্ক থেকে একদিন বলেছিল যদি পদ্মা নদীতে সেতু হতো ফরিদপুর টু ঢাকা রিকশায় চলে যাব। এই গল্পটা আমাদের কাছে আষাঢ়ে গল্পের মতো একটি মজার হাসির গল্প হয়ে গিয়েছিল। আজ আর সেটা গল্প বা কোনো দুঃস্বপ্ন নয়! আজ স্বপ্ন পূরণের দিন! স্বপ্নের পদ্মা সেতু! আমাদের প্রাণে খুশীর জোয়ারের বন্যা! খরস্রোতা নদীর বুকে আমাদের অহংকার! পদ্মা সেতু! স্থাপত্য শিল্পের অপরূপ সৌন্দর্য নিয়ে পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশের এক গৌরবগাথা ইতিহাস পদ্মা সেতু! আব্বার কথা মনে পড়ছে। আহারে কত কষ্ট করে আমাদের নিয়ে যেতেন তার শৈশবের কাছে। আজ এই সেতুর উদ্বোধনের দিনে বেঁচে থাকলে নিশ্চয়ই ছুটে যেতেন সেতুর কাছে! আমাদের স্বপ্নের পদ্মা সেতু! বারবার মনে হচ্ছে আজ ঈদ!!

ছোট পর্দার অভিনেত্রী নাদিয়া আহমেদ স্বীকার করলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, লঞ্চে যাতায়াত করতে হবে বলে দক্ষিণাঞ্চলে গিয়ে কাজ করা হতো না। পদ্মা সেতুর ফলে এখন প্রচুর শুটিং হবে ওইদিকে।’

সংগীতশিল্পী প্রতীক হাসানের আশা, পদ্মা সেতুর সুবাদে কনসার্টের সংখ্যা বাড়বে। তার মতে, যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো এখন। দক্ষিণবঙ্গে অনেকে গানের অনুষ্ঠান আয়োজন করছে। আজ থেকে পদ্মার ওপারে আমার কয়েকটি কনসার্ট শুরু হবে। মাদারীপুরের শিবচর থেকে শুরু করবো। তারপর খুলনায় শো আছে। বলা যায়, পদ্মা সেতু সংগীত শিল্পীদের জন্য একটি নতুন ডানা।
আবৃত্তি শিল্পী সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সম্পাদক আহকাম উল্লাহ জানান, আমি গর্বিত বাঙালি বলে। আমরা বাঙালি বলেই আজ পদ্মা সেতু করতে পেরেছি। যা পুরো অবদান জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। তার সাহসী নেতৃত্বে আজ আমরা বিশ্বের দরবারে আরো একবার মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পেরেছি।